সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

২৮ ফেব্রুয়ারি তুরস্কে কি ঘটেছিলো?

তুরস্কের ইতিহাসে ২৮ ফেব্রুয়ারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ১৯৯৭ সালের এই দিনে তুরস্কের ইসলামপন্থী রেফা পার্টিকে ৬ মাসের মাথায় ক্যুয়ের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ২০১৩ সালে মিশরের নির্বাচিত প্রতিনিধি মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতা গ্রহণের ১ বছরের মাথায় যেভাবে ক্যুয়ের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিলো, ঠিক একইভাবে ১৯৯৭ সালে তুরস্কের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নাজমউদ্দিন এরবাকানকে ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাসের মাথায় জোর করে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

মিশরে মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে সেক্যুলারগণ যেই যেই অভিযোগ এনেছিলো, তুরস্কে নাজমউদ্দিন এরবাকানের বিরুদ্ধেও সেক্যুলারগণ ঠিক একই অভিযোগ এনেছিলো। অর্থাৎ, নাজিমুদ্দিন এরবাকান ক্ষমতায় এসেই ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন। মিশরে এখন ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদের যেভাবে জেল-জুলুম ও ফাঁসি দেয়া হচ্ছে, তার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তুরস্কে। সেক্যুলারদের ভয়ে নারীরা ওড়না পরে রাস্তায় বের হতে পর্যন্ত পারতেন না। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সালে এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত মুসলিমদের ওপর এই অত্যাচার চলতে থাকে।

এর কিছুদিন পর জনসমাবেশে একটি ইসলামী কবিতা বলার অপরাধে এরদোয়ানকে গ্রেফতার করা হয়, এবং এক বছর সাজা দেয়া হয়। কারাগারে বসে এরদোয়ান আগামী দিনের তুরস্ক গড়ার পরিকল্পনা করতেন, এবং কিভাবে অতীতের ভুলগুলো থেকে নিজেদের শিক্ষা নেয়া যায়, তা নিয়ে ভাবতেন। কারাগারে থেকেই এরদোয়ান চিন্তা করেন, নাজমউদ্দিন এরবাকানের স্টাইলে তুরস্কে রাজনীতি করা যাবে না। বরং তুরস্কে নতুন স্টাইলে ইসলামী রাজনীতি করতে হবে। তাই, কারাগারে বসে এরদোয়ান নিজের অনেক চিন্তাকে পরিবর্তন করেছেন, এবং অনেক কিছু শিখেছেন। এ কারণেই কারাগারকে তিনি বলেন ইউসুফ (আ)-এর মাদ্রাসা।

সেই যাই হোক, এরবাকান ও এরদোয়ানের চিন্তার পার্থক্য বুঝার জন্যে ২৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনাটা বুঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...