সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ধর্মের বিষয়ে রাসুল যা করেননি, তা করা কি বিদায়াত?

ইসলাম ধর্মের বিষয়ে কোনো নতুন গবেষণা বা ইজতিহাদ করতে গেলেই কেউ কেউ বলেন, রাসূল (স) ইসলাম ধর্মকে পূর্ণ করে গিয়েছেন, সুতরাং ইসলাম ধর্মে নতুন গবেষণা করার সুযোগ নেই। কিংবা, ইসলামে নতুন কোনো চিন্তার স্কুল বা মাজহাবেরও প্রয়োজন নেই।

অথচ, বুখারীর নিম্নের হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (স)-এর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি করেননি এমন অনেক নতুন কাজ ও গবেষণা সাহাবীরা করেছেন। ইসলামের প্রথম ইজতিহাদের উদাহরণ এই হাদিসটি।

যায়দ ইবনু সাবিত (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন -

ইয়ামামাহ্‌র যুদ্ধে বহু লোক শহীদ হবার পর আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রা) আমাকে ডেকে পাঠালেন। এ সময় উমার (রা)-ও তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন।

আবূ বকর (রা) বললেন, "উমার আমার কাছে এসে বললেন, ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদদের মধ্যে কোর'আনে হাফেজের সংখ্যা অনেক। আমি আশংকা করছি, এমনিভাবে যদি কোর'আনে হাফেজগণ শাহীদ হয়ে যান, তাহলে কুরআন মাজিদের বহু অংশ হারিয়ে যাবে। অতএব আমি মনে করি যে, আপনি কুরআন সংকলনের নির্দেশ দিন।"

উত্তরে আমি উমারকে বললাম, "যে কাজ আল্লাহ্‌র রসূল (সা) করেননি, সে কাজ তুমি কীভাবে করবে?

উমার জবাবে বললেন, "আল্লাহর কসম! এটা একটি উত্তম কাজ।" উমার এ কথাটি আমার কাছে বার বার বলতে থাকলে অবশেষে আল্লাহ্‌ তা’য়ালা এ কাজের জন্য আমার বক্ষকে উন্মোচন করে দিলেন এবং এ ব্যাপারে উমার যা ভাল মনে করলেন আমিও তাই করলাম।

যায়দ (রা) বলেন, "আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রা:) আমাকে বললেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। তোমার ব্যাপারে আমার কোন সংশয় নেই। তদুপরি তুমি রসূল (সা)-এর ওহী লেখক ছিলে। সুতরাং তুমি কুরআন মাজিদের অংশগুলোকে তালাশ করে একত্রিত কর।"

যায়দ (রা) বলেন, "আল্লাহ্‌র শপথ! তারা যদি আমাকে একটি পর্বত এক স্থান হতে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিত, তাহলেও তা আমার কাছে কুরআন সংকলনের নির্দেশের চেয়ে কঠিন বলে মনে হত না। আমি বললাম, যে কাজ রসূল (সা) করেননি, আপনারা সে কাজ কীভাবে করবেন? আবূ বকর বললেন, "আল্লাহ্‌র কসম! এটা একটা কল্যাণকর কাজ।" এ কথাটি আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রা:) আমার কাছে বার বার বলতে থাকেন, অবশেষে আল্লাহ্‌ আমার বক্ষকে উন্মোচন করে দিলেন সে কাজের জন্য, যে কাজের জন্য তিনি আবূ বাকর এবং উমার (রা:)–এর বক্ষকে উন্মোচন করে দিয়েছিলেন।

এরপর আমি কুরআন অনুসন্ধানের কাজে লেগে গেলাম এবং খেজুর পাতা, প্রস্তরখণ্ড ও মানুষের বক্ষ থেকে আমি তা সংগ্রহ করতে থাকলাম।"

[সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৪৯৮৬]
________
উপরোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূল (স)-এর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কোর'আন সংকলন করেননি। কিন্তু, পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে, আবু বকর (রা) কোর'আন অনুসন্ধান করেছেন, এবং একত্রে সংকলন করেছেন।

যারা বলেন, ধর্মের বিষয়ে রাসূল (স) যা করেননি, আমরাও তা করবো না, তারা বর্তমানে বইয়ের মতো সুন্দর কোর'আনটাকেও বিদায়াত মনে করবে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

গড হেলমেট দিয়ে কি নাস্তিক কে আস্তিক বানানো যায়?

একবার, বিশ্বকুখ্যাত নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্স-কে বিজ্ঞানী মাইকেল পের্সিঙের তার অফিসে ডেকে আনলেন। তাকে বললেন, আপনি তো বিজ্ঞানে বিশ্বাস করেন; তাই না? ডকিন্স : হুম। পের্সিঙের : তাহলে আমরা দেখব, বিজ্ঞানের সাহায্যে আপনার মস্তিষ্ককে পরিবর্তন করে আপনাকে নাস্তিক থেকে আস্তিক বানাতে পারি কিনা? ডকিন্স : ওকে। উল্লেখ্য, মাইকেল পের্সিঙের একজন নিউরো বিজ্ঞানী। তিনি এবং বিজ্ঞানী স্ট্যানলি করেন, উভয়ে একটি হেলমেট আবিষ্কার করেন। যার নাম – ‘গড হেলমেট’। এই ‘হেলমেট’টি দিয়ে তারা পরীক্ষা করেন যে - মানুষের মস্তিষ্কের কোন জায়গায় তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের অনুভূতি জাগ্রত হয়। তারা মানুষের মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় অনুভূতির সিগন্যাল পাঠিয়ে স্রষ্টায় বিশ্বাস তৈরির চেষ্টা করেন। তো, তারা ডকিন্স-কে একটি বদ্ধ ঘরে প্রবেশ করিয়ে তার মাথায় ‘গড হেলমেট’টি লাগিয়ে দিলেন। ডকিন্সের চোখ বন্ধ করে দিলেন। এবং ডকিন্সের রুম থেকে সবাই বের হয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।