সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্কলারগণ কেন সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন না?

"আপনার ফেইসবুকের স্ট্যাটাসে অনেকে প্রশ্ন করে, আপনি তার জবাব দেন না কেন?"

উত্তর -

আমরা যারা ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেই, তাদেরকে যে বিষয়ের প্রশ্নই করা হোক না কেন, তারা সব বিষয়ের পণ্ডিত হিসাবে উত্তর প্রদান করি। এ সমস্যাটা কেবল আমাদের একার না, আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী এবং আলেম-ওলামাদেরও একই সমস্যা।

কিন্তু, রাসূল (স) থেকে শুরু করে কোনো ইসলামের স্কলার-ই সকল প্রশ্নের উত্তর দিতেন না, অনেক প্রশ্নের উত্তরে তারা চুপ থাকতেন।

যেমন, হাদিসে জিবরাঈলের মধ্যে রাসূল (স)-কে জিবরাঈল (আ) চারটি প্রশ্ন করেছেন। রাসূল (স) তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, এবং একটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপ থেকেছেন।

রাসূল (স)-এর হাজার হাজার সাহাবীদের মধ্যে ১০/১২ জন সাহাবী ছাড়া কেউ কোনো ফতোয়া দিতেন না।

ওমর (রা) ছিলেন রাসূল (স)-এর খুব কাছের সাহাবী এবং মুসলিমদের দ্বিতীয় খলিফা। তাঁর কাছে কেউ কোনো ফতোয়া জিজ্ঞাস করলে তিনি বলতেন, "অমুক শাসনকর্তার কাছে যাও। সে মানুষের এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়। তার কাছে গিয়ে তোমার সমস্যা বল।"

ইমাম মালেক ছিলেন তাঁর সময়ে মদিনার সবচেয়ে বড় আলেম। তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে ইমাম শাফেয়ী তাঁকে ৪৮টি মাসআলা জিজ্ঞাস করেন। ইমাম মালেক ৩২টি প্রশ্নের জবাবে বলেন -"আমি জানি না"।

ইমাম শাফেয়ী অনেