সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০১৯ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্যে তিনটি জিনিস থাকা চাই

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্যে তিনটি জিনিস থাকা চাই ___________ বিয়ে-শাদি নিয়ে কোর’আনে অনেক আয়াত আছে। তম্মধ্যে আমার ভালো লাগা একটি আয়াত হলো – وَمِنْ ءَايَـٰتِهِۦٓ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَ‌ٰجًۭا لِّتَسْكُنُوٓا۟ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةًۭ وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِى ذَ‌ٰلِكَ لَءَايَـٰتٍۢ لِّقَوْمٍۢ يَتَفَكَّرُونَ “আর তাঁর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও, এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।” [সূরা ৩০/ রূম – ২১] এ আয়াতে বলা হচ্ছে, চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। কিন্তু সেগুলো কি? বিবাহিত জীবনে এক জোড়া দাম্পত্যকে সাধারণত তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। অথবা, অন্যভাবে বললে, একটু সুখী দাম্পত্য জীবনে তিনটি জিনিস থাকতে হয়। ১। পারস্পরিক কাছে থাকার ইচ্ছা। ২। পারস্পরিক ভালোবাসা। ৩। পারস্পরিক দয়া। ধরুন, বিয়ের প্রথম ১০ বছর উভয়ে উভয়ের কাছে থাকতে চাইলো। তারপর, যদি কখনো কাছে থাকার বিষয়টি ধীরে ধীরে হ

আরবি ভাষা নিজে কোনো জ্ঞান নয় - ইমাম গাজালি

আমাদের দেশে শিক্ষিত বলা হয় তাকে, যে ইংরেজি ভাষা পারে। এবং, আলেম বলা হয় তাকেই, যে আরবি ভাষা পারে। অথচ, ইংরেজি বা আরবি ভাষা পারার সাথে জ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই। ভাষা হলো জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম, কিন্তু নিজে জ্ঞান নয়। ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে-মেয়েরা ইংরেজি ভাষা শেখার জন্যে এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আরবি ভাষা শেখার জন্যে তাদের সারা জীবন ব্যয় করে ফেলে। কিন্তু জ্ঞান অর্জন হয় না একটুও। ইংরেজি বা আরবি ভাষা ততটুকু জানলেই যথেষ্ট, যতটুকু জানলে জ্ঞান অর্জন শুরু করা যায়। ইমাম গাজালি মতে, জ্ঞান অসীম, কিন্তু জীবন সসীম। আরবি ভাষা ও ব্যাকরণ হলো জ্ঞান অর্জনের উপকরণ, জ্ঞান নয়। তাই আরবি ভাষা ও আরবি ব্যাকরণ ততটুকু জানাই যথেষ্ট, যতটুকু জানলে কোর'আন ও হাদিস বুঝা যায়। فإن العلم كثير والعمر قصير وهذه العلوم آلات ومقدمات وليست مطلوبة لعينها بل لغيرها وكل ما يطلب لغيره فلا ينبغي أن ينسى فيه المطلوب ويستكثر منه فاقتصر من شائع علم اللغة على ما تفهم منه كلام العرب وتنطق به ومن غريبه على غريب القرآن وغريب الحديث ودع التعمق فيه واقتصر من النحو على ما يتعلق بالكتاب والسنة [إحياء علوم الدين 1/ 40]

খারাপ আলেমদের পরিচয় - ইমাম গাজালি

"খারাপ আলেমদের সমস্যা হলো, তারা সত্যে গ্রহণ করানোর জন্যে বাড়াবাড়ি করে, এবং প্রতিপক্ষকে ঘৃণা ও অসম্মানের চোখে দেখে। এর ফলে প্রতিপক্ষও পাল্টা যুক্তি দিতে প্রস্তুত হয়, এবং অসত্যের পক্ষে আরো শক্ত যুক্তি প্রদান করার চেষ্টা করে। যে বিষয়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়, সে তা আরো বেশি শক্ত করে ধারন করে। অথচ, আলেমরা যদি সুন্দরভাবে ও দায়াশিল হয়ে একান্ত গোপনে প্রতিপক্ষকে নসিহত করে বুঝাতো, এবং ঘৃণা ও বিদ্বেষ পরিহার করতো, তাহলে আলেমরা সফল হতো।" - ইমাম গাজালি। آفات علماء السوء فإنهم يبالغون في التعصب للحق وينظرون إلى المخالفين بعين الازدراء والاستحقار فتنبعث منهم الدعوى بالمكافأة والمقابلة والمعاملة وتتوفر بواعثهم على طلب نصرة الباطل ويقوى غرضهم في التمسك بما نسبوا إليه ولو جاءوا من جانب اللطف والرحمة والنصح في الخلوة لا في معرض التعصب والتحقير لا نجحوا [إحياء علوم الدين 1/ 40]

আমরা ইসলামী রাজনীতি থেকে বের হয়ে গিয়েছি - উস্তাদ রশিদ ঘানুশী

আমরা মুসলিমদের গণতন্ত্রে প্রবেশ করার জন্যে ইসলামী রাজনীতি থেকে বের হয়ে গিয়েছি। আমরা গণতন্ত্রপন্থী মুসলিম, আমরা আমাদেরকে ইসলামী রাজনীতির অংশ মনে করি না। - উস্তাদ রশিদ ঘানুশী। نخرج من الإسلام السياسي لندخل في الديموقراطية المُسْلمة. نحن مسلمون ديمقراطيون ولا نعرّف انفسنا بأننا (جزء من) الإسلام السياسي

ফেইসবুকে আমার সমালোচকদের প্রতি

একটি অনুরোধ। ফেইসবুকে আগে আমাকে যতজন-ই রিকোয়েস্ট পাঠাতেন, সবগুলোই আমি একসেপ্ট করে নিতাম। ফলে, ফেইসবুকে আমার তিন ধরণের বন্ধু আছেন। ১) যারা আমাকে সমালোচনা করেন। ২) যারা আমার সাথে কোনো কোনো বিষয়ে একমত পোষণ করেন। ৩) যারা আমাকে বিরক্তিকর মনে করেন। যারা আমার সমালোচনা করেন, অথবা, আমার কোনো কোনো বিষয়ে একমত পোষণ করেন, তারা আমার কাছে খুবই মূল্যবান। এ ছাড়া যাদের কাছে আমি বিরক্তিকর, তারা দয়া করে আমাকে আনফ্রেন্ড করুন। ফেইসবুকে ৫০০০ বন্ধু তালিকার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সে জন্যেই আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

ম্যালকম এক্স এর বাণীসমূহ

২১ ফেব্রুয়ারি উস্তাদ ম্যালকম এক্স (রাহিমাহুল্লাহ) এর শাহাদাত বার্ষিকী। তাঁর কয়েকটি কথা স্মরণ করছি - - যদি তোমার কোনো সমালোচনা না থাকে, তাহলে সম্ভবত তোমার কোনো সফলতাও নেই। - আমি সত্যের পক্ষে, সে সত্য কে বলেছে, তা ব্যাপার নয়। আমি ন্যায়ের পক্ষে, কে ন্যায়ের পক্ষে বা বিপক্ষে, তা ব্যাপার নয়। - সত্য ও ন্যায়ের কথা যেই বলুক না কেন আমি তার পক্ষে। - শিক্ষা হলো ভবিষ্যতের পাসপোর্ট। ভবিষ্যৎ কেবল তাদের জন্যেই, যারা বর্তমানে নিজেকে তৈরি করে রেখেছে। - যদি তুমি সতর্ক না হও, তাহলে পত্রিকাগুলো তোমাকে শেখাবে যে, অত্যাচারীকে ভালোবাসো, এবং নির্যাতিতকে ঘৃণা করো। - স্বাধীনতা ছাড়া কারো কাছে শান্তির বানী পোঁছানো যায় না। কারণ, কোনো মানুষ ততক্ষণ শান্তি পায় না, যতক্ষণ তার স্বাধীনতা থাকে না। - তোমাকে কেউ স্বাধীনতা দিবে না। দিবে না ন্যায়বিচার বা অন্য কিছু, সব তোমাকেই অর্জন করে নিতে হবে।

বিদেশিরা তাবলীগ ও জামাতকে সমানভাবে ভালোবাসে

ধরুন, বাংলাদেশের একজন মুসলিম তাবলীগের ফাজায়েলে আমলের খুব ভক্ত, তিনি কি মওদুদীর (রাহিমাহুল্লাহ) তাফহীমুল কোর'আন পড়বেন? অথবা, তাফহীমুল কোর'আনের একজন ভক্ত কি ফাজায়েলে আমল পড়েন? অথবা, আবুল হাসান আলি নদভির (রাহিমাহুল্লাহ) কোনো ছাত্র কি তাফহীমুল কোর'আন অনুবাদ করবেন? কিংবা, মওদুদীর ভক্তরা কি আলি নদভীর বই তাদের সিলেবাসে রাখবেন? বাংলাদেশে এটি সম্ভব না, কিন্তু তুরস্কে সম্ভব। গতকাল তুরস্কের এক লেখকের সাথে দেখা করলাম, উনার নাম - ইউসুফ কারাজা। তিনি আবুল হাসান আলি নদভির সরাসরি ছাত্র। নদভীর নির্দেশে তিনি অনেকগুলো বইয়ের তার্কি অনুবাদ করেন। তন্মধ্যে রয়েছে ফাজায়েলে আমল, আবুল আলা মওদুদির তাফহীমুল কোর'আন, আল্লামা ইকবালের বালি জিবরীল, শিবলী নোমানীর সফরনামা ও ইমাম গাজালী, এবং আলী নদভীর প্রায় ২০টা বই। এ ছাড়াও আরো অনেকগুলো উর্দু ও আরবি বই তিনি অনুবাদ করেছেন। তুর্কি এই লেখক অর্থাৎ ইউছুফ কারাজা তাঁর উস্তাদ আবুল হাসান আলি নদভিকে যতটা ভালোবাসেন, ঠিক ততটাই ভালোবাসেন আবুল আলা মওদুদীকে অথবা আল্লামা ইকবালকে। এমন লোক তুরস্কে অনেক আছে, যারা মওদুদী ও নদভীকে সমানভাবে ভালোবাসেন। অথচ, বাংলাদেশে এমন কাউকে দে

মদের লাইসেন্স কেন দিলেন? - উস্তাদ রশিদ ঘানুশি

উস্তাদ রশিদ ঘানুশীর একটি সাক্ষাতকার প্রশ্নকারী – উস্তাদ, আমি আপনাদের জাতীয় সংসদের একটি অধিবেশন দেখেছিলাম। সেখানে আমদানিকৃত মদের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। আমদানিকৃত মদের উপর অতিরিক্ত করারোপ করায় তিউনিসিয়ার জনগণ তা কিনতে সমস্যা হচ্ছে। জনগণ যাতে উপযুক্ত দামে মদ কিনতে পারে, সে উদ্দেশ্যে সংসদের সবাই সর্বসম্মতিক্রমে মদের উপর ভ্যাট কমানোর জন্যে ভোট দিয়েছে। আপনাদের আন-নাহদা পার্টিও ভ্যাট কমানোর জন্যে ভোট দিয়েছে। আপনি এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? রশিদ ঘানুশী – মদ যে হারাম, তা নিয়ে আমাদের দেশে কোনো বিতর্ক নেই। এ দেশের কোনো মুসলিম বলে না যে, মদ হালাল। কিন্তু, আমাদের দেশের প্রায় ৫০% মানুষ মদ খায়। ঐতিহাসিকভাবে আমরা দেখি, ইসলাম যখন মদকে নিষেধ করতে চাইলো, তখন একটা ক্রমধারা অবলম্বন করেছিলো। যখন মানুষেরা মদ খাওয়া ছেড়ে দিতে প্রস্তুত হলো, তখনি কেবল ইসলাম মদকে নিষিদ্ধ করেছিলো। যখন তিউনিসিয়ার অধিকাংশ জনগণ বা কমপক্ষে ৫০% জনগণ মদ খাচ্ছে, তখন মদকে নিষিদ্ধ করতে চাইলে মদ খাওয়া আরো বাড়বে। কারণ, যা নিষিদ্ধ করা হয়, তার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়ে যায়। ইসলাম এ বিষয়টি ভালোভাবে বিবেচনায় নিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত

ফিকহের প্রয়োজন কেন?

আমার এক বন্ধু আমাকে প্রশ্ন করেছেন, “আমাদের কাছে কোর’আন ও হাদিস থাকার পরেও আবার কেন ফিকাহের প্রয়োজন? এর উত্তরটা খুব সহজ। ধরুন, আপনি কোর’আনের সূরা মায়েদা পড়া শুরু করলেন। দুই আয়াত পড়ার পরেই দেখলেন যে, আল্লাহ বলছেন – حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ অর্থাৎ, “তোমাদের জন্যে মৃত প্রাণী হারাম করা হয়েছে।” এটা দেখার পর পরেই আপনি কোর’আন শরীফটা বন্ধ করে উঠে গিয়ে বউকে বললেন, “এই সুন্দরী, আমি বাজার থেকে বড় বড় যে ইলিশ মাছগুলো এনেছি, সবগুলো মাছ ফ্রিজে না রেখে ডাস্টবিনে ফেলে দাও।” বউ আপনাকে বললো: “কি হলো? পাগল হয়ে গেলে নাকি? এতো টাকার মাছ এনে এখন আবার বলছো ডাস্টবিনে ফেলে দিতে?” আপনি তখন বউয়ের কাছে কোর’আন শরীফটা এনে খুলে দেখালেন যে, সূরা মায়েদার ৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “মৃত প্রাণী হারাম”। এরপর বউকে যুক্তি দিয়ে বুঝালেন যে, মাছ যেহেতু একটা প্রাণী, এবং ইলিশ মাছ যেহেতু সূর্যের আলোতে সাথে সাথে মারা যায়, সুতরাং ইলিশ মাছ খাওয়া হারাম। কোর’আন থেকে খুব সুন্দর একটি যুক্তি দিয়ে আপনি প্রমাণ করেছেন যে, ইলিশ মাছ খাওয়া হারাম। কিছুদিন পর আপনি গেলেন পাশের বাসার ঘরোয়া দাওয়াতে। তারা আপনাকে খুব আপ্যায়ন করার উদ্দেশ্

ইসলাম এক হলে মাজহাব চারটা কেন?

ইসলাম এক হলে মাজহাব চারটা কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই দিতে পারবেন যারা রিসার্চ বা গবেষণা নিয়ে কাজ করেন। কোনো কিছু গবেষণা করার অনেকগুলো পদ্ধতি থাকে, যেটাকে ‘রিসার্চ মেথডলজি’ বা ‘গবেষণা পদ্ধতি’ বলা হয়। কেউ কোনো কিছু গবেষণা করতে হলে অনেকগুলো গবেষণা পদ্ধতি থেকে একটি পদ্ধতি বাছাই করে নিতে হয়। ধরুন, দুই বন্ধু আরিফ ও সাজিদ ২০০৯ সালে পিলখানায় সংঘটিত ‘বিডিয়ার বিদ্রোহ’ নিয়ে গবেষণা করতে চায়। দুই বন্ধুর-ই উদ্দেশ্য এক, কিন্তু গবেষণা পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমন, আরিফ জানতে চায় – পিলখানায় কতজন সেনা হত্যা হলো? কতজন বিডিয়ার এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলো? যারা হত্যা করেছে, তাদের সাথে কাদের যোগাযোগ ছিলো? এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে মূল হোতা কারা ছিল? ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো জানার জন্যে আরিফ অনেকগুলো গবেষণা পদ্ধতি থেকে পছন্দ করে একটি গবেষণা পদ্ধতি অবলম্বন করলো, যার নাম ‘কোয়ানটিটেটিভ রিসার্চ’ বা ‘পরিমাণগত সমীক্ষা’। অন্যদিকে, সাজিদ জানতে চায় – কেন সেনাবাহিনীদের হত্যা করা হলো? সেনাবাহিনীর সাথে বিডিয়ারের দ্বন্দ্ব কি ছিলো? সরকার কেন সেনাবাহিনীদের বাঁচাতে ব্যর্থ হলো? সেনাবাহিনী হত্যায় বিদেশের কোনো চক্রান্ত

হানাফী ও শাফেয়ী মেথডলজির পার্থক্য - ২

কেউ নামাজের সময়ে নাভির উপর হাত বাঁধলেই হানাফী হয়ে যায় না। অথবা, কেউ বুকের উপর হাত বাঁধলেই সালাফী বা শাফী হয়ে যায় না। হানাফী, সালাফী বা শাফী মাজহাবের অনুসারী হওয়া মানে, নির্দিষ্ট মাজহাবের মেথডলজি জানা। যেমন ধরুন, হানাফী মাজহাবের মেথডলজি হলো, কোনো হাদিস যদি 'খবরে ওহেদ' হয় বা খুব প্রসিদ্ধ না হয়, এবং সেই হাদিসটি যদি কোর'আনের কোনো আয়াতের বিপরীত হয়, তাহলে হাদিসটি আমল করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে হাদিসের আমল বাদ দিয়ে কেবল কোর'আনের উপর আমল করতে হবে। অন্যদিকে আহলে হাদিস বা শাফী মাজহাবের মেথডলজি হলো, কোনো হাদিস 'খবরে ওহেদ' বা খুব প্রসিদ্ধ না হলেও হাদিসটি যদি সহীহ হয়, তাহলে কোনো ভাবেই হাদিসটিকে কোর'আনের বিপরীতে দেখানো যাবে না। যে কোনো ভাবেই হোক হাদিসটির উপরও আমল করতে হবে, আবার কোর'আনের উপরও আমল করতে হবে। এমন অনেক মেথডলজি রয়েছে সব মাজহাবে। কেউ যখন নিজেকে হানাফী বা সালাফী বলে দাবী করে, তার মানে, তিনি হানাফী বা সালাফী মেথডলজি সম্পর্কে খুব অভিজ্ঞ, এবং সে অনুযায়ী কোর'আন ও হাদিস থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কেবল নামাজের হাত বাঁধা দেখে কাউকে সালাফী বা হানাফী বলাটা শিশুসুলভ ক

ইমাম আবু হানিফা ও শাফেয়ীর মাঝে পার্থক্য

ইসলামে এতো মতপার্থক্য কেন? ______ রাসূল (স) পৃথিবী থেকে চলে যাবার পরে, কোর'আন ও হাদিস বুঝার জন্যে অনেকগুলো গবেষণা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। তন্মধ্যে একটির নাম 'আহলে রায়', আরেকটির নাম 'আহলে হাদিস'। 'আহলে রায়'-এর প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু হানিফা, এবং 'আহলে হাদিস'-এর প্রতিষ্ঠাতা ইমাম শাফেয়ী। আহলে রায়ের মেথডলজি হলো - কোর'আনের এক আয়াত দিয়ে যেমন অন্য আয়াতের আমলকে বাতিল করা যায়, তেমনি কোর'আন দিয়ে হাদিসের আমলও বাতিল করা যায়। কিন্তু, আহলে হাদিসের মেথডলজি হলো - কোর'আনের এক আয়াত দিয়ে অন্য আয়াতের আমলকে বাতিল করা গেলেও, কোর'আন দিয়ে হাদিসের আমলকে বাতিল করা যায় না। কারণ, হাদিস হলো কোর'আনের ব্যাখ্যা। আহলে রায়ের কথা হলো - কোর'আনের গুরুত্ব হলো সবার উপরে, এরপর দ্বিতীয় স্তরের গুরুত্ব পাবে হাদিস। সুতরাং, কোর'আন দিয়ে হাদিসকে বাতিল করা যায়। আহলে হাদিসের কথা হলো - কোর'আন ও হাদিস দুটাই মুহাম্মদ (স) আমাদেরকে জানিয়েছেন। সুতরাং একটা অন্যটির বিপরীত হতে পারে না। এবং দুইটা-ই সমান গুরুত্ব পাবে। এখানে দুটি স্কুলের উদ্দেশ্য এক, চিন্তার পার্থক্য অনেক। প্রশ্ন হত

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা

স্কলারগণ কেন সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন না?

"আপনার ফেইসবুকের স্ট্যাটাসে অনেকে প্রশ্ন করে, আপনি তার জবাব দেন না কেন?" উত্তর - আমরা যারা ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেই, তাদেরকে যে বিষয়ের প্রশ্নই করা হোক না কেন, তারা সব বিষয়ের পণ্ডিত হিসাবে উত্তর প্রদান করি। এ সমস্যাটা কেবল আমাদের একার না, আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী এবং আলেম-ওলামাদেরও একই সমস্যা। কিন্তু, রাসূল (স) থেকে শুরু করে কোনো ইসলামের স্কলার-ই সকল প্রশ্নের উত্তর দিতেন না, অনেক প্রশ্নের উত্তরে তারা চুপ থাকতেন। যেমন, হাদিসে জিবরাঈলের মধ্যে রাসূল (স)-কে জিবরাঈল (আ) চারটি প্রশ্ন করেছেন। রাসূল (স) তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, এবং একটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপ থেকেছেন। রাসূল (স)-এর হাজার হাজার সাহাবীদের মধ্যে ১০/১২ জন সাহাবী ছাড়া কেউ কোনো ফতোয়া দিতেন না। ওমর (রা) ছিলেন রাসূল (স)-এর খুব কাছের সাহাবী এবং মুসলিমদের দ্বিতীয় খলিফা। তাঁর কাছে কেউ কোনো ফতোয়া জিজ্ঞাস করলে তিনি বলতেন, "অমুক শাসনকর্তার কাছে যাও। সে মানুষের এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়। তার কাছে গিয়ে তোমার সমস্যা বল।" ইমাম মালেক ছিলেন তাঁর সময়ে মদিনার সবচেয়ে বড় আলেম। তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে ইমাম শাফেয়ী তাঁকে ৪৮টি মাসআলা জ

মাজহাব মানা ও জ্ঞানের স্তর বিন্যাস - ইমাম গাজালী

মাজহাব মানা ও জানা সাধারণ মানুষের কাজ নয়, এটা স্কলারদের কাজ। ইমাম গাজালির মতে, চিকিৎসা শাস্ত্রের মতো ফিকাহ শাস্ত্রও একটি দুনিয়াবি জ্ঞান। তাই, সাধারণ মানুষের জন্যে মেডিক্যালে পড়া যেমন জরুরি নয়, তেমনি ফিকাহ জানাও বাধ্যতামূলক নয়। অর্থাৎ, ফিকাহের জ্ঞান এবং মাজহাব সম্পর্কে জানা ও মানা হলো ফরজে কিফায়া, সমাজের কয়েকজন ফিকাহ জানলেই হয়, সবার জানার প্রয়োজন নেই। ইমাম গাজালি ইসলামী জ্ঞানের ৪টি স্তরবিন্যাস করেছেন। প্রথম স্তরের জ্ঞান অর্জনের পর দ্বিতীয় স্তরের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। দ্বিতীয় স্তরের জ্ঞান অর্জনের পর তৃতীয় স্তরে, এবং তৃতীয় স্তরের জ্ঞান অর্জনের পর চতুর্থ স্তরে যেতে হবে। অর্থাৎ, জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে একটি ক্রমধারা অবলম্বন করতে হবে। প্রথম স্তরের জ্ঞান ৪ প্রকার। ১) কোর'আন। ২) রাসূল (স)-এর সুন্নাহ। অর্থাৎ, তাঁর আচার-ব্যবহার, জীবনী ও আমলসমূহ। ৩) ইজমা বা সকল মুসলিম যেসব বিষয়ে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন, তা জানা। ৪) সাহাবীদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কেউ কোর’আন না পড়ে কেবল হাদিস পড়া উচিত নয়, অথবা, কোর’আন ও হাদিস একসাথে পড়তে হবে। এ দুটি মোটামুটি পড়া শেষ হলে, তারপর ইজমা ও সাহাবীদের ইতিহাস পড়তে হবে। দ্বিতীয়

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও আমার উত্তর

আহলে কোর'আনের একজন ভাই একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন। প্রথমে ঐ স্ট্যাটাসটা হুবহু তুলে দিচ্ছি, এর পর এই বিষয়ে আমার কয়েকটা কথা যুক্ত করছি। ____________ শেয়ার করা স্ট্যাটাস: ____________ //রাসুলের কথা, কাজ, মৌন সম্মতি সহ তার জিবনের সবকিছু যদি হাদিস হয়, তাহলে তার বেশিরভাগ গুলো মানেন না কেন? মিথ্যাবাদি কে? ☞ রাসুল তার হাদিস মানতেন না ৷ কিন্তু আপনারা কেন মানেন ৷ ☞ রাসুল চারটা বিয়ে করেছেন যখন যখন যে বয়সের মেয়েকে আপনারা কেন সেই সমযের সেই বয়সের মেয়ে বিয়ে করেন না? ☞ রাসুল মদিনার রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, সুতরাং আপনাকেও হতে হবে ৷ ☞ রাসুল হিজরত করেছিলেন, আপনি করেন না কেন? ☞ রাসুল মিরাজ করেছেন, আপনিও করুন ৷ অনুসরন তো এটাই তাইনা? ☞ রাসুল মেষ চরাতেন, আপনি কি করছেন? সুন্নাত মানেন না কেন? ফাজলামি?? ☞ রাসুল গুহায় দিন যাপন করতেন, আপনি কই করেন? এটা কি সুন্নাত নয়? ☞ রাসুল রুটি খেতেন, আপনি রকমারি খাবার খেয়ে রাসুলের সুন্নাত অবমাননা করেন কেন? ফাজলামি পাইছেন? ☞ রাসুল হুদায়বিয়ার সন্ধি করেছেন, এটাও কি সুন্নাত ৷ তাহলে পালন করুন? হুদায়বিয়ার সন্ধি করুন? ☞ রাসুল নাকি গরিব ছিলেন? আপনি কেন টাকাওয়ালা? সুন্নাত কি অবমাননা হ

ফেব্রুয়ারি মাসটা কেন শোকের মাস?

ফেব্রুয়ারি মাসটা হলো একটি শহীদি মাস। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ - মিশরে ব্রাদারহুডের ৯ তরুণকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ - বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক মানুষ নিহত ও শহীদ হন। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫ - আমেরিকার ইসলাম প্রচারক ও ইসলামী চিন্তাবিদ ম্যালকম এক্সকে একটি বক্তৃতায় গুলি করে হত্যা করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ - বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মিছিলে আসা তরুণদের ওপর গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০০৯ - বাংলাদেশের ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয় বিদেশি নির্দেশনায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ - মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইদীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে মিছিলে আসা তরুণদেরকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ - তুরস্কের রেফা পার্টি তথা একটি ইসলামী পার্টি ক্ষমতা আসার ৬ মাসের মাথায় তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, এবং অসংখ্য মুসলিমকে হত্যা করা হয় এবং জেলে নেয়া হয়।

"প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" বইটির পক্ষে বিপক্ষে

"প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ টাইপের বই কি সবার পড়া উচিৎ?" শিরোনামে ইজহারুল ইসলাম ভাইয়া একটা লিখা লিখেছেন। এখানে তিনি এ ধরণের বই সাধারণ মানুষকে না পড়তে বলেছেন। আমার যতটুকু ধারণা, আরিফ আজাদ ভাই কোনো আলেম বা স্কলারের জন্যে এসব বই লিখেন না। তিনি এসব বই লিখেন জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদের পাঠকদের জন্যে। এ কারণেই, ফেব্রুয়ারির বইমেলায় এক সময় জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো হতো বেস্ট সেলার, আর এখন আরিফ আজাদ ভাইয়ের বইগুলো হচ্ছে বেস্ট সেলার। ইমাম গাজালি বলতেন, ফিকাহ হলো ফরজে কিফায়া। এটা সবার পড়ার দরকার নেই। এর মানে এই নয় যে, ফিকাহ পড়া খারাপ। আরিফ ভাইয়ের "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" আলেম ও স্কলারদের পড়ার দরকার নাই, এর মানে এই নয় যে, "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" বইটা অপ্রয়োজনীয়। "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ"-এর মতো বইগুলো যদি বাজারে না থাকতো, তাহলে জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের বইগুলো-ই বেস্ট সেলার হতো। এখন আপনার সিদ্ধান্ত, আপনি কাকে বই মেলায় বেস্ট সেলার হিসাবে দেখতে চান? এবার ইজহারুল ইসলাম ভাইয়ের লেখাটার ভিতরে প্রবেশ করি। তিনি লিখেছেন - //১। হযরত মাওলানা আব্দুল

২৮ ফেব্রুয়ারি তুরস্কে কি ঘটেছিলো?

তুরস্কের ইতিহাসে ২৮ ফেব্রুয়ারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ১৯৯৭ সালের এই দিনে তুরস্কের ইসলামপন্থী রেফা পার্টিকে ৬ মাসের মাথায় ক্যুয়ের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ২০১৩ সালে মিশরের নির্বাচিত প্রতিনিধি মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতা গ্রহণের ১ বছরের মাথায় যেভাবে ক্যুয়ের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিলো, ঠিক একইভাবে ১৯৯৭ সালে তুরস্কের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নাজমউদ্দিন এরবাকানকে ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাসের মাথায় জোর করে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। মিশরে মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে সেক্যুলারগণ যেই যেই অভিযোগ এনেছিলো, তুরস্কে নাজমউদ্দিন এরবাকানের বিরুদ্ধেও সেক্যুলারগণ ঠিক একই অভিযোগ এনেছিলো। অর্থাৎ, নাজিমুদ্দিন এরবাকান ক্ষমতায় এসেই ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন। মিশরে এখন ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদের যেভাবে জেল-জুলুম ও ফাঁসি দেয়া হচ্ছে, তার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তুরস্কে। সেক্যুলারদের ভয়ে নারীরা ওড়না পরে রাস্তায় বের হতে পর্যন্ত পারতেন না। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সালে এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত মুসলিমদের ওপর এই অত্যাচার চলতে থাকে। এর কিছুদিন পর জনসমাবেশে একটি ইসলামী কবিতা বলার অপরাধে এরদোয়ানকে গ্রেফতার

হানাফি ও আহলে হাদিসের মৌলিক দ্বন্দ্ব।

হানাফিদের মতে, কোর’আন হলো ইসলামের প্রধান উৎস, এবং হাদিস হলো ইসলামের দ্বিতীয় উৎস। তাই, কোনো হাদিস যদি কোর’আনের বিপরীতে যায়, তাহলে হাদিসটি বাদ দিয়ে কোর’আনের উপর আমল করতে হবে। হানাফিরা তাদের দলীল হিসাবে একটি হাদিস উপস্থাপন করেন। রাসূল (স) বলেন – مَا جَاءَكُمْ عَنِّي فَاعْرِضُوُه عَلَى كِتَابِ اللهِ، فَمَا وَافَقَهُ فَأَنَا قُلْتُهُ، وَمَا خَالَفَهُ فَلَمْ أَقُلْهُ [الرسالة للشافعي 1/ 224] “আমার পক্ষ থেকে কোনো হাদিস তোমাদের নিকট আসলে সেটাকে আল্লাহর কিতাবের সাথে মিলাও। যদি সে হাদিস কোর’আনের সাথে মিলে, তাহলে সেটা আমার কথা। আর যদি সে হাদিস কোর’আনের সাথে না মিলে, তাহলে সেটা আমার কথা নয়।” উপরোক্ত হাদিসের ভিত্তিতে হানাফিদের সামনে যে কোনো হাদিস আসলে তারা সেটাকে কোর'আনের মানদণ্ডে যাচাই করে নেয়। কোর'আনের সাথে মিললে হাদিসটি গ্রহণ করে, না মিললে বাদ দেয়। হানাফিদের কাছে যে কোনো হাদিসের বর্ণনাকারীদের সনদের চেয়েও মূল হাদিসটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, ইমাম শাফেয়ী কিংবা আহলে হাদিসের মতে, কোর’আন ও হাদিস উভয়টি রাসূল (স) থেকে আমরা পেয়েছি। সুতরাং কোর’আন ও হাদিস উভয়টির মর্যাদা সমান। তাই, কোর’আন দিয়ে

কোর'আনের এতো ব্যাখ্যা কেন?

কোর'আনের এতো ব্যাখ্যা কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আছে নিম্নক্ত হাদিসে। سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: سَمِعْتُ هِشَامَ بْنَ حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ، يَقْرَأُ سُورَةَ الفُرْقَانِ عَلَى غَيْرِ مَا أَقْرَؤُهَا، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقْرَأَنِيهَا، وَكِدْتُ أَنْ أَعْجَلَ عَلَيْهِ، ثُمَّ أَمْهَلْتُهُ حَتَّى انْصَرَفَ، ثُمَّ لَبَّبْتُهُ بِرِدَائِهِ، فَجِئْتُ بِهِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ: إِنِّي سَمِعْتُ هَذَا يَقْرَأُ عَلَى غَيْرِ مَا أَقْرَأْتَنِيهَا، فَقَالَ لِي: «أَرْسِلْهُ» ، ثُمَّ قَالَ لَهُ: «اقْرَأْ» ، فَقَرَأَ، قَالَ: «هَكَذَا أُنْزِلَتْ» ، ثُمَّ قَالَ لِي: «اقْرَأْ» ، فَقَرَأْتُ، فَقَالَ: «هَكَذَا أُنْزِلَتْ إِنَّ القُرْآنَ أُنْزِلَ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ، فَاقْرَءُوا مِنْهُ مَا تَيَسَّرَ» [صحيح البخاري 3/ 122] উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন - "আল্লাহর রাসূল (স) আমাকে যেভাবে সূরা ফুরকান শিখিয়েছেন, এবং আমি যেভাবে সূরা ফুরকান পড়ি, তা থেকে ভিন্নভাবে হিশাম ইবনু হাকীমকে সূরা ফুরকান পড়

নামাজের মধ্যে এতো মতপার্থক্য কেন? - ইমাম শাফেয়ী

হানাফিরা একভাবে নামাজ পড়ে, এবং সালাফীরা অন্যভাবে নামাজ পড়ে। নামাজের মধ্যে এতো পার্থক্য কেন? এ প্রশ্নটির উত্তর আমরা পাবো ইমাম শাফেয়ীর রিসালাহ গ্রন্থে। বিভিন্ন মতপার্থক্য বিষয়ে ইমাম শাফেয়ীকে একজন প্রশ্ন করছেন, এবং তিনি তার জবাব দিচ্ছেন। সেখান থেকে অল্প একটু অনুবাদ করে দিচ্ছি। ===== প্রশ্নকারী : নামাজে তাশাহুদের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য রয়েছে। অথচ, ইবনে মাসুদ বলেছেন, “রাসূল (স) সাহাবীদেরকে যেভাবে কোর’আনের সূরা শিখিয়েছেন, ঠিক সেভাবেই তাদেরকে তাশাহুদ শিখিয়েছেন”। সবগুলো তাশাহুদ (التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ) ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি’ এই তিনটি শব্দ দিয়ে শুরু হয়েছে। এখানে আপনি কোনটি গ্রহণ করেছেন? ইমাম শাফেয়ী : উমর (রা) মসজিদের মিম্বারে উঠে একটি তাশাহুদ বলেছিলেন, এবং সেটা তিনি মানুষকে শিখিয়েছিলেন। তা হলো – التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، الزَّاكِيَاتُ لِلَّهِ، الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلَّهِ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أشْهَدُ أنْ لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ، وَأَشْهَدُ أنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ [الرسالة للش

