সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

শয়তান লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ইবলিশ না থাকলে কি মানুষ খারাপ কাজ করতো?

ইবলিশের যদি সৃষ্টি না হতো, তাহলে কি মানুষ খারাপ কাজ করতো? উত্তর – হাঁ। মানুষ কেবল শয়তানের কারণেই শয়তানি করে না, বরং নিজের নফসের কারণেও খারাপ কাজ করে। কোর’আন থেকে কয়েকটি উদাহরণ দেখুন। ১। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মানুষ হত্যার যে ঘটনাটি ঘটেছিলো, অর্থাৎ, কাবিল যে হাবিলকে হত্যা করেছিলো, তা ইবলিশের কারণে করেনি। বরং নিজের নফসের কারণেই সে ভ্রাতৃহত্যায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলো। কোর’আনে এসেছে – فَطَوَّعَتْ لَهُ نَفْسُهُ قَتْلَ أَخِيهِ فَقَتَلَهُ فَأَصْبَحَ مِنَ الْخَاسِرِينَ “অতঃপর তার নফস তাকে ভ্রাতৃহত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। ফলে সে তাকে হত্যা করল। তাই সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।”[সূরা ৫/মায়িদা - ৩০] অর্থাৎ, কাবিল ইবলিশের কারণে নয়, বরং তার নিজের নফসের কারণেই হাবালকে হত্যা করেছিলো।

আদম (আ)-এর গল্পের শিক্ষা কি?

কোর’আনের প্রতিটি ঘটনাই আমাদের জন্যে শিক্ষণীয়। কেবল নবী রাসুলদের ইতিহাস জানানোর জন্যে আল্লাহ তায়ালা কোর’আনে বিভিন্ন কাহিনী দিয়ে ভরে রাখেননি, বরং প্রতিটি কাহিনীর পিছনে আমাদের জন্যে অসংখ্য শিক্ষা রয়েছে। যেমন, আদম (আ)-কে জান্নাত থেকে নামিয়ে দেয়ার ঘটনাকে আমরা একটি ঐতিহাসিক তথ্য আকারে গ্রহণ করি। অথবা, মূসা (আ)-এর নদী পার হয়ে যাবার ঘটনাকে আমরা একটি অলৌকিক মুজিযা আকারে গ্রহণ করি। কিন্তু এসব ঘটনা কেবল ঐতিহাসিক কোনও তথ্য দেয়ার জন্যে, অথবা কোনও নবীর মুজিযা প্রকাশ করার জন্যে বর্ণনা করা হয়নি। বরং আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্যেই এসব ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ আদম (আ)-এর কাহিনীটি কল্পনা করা যাক, কোর’আনে আদম (আ)-কে জান্নাত থেকে নামিয়ে দেয়ার কাহিনীটি যখন বর্ণনা করা হয়, তখন আমরা ভাবতে থাকি, এটি আদম (আ)-এর কাহিনী, সুতরাং এই ঘটনাটি থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার তেমন কিছু নেই। অথচ আদম এর ঘটনাটি আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রতিদিন ঘটে থাকে। দেখুন, আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের সব গাছ থেকেই খাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন, কিন্তু কেবল একটি গাছ থেকে খেতে নিষেধ করেছিলেন। তেমনি, আমাদেরকেও আল্লাহ তায়ালা সবকিছু খাওয়...

একনজরে রূহ, প্রজ্ঞা, জ্ঞান, হৃদয়, মন, দেহ, কামনা, নফস, শয়তান

মানব শরীর অনেক জটিল প্রক্রিয়ায় কাজ করে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষের জন্যে একজন ফেরেশতা ও একজন শয়তান নিয়োগ করেন। ফেরেশতা মানুষের রুহের সাথে সম্পর্কযুক্ত, এবং শয়তান মানুষের নফসের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আল্লাহ ও ফেরেশতাদের বার্তাগুলো 'রূহ' নামক ডাকপিয়ন বিবেকের সাহায্যে মানুষের হৃদয়ের কাছে পাঠায়। এবং শয়তানের বার্তাগুলো 'হাওয়া' নামক ডাকপিয়ন নফসের সাহায্যে মানুষের হৃদয়ের কাছে পাঠায়। হৃদয় হলো মানুষের রাজা। সে কখনো নফসের বার্তা অনুযায়ী কাজ করে, আবার, কখনো রূহ ও বিবেকের বার্তা অনুযায়ী  কাজ করে। হৃদয় যখন নফসের কথা শুনে, তখন সে অন্ধকার ও অজ্ঞতার দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু হৃদয় যখন রূহের বার্তা শুনে, তখন সে আলো ও জ্ঞানের দিকে ধাবিত হয়। বিবেক হলো জ্ঞানকে কাজে লাগানোর যন্ত্র। অনেক মানুষের জ্ঞান আছে, কিন্তু বিবেক না থাকায়, সে রূহের নির্দেশনা বুঝতে পারে না। দেহ ও প্রাণ আলাদা জিনিস। মানুষ ছাড়াও অন্য প্রাণীদের দেহ ও প্রাণ রয়েছে। কিন্তু, রূহ ও শয়তান কেবল মানুষের জন্যেই নিযুক্ত করা হয়েছে।

ফেরেশতা, জিন ও মানুষের সম্পর্ক

প্রতিটি মানুষের মাঝে দুটি সত্ত্বা থাকে। একটি জিন সত্ত্বা, এবং অন্যটি ফেরেশতা সত্ত্বা। জিন সত্ত্বা মানুষকে সবসময় খারাপ কাজের আদেশ দেয়, আর ফেরেশতা সত্ত্বা মানুষকে সবসময় ভালো কাজের আদেশ দেয়। মানুষের কাজ হলো, ফেরেশতা সত্ত্বার দ্বারা জিন সত্ত্বাকে প্রতিহত করা। মানুষের ভিতরের ফেরেশতা সত্ত্বা যদি কখনো তার জিন সত্ত্বাকে হারাতে পারে, তাহলে মানুষ মুসলিম হতে পারে। কিন্তু জিন সত্ত্বা যদি ফেরেশতা সত্ত্বাকে হারিয়ে দেয়, তাহলে মানুষ শয়তান হয়ে যায়। এ কারণে, ইসলামে ফেরেশতাকে বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে, কিন্তু জিন ও শয়তানকে বিশ্বাস করতে বলা হয়নি। রেফারেন্স:

ইবলিশ শয়তানের কি দোষ?

প্রশ্নটা কিছুটা দার্শনিক। কোর’আন নিয়ে দার্শনিকরা প্রায়ই এ প্রশ্নটি করে থাকেন। তারা বলেন, কোর’আনে আছে – وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ “আমি যখন আদম কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে বললাম, তারা সবাই সেজদা করল। কিন্তু ইবলিস সেজদা করেনি। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল ।” [সূরা বাকারা, আয়াত – ৩৪] এখানে দার্শনিকদের প্রশ্ন হলো, আল্লাহ তায়ালা কেবল ফেরেশতাগণকে সেজদা করতে আদেশ করেছেন। তাই ফেরেশতাগন সবাই সেজদা করেছে। কিন্তু ইবলিস সেজদা না করার কারণ হলো সে ফেরেশতা ছিল না। সে ছিল জিনদের একজন। সুতরাং, ইবলিসের এখানে কি অন্যায় আছে? সে তো আল্লাহর আদেশ অমান্য করেনি। দার্শনিকদের এ প্রশ্নের উত্তর আছে আল কোর’আনের অন্য একটি আয়াতে।