সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ধর্ম লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ইসলামের একতা ও একটি গাছ

ইসলামকে একটি গাছের সাথে তুলনা করি। ধরুন, একটি আম গাছ। গাছটির শক্ত ও লম্বা একটি কাণ্ড আছে, অনেকগুলো শাখা প্রশাখা আছে, অনেকগুলো পাতা আছে এবং গাছে অনেকগুলো মিষ্টি আম আছে। এছাড়া, গাছটির বেশ কিছু শেকড় আছে। সম্পূর্ণ আম গাছটি হলো ইসলাম। গাছের যে একটি শক্ত কাণ্ড আছে, তা হলো ঈমান। গাছের যে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা আছে, তা হলো আমাদের শিয়া, সুন্নি, মাজহাব, সালাফী, তাবলীগ, জামায়াতে ইসলাম, আহলে হাদিস, এবং ইত্যাদি। গাছের যে অনেকগুলো পাতা আছে, সেগুলো হলো ব্যক্তি মুসলিম। গাছের ফলগুলো হলো আমাদের ভালো কাজ। এবং গাছের শেকড় হলো আমাদের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক। এবার হিসাবটা মিলিয়ে ফেলি। ১ প্রত্যেক গাছের একটি কাণ্ড থাকে। কোনো গাছের কাণ্ড যত শক্ত হয়, সে গাছের শাখা-প্রশাখাগুলো তত আত্ম-নির্ভরশীল হতে পারে। তেমনি, মুসলিমদের ঈমান যত শক্তিশালী হয়, মুসলিমরা তত আত্ম-নির্ভরশীল হতে পারে। ২ কোনো গাছের একটি শক্ত কাণ্ড থাকলে, তার শাখা-প্রশাখার দ্বারা সে গাছের কোনো সমস্যা হয় না, বরং তা সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটায়। কিন্তু গাছের কাণ্ড যদি দুর্বল হয়, তখন অতিরিক্ত শাখা-প্রশাখার কারণে গাছটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। তেমনি, মুসলিমদের ঈমান যদি অত...

বহুবিবাহ সম্পর্কে আল কোর'আন

কোর'আনে যেমন তালাকের বিধান আলোচনা করা হয়েছে, তেমনি বহুবিবাহের কথাও আলোচনা করা হয়েছে। তালাক দেয়ার আগে যেমন অনেক শর্ত রয়েছে, তেমনি বহু বিবাহ করার জন্যেও অনেক শর্ত রয়েছে। কোর'আনের যে আয়াতে বহুবিবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তা হলো সূরা নিসার ৩ নং আয়াত। এ আয়াতের শুরুতেই একটি শর্ত দেয়া হয়েছে, এবং শেষে একটি শর্ত দেয়া হয়েছে; আয়াতের মাঝখানে একটি বাক্যে বহুবিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, কমপক্ষে দুটি শর্ত সাপেক্ষে বহুবিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেন - وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّا تَعُولُوا "(১)যদি তোমরা অসহায় নারীদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না বলে আশংকা করো, তাহলে তোমরা নারীদের মধ্য থেকে দুই, তিন, চারজনকে বিয়ে করো। (২) যদি তোমরা (স্ত্রীদের মাঝে) সুবিচার করতে পারবে না বলে আশংকা করো, তাহলে একজনকেই বিয়ে করবে, অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে। আর এতেই পক্ষপাতিত্ব করার ...

অধুনিক যুগের শুরু

কেউ কেউ মনে করেন, আধুনিক যুগের শুরু হয়েছে ১৫ বা ১৬ শতাব্দীর পর থেকে। কিন্তু, উইলিয়াম মাভোর [William Fordyce Mavor] সহ অনেক পশ্চিমা ইতিহাসবিদ মনে করেন, মুহাম্মদ (স) এর আগের সময় হলো প্রাচীন যুগ, এবং মুহাম্মদ (স)-এর পরের যুগ হলো আধুনিক যুগ। অর্থাৎ, মুহাম্মদ (স)-এর মাধ্যমেই আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছে। বিশ্বের ইতিহাস লেখার সময় উইলিয়াম মাভোর আধুনিক যুগের শুরু করেছেন রাসূল (স)-এর সময় থেকে। মাভোরের মতে, রাসূল (স)-এর আগমনের পর বিশ্বের ইতিহাস সম্পূর্ণ পালটে যায়। অর্থাৎ, রাসূল (স)-এর কারণে বিশ্বের মানুষ প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগে প্রবেশ করে। বাকিটা উইলিয়াম মাভোরের "Universal History : Ancient and Modern" থেকেই দেখুন।

পহেলা বৈশাখ প্রসঙ্গে ড আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর

পহেলা বৈশাখ নিয়ে আমি যতগুলো আর্টিকেল পড়েছি ও বক্তব্য শুনেছি, সবচেয়ে মূল্যবান ও বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা করেছেন উস্তাদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর। তাঁর মতো বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশে এখন নেই বললেই চলে। আসলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সঙ্কট হলো জ্ঞানী লোকের সঙ্কট। যাই হোক, পহেলা বৈশাখ নিয়ে উস্তাদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর খুবই একাডেমিক কিছু কথা বলেছেন এ ভিডিওতে। সেখান থেকে কয়েকটা পয়েন্ট তুলে দিচ্ছি। ১) পহেলা বৈশাখ একটি অবৈ জ্ঞানিক, কুসংস্কারপূর্ণ, অযৌক্তিক, অমানবিক ও জমিদারদের খাজনা আদায়ের উৎসব। ২) পশ্চিম বঙ্গের পহেলা বৈশাখের সাথে বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের অনেক পার্থক্য রয়েছে। পশ্চিম বঙ্গের পহেলা বৈশাখ হলো একটি সামাজিক উৎসব, কিন্তু বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখ একটি রাজনৈতিক উৎসব। ৩) বাংলাদেশের সেক্যুলারগণ পহেলা বৈশাখকে মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে মুসলিমদের ধর্মীয় পরিচয় দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। এবং সমাজ থেকে ইসলামী মূল্যবোধ উঠে যাচ্ছে। ৪) পহেলা বৈশাখ হলো একটি পুঁজিবাদী উৎসব। ইসলামী উৎসবের সাথে পহেলা বৈশাখের পার্থক্য রয়েছে। ইসলামী উৎসবের উদ্দেশ্য হলো ত্যাগ, আর পুঁজিবাদী পহেলা বৈশাখের উদ্দেশ্য হলো ভোগ। ইসলামী উৎসবে ধনীরা ...

বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের সঙ্কট কি? (নাকিব আল আত্তাস এর সাক্ষাতকার)

শায়েখ হামজা ইউসুফ : প্রথমেই বলে নিচ্ছি যে, আমি আপনার চিন্তা দ্বারা অনেক উপকৃত হয়েছি। আপনার যতগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, সবগুলো বই আমি পড়েছি। আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হলো, বর্তমান মুসলিম বিশ্বের মৌলিক সংকট কি? সাইয়েদ নাকিব আল আত্তাস : আমি আমার বইগুলোতে বলেছি, বর্তমান মুসলিম বিশ্বের সঙ্কট হলো আদবের সঙ্কট। এখানে আমি "আদব" শব্দটিকে ক্লাসিক্যাল অর্থে ব্যবহার করছি। আদব হলো প্রজ্ঞার প্রতিফলন। কারণ, আদব আসে নবীদের জ্ঞান থেকে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনি আদব শিখতে পারবেন না। এমনকি, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেও আদব অর্জন করা যায় না। এ কারণে আপনি দেখবেন, কিছু মানুষের জ্ঞান থাকলেও তাদের আদব নেই। আমার কাছে আদবের সংজ্ঞা হলো এমন – 'ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করাকে আদব বলে'। এখানে 'ন্যায়' বলতে আমি বুঝাচ্ছি সকল ভালো গুণাবলীর সমষ্টিকে। ন্যায় হলো সকল ভালো গুণাবলীর সমষ্টি, তাই এটি সকল ভালো গুণাবলীর শীর্ষে অবস্থান করে। এ কথাটা কোর'আনেও বলা হয়েছে। আল্লাহ বলছেন - "নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানতের হকদারকে তাদের আমানাত ফিরিয়ে দাও। আর তোমরা মানুষের মাঝে যখন বিচার-মীম...

আমরা কেন কোর'আন পড়ি না?

শত ইচ্ছে থাকলেও আমরা নিয়মিত কোর'আন পড়তে পারি না। কিন্তু, অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফেইসবুকে না এসে আমরা থাকতে পারি না। এর কারণ কি? ১) ফেইসবুক আমাদের হাতের কাছেই থাকে, কিন্তু কোর’আন আমাদের হাতের কাছে থাকে না। ২) মোবাইল দিয়ে কোর’আন পড়ার সময়ে ফেইসবুকে কোনো ম্যাসেজ বা নোটিফিকেশন আসলে কোর’আন রেখে আমরা ফেইসবুকে চলে যাই। ৩) অজু ছাড়া যখন তখন ফেইসবুক ধরা যায় এবং পড়া যায়, কিন্তু কোর’আন অজু ছাড়া ধরা যায় না। ৪) কোর’আন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে পড়তে হয়, এবং খতম করতে হয়; কিন্তু ফেইসবুক খতম করার কোনো পদ্ধতি নেই। ৫) ফেইসবুক পড়লে আমরা বুঝি, এবং এতে আমাদের মনে নতুন নতুন অনেক চিন্তা আসে। কিন্তু কোর’আন পড়লে আমরা বুঝি না, এবং আমাদের মনে নতুন কোনো চিন্তাও আসে না। এ ছাড়া আরো অনেক কারণেই আমরা কোর’আনের চেয়ে ফেইসবুককে বেশি ভালোবাসি, এবং ফেইসবুকে বেশি সময় দেই। এখন প্রশ্ন হলো, এসব সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কি?

আমার সফলতার মূলমন্ত্র মৃত্যুকে স্মরণ

“আজকে যদি আমার জীবনের শেষ দিন হয়, তাহলে আমি এখন যে কাজটি করছি, তা কি করতাম?” – এটি সফলতার একটি মন্ত্র। পৃথিবীর সফল মানুষদের একজন হলেন স্টিভ জবস। তিনি ছিলেন বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান 'অ্যাপল' এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। জীবনে তিনি এত বড় সফলতা অর্জন করার পিছনে যে প্রশ্নটি ছিলো, তা হলো – "আজ যদি আমার জীবনের শেষ দিন হতো, তাহলে আমি এখন যা করছি, তা কি করতেম?" স্টিভ জবস তাঁর জীবনে সফলতার কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে বলেন – “যখন আমার বয়স ১৭ বছর ছিলো, তখন আমি একটা প্রবাদ পড়েছিলাম – "তুমি যদি প্রতিদিন এমন ভেবে জীবন-যাপন করতে পারো যে, আজকে তোমার জীবনের শেষ দিন; তাহলে একদিন তুমি নিশ্চয় সফল হবে”। এ প্রবাদটা আমাকে খুবই প্রভাবিত করেছিলো। এটা পড়ার পর থেকে গত ৩৩ বছর প্রতিদিন সকালে আমি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম, এবং নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতাম, “আজকে যদি আমার জীবনের শেষ দিন হয়, তাহলে আজকে আমি যা করতে যাচ্ছি, তা কি করতাম?” টানা কয়েকদিন এ প্রশ্নটির উত্তর যদি “না” হতো, তাহলে আমি ভাবতাম, আমার কিছু একটা পরিবর্তন করতে হবে। জীবনে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে যে কথাটি, তা হলো – “আমি খু...

জিকির ও তাসবীহ এর মাঝে পার্থক্য

চিন্তা-ভাবনাহীন ‘আল্লাহ, আল্লাহ এবং সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ ’ বলাকে জিকির বলা হয় না, বরং তাসবীহ বলা হয়। আসমান ও জমিনের সকল সৃষ্টিকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পড়তে হয়। যেমন, মানুষের শরীরের সব রক্তকে হৃদপিণ্ড একবার তার নিজের কাছে নিয়ে আসে, আবার ছেড়ে দেয়, এটাই হলো তার তাসবীহ। নদী সাগরের পানে বয়ে চলে, এটাই নদীর তাসবীহ। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, প্রত্যেকে প্রত্যেকের কক্ষ পথে চলতে থাকে, এটাই তাদের তাসবীহ। অর্থাৎ, চিন্তা-ভাবনাহীনভাবে পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের সবকিছু নিজেদের দায়িত্ব পালন করাকেই তাসবীহ বলা হয়। যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেন – سَبَّحَ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর তাসবীহ করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা ৫৯/ হাসর – ১] অর্থাৎ, আসমান ও জমিনের সবাই আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পাঠ করলেও সবাই আল্লাহর জিকির করতে পারে না। আল্লাহ জিকির করার জন্যে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন। যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা চিন্তা-ভাবনা করার শক্তি দিয়েছেন, তারাই কেবল আল্লাহর জিকির করতে পারে। যেমন, আল্লাহ তায়...

‘যুক্তি’ ও ‘বুদ্ধি’ কাকে বলে?

‘যুক্তি’ শব্দটি ‘যুক্ত’ শব্দ থেকে এসেছে। কোনো একটি ঘটনাকে অন্য একটি ঘটনার সাথে যুক্ত করাকে বলে ‘যুক্তি’। যেমন, (ছেলেটি সারাদিন টিভি দেখতো,) ‘তাই’ (সে এখন চোখে কম দেখে।) এ বাক্যে, ‘টিভি দেখা’ ঘটনাটির সাথে ‘চোখে কম দেখা’ ঘটনাটিকে যুক্ত করে নতুন যে একটি বাক্য তৈরি করা হলো, এটাকেই যুক্তি বলে। একজন মানুষ পৃথিবীর যতবেশী ঘটনাকে পরস্পর যুক্ত করতে পারেন, তিনি ততবড় যুক্তিবাদী। ধর্ম মানুষকে সবচেয়ে বেশী যুক্তিবাদী হতে সাহায্য করে। কারণ, ধর্ম বলে, পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের সকল দৃশ্য ও অদৃশ্য বস্তু এক আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন। এবং পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের সকল ঘটনা এক আল্লাহ তায়ালার হুকুমেই ঘটে থাকে।। অর্থাৎ, পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের সকল বস্তু ও ঘটনাকে এক আল্লাহর সাথে যুক্ত করার নামই ধর্ম। যিনি সবকিছুকে এক আল্লাহর সাথে যুক্ত করতে পারেন, তিনি সবচেয়ে বড় যুক্তিবাদী বা ধার্মিক হতে পারেন। নাস্তিকগণ বিজ্ঞানের সাথে ধর্মকে যুক্ত করতে পারেন না, পৃথিবী সৃষ্টির আগের সময়ের সাথে পৃথিবী ধ্বংসের পরের সময়কে যুক্ত করতে পারেন না, ধনী ব্যক্তির সাথে গরিব ব্যক্তিকে যুক্ত করতে পারেন না। পৃথিবীর এমন অনেক কিছুর পিছনেই তারা ক...

ওহী ও জ্ঞানের সম্পর্ক

মুহাম্মদ (স)-এর আগে পৃথিবীতে যখনি কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছিলো, তখন আল্লাহ তায়ালা সেখানে একজন নবী বা রাসূল পাঠিয়ে সমস্যার সমাধান করে দিয়েছিলেন। কিন্তু, মুহাম্মদ (স) যখন বললেন যে, “আমি শেষ নবী, আমার পরে আর কোনো নবী নেই”, তখন নতুন একটি প্রশ্ন জাগ্রত হলো। মুহাম্মদ (স) মারা যাবার পরে পৃথিবীর সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা হবে? এ প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যায় রাসূল (স)-এর অন্য একটি হাদিসে। তিনি বলেন – إِنَّ العُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ، إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا العِلْمَ، فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ “নিশ্চয় জ্ঞানীগণ হলেন নবীগণের উত্তরসূরি। নবীরা টাকা-পয়সা কিছু রেখে যান না, তারা রেখে যান জ্ঞান। যে জ্ঞান অর্জন করে, সে সৌভাগ্য অর্জন করে।” [সুনানে আবু দাউদ – ৩৬৪১, এবং সুনানে তিরমিজি – ২৬৮২, মাকতাবায়ে শামেলা] এ হাদিসটি থেকে আমরা কিছু অনুসিদ্ধান্তে আসতে পারি –

ড. সাইয়্যেদ হোসাইন নসের

সত্য ও সুন্দরের ব্রত নিয়ে জ্ঞানের পথে ছুটে চলা এক দুরন্ত পথিকের নাম সাইয়্যেদ হোসাইন নাসের। তিনি একাধারে ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিক, ভাষাবিদ, শিক্ষাবিদ এবং অসংখ্য ইসলামী বইয়ের লেখক। তাঁর গভীর ও মৌলিক চিন্তা-ভাবনা দ্বারা কেবল মুসলিম দুনিয়া নয়, পূর্ব-পশ্চিমব্যাপী প্রচুর অমুসলিম চিন্তাবিদও প্রভাবিত হয়েছেন। ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, সভ্যতা, স্থাপত্য, কবিতা, আধুনিকতা, পরিবেশ, প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিকতা নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনা বিশ্বব্যাপী জ্ঞান-তাত্ত্বিকদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে। একবিংশ শতাব্দীর তরুণ চিন্তাবিদদের একজন শিক্ষক তিনি, এটাই তাঁর বড় পরিচয়। ১৯৩৩ সালে ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি সম্ভ্রান্ত সূফী পরিবারে হোসাইন নাসেরের জন্ম। পিতা সাইয়্যেদ ভ্যালিআল্লাহ ছিলেন তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ইরানের আধুনিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় তেহরান শহরের একটি ইসলামী স্কুলে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর তিনি চলে যান আমেরিকায়; সেখানে একটি স্কুলে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন। উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাক...

নারী নির্যাতন রুখতে বডিগার্ড

জাফর ইকবালের উপর ছোট্ট একটা হামলা হবার পর তাঁর জন্যে সরকার একাধিক বডিগার্ড নিয়োগ করেছে। জাফর ইকবাল যেহেতু সরকারের দালালি করেন, তাই তাঁর জীবনের মূল্য আছে, ফলে তাঁর জন্যে বডিগার্ডেরও প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ জনগণের জীবনের কোনো মূল্য নেই, তাই আমাদের জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করে না সরকার। আর, এ কারণে আমাদের কোনো বডিগার্ডও নেই। অথচ, যে কোনো সরকারের প্রধান কাজ হলো জনগণের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা। কিন্তু আমাদের ব্যর্থ ও স্বৈরাচারী সরকার জনগণের নিরাপত্তা না দিয়ে নিজেদের মন্ত্রী, এমপি এবং বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে বডিগার্ডের ব্যবস্থা করে রেখেছে। যাই হোক, কোনো সরকার জনগণের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারলো কি পারলো না, ইসলাম সে জন্যে বসে থাকে না। ইসলাম নিজেই মানুষের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসলাম যেহেতু নারীদের অনেক বেশী সম্মান প্রদান করে, তাই ইসলাম নারীদের জন্যে বডিগার্ড নিয়োগ করে দিয়েছে। ইসলাম বলে, কোনো নারী যখন অনিরাপদ পথে বের হবে, তখন অবশ্যই একজন বিনা পারিশ্রমিক বডিগার্ড অর্থাৎ জীবনসঙ্গী, স...

উসমানী খেলাফতের বিচার ব্যবস্থা

[১] উসমানী খেলাফত হলো মুসলিমদের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের খেলাফত। পৃথিবীর বিশাল একটি অঞ্চল প্রায় ৬২৫ বছর তাদের অধীনে ছিলো। এর অন্যতম একটি কারণ হলো, উসমানী খেলাফতের আইন, কানুন ও বিচার ব্যবস্থা ছিলো তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত। ব্রিটেন ও ফ্রান্স সহ তৎকালীন ইউরোপের অনেক দেশ উসমানী খেলাফতের আইন-কানুন ও বিচার ব্যবস্থা শেখার জন্যে ইস্তাম্বুলে আসতো, এবং নিজেদের দেশে গিয়ে সেসব আইন-কানুন প্রয়োগ করতো। [২] উসমানী খেলাফতের অধীনে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সহ সকল ধর্মাবলম্বীদের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিলো। অমুসলিমদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে বিবেচনা করা হতো। এবং মুসলিম ও অমুসলিমদেরকে সমান অধিকার প্রদান করা হতো। [৩] সুলতান মেহমেত ইস্তাম্বুল বিজয় করার পর খ্রিষ্টানদের সাথে একটি চুক্তি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, ইস্তাম্বুল বিজয়ের আগে যেভাবে খ্রিষ্টানদের ইবাদাত ও সংস্কৃতি পালন করার স্বাধীনতা ছিলো, ইস্তাম্বুল বিজয়ের পরেও ঠিক একইভাবে খ্রিষ্টানদেরকে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। কেউ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। [৪] ‘সুলতান সুলাইমান’ সিরিয়াল থেকে এখানে একটি ছোট্ট ভিডিও সংযুক্ত করে...

নবী ও রাসূলের মাঝে পার্থক্য কি?

অনেকে মনে করেন, যাদের উপর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে, তাঁরা হলেন রাসূল; এবং যাদের উপর কিতাব অবতীর্ণ হয়নি, তাঁরা হলেন নবী। আসলে এ কথাটি সম্পূর্ণ ঠিক নয়। কারণ, যাদের উপর কিতাব অবতীর্ণ হয়নি, কোর’আনে তাদেরকেও রাসূল বলা হয়েছে। যেমন, ইসমাঈল (আ) সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন – وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ ۚ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولًا نَّبِيًّا “এই কিতাবে ইসমাঈলের কথা বর্ণনা করুন। তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রসূল ও নবী।” [সূরা ১৯/ মারইয়াম – ৫৪] আল্লাহ তায়ালা নবী ও রাসূল উভয়ের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু পার্থক্য হলো, ওহীপ্রাপ্ত কোনো মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে যখন আল্লাহ কিছু বলেন, তখন তাঁকে নবী হিসাবে সম্বোধন করেন। আর যখন ওহীপ্রাপ্ত কোনো মানুষের দায়িত্ব নিয়ে আল্লাহ তায়ালা কোনো কথা বলেন, তখন তাঁকে রাসূল হিসাবে সম্বোধন করেন। যেমন, মুহাম্মদ (স) একজন নবী ও রাসূল। নবী মুহাম্মদ (স) ও রাসূল মুহাম্মদ (স) এর মাঝে পার্থক্য রয়েছে। ‘নবী’ মুহাম্মদ (স)-এর অনুসরণ করতে আমাদেরকে বলা হয়নি, বরং ‘রাসূল’ মুহাম্মদ (স)-এর অনুসরণ করার জন্যে আমাদেরকে বলা হয়েছে। এম...

দারুল ইসলাম ও দারুল হরব - শায়েখ আবদুল্লাহ বিন বাইয়াহ

"সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ইসলামী রাষ্ট্রের ধারণা ও আইনের পরিবর্তন হয়। যেমন, রাসূল (স) এর হাদিসে এসেছে যে, ঘোড়ার উপর যাকাত নেই। কিন্তু যখন মানুষ ঘোড়া ক্রয়-বিক্রয় করতে শুরু করলো, তখন উমর (রা) ঘোড়ার উপর যাকাত নির্ধারণ করে দিলেন। একইভাবে জমির ফসলের উপর নির্ধারিত ভূমিকর বা খারাজের নিয়মেও উমর (রা) পরিবর্তন এনেছেন। চোরের হাত কাটার নিয়মও তিনি পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেছেন, দুর্ভিক্ষের সময়ে চোরের উপর কোনো শাস্তি প্রদান করা যাবে না। ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যা থেকে আমরা  জানতে পারি, সময়ের পরিবর্তনের সাথে ইসলামী আইনের পরিবর্তন হয়েছিলো। আগের যুগে ইসলামি ফিকহে 'দারুল ইসলাম' ও 'দারুল হরব' নামে দুটি ভাগ ছিলো, কিন্তু এখন আর তা নেই। এখন সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো একে অপরের সাথে এতটাই জড়িত যে, নতুন একটি রাষ্ট্রের ধারণা জন্ম নিয়েছে। তাই, 'দারুল ইসলাম' ও 'দারুল হরব' নামে এমন কোনো রাষ্ট্রের ধারনা এখন আর অবশিষ্ট নেই।" - শায়েখ আবদুল্লাহ বিন বাইয়াহ। সূত্র:  https://www.youtube.com/watch?v=rgBwGmfXi5E [৫৪ মিনিট থেকে। আরবি বক্তব্যের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন শা...

হিজামাহ বা 'শিঙ্গা লাগানো' কি রাসূল (স)-এর সুন্নত?

রাসূল (স)-এর অনেক আগেই চীন, মিসর, ইরান ও আরবের কিছু এলাকায় চিকিৎসার জন্যে হিজামাহ বা 'শিঙ্গা লাগানো'র রীতি চালু ছিলো। কিন্তু রাসূল (স) নিজে শিঙ্গা লাগানোর কোনো পদ্ধতি নতুন করে সাহাবীদেরকে শেখাননি, কিংবা, শিঙ্গা লাগানোর জন্যে রাসূল (স)-এর নিকট কোনো ওহী নাযিল হয়নি। বর্তমানে কোনো ব্যক্তির অসুখ হলে যেমন ডাক্তার তাঁকে ঔষধ লিখে দেন, তেমনি আগের যুগের মানুষ অসুস্থ হলে ডাক্তার তাদের কাউকে হয়তো শিঙ্গা লাগাতে বলতেন। কিন্তু অসুখ না হলে শিঙ্গা লাগানোর কোনো প্রয়োজন ছিলো না। অর্থাৎ, শিঙ্গা লাগানোটা ধর্মীয় কোনো বিষয় ছিলো না, বরং এটি একটি ডাক্তারি পদ্ধতি ছিলো। অধিকাংশ আলিম ও ফকিহ মনে করেন, শিঙ্গা লাগানোটা মেডিক্যালের একটি ব্যাপার, এবং এটি একটি মুস্তাহাব বিষয়। কেউ ইচ্ছে করলে ডাক্তারি কারণে শিঙ্গা লাগাবে, অথবা কেউ ইচ্ছে করলে শিঙ্গা লাগাবে না, এখানে বাধ্যবাধকতার কিছু নেই। কারণ, শিঙ্গা লাগানো সুন্নাত নয়। ইমাম আল আদায়ী, আল মাজিরী, ইবনে কায়্যিম, আল বাহুতি, ইবনে হাজার, এবং ইমাম নববী সহ অধিকাংশ ইমান মনে করেন, শিঙ্গা লাগানো সুন্নাত নয়। যে হাদিস দ্বারা শিঙ্গা লাগানোকে সুন্নত সাব্যস্ত করা হয়, তা আসলে দুর্...

আল্লাহর উপর তাওয়াককুল মানে কি?

অনেকে মনে করেন, তাওয়াককুল মানে কোনো ধরণের মাধ্যম বা উপায় ছাড়াই আল্লাহর উপর ভরসা করা। যেমন, টাকা-পয়সা উপার্জন করা ছাড়াই রিজিকের জন্যে আল্লাহর উপর ভরসা করা। আসলে এটি তাওয়াককুলের পূর্ণ অর্থ নয়। ইবনে আতা-উল্লাহ তাঁর হিকমা গ্রন্থের ২য় লাইনে বলেন - তাওয়াককুল হলো সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা। সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্যে যদি কোনো মাধ্যম বা উপায় হাতের কাছে পাওয়া যায়, তাহলে তা গ্রহণ করা যেমন তাওয়াককুলের অন্তর্ভুক্ত। তেমনি, সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্যে যদি কোনো মাধ্যম বা উপায় হাতের কাছে না পাওয়া যায়, তাহলে ভিন্ন অসৎ কোন উপায় অবলম্বন না করাটাও তাওয়াককুলের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, রিজিকের জন্যে যদি সৎ উপার্জনের কোনো সুযোগ থাকে, তাহলে তা গ্রহণ করা মানেই আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করা। কিন্তু, রিজিকের জন্যে যদি কোনো সৎ উপার্জনের সুযোগ না থাকে, তাহলে অসৎ উপার্জনের দিকে না গিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করাটাও তাওয়াককুল। তাওয়াককুল মানে কোনো উপায় বা মাধ্যম ব্যতীত আল্লাহর উপর ভরসা করা নয়।

ইসলামী শরিয়াহ ও রাজনীতি - শায়েখ হামজা ইউসুফ

"আধুনিক যুগের মুসলিমরা মনে করেন যে, ইসলাম হলো একটি রাজনৈতিক দর্শন। আসলে এটি জায়োনিস্টদের একটি দাবী। জায়োনিস্টরা ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন করার জন্যে ইহুদি ধর্মকে একটি রাজনৈতিক দর্শনে পরিবর্তন করে ফেলে। আধুনিক মুসলিমরা ইহুদি জায়োনিস্টদের অনুসরণ করছে। জায়োনিস্টরা যেমন ইহুদি রাষ্ট্র কায়েম করতে চেয়েছিলো, আধুনিক মুসলিমরাও তেমনি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। অথচ, রাসূল (স) কেয়ামতের একটি আলামত হিসাবে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে, "মুসলিমরা তখন বনি ইসরাইল অনুসরণ করবে।" অনেকের ধারণা এমন যে, ইসলামী রাষ্ট্রে মানুষকে জোর করে ভালো মুসলিম বানানো যায়। আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ইসলামে কখনো এমন কোনো ধারণার অস্তিত্ব ছিলো না, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। যদি কেউ মনে করে যে, রাষ্ট্র ও সরকারের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়াহকে বাস্তবায়ন করতে হবে, তাহলে তিনি ভুল চিন্তা করছেন। কারণ আল্লাহ তায়ালা কোর'আনে বলছেন – وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَن فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا ۚ أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ তোমার প্রভু ইচ্ছা করলে পৃথিবীর সকল মানুষ ঈমান গ্রহণ করতো। কিন্তু তুমি মানুষকে ...

এনলাইটেনমেন্ট বা বুদ্ধির বিকাশে 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান'

ইউরোপের এনলাইটেনমেন্ট বা বুদ্ধির বিকাশ ঘটানোর জন্যে মুসলিমদের প্রচুর অবদান রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ আমরা মুসলিম দার্শনিক ইবনে তোফায়েল ও তাঁর ছাত্র ইবনে রুশদের কথা বলতে পারি। বুদ্ধির সাহায্যে কিভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, তা নিয়ে ইবনে তোফায়েল একটি উপন্যাস লিখেছিলেন, যার নাম হলো হাঈ ইবনে ইয়াকজান। এই উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন যে, কোনো মানুষ যদি বনে-জঙ্গলে বাস করে, এবং তার কাছে যদি কোর’আন-হাদিস বা কোনো ধর্মের বাণী না পৌঁছায়, তবুও সে তার যুক্তি-বুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহকে চিনতে পারবে। ইবনে তোফায়েলের এ দার্শনিক উপন্যাসটি ইউরোপে এতো বেশী জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, এ গ্রন্থকে তাঁরা একটি তত্ত্ব আকারে হাজির করেছেন। তত্ত্বটির নাম হলো - ‘ফিলোসফাস অটোডিডাকটাস’। ইউরোপের বিখ্যাত সব দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীদের চিন্তা ভাবনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে হাঈ ইবনে ইয়াকজান। যেমন, থমাস হবস (১৫৮৮-১৬৭৯), জন ওয়ালিস (১৬১৬-১৭০৩), জন লক (১৬৩২-১৭০৪), আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩-১৭২৭), গটফ্রিড লাইবনিজ (১৬৪৬-১৭১৬), জর্জ বার্কলি (১৬৮৫-১৭৫৩), ডেভিড হিউম (১৭১১-১৭৭৬), ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪), শোপেনহাওয়ার (১৭৮৮-১৮৬০) সহ আরো অ...

দার্শনিক জন লকের তত্ত্ব

দার্শনিক জন লকের (১৬৩২ - ১৭০৪) যাবতীয় তত্ত্ব বেড়ে উঠেছে এই ধারণার উপরে - "মানুষ জন্মের সময়ে কোনো জ্ঞান নিয়ে পৃথিবীতে আসে না। জন্মের পর বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে আস্তে আস্তে জ্ঞানী হতে শুরু করে।" এই ধারণাটি প্রথম মুসলিম দার্শনিক ইবনে তোফায়েল (১১০৫ - ১১৮৫) তাঁর 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান' উপন্যাসে খুব ভালোভাবে চিত্রায়িত করে গিয়েছিলেন। তারও আগে, কোর'আনে এ বিষটি নিয়ে স্পষ্ট অনেকগুলো আয়াত এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলছেন - وَاللَّهُ أَخْرَجَكُم مِّن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۙ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ "আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে যখন বের করেছেন, তখন তোমরা কিছুই জানতে না। এরপর, তিনি তোমাদেরকে শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও মস্তিষ্ক দিয়েছেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।" [সূরা ১৬/নাহল - ৭৮] দার্শনিক জন লকের চিন্তায় প্রভাবিত হয়ে বাঙালি সেক্যুলার সমাজ যতই রাষ্ট্র থেকে ইসলাম ধর্মকে আলাদা করতে চান না কেনো, তারা স্বয়ং জন লকের চিন্তাকেই ইসলাম-মুক্ত করতে পারবেন না।