আমি সত্যের পক্ষে, সে সত্য কে বলেছে, তা ব্যাপার নয়।

আমেরিকার মুজাহিদ ম্যালকম এক্স বলেছেন - I'm for truth, no matter who tells it. অর্থাৎ, "আমি সত্যের পক্ষে, সে সত্য কে বলেছে, তা ব্যাপার নয়।" উস্তাদের এই কথাটাকে আমি এভাবে বুঝি। ধরুন, বাংলাদেশের ফরিদ উদ্দিন মাসুদ শেখ হাসিনার দালালি করেন, অথবা, মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি খুনি সিসির দালালি করেন। ফরিদ উদ্দিন মাসুদ অথবা মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি যা যা বলেন, ধরুন, তার ৯০% কথা ভুয়া বা মিথ্যা। যদি তাদের ১০% কথা জ্ঞানের কথা হয় এবং তা আমার কাছে সত্য মনে হয়, তাহলে উস্তাদ ম্যালকম এক্সের সূত্রানুযায়ী তাদের কথা নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। একইভাবে, কোনো আলেমের ৯৯% কথা সত্য হলেও যদি ১% কথা মিথ্যা মনে হয়, তাহলে উস্তাদ ম্যালকম এক্সের সূত্রানুযায়ী ঐ আলেমের মিথ্যা কথাটা প্রত্যাখ্যান করতেও আমার কোনো দ্বিধা নেই।

আহলে হাদিসগণ সবসময় কি সহিহ হদিস মানেন?

আহলে হাদিসগণ সবসময় কি সহিহ হদিস মানেন? উত্তর হলো - না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আহলে হাদিসের ইমামগন সরাসরি রাসূল (স) থেকে সহিহ হাদিস পাবার পরেও সেটি আমল করেন না। যেমন, ফজরের সালাত একটু দেরি করে পড়ার ব্যাপারে রাসূল (স)-এর একটি সহিহ হাদিস রয়েছে। রাসূল (স) বলেন - أسْفِرُوا بِالفَجْرِ، فَإِنَّ ذَلِكَ أعْظَمُ لِلْأَجْرِ [الرسالة للشافعي 1/ 282] [سنن الترمذي ت شاكر 1/ 289] “তোমরা ফজরের নামাজ একটু আলো হলে পড়বে। কেননা তাতে অনেক সাওয়াব রয়েছে।” [তিরমিজি - ১৫৪] এ হাদিসটি সহিহ হবার পরেও এই হাদিসের উপর আহলে হাদিসগণ আমল করেন না। তারা ফজরের সময় হবার সাথে সাথেই ফজরের নামাজ পড়ার কথা বলেন। উপরের সহিহ হাদিসটি কেন আহলে হাদিসগণ আমল করেন না, তার কিছু কারণ হাজির করেছেন ইমাম শাফেয়ী ও আহলে হাদিসের অন্য আলেমগণ। ইমাম শাফেয়ীর মতে, একটু আলোতে ফজরের নামাজ পড়ার কথা সহিহ হাদিসে থাকলেও সাহাবী ও তাবিঈনগন অন্ধকারে ফজরের নামাজ পড়ার প্রমাণ রয়েছে। এর দলীল হিসাবে ইমাম শাফেয়ী আয়েশা (রা)-এর একটি হাদিস উল্লেখ করেন। আয়েশা (রা) বলেন – كُنَّ النِّسَاءُ مِنَ المُؤْمِنَاتِ يُصَلِّينَ مَعَ النَّبِيِّ الصُّبْحَ، ثُمَّ يَنْصَرِفْنَ وَهُنَّ

প্লেটোর 'রিপাবলিক' ও ইমাম শাফেয়ীর 'রিসালা'র মধ্যে মিল কি?

'প্লেটোর রিপাবলিক' কিতাবটির সাথে উসুলে ফিকহ বিষয়ে লিখিত ইমাম শাফেয়ীর 'রিসালাহ' বইটির অনেক মিল রয়েছে। 'প্লেটোর রিপাবলিক' বইতে প্লেটো ও তার বন্ধুরা দার্শনিক সক্রেটিসকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে, আর সক্রেটিস যুক্তি-বুদ্ধির মাধ্যমে এক এক করে সবগুলো প্রশ্নের সহজ-সরল উত্তর দিয়ে যায়। 'রিসালাহ' গ্রন্থেও ইমাম শাফেয়ীর ছাত্ররা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন, আর ইমাম শাফেয়ী তার যুক্তি-বুদ্ধির মাধ্যমে এক এক করে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান। এখানে পার্থক্য হলো, সক্রেটিস কেবল যুক্তি-বুদ্ধি দিয়েই উত্তর শেষ করেন, কিন্তু, ইমাম শাফেয়ী তার যুক্তি-বুদ্ধি দেয়া শেষ হলে কোর'আন ও হাদিস থেকে উদ্ধৃতি প্রদান করেন।

মাওলানা মহিউদ্দিন খানের অনুবাদে ভুল কেন?

যারা অনুবাদ করেন, তারা জানেন, অনুবাদ করাটা খুবই ঝামেলা ও বিরক্তিকর কাজ। আক্ষরিক অনুবাদ করতে গেলে পাঠক সঠিক অর্থ উদ্ধার করতে পারেন না। আবার, ভাব অনুবাদ করতে গেলে পাঠক মূল লেখককে বুঝতে পারেন না। এই সমস্যার সমাধান হলো একটি অনুবাদ একজনের করার পরে আরো কয়েকজন তা সম্পাদনা করা। তাহলে অনুবাদ কিছুটা মান সম্মত হয়। বাংলা ভাষায় যারা ইসলামী বই অনুবাদ করেছেন, সেগুলো সম্ভবত ভালোভাবে সম্পাদনা করা হয়নি। যেমন, মাওলানা মহিউদ্দিন খানের আমি খুব ভক্ত। কিন্তু উস্তাদের কোর'আনের অনুবাদটা এবং এহইয়াউল উলুম বইটা সম্ভবত কেউ সম্পাদনা করেননি। ফলে, সেখানে অনেক ক্রটি রয়ে গেছে। উদাহরণ স্বরূপ নিচের আয়াতটি দেখুন। وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَيْكُمْ حُجَّةٌ إِلَّا الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِي وَلِأُتِمَّ نِعْمَتِي عَلَيْكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ [٢:١٥٠] আর তোমরা যেখান থেকেই বেরিয়ে আস এবং যেখানেই অবস্থান কর, সেদিকেই মুখ ফেরাও, যাতে করে মানুষের জন্য তোমাদের সা

নারী দিবসের পাঁচমিশালি

নারী দিবসের পাঁচমিশালি ১ "নারীদের খারাপ আচরণের উপর ধৈর্য ধারণ করার মধ্যেও নানা প্রকার এবাদত নিহিত রয়েছে, যার সাওয়াব নফল এবাদতের চেয়ে কম নয়"। [ইমাম গাজালি, এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, মুহিউদ্দীন খান অনূদিত, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৯] ২ বিয়ে করার বিপদ থেকে এমন ব্যক্তিই নিরাপদ থাকবে, যে বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান, নারী চরিত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞ, নারীদের কটু কথায় ধৈর্যশীল এবং তাঁদের হক আদায় করতে আগ্রহী। কিন্তু এখন তো অধিকাংশ লোক নির্বোধ, কটুভাষী, কঠোর স্বভাব এবং বেইনসাফ। যদিও নিজের জন্যে খুব ইনসাফ প্রত্যাশী। এরূপ লোকদের জন্যে অবিবাহিত থাকাই অধিক নিরাপদ। [ইমাম গাজালি, এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, মুহিউদ্দীন খান অনূদিত, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৭] ৩ ইসলাম ছাড়া পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম বা দর্শন আছে কি, যারা বলে নারীর (মায়ের) পায়ের নিচে জান্নাত? - এরদোয়ান। ৪ উসমানী খিলাফতের ৬২৫ বছরে শরিয়া আইনের মাধ্যমে মাত্র ১ জন যিনাকারিণীকে হত্যা করা হয়েছিলো। কিন্তু আমাদের সেক্যুলার দেশে ধর্ষণ, জিনা ও অবাধ যৌনাচারের কারণে প্রতিদিন-ই নারীদের হত্যা করা হচ্ছে। ৫ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কেট, বাবার বাড়ী, স্বামীর বাড়ী, আত্মীয় স্বজনের বাড়ী,

ইজতিহাদ কি বন্ধ হয়ে গেছে? - ইমাম শাফেয়ী

ইসলামী বিষয়ে গবেষণা করা কিংবা ইজতিহাদ করার দরজা কি বন্ধ হয়ে গেছে? গবেষণা করতে গিয়ে কেউ যদি কোনো ভুল করে, তাহলে কি কোনো সমস্যা? এসব প্রশ্নের দারুণ উত্তর দিয়েছেন ইমাম শাফেয়ী তার রিসালাহ গ্রন্থের ইজতিহাদ অধ্যায়ে। ইমাম শাফেয়ীকে ইজতিহাদ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন একজন, এবং ইমাম শাফেয়ী তার উত্তর দিয়েছেন এই গ্রন্থে। উনাদের কথোপকথন থেকে একটি অংশ অনুবাদ করে দিচ্ছি। (১৩৭৭) উপস্থাপক – ইজতিহাদ বা গবেষণা করার জন্যে আপনি কিছু শর্ত উল্লেখ করেছেন। কিন্তু, কিসের ভিত্তিতে আপনি ইজতিহাদকে জায়েজ বলছেন? এর পক্ষে কি কোনো দলীল আছে? (১৩৭৮) ইমাম শাফেয়ী – হ্যাঁ। আল্লাহ তায়ালার একটি আয়াতের ভিত্তিতে (আমি ইজতিহাদ করাকে জায়েজ মনে করি)। আল্লাহ তায়ালা বলেন – وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ “তুমি যেদিক হতেই বের হও না কেন, মসজিদুল হারাম বা কাবার দিকে মুখ ফিরাও। এবং তুমি যেখানেই থাকো না কেন, ঐদিকে মুখ ফিরাও।“ [সূরা বাকারা - ১৫০] (১৩৭৯) উপস্থাপক – এ আয়াতে (شَطْرَهُ) শব্দের মানে কি? (১৩৮১) ইমাম শাফেয়ী - ধরুন, কেউ মসজিদুল হারামের দিক

মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছে, তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?

