হানাফিরা একভাবে নামাজ পড়ে, এবং সালাফীরা অন্যভাবে নামাজ পড়ে। নামাজের মধ্যে এতো পার্থক্য কেন?
এ প্রশ্নটির উত্তর আমরা পাবো ইমাম শাফেয়ীর রিসালাহ গ্রন্থে। বিভিন্ন মতপার্থক্য বিষয়ে ইমাম শাফেয়ীকে একজন প্রশ্ন করছেন, এবং তিনি তার জবাব দিচ্ছেন। সেখান থেকে অল্প একটু অনুবাদ করে দিচ্ছি।
=====
প্রশ্নকারী : নামাজে তাশাহুদের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য রয়েছে। অথচ, ইবনে মাসুদ বলেছেন, “রাসূল (স) সাহাবীদেরকে যেভাবে কোর’আনের সূরা শিখিয়েছেন, ঠিক সেভাবেই তাদেরকে তাশাহুদ শিখিয়েছেন”। সবগুলো তাশাহুদ (التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ) ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি’ এই তিনটি শব্দ দিয়ে শুরু হয়েছে। এখানে আপনি কোনটি গ্রহণ করেছেন?
ইমাম শাফেয়ী : উমর (রা) মসজিদের মিম্বারে উঠে একটি তাশাহুদ বলেছিলেন, এবং সেটা তিনি মানুষকে শিখিয়েছিলেন। তা হলো –
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، الزَّاكِيَاتُ لِلَّهِ، الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلَّهِ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أشْهَدُ أنْ لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ، وَأَشْهَدُ أنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
[الرسالة للشافعي 1/ 268]
এই তাশাহুদটাই ছোটবেলায় আগের আলেমরা আমাদেরকে শিখিয়েছেন। এরপর এই তাশাহুদটি বর্ণনাকারীদের নাম শুনেছি, এবং এই তাশাহুদের চেয়ে ভিন্ন যে তাশাহুদ আছে, সেগুলোও শুনেছি। তবে অন্য তাশাহুদগুলোর বর্ণনাকারীদের নাম আমার শুনা হয়নি। এই তাশাহুদটি অন্য তাশাহুদের সাথে মিল থাকুক, বা মিল না থাকুক, আমাদের কাছে এই তাশাহুদটি বেশি শক্তিশালী হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিলো তখন। যদিও অন্য তাশাহুদগুলোও সহীহ হিসাবে প্রমাণিত।
আমরা মনে করি, উমর (রা) সাহাবীদের উপস্থিতিতে মানুষদেরকে সেই তাশাহুদটি শিখিয়েছেন, যেটি রাসূল (স) তাকে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু, পরবর্তীতে আমাদের বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে রাসূল (স)-এর পক্ষ থেকে অন্য একটি তাশাহুদ আমাদের নিকট পৌঁছার পর, আমরা (উমরের তাশাহুদটি ছেড়ে দিয়ে) অন্য তাশাহুদ গ্রহণ করেছি।
প্রশ্নকারী : কোনটি সেই তাশাহুদ?
ইমাম শাফেয়ী : ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল (স) কোর’আনের মতো আমাদেরকে তাশাহুদ শিখিয়েছেন। এবং সেটি হলো –
التَّحِيَّاتُ المُبَارَكَاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ لِلَّهِ، سَلاَمٌ عَلَيْكَ أيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، سَلاَمٌ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أشْهَدُ أنْ لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ، وأنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ
[الرسالة للشافعي 1/ 269]
প্রশ্নকারী : রাসূল (স) থেকে বর্ণিত তাশাহুদগুলো একটির সাথে অন্যটির মিল নেই। যেমন, উপরোক্ত তাশাহুদের সাথে ইবনে মাসুউদের তাশাহুদের মিল নেই, আবু মুসার তাশাহুদের সাথেও উপরোক্ত তাশাহুদের মিল নেই, এবং জাবেরের তাশাহুদের সাথেও মিল উপরোক্ত নেই। এমনকি, এই তিনটি তাশাহুদ আবার একটির সাথে অন্যটির শব্দের মিল নেই। এরপর, উমর (রা) যে তাশাহুদ শিখিয়েছেন, সেটার সাথে উপরের কারো তাশাহুদের শব্দের মিল নেই। একইভাবে, আয়েশা (রা)-এর তাশাহুদের সাথেও অন্য তাশাহুদগুলোর শব্দগত মিল নেই, এবং ইবনে উমরের তাশাহুদের সাথেও উপরের সবগুলো তাশাহুদের সাথে শব্দের পার্থক্য আছে। এছাড়া তাশাহুদগুলো একটির সাথে অন্যটির শব্দের কমবেশি রয়েছে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
ইমাম শাফেয়ী : বিষয়টাতো একেবারেই স্পষ্ট।
প্রশ্নকারী : কিভাবে? একটু ব্যাখ্যা করে বলবেন?