এ ধরণের প্রশ্নকে বলা হয় ক্যাটাগরিক্যাল মিস্টেক। অর্থাৎ, দুইটা বিষয়কে একই রকম ধরে নিয়ে প্রশ্ন করা। যেমন, A গুণ B = AB; এখানে A ও B গুন করার ফলে AB পাশাপাশি বসেছে। কিন্তু, ২ গুন ৩ = ২৩ হয় না; এখানে A ও B এর মতো ২ ও ৩ কে পাশাপাশি বসালে গুণ হবে না। কেন? কারণ এখানে দুইটা এককের ক্যাটাগরি একে অপরের চেয়ে ভিন্ন। A ও B এক ধরণের ক্যাটাগরির একক, এবং ২ ও ৩ আরেক ধরণের ক্যাটাগরির একক। অথবা, ধরুন, কেউ যদি বলেন, চতুর্ভুজের চারটি কোন রয়েছে, তাহলে বৃত্তের কয়টা কোন রয়েছে? এ প্রশ্নের মধ্যেও ক্যাটাগরিক্যাল মিস্টেক রয়েছে। অর্থাৎ, চতুর্ভুজ ও বৃত্ত একই রকম নয়। তাই চতুর্ভুজের মতো বৃত্তের কোনো কোন হয় না। আল্লাহকে মানুষের মতো মনে করাও একই ধরণের ক্যাটাগরিক্যাল মিস্টেক। অর্থাৎ, মানুষ ও আল্লাহ এক নয়। মানুষের সৃষ্টিকর্তা আছে, কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টিকর্তা নেই। যেমন, চতুর্ভুজের কোন আছে, কিন্তু বৃত্তের কোন নেই।

প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ২টি পদ্ধতি

মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী, তাই সে চিন্তা করে, এবং তার মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। মানুষের মনে জাগা প্রশ্নের দুইভাবে উত্তর দেয়া যায়। ১) প্রশ্নকারীর প্রশ্ন করার কারণ বুঝে উত্তর দেয়া। যেমন, সক্রেটিস, প্লেটো, রাসূল (স), সাহাবীগণ এবং ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ীর মতো উত্তর দেয়া। তারা প্রশ্নকারীকে উত্তর দিয়ে সন্তুষ্ট করতেন। ২) প্রশ্নকারীর উত্তর দিতে না পেরে আধুনিক হুজুরদের মতো প্রশ্নকারীকে বেয়াদব, বেদায়াতী, ভ্রান্ত বা কাফের ফতোয়া দিয়ে দেয়া।

নারীদের মসজিদে নামাজ পড়া সম্পর্কে এরদোয়ান

নারীদের মসজিদে নামাজ পড়া সম্পর্কে এরদোয়ান বলেন – জার্মানে একটি বক্তব্যে আমি বলেছি, নারীদের মসজিদে আসা উচিত। আজকে তুরস্কের এক নারী কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, “আপনার বক্তব্য শুনে আমরা খুব খুশি হয়েছি। তাই আমরা একটি জানাজার নামাজে অংশ গ্রহণ করতে গিয়েছি, কিন্তু মসজিদে থেকে আমাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর আমি আমার বান্ধবীদেরকে মসজিদের বাইরে এক জায়গায় একসাথে নামাজ পড়তে বললাম।” খুব আশ্চর্যের বিষয়! এখনো এসব ফালতু নিয়মকে ইসলামের নামে চালিয়ে দেয়ার মতো চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমাদেরকে এমন চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি পেতে হবে। মসজিদে নারীরা প্রবেশ করতে পারবে না বলে কোর’আনের কোনো আয়াত আছে নাকি? কোনো হাদিস আছে নাকি? আমি এমন কিছু না পড়েছি কখনো, না দেখেছি কখনো, না শুনেছি কখনো, না জেনেছি। আমাকে আমার শিক্ষকরা এমন কিছু কখনো শেখাননি। আচ্ছা, আমাদের মা আয়েশা (রা) মসজিদে হাদিসের ক্লাস নিতেন না? তাহলে কারা, কি চিন্তা করে এসব বলছে যে, নারীদের মসজিদে প্রবেশ নিষেধ? এবার এসব ট্যাবু বা ভুয়া নিয়মগুলোকে ভেঙ্গে ফেলতে হবে। এ কাজটা প্রথমত ইসলামী ফাউন্ডেশন বা ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে করতে হবে। এসব ভুয়া নিয়মগুলো দূর না করলে খুবই ঝামেলাপূর

১৪০০ বছর আগে ও পরে, নারীদের নামাজ

১৪০০ বছর আগে ______ - আপনি কে? = আমরাহ বিনতু ‘আবদুর রহমানের বোন। - আপনি তো একজন নারী। আপনি কি রাসূল (স)-এর যুগে জুম্মার নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়তেন? = কেবল যেতাম না, আমি এতবার গিয়েছি যে, রাসূল (স)-এর মুখ থেকে সূরা কাহাফ শুনতে শুনতে, তা আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। রাসূল প্রত্যেক জুমায় মিম্বারে দাঁড়িয়ে এই সূরাটা পড়তেন। [সূত্র: মুসলিম - ১৮৯৭] - আচ্ছা, আপনার নাম কি? = আমার নাম উম্মে হিশাম বিনতু হারিসা। - আপনিও তো একজন নারী। আপনি কি রাসূল (স)-এর যুগে জুম্মার নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়তেন? = জ্বি, প্রায় দেড়-দুই বছর যাবৎ আমাদের ও রসূলুল্লাহ (সা)-এর রান্না ঘর একই ছিল। আমি কেবল রাসূল (সা)-এর মুখ থেকে শুনেই সূরা কাহাফ মুখস্থ করে ফেলেছি। তিনি প্রতি জুমু‘আর দিন মিম্বারে দাঁড়িয়ে জনগণের উদ্দেশে প্রদত্ত খুতবায় এ সূরাটি পড়তেন। [সূত্র: মুসলিম - ১৯০০] _______ ১৪০০ বছর পরে _______ - আপনার নাম কি? = রাইহানা বিনতে আলী। - আপনি কি জুম্মার নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়েন? = জ্বি না। আমাদের মসজিদে নারীদের নামাজ পড়া নিষেধ। হুজুর বলেছেন, নারীরা মসজিদে নামাজ পড়া ফিতনা। তাই নারীদেরকে তাদের ঘরেই নামাজ পড়তে হবে।

ইসলামী রাষ্ট্রের ধারণা ১০০ বছরের বেশি নয়

'ইসলামী রাষ্ট্র' পরিভাষাটি সর্বপ্রথম রশিদ রিদা ১৯২৪ সালে ব্যবহার করেছিলেন। এর আগে খিলাফত, মুলক ও বিভিন্ন পরিভাষা চালু থাকলেও 'ইসলামী রাষ্ট্র' পরিভাষাটি ছিলো না। 'ইসলামী রাষ্ট্র' পরিভাষাটির মাঝে অনেক সমস্যা রয়েছে। থিউরি অনুযায়ী 'ইসলামী রাষ্ট্র' হলো এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে কোনো অন্যায় বা জুলুম হবে না। কিন্তু, প্রায়োগিকভাবে আমরা দেখি, সাহাবীদের পরবর্তী সময়ে কোনো খিলাফত বা রাষ্ট্র-ই অন্যায় বা জুলুমমুক্ত ছিলো না। যেহেতু সাহাবীদেরকে ভুলের ঊর্ধ্বে মনে করা হয়, সুতরাং সাহাবীদের দ্বারা পরিচালিত খিলাফত সম্পূর্ণ ইসলামী হতে পারে। কিন্তু, মানুষ মাত্রই ভুল করে। ফলে মানুষ দ্বারা পরিচালিত কোনো রাষ্ট্র-ই সম্পূর্ণ নির্দোষ বা সম্পূর্ণ ইসলামী হতে পারে না। বর্তমান যুগে 'ইসলামী রাষ্ট্র' নামে কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নিজের অন্যায় ও জুলুমকেও ইসলামের নামে চালিয়ে দেয়ার সুযোগ থাকবে।

কাফের বানানোর সহজ পদ্ধতি

কাউকে কফের, মুনাফিক বা ইহুদিদের দালাল বলে দেয়া খুব সহজ। যেমন ধরুন, আমি বললাম, "নারীদের মসজিদে যেতে বাধা দেয়া যাবে না, এটা কোর'আন ও হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। অথচ, আধুনিক হুজুররা ফেতনার কথা বলে নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করে।" এ কথার বিপরীতে, ধরুন, একজন লিখলেন, "আপনি হুজুরদের দোষ দেয়ার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সাহাবীদেরকে দোষ দিয়েছেন। কারণ, সাহাবীদের কেউ কেউ নারীদের মসজিদে যেতে বারণ করেছিলেন।" উপরের মন্তব্যটির সমর্থনে তখন, ধরুন, আরেকজন এসে লিখলেন, "যারা নারীদেরকে মসজিদে যেতে বলে, তারা সাহাবীদের বিরুদ্ধে কথা বলে। আর, যারা সাহাবীদের বিরুদ্ধে কথা বলে, তারা কাফের।" এভাবে যে কোনো মানুষের যে কোনো কথাকে আপনি নিজ থেকে ব্যাখ্যা করে তাকে কাফের বানিয়ে দিতে পারবেন। এটা খুবই সহজ। ইবনে সিনার মতে, যারা যুক্তির ব্যবহার জানেন না, তাদের অধিকাংশ সিদ্ধান্ত-ই ভুল হয়। যেমন, ধরুন, আমি খুব সহজে প্রমাণ করবো - "সুমন সাহেব একটা কুকুর"। কিভাবে? যুক্তি হলো, সুমন সাহেব গরুর হাড় খায়, কুকুরও গরুর হাড় খায়। সুমন সাহেব ও তার কুকুর একই খাবার খায়। তাই, সুমন সাহেব ও তার কুকুরের মাঝে কোনো পা

জাফর ইকবালদের মুনাফিকি

শাহবাগ আন্দোলনের সময়ে আমি ঢাবির আবাসিক হলে ছিলাম। ফলে, প্রতিদিন আমাদেরকে বাধ্য হয়ে শাহবাগে আসতে হতো। তখন সেই আন্দোলনে বিভিন্ন বিশিষ্টজনেরা এসে এসে বক্তব্য দিতেন। যেমন, প্রথম আলো থেকে কয়েকটি বক্তব্য এখানে তুলে দিচ্ছি। ১ "অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা আজ জেগে উঠেছ, বিজয় হবেই, হবে।...কেউ আমাদের পরাজিত করতে পারবে না।’ মুহম্মদ জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘তরুণ সমাজকে নিয়ে আমার এত দিন ভুল ধারণা ছিল। আমি ভাবতাম, তরুণেরা শুধু ব্লগে লেখালেখি করে, ফেসবুকে কমেন্টস (মন্তব্য) লেখে আর লাইক দেয়। আমার সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ জনপ্রিয় এ লেখক তরুণদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা কাজের সময় কাজ করবে, পড়ার সময় পড়বে, গান গাইবার সময় গান করবে। আর যখন দেশের প্রয়োজনে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে তখন কঠোর আন্দোলনে পথে নামবে, প্রতিবাদে জ্বলে উঠবে। আবেগাপ্লুত এ শিক্ষাবিদ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা শহীদ জননী প্রয়াত জাহানারা ইমামের কথাও এ সময় স্মরণ করেন।" ২ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছে।...ত

সূফিজম জ্ঞানের একটি শাখা, এর আছে কিছু মেথডলজি

আমাদের দেশের 'শিক্ষিত' ও 'অশিক্ষিত' উভয় শ্রেণির মানুষ সুফিজম সম্পর্কে অজ্ঞ। 'অশিক্ষিত' মানুষরা সুফিজম না বুঝার কারণে পীর, দরগা ও মাজারে গিয়ে পড়ে থাকেন; এবং শিরক-বিদায়াতে যুক্ত হন। আর, 'শিক্ষিত' মানুষরা সুফিজম না বুঝার কারণে সত্যিকারের সূফীদের গালাগালি করেন। সুফিজম ইসলামের অন্যান্য স্কুলের মতো একটি স্কুল। ফিকহের যেমন একটি চিন্তার মেথডলজি রয়েছে, তেমনি সুফিজমেরও একটি মেথডলজি রয়েছে। রাষ্ট্র বিজ্ঞান যেমন জ্ঞানের একটি শাখা, ফিকহ যেমন জ্ঞানের একটি শাখা, তেমনি সুফিজমও জ্ঞানের একটি শাখা। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল, ফিকহের জনক আবু হানিফা, আর সুফিজমের জনক জুনাইদ বাগদাদী। সুফিজম কেবল খানকার-দরবার শরীফের বিষয় নয়, এটি একটি একাডেমিক বিষয়ও বটে। সুফিজমের মূল বিষয় তাওহীদ। কেবল কর্মের শিরক নয়, বরং চিন্তার শিরক থেকে মুক্ত থাকাই সুফিজমের উদ্দেশ্য। যেমন, আল্লাহকে দেখা যাবে কি যাবে না, এ নিয়ে ইসলামের বিভিন্ন স্কুলের বিভিন্ন মত রয়েছে। মুতাজিলা স্কুলের মতে, আল্লাহকে দুনিয়া-আখিরাত কোথাও দেখা যাবে না। আহলে সুন্নাতের মতে, আল্লাহকে দুনিয়াতে দেখা যাবে না, কিন্তু আখিরাতে দেখা যাবে

ইমাম আশয়ারি ও গাজালী কেন বিতর্ক ছেড়ে দিলেন

মানুষ জ্ঞান অর্জনের শুরুতে বিতার্কিক হতে চেষ্টা করে। এবং বিতর্কের মাধ্যমে নিজেকে জয়ী করতে চায়। কিন্তু পরবর্তীতে জ্ঞান বাড়ার সাথে মানুষ বুঝতে পারে, বিতর্কের মাধ্যমে নিজে জয়ী হওয়া যায়, অন্যের মন জয় করা যায় না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমাম আশয়ারী তাঁর জীবনের ৪০ বছর পর্যন্ত মুতাজিলা ছিলেন, এবং বিতর্কের মাধ্যমে নিজেকে জয়ী করার চেষ্টা করতেন। পরবর্তীতে তিনি মুতাজিলাদের চিন্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন, এবং কিছুটা সুফিতত্ত্ব ও কিছুটা কালামের সংমিশ্রণে আশয়ারী স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেন। ইমাম গাজালিরও একই অবস্থা। জীবনের প্রথমে তিনি বড্ড বিতার্কিক ছিলেন। এরপর তাঁর জ্ঞান বাড়ার সাথে সাথে তিনি বিতর্ক ছেড়ে দিয়ে সুফি স্কুলের দিকে ধাবিত হন। বিতর্ক ছেড়ে দেয়ার এমন অনেক উদাহরণ আমাদের ইমামদের রয়েছে। তবে, সবার জীবন-ই শুরু হয়েছে বিতর্ক চর্চার মধ্য দিয়ে। বিতর্ক চর্চার শুরু না করলে জ্ঞানের চর্চা শুরু হয় না।

"ইসলামী রাষ্ট্র" ছাড়া কি মুসলিমরা চলতে পারে? - জাসের আউদা

মুসলিমরা কি অমুসলিম দেশে বাস করতে পারে? অথবা, "ইসলামী রাষ্ট্র" ছাড়া কি মুসলিমরা চলতে পারে? - এ প্রশ্নটির উত্তর দিচ্ছেন উস্তাদ Jasser Auda। তিনি বলেন - "আল্লাহ তায়ালা কোর'আনে অনেক মুসলিমের উদাহরণ দিয়েছেন, যাদের কোনো 'ইসলামী রাষ্ট্র' ছিলো না। এমনকি, ইসলামে আমরা দেখি যে, রাষ্ট্র ছাড়াই কর্তৃত্বের কথা বলা হচ্ছে। রাষ্ট্রের ধারণা জন্ম লাভ করেছে ১০০ বছর আগে। পৃথিবীতে নানা ধরণের রাষ্ট্র ছিলো; আসল বিষয় হলো, কিভাবে মুসলিমরা সে রাষ্ট্রগুলোর সাথে আচরণ করেছে, কিভাবে রাষ্ট্রগুলোর কাজেকর্মে অংশ নিয়েছে, এবং কিভাবে ন্যায় বিচার ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে রাষ্ট্রকে সমর্থন করেছে। এবং কিভাবে মুসলিমরা সে রাষ্ট্রগুলোতে আল্লাহর ইবাদত করেছে। যে কোনো রাষ্ট্রের সরকার হতে পারে ন্যায়বান কিংবা জালিম। সরকার যদি ন্যায়বান হয়ে থাকে, তাহলে মুসলিমরা ঐ সরকারকে সাহায্য করতে হবে। যেমন, হজরত ইউসুফ (আ) তাঁর সময়ে মিশরের রাজাকে সাহায্য করেছিলেন। এমনকি মুসা (আ)-ও ফিরাউনকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন, যদি ফিরাউন মুসা (আ)-এর কথা শুনতো। অন্যদিকে, কোনো রাষ্ট্রে যদি অন্যায় চলতে থাকে, এবং সে রাষ্ট্র যদি মুসলিমদের দ্ব

নিউজিল্যান্ডের খ্রিষ্টান সন্ত্রাসীর হামলা

নিউজিল্যান্ডের খ্রিষ্টান সন্ত্রাসীটি নিরীহ মুসলিমদের হত্যা করার জন্যে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছিলো, সে অস্ত্রগুলোর উপর যাদের নাম লেখা, তারা ঐতিহাসিকভাবে মুসলিমদের শত্রু ও হত্যাকারী ছিলো। অর্থাৎ, আজকের খ্রিস্টান সন্ত্রাসীটি নিজেকে ঐতিহাসিক খ্রিস্টান সন্ত্রাসীদের উত্তরাধিকারী হিসেবে জানান দিয়েছে। এখানে ছবির মাঝে যে নামগুলো রয়েছে, তার একটি নাম হলো - মিলস অভিলিচ। কসোভা যুদ্ধে মিলস অভিলিচ উসমানী খেলাফতের সুলতান মুরাদকে হত্যা করেছিলো। অন্য জায়গায় লিখা, "ভিয়েনা ১৬৮৩"। এটাও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিলো। সুস্পষ্ট ভাবেই বুঝা যাচ্ছে, নিউজিল্যান্ডের আজকের হামলাটি নিরীহ মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি 'জেনোসাইড' বা গণহত্যার ছিলো। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন হামলা ছিলো না, বরং ঐতিহাসিক ভাবে মুসলিমদের উপর হামলার একটি ধারাবাহিকতার অংশ হিসাবে আজকের হামলাটি হয়েছে।

উসমানী খেলাফতের বিচার ব্যবস্থা

[১] উসমানী খেলাফত হলো মুসলিমদের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের খেলাফত। পৃথিবীর বিশাল একটি অঞ্চল প্রায় ৬২৫ বছর তাদের অধীনে ছিলো। এর অন্যতম একটি কারণ হলো, উসমানী খেলাফতের আইন, কানুন ও বিচার ব্যবস্থা ছিলো তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত। ব্রিটেন ও ফ্রান্স সহ তৎকালীন ইউরোপের অনেক দেশ উসমানী খেলাফতের আইন-কানুন ও বিচার ব্যবস্থা শেখার জন্যে ইস্তাম্বুলে আসতো, এবং নিজেদের দেশে গিয়ে সেসব আইন-কানুন প্রয়োগ করতো। [২] উসমানী খেলাফতের অধীনে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সহ সকল ধর্মাবলম্বীদের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিলো। অমুসলিমদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে বিবেচনা করা হতো। এবং মুসলিম ও অমুসলিমদেরকে সমান অধিকার প্রদান করা হতো। [৩] সুলতান মেহমেত ইস্তাম্বুল বিজয় করার পর খ্রিষ্টানদের সাথে একটি চুক্তি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, ইস্তাম্বুল বিজয়ের আগে যেভাবে খ্রিষ্টানদের ইবাদাত ও সংস্কৃতি পালন করার স্বাধীনতা ছিলো, ইস্তাম্বুল বিজয়ের পরেও ঠিক একইভাবে খ্রিষ্টানদেরকে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। কেউ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। [৪] ‘সুলতান সুলাইমান’ সিরিয়াল থেকে এখানে একটি ছোট্ট ভিডিও সংযুক্ত করে

ওসমানী খেলাফতের সময়ে ভিন্ন ধর্মের স্বাধীনতা

কেউ কেউ মনে করেন, তুরস্কের ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ খ্রিস্টানদের গির্জা 'আয়া সোফিয়া' দখল করে মসজিদ বানিয়ে খ্রিস্টানদের উপর জুলুম করেছেন। এখানে আসলে কোনো জুলুম হয়নি, বরং প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটি রাজনৈতিক নিয়ম মানা হয়েছে। রাসূল (স)-এর আগ থেকেই উপাসনালয়ে যাবতীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। কেউ যখন কোনো ভূখণ্ড জয় লাভ করতো, তখন সে ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় যে উপাসনালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা হতো, তা নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিতো। বাকি উপাসনালয়ে যে যার মতো ইবাদত করতে পারতো। যেমন, সিরিয়ায় ইহুদিদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপাসনালয় ছিলো। খ্রিস্টানরা সিরিয়া জয় করার পর ইহুদিদের সেই উপাসনালয়কে খ্রিস্টানদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে সেটাকে গির্জায় রূপান্তরিত করেছে। এরপর মুসলিমরা সিরিয়া জয় করার পর একই কারণে ঐ গির্জাকে মসজিদে পরিণত করেছে। এখন তার নাম The Mosque of Job. এ ছাড়া, সিরিয়ার সবচেয়ে বড় উমাইয়া মসজিদও একইভাবে সৃষ্টি হয়েছে। ইয়াহইয়া (আ) নির্মিত খ্রিস্টানদের একটি গির্জার সাথেই এই মসজিদটি নির্মাণ করেন ষষ্ঠ উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদ। ৭০৬ সালে। পরবর্তীতে সে গির্জাটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। একই ধারা

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

কামাল আতাতুর্ককে যেভাবে ব্যবহার করেন এরদোয়ান ও আমাদের শেখ মুজিব

বাংলাদেশের 'জাতির পিতা' শেখ মুজিব, এবং তুরস্কের 'জাতির পিতা' মোস্তফা কামাল। তাই, বাংলাদেশে শেখ মুজিবকে বাদ দিয়ে রাজনীতি করা যাবে না, যেমন তুরস্কে মোস্তফা কামালকে বাদ দিয়ে রাজনীতি করা যায় না। এরদোয়ান মোস্তফা কামালের খারাপ কাজগুলোকে বাদ দিয়ে কেবল ভালো কাজগুলোকেই নেন, এবং ভালো কাজের জন্যে মোস্তফা কামালের প্রশংসা করেন। জাতীয় সংসদের এক অধিবাসনে এরদোয়ান মোস্তফা কামালের ভালো কিছুদিক তুলে ধরেন। মোস্তফা কামাল কেমন মানুষ ছিলেন, তা বুঝানোর জন্যে এরদোয়ান বলেন - _________ "আপনাদেরকে এখানে গাজী মুস্তাফা কামালের একটি টেলিগ্রাফ পড়ে শুনাবো, যা আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন উদ্বোধন সম্পর্কে ১৯২০ সালের ২১ এপ্রিল লেখা হয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ টেলিগ্রাফ। আপনাদেরকে ও দেশবাসীকে এই টেলিগ্রাফটি খুব মনোযোগের সাথে শুনার অনুরোধ করছি। জরুরী টেলিগ্রাম, আনকারা, ২১ এপ্রিল ১৯২০। ১। আল্লাহর সাহায্যে ইনশাল্লাহ আগামী ২৩ এপ্রিল শুক্রবার জুমার নামাজের পরে আনকারায় জাতীয় সংসদ ভবন উদ্বোধন করা হবে। ২। দেশের স্বাধীনতা, মহান খিলাফত ও সুলতানাত রক্ষার মতো মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর সিদ্ধান্ত নেয়ার এই

বাংলা ভাষায় পাঠ্যবই না হবার সমস্যা ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা

আমাদের দেশের মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন চিন্তা উদ্ভাবন হয় না। এর কারণ কি? যে কোনো বইয়ের লেখক এক বা একাধিক প্রশ্ন ও সমস্যার সমাধান দেয়ার জন্যে বই লিখেন। ধরুন, মানুষের দুঃখের সময়ে তাকে আনন্দ দেয়ার জন্যেই হুমায়ুন আহমেদ উপন্যাস লিখতেন। এ বইতে সমস্যা কি আর সমাধান কি? তা বুঝা প্রয়োজন। এখানে সমস্যা হলো - মানুষের দুঃখ, আর সমাধান হলো - আনন্দ। যদি হুমায়ুন আহমদের উপন্যাস পড়ে আনন্দ মানুষ পায়, তাহলে তার উপন্যাস লেখা সার্থক। এবং পাঠক হিসাবে কেউ যদি হুমায়ুন আহমদের উপন্যাস পড়ে আনন্দ পায়, তাহলে পাঠক হিসাবে তিনি সার্থক। কিন্তু, কেউ যদি হুমায়ুন আহমদের উপন্যাস পড়ে আনন্দ না পায়, তাহলে তার জন্যে হুমায়ুন আহমদের উপন্যাস পড়া মানে সময়ের অপচয়। ঠিক একইভাবে, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বইগুলো পড়ানো হয়, সে বইগুলো কিছু সমস্যার সমাধান করার জন্যে লিখা হয়েছে। ধরুন, ইমাম আবু হানিফার 'ফিকহুল আকবর' বইটি কিছু সমস্যার সমাধান করার জন্যে লিখা হয়েছে। কেউ যদি 'ফিকহুল আকবর' পড়ে ঐ সমস্যাগুলো ধরতে পারেন, এবং এর সমাধানগুলো বুঝতে পারেন, তাহলে পাঠক হিসাবে তিনি সার্থক হবেন। কিন্তু, আরবি ভাষায় লিখিত ফিকহুল আকবর বইয়

আকল কাকে বলে?

কোর'আনের প্রচুর আয়াতে মানুষকে 'আকল' ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। 'আকল' শব্দের সঠিক বাংলা অর্থ হলো যুক্তি। আরবি ভাষায় আকল শব্দের অর্থ হলো একটি জিনিসের সাথে অন্য একটি জিনিসকে যুক্ত করা। যেমন, আরবি ভাষায় বলা হয় 'আকালা দাব্বাহ' (عَقَلَ الدَّابَّةَ), মানে পশুটিকে বাঁধলো। কোনো একটি তথ্যকে অন্য একটি তথ্যের সাথে যুক্ত করাকে বাংলায় যুক্তি বলা হয়, এবং আরবিতে তাকে আকল বলা হয়। কোর'আনে আকল শব্দটিকে কখনো ইসেম বা বিশেষ্য পদ আকারে ব্যবহার করা হয়নি, বরং সবসময় আকল শব্দটিকে ফেল বা ক্রিয়াপদ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, আকল মানেই একটি তথ্যের সাথে অন্য একটি তথ্যকে যুক্ত করা। আমরা অনেক সময় বলি, ছেলেটির আকল আছে, মানে, ছেলেটির যুক্তি আছে। কথাটা ভুল। যদি বলি, ছেলেটির কথায় যুক্তি আছে, তাহলে ঠিক আছে। কেননা এর মানে হলো, ছেলেটি যে কথা বলেছে, সে কথায় একাধিক তথ্যকে সঠিকভাবে যুক্ত করতে পেরেছে। সে যাই হোক, মূল কথায় আসি। কোর'আনের প্রচুর আয়াতে আকল ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। এর মানে একাধিক তথ্যকে যুক্ত করে ভিন্ন তথ্য হাজির করার কথা বলা হয়েছে। অথচ, মুসলিমরা এখন সবচেয়ে কম ব্যবহার করেন

নেতৃত্বের গুণাবলী - এরদোয়ান

____ এরদোয়ানকে একজন তরুণ ছাত্র প্রশ্ন করেন, "ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে ভালো নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে আপনি আমাদেরকে কি পরামর্শ দিবেন? এরদোয়ান বলেন - "চারটি শব্দ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১ - পড়াশুনা, ২ - চিন্তা করা, ৩ - কাজে বাস্তবায়ন করা, এবং ৪ - বাস্তবায়িত কাজের ফলাফলকে সূক্ষ্মভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা। প্রথমত অনেক পড়াশুনা করতে হবে, কিন্তু পড়াশুনাই করেই ক্ষান্ত হওয়া যাবে না। পড়াশুনার বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এরপর, কেবল কেবল চিন্তা-ভাবনা করাই যথেষ্ট নয়, এসব চিন্তা-ভাবনাকে জীবনে প্রয়োগ ঘটাতে হবে। চিন্তা-ভাবনাগুলোকে কেবল কাজে বাস্তবায়ন করাই যথেষ্ট নয়, এরপর এসব কাজের ফলাফল কি হলো, তা হিসাব-নিকাশ করতে হবে। এরপরেই সফলতা আসবে। এ সূত্র থেকে কখনো বের হয়ে গেলে হবে না। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের তরুণরা যদি সঠিকভাবে এই সূত্র মেনে চলে, তাহলে তারা অনেক বড় সফলতা পাবে। একইসাথে আমি কবি মোহাম্মদ আকিফের একটা কবিতা যুক্ত করছি, 'বড় বড় কথা বলো না, বেশি বেশি কথা বলো না, সাহস রাখবে মনে, অযথা কথা ও পেট মোটা (অর্থাৎ মাথা মোটা) ব্যক্তিদের কথা শুনো না, সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে, এবং সত্য বলবে।"

জ্ঞান অর্জনের একমাত্র পথ বই নয়

জ্ঞান অর্জনের একমাত্র পথ বই নয়। বই ছাড়াও নানাভাবে আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারি। ধরুন, আমরা একটি বই পড়লাম। বইয়ের প্রতিটি শব্দ ও প্রতিটি লাইন আমরা মনে রাখতে পারি না। কিংবা বইয়ের অনেকগুলো চিন্তা বই পড়ার সাথে সাথেই আমরা ভুলে যাই। তাহলে কষ্ট করে একটা বই পড়ে আমাদের কি লাভ হয়? উত্তর হলো, বই পড়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। একটা বই পড়ে যেমন আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করতে পারি, তেমনি একজন মানুষের সাথে থেকে, কিংবা একজন মানুষের সাথে কথা বলেও আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারি। অথবা, সামাজিক কোনো ঘটনা দেখে বা শুনেও আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারি। জ্ঞান অর্জনের জন্যে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনটাই হচ্ছে প্রধান, বই পড়া নয়।

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স)

সুখী হবার জন্যে "ইবনুল ওয়াক্ত"

একজন মানুষ নিজেকে সর্ব অবস্থায় সুখী ও শান্ত রাখার কৌশল হলো নিজেকে 'ইবনুল ওয়াক্ত' মনে করা। 'ইবনুল ওয়াক্ত' সুফিদের একটি পরিভাষা, তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হলো, নিজেকে 'ইবনুল ওয়াক্ত' মনে করা। 'ইবনুল ওয়াক্ত' মানে সময়ের সন্তান। ইবনুল ওয়াক্ত মানে হলো, ঠিক এই মুহূর্তটি নিয়ে চিন্তা করা। ঠিক এই মুহূর্তে আমি যেখানে বসে, শুয়ে, বা দাঁড়িয়ে আছি, সেটাই আমার জায়গা। এবং ঠিক এই মুহূর্তটি হলো সর্ব উৎকৃষ্ট সময়, এটা মনে করাই হলো ইবনুল ওয়াক্তের কাজ। অনেকেই অতীতের দুঃখ ও ব্যর্থতাকে ভুলতে পারেন না, আবার অনেকে সারাক্ষণ নিজের পূর্বপুরুষের গৌরব করেন। অতীতের জন্যে নিজেকে ব্যথিত বা উচ্ছ্বাসিত মনে না করাই ইবনুল ওয়াক্তের কাজ। অনেকে ভবিষ্যতের আশায় বর্তমান সময়কে গুরুত্ব দেন না। আজকের কাজ আগামীদিন করবেন ভাবেন। কিন্তু, ঠিক এই মুহূর্তের কাজ এখনি করার নাম ইবনুল ওয়াক্ত। মূলত যারা আল্লাহর উপরে সর্ব অবস্থায় ভরসা করতে পারেন, তাদেরকেই সূফীদের ভাষায় 'ইবনুল ওয়াক্ত' বলা হয়। সূফীদের এই ধারণাটি সহীহ বুখারীর একটি হাদিস থেকে জন্ম লাভ করেছে। ইবনে ওমর (রা) বলেন - إِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تَنْت

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না&quo

এরদোয়ানের প্রিয় বই

এরদোয়ানকে এক মেয়ে প্রশ্ন করেছেন, "কোন কোন বই পড়ে আপনার রাজনৈতিক চিন্তা গঠন হয়েছে?" এরদোয়ান দুটি বইয়ের নাম বললেন। একটি কবিতার বই, অন্যটি সূফী বই। প্রথম বইটির নাম সাফাহাত, লিখেছেন মুহাম্মদ আকিফ। আর দ্বিতীয় বইটির নাম ইদোলোজয়া ওরগুসু (ideodocya örgüsü), লিখেছেন নেজিপ ফাজেল। প্রথম বইয়ের লেখক কবি আকিফকে আমাদের দেশের ফররুখ কিংবা পাকিস্তানের ইকবালের সাথে তুলনা করা যায়। আর, নেজিপ ফাজেলের বইটাকে জালাল উদ্দিন রূমির মসনবীর সাথে তুলনা করা যায়। দেখুন, এরদোয়ানের মতো একজন মানুষের রাজনৈতিক চিন্তা তৈরি করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে একটি কবিতার বই এবং একটি সূফি বই। অথচ, বাংলাদেশি ইসলামিস্টরা মনে করেন, কবিতা এবং সূফীতত্ত্ব দিয়ে রাজনীতি হয় না।

ইসলামে এতো ভাগ কেন?

ইসলাম তো এক, তাহলে হানাফী, সালাফি, সুফি, মুতাজিলা, আশয়ারি, মাতুরিদি এতো ভাগ কেন? প্রথমেই একটি হাসপাতাল কল্পনা করুন। হাসপাতালের রোগীর সংখ্যা যখন খুব কম ছিলো তখন একজন ডাক্তার দিয়েই সব রুগীকে চিকিৎসা দেয়া হতো। কিন্তু, রুগীর সংখ্যা যখন বাড়তে লাগলো, তখন হাসপাতালের ডাক্তারের সংখ্যাও বাড়াতে হলো। এরপর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগের শ্রেণীবিন্যাস করতে শুরু করলো। নাক-কান-গলা বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, গাইনি বিভাগ, শিশু বিভাগ, ডাইবেটিস বিভাগ, ডেন্টাল বিভাগ ও সার্জারি বিভাগ সহ আরো বিভিন্ন বিভাগ। এখানে সবগুলো বিভাগের উদ্দেশ্য একটাই, রোগীকে সুস্থ করা; কিন্তু, রুগী ও ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ায় হাসপাতালকে রোগের শ্রেণীবিন্যাস করে বিভিন্ন বিভাগ গঠন করতে হয়েছে। অথবা, একটি গাছ কল্পনা করুন। যে কোনো গাছ যখন জন্ম লাভ করে, তখন সে গাছের একটিমাত্র কাণ্ড থাকে। কিন্তু, সময়ের সাথে সাথে গাছটি যখন বড় হতে থাকে, তখন গাছের ডালপালা বাড়তে থাকে। ঠিক তেমনি, হিজাজে যখন ইসলাম এসেছে, তখন হিজাজে মানুষের সংখ্যা খুবই কম ছিলো। যেমন, বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা ছিলো ৩১৩ জন, আর কুরাইশদের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১০০০ জন। আশেপাশের রোমান ও পারস্য সাম্রাজ

ধর্মের বিষয়ে রাসুল যা করেননি, তা করা কি বিদায়াত?

ইসলাম ধর্মের বিষয়ে কোনো নতুন গবেষণা বা ইজতিহাদ করতে গেলেই কেউ কেউ বলেন, রাসূল (স) ইসলাম ধর্মকে পূর্ণ করে গিয়েছেন, সুতরাং ইসলাম ধর্মে নতুন গবেষণা করার সুযোগ নেই। কিংবা, ইসলামে নতুন কোনো চিন্তার স্কুল বা মাজহাবেরও প্রয়োজন নেই। অথচ, বুখারীর নিম্নের হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (স)-এর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি করেননি এমন অনেক নতুন কাজ ও গবেষণা সাহাবীরা করেছেন। ইসলামের প্রথম ইজতিহাদের উদাহরণ এই হাদিসটি। যায়দ ইবনু সাবিত (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন - ইয়ামামাহ্‌র যুদ্ধে বহু লোক শহীদ হবার পর আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রা) আমাকে ডেকে পাঠালেন। এ সময় উমার (রা)-ও তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। আবূ বকর (রা) বললেন, "উমার আমার কাছে এসে বললেন, ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদদের মধ্যে কোর'আনে হাফেজের সংখ্যা অনেক। আমি আশংকা করছি, এমনিভাবে যদি কোর'আনে হাফেজগণ শাহীদ হয়ে যান, তাহলে কুরআন মাজিদের বহু অংশ হারিয়ে যাবে। অতএব আমি মনে করি যে, আপনি কুরআন সংকলনের নির্দেশ দিন।" উত্তরে আমি উমারকে বললাম, "যে কাজ আল্লাহ্‌র রসূল (সা) করেননি, সে কাজ তুমি কীভাবে করবে? উমার জবাবে বললেন, "আল্লাহর কসম! এটা একটি উত্তম

ইসলামে কি পরিবর্তনশীল? - ড আহমদ রাইসুনী

ইসলামে দুটি বিষয় আছে। একটি হলো অপরিবর্তনশীল বিষয়, যা ইসলামের একেবারেই মূল বিষয়। আরেকটি বিষয় হলো পরিবর্তনশীল, যা বিভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতির আলোকে পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ, ইসলাম দুটি বিষয় নিয়ে এসেছে। একটি হলো ওহী, অন্যটি হলো ইজতিহাদ বা গবেষণা। ইজতিহাদ রাসূল (স)-এর যুগ থেকে শুরু হয়েছে, তিনি সাহাবাদেরকে ইজতিহাদ বা গবেষণা করা শিখিয়েছেন, এবং গবেষণা করার বৈধতা দিয়েছেন। ইজতিহাদ করার বৈধতা সকল আলেম, জ্ঞানী, চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় নেতাদের রয়েছে। তারা ধর্মীয় সমস্যা সমাধানের জন্যে ইজতিহাদ করতে পারবেন। কিন্তু, তাঁদেরকে ধর্মের মূলনীতি ও ধর্মের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের আলেম ও স্কলারদের উচিত ইসলামের অপরিবর্তনশীল বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে বর্তমান সময়ের সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করার জন্যে ইজতিহাদ করা। - উস্তাদ আহমদ রাইসুনী, মুসলিম স্কলারদের সভাপতি।

ভয়ের কারণে অনেকে গবেষণা করেন না - উস্তাদ আহমদ রাইসুনি

বর্তমানে ইজতিহাদ বা গবেষণা করার জন্যে এমন কঠিন কঠিন সব শর্ত দেয়া হয় যে, যেনো কেউ ইমাম আবু হানিফার মতো হবার আগে ইজতিহাদ করতে পারবে না। অথচ, ইজতিহাদ বা গবেষণা করতে গেলে ভুল-ভ্রান্তি হবেই। প্রথমে সহজ সহজ বিষয়ে গবেষণা শুরু করতে হবে। এরপর নিজের ভুল-ভ্রান্তিগুলো শুধরিয়ে আস্তে আস্তে বড় চিন্তাবিদ বা মুজাদ্দিদ হওয়া সম্ভব হবে। ৮ম শতাব্দীতে সুফকী নামের এক আলেম চার মাজহাবের উপর যথেষ্ট জ্ঞান রাখতেন। কিন্তু এতো জ্ঞান থাকার পরেও তিনি নিজে ইজতিহাদ না করে ইমাম শাফেয়ীর মাজহাব অনুসরণ করেন। অথচ, একই সময়ের অন্য একজন আলেম তথা ইবনে তাইমিয়া কোনো মাজহাব অনুসরণ না করে নিজে ইজতিহাদ ও গবেষণা করার কারণে আজকে সারা বিশ্বের মানুষ উনার থেকে উপকার লাভ করছে। কেবল জ্ঞানের অভাবে নয়, অনেকে ভয়ের কারণে ইজতিহাদ বা গবেষণা করেন না। ইবনে আরাবির সুন্দর একটা প্রবাদ আছে, "জ্ঞানীর ভুল সংশোধনটাও একটি জ্ঞান"। সুতরাং ভুল হলেও গবেষণা ও ইজতিহাদের পথে চলতে হবে। - উস্তাদ আহমেদ রাইসুনী, মুসলিম স্কলারদের সভাপতি।

আকল বা যুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বানী

আকল বা যুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বানী। ১ রাসূল (স) বলেন - مَا اكْتَسَبَ الْمَرْءُ مِثْلَ عَقْلٍ يَهْدِي صَاحِبَهُ إلَى هُدًى، أَوْ يَرُدُّهُ عَنْ رَدًى [أدب الدنيا والدين ص: 17] "মানুষ আকল বা যুক্তি-বুদ্ধির মতো কোনো কিছু অর্জন করেনি। আকল মানুষকে সত্যের পথ দেখায়, অথবা, বিতর্ক থেকে রক্ষা করে।" ২ রাসূল (স) আরো বলেন - لِكُلِّ شَيْءٍ عُمِلَ دِعَامَةٌ وَدِعَامَةُ عَمَلِ الْمَرْءِ عَقْلُهُ فَبِقَدْرِ عَقْلِهِ تَكُونُ عِبَادَتُهُ لِرَبِّهِ [أدب الدنيا والدين ص: 17] "প্রতিটি জিনিসের একটি স্তম্ভ বা মেরুদণ্ড থাকে। আর মানুষের কাজের মেরুদণ্ড হলো যুক্তি বা আকল। মানুষ যতবেশি ইবাদাত করে, তাঁর যুক্তি ততবেশি বাড়ে।" ৩ কোর'আনে বলা হয়েছে, গোনাহগার বান্দা জাহান্নামের দরজায় গিয়ে আফসোস করে বলবে - لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ "যদি আমরা (রাসূলের কথা) শুনতাম, অথবা যুক্তি-বুদ্ধির ব্যবহার করতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামের অধিবাসী হতাম না" [সূরা মূলক - ১০] ৪ ওমর (রা) বলেন - أَصْلُ الرَّجُلِ عَقْلُهُ، وَحَسَبُهُ دِينُهُ، وَمُرُوءَتُهُ خُلُقُ

আকল ও যুক্তি-বুদ্ধির প্রকারভেদ - আল-মাওয়ারদি

"কোনো বিষয় বা বস্তুর বাস্তবতা জানা, এবং ভালো ও মন্দের পার্থক্য করাই যুক্তি বা আকলের কাজ। আকল দুই প্রকার। ১) জন্মগত বা সহজাত আকল এবং ২) পৃথিবী থেকে অর্জিত আকল। সহজাত আকল হলো আসল আকল। তবে এর নির্দিষ্ট সীমানা রয়েছে, এই আকল বাড়েও না, এবং কমেও না। এই সহজাত আকল দ্বারাই সমস্ত পশু-প্রাণী থেকে মানুষকে আলাদা করা হয়। আর দ্বিতীয় প্রকার আকল যখন পরিপূর্ণ হয়, তখন মানুষ পূর্ণ মানুষে পরিণত হয়। যেমন সালেহ বিন আবদুল কুদ্দুস বলেন - إذَا تَمَّ عَقْلُ الْمَرْءِ تَمَّتْ أُمُورُهُ ... وَتَمَّتْ أَمَانِيهِ وَتَمَّ بِنَاؤُهُ [أدب الدنيا والدين ص: 18] যখন মানুষের আকল পরিপূর্ণ হয়, তখন তার ব্যক্তিত্ব, সততা ও মানসিক গঠন পরিপূর্ণ হয়।" - আবুল হাসান আল-মাওয়ারদি, দীন ও দুনিয়ার শিষ্টাচার।

জ্ঞানের প্রকারভেদ - ইমাম গাজালি

ইমাম গাজালির মতে জ্ঞান প্রথমত তিন প্রকার। ১) শুধুমাত্র আকল দ্বারা অর্জিত জ্ঞান। অথবা, নিরেট যুক্তি নির্ভর জ্ঞান। যেমন, পাটি গণিত, বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতি, ইঞ্জিনিয়ারিং, পদার্থ, রসায়ন ইত্যাদি। এসব জ্ঞানের সাথে ওহীর কোনো সম্পর্ক না থাকলেও এসব জ্ঞান দ্বারা মানুষের লাভ ছাড়া কোনো ক্ষতি হয় না। ২) কেবল ওহী দ্বারা অর্জিত জ্ঞান। অথবা, নিরেট ওহী নির্ভর জ্ঞান। যেমন, কোর'আন ও হাদিস। এসব জ্ঞানের ক্ষেত্রে যুক্তির কোনো প্রয়োজন নেই। কেবল মুখস্থ শক্তি থাকলেই এসব জ্ঞান যে কেউ অর্জন করতে পারে। ৩) যুক্তি ও ওহীর সংমিশ্রিত জ্ঞান। এটি আবার ৪ প্রকার। ক) দর্শন। এর অধীনে রয়েছে সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস, জীববিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, ইত্যাদি। খ) কালাম। এর অধীনে রয়েছে মুতাজিলা, সালাফি, হানাফি, শাফেয়ী, হাম্বলী, আশয়ারি, মাতুরিদি, ইত্যাদি স্কুলের জ্ঞান। গ) উসুল। এর অধীনে রয়েছে উসুলুত তাফসীর, উসুলুল হাদিস, উসুলুল ফিকহ ইত্যাদি। ঘ) তাসাউফ। এর অধীনে রয়েছে আখলাক, আচরণ, ভালোবাসা, ভয়, মোটিভেশন, আখিরাত ইত্যাদি। শুধু আকল নির্ভর জ্ঞানের জন্যে কিছু সূত্র মুখস্থ করলেই হয়, এবং শুধু ওহী নির্ভর জ্ঞানের জন্য

নোমোফবিয়া বা মোবাইল হারিয়ে ফেলার ভয়

নোমোফবিয়া মানে মোবাইল হারিয়ে ফেলার ভয়। ইংরেজি No Mobile Phobia থেকে Nomophobia এসেছে। আমাদের মনে সারাদিন যত ভয় কাজ করে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো নোমোফবিয়া; অর্থাৎ মোবাইল চুরি হবার বা হারিয়ে যাবার ভয়। মোবাইল এখন আমাদের শরীরের-ই একটি অংশের মতো হয়ে গেছে। ফলে, মোবাইল চুরি হলে বা নষ্ট হয়ে গেলে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। কোনো কাজ করতে আর ভালো লাগে না। আমার ফেইসবুক প্রোফাইলের ছবিটি নোমোফবিয়ার একটি উদাহরণ। যাই হোক, এই নোমোফবিয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার অনেক উপায় আছে। একটি উপায় হলো ফেইসবুকে কাউকে লাইক না দেয়া। ফলে, অন্যরাও আপনাকে লাইক দিবে না। এবং এর ফলে ফেইসবুক ও মোবাইলের প্রতি ভালোবাসাও আস্তে আস্তে কমে যাবে।