ইমাম শাফেয়ী : এখানে সবগুলো তাশাহুদ রাসূল (স) তাঁর সাহাবীদেরকে শিখিয়েছেন আল্লাহ তায়ালার মহিমা বা বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্যে। হতে পারে রাসূল (স) একজন সাহাবীকে একভাবে শিখিয়েছেন, এবং সাহাবী সেইভাবে মুখস্থ করেছেন। আবার, অন্য সাহাবীকে হয়তো ভিন্নভাবে শিখিয়েছেন, তাই তিনি ভিন্নভাবে মুখস্থ করেছেন।...
এবং যে সাহাবী যেভাবে মুখস্থ করেছেন, রাসূল (স) হয়তো তাকে সেভাবে পড়ার অনুমতি দিয়েছেন। কারণ, এই ভিন্ন ভিন্ন তাশাহুদের কারণে কোনো হুকুমের পরিবর্তন হয় না।
অথবা, হতে পারে রাসূল (স) সাহাবীদেরকে সহজে মুখস্থ করানোর জন্যে একেকজনকে একেকভাবে শিখিয়েছেন। তাই, একেকজনের তাশাহুদ একেক রকম।”
[ইমাম শাফেয়ী, রিসালা, ৭৩৭ নং প্যারাগ্রাফ থেকে ৭৪৮ প্যারাগ্রাফ পর্যন্ত]
=====
দেখুন, ইমাম শাফেয়ীর উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায়, নামাজের মধ্যে কোনো বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে, সেটা কোনো সমস্যাই না। নামাজের মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে বিভিন্ন সাহাবীদের মাঝে মতপার্থক্য ছিলো, এবং সবগুলো মতপার্থক্যই সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হতে পারে রাসূল (স) সহজ করার জন্যে একেক সাহাবীকে একেকভাবে নামাজ শিখিয়েছেন।
এখানে আল্লাহর ইবাদতটাই মূল বিষয়। নামাজে কিছু বিষয়ে পার্থক্য থাকাটা সমস্যার কিছু নয়।
এ প্রশ্নটির উত্তর আমরা পাবো ইমাম শাফেয়ীর রিসালাহ গ্রন্থে। বিভিন্ন মতপার্থক্য বিষয়ে ইমাম শাফেয়ীকে একজন প্রশ্ন করছেন, এবং তিনি তার জবাব দিচ্ছেন। সেখান থেকে অল্প একটু অনুবাদ করে দিচ্ছি।
=====
প্রশ্নকারী : নামাজে তাশাহুদের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য রয়েছে। অথচ, ইবনে মাসুদ বলেছেন, “রাসূল (স) সাহাবীদেরকে যেভাবে কোর’আনের সূরা শিখিয়েছেন, ঠিক সেভাবেই তাদেরকে তাশাহুদ শিখিয়েছেন”। সবগুলো তাশাহুদ (التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ) ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি’ এই তিনটি শব্দ দিয়ে শুরু হয়েছে। এখানে আপনি কোনটি গ্রহণ করেছেন?
ইমাম শাফেয়ী : উমর (রা) মসজিদের মিম্বারে উঠে একটি তাশাহুদ বলেছিলেন, এবং সেটা তিনি মানুষকে শিখিয়েছিলেন। তা হলো –
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، الزَّاكِيَاتُ لِلَّهِ، الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلَّهِ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أشْهَدُ أنْ لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ، وَأَشْهَدُ أنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
[الرسالة للشافعي 1/ 268]
এই তাশাহুদটাই ছোটবেলায় আগের আলেমরা আমাদেরকে শিখিয়েছেন। এরপর এই তাশাহুদটি বর্ণনাকারীদের নাম শুনেছি, এবং এই তাশাহুদের চেয়ে ভিন্ন যে তাশাহুদ আছে, সেগুলোও শুনেছি। তবে অন্য তাশাহুদগুলোর বর্ণনাকারীদের নাম আমার শুনা হয়নি। এই তাশাহুদটি অন্য তাশাহুদের সাথে মিল থাকুক, বা মিল না থাকুক, আমাদের কাছে এই তাশাহুদটি বেশি শক্তিশালী হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিলো তখন। যদিও অন্য তাশাহুদগুলোও সহীহ হিসাবে প্রমাণিত।
আমরা মনে করি, উমর (রা) সাহাবীদের উপস্থিতিতে মানুষদেরকে সেই তাশাহুদটি শিখিয়েছেন, যেটি রাসূল (স) তাকে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু, পরবর্তীতে আমাদের বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে রাসূল (স)-এর পক্ষ থেকে অন্য একটি তাশাহুদ আমাদের নিকট পৌঁছার পর, আমরা (উমরের তাশাহুদটি ছেড়ে দিয়ে) অন্য তাশাহুদ গ্রহণ করেছি।
প্রশ্নকারী : কোনটি সেই তাশাহুদ?
ইমাম শাফেয়ী : ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল (স) কোর’আনের মতো আমাদেরকে তাশাহুদ শিখিয়েছেন। এবং সেটি হলো –
التَّحِيَّاتُ المُبَارَكَاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ لِلَّهِ، سَلاَمٌ عَلَيْكَ أيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، سَلاَمٌ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أشْهَدُ أنْ لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ، وأنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ
[الرسالة للشافعي 1/ 269]
প্রশ্নকারী : রাসূল (স) থেকে বর্ণিত তাশাহুদগুলো একটির সাথে অন্যটির মিল নেই। যেমন, উপরোক্ত তাশাহুদের সাথে ইবনে মাসুউদের তাশাহুদের মিল নেই, আবু মুসার তাশাহুদের সাথেও উপরোক্ত তাশাহুদের মিল নেই, এবং জাবেরের তাশাহুদের সাথেও মিল উপরোক্ত নেই। এমনকি, এই তিনটি তাশাহুদ আবার একটির সাথে অন্যটির শব্দের মিল নেই। এরপর, উমর (রা) যে তাশাহুদ শিখিয়েছেন, সেটার সাথে উপরের কারো তাশাহুদের শব্দের মিল নেই। একইভাবে, আয়েশা (রা)-এর তাশাহুদের সাথেও অন্য তাশাহুদগুলোর শব্দগত মিল নেই, এবং ইবনে উমরের তাশাহুদের সাথেও উপরের সবগুলো তাশাহুদের সাথে শব্দের পার্থক্য আছে। এছাড়া তাশাহুদগুলো একটির সাথে অন্যটির শব্দের কমবেশি রয়েছে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
ইমাম শাফেয়ী : বিষয়টাতো একেবারেই স্পষ্ট।
প্রশ্নকারী : কিভাবে? একটু ব্যাখ্যা করে বলবেন?
ইমাম শাফেয়ী : এখানে সবগুলো তাশাহুদ রাসূল (স) তাঁর সাহাবীদেরকে শিখিয়েছেন আল্লাহ তায়ালার মহিমা বা বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্যে। হতে পারে রাসূল (স) একজন সাহাবীকে একভাবে শিখিয়েছেন, এবং সাহাবী সেইভাবে মুখস্থ করেছেন। আবার, অন্য সাহাবীকে হয়তো ভিন্নভাবে শিখিয়েছেন, তাই তিনি ভিন্নভাবে মুখস্থ করেছেন।...
এবং যে সাহাবী যেভাবে মুখস্থ করেছেন, রাসূল (স) হয়তো তাকে সেভাবে পড়ার অনুমতি দিয়েছেন। কারণ, এই ভিন্ন ভিন্ন তাশাহুদের কারণে কোনো হুকুমের পরিবর্তন হয় না।
অথবা, হতে পারে রাসূল (স) সাহাবীদেরকে সহজে মুখস্থ করানোর জন্যে একেকজনকে একেকভাবে শিখিয়েছেন। তাই, একেকজনের তাশাহুদ একেক রকম।”
[ইমাম শাফেয়ী, রিসালা, ৭৩৭ নং প্যারাগ্রাফ থেকে ৭৪৮ প্যারাগ্রাফ পর্যন্ত]
=====
দেখুন, ইমাম শাফেয়ীর উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায়, নামাজের মধ্যে কোনো বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে, সেটা কোনো সমস্যাই না। নামাজের মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে বিভিন্ন সাহাবীদের মাঝে মতপার্থক্য ছিলো, এবং সবগুলো মতপার্থক্যই সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হতে পারে রাসূল (স) সহজ করার জন্যে একেক সাহাবীকে একেকভাবে নামাজ শিখিয়েছেন।
এখানে আল্লাহর ইবাদতটাই মূল বিষয়। নামাজে কিছু বিষয়ে পার্থক্য থাকাটা সমস্যার কিছু নয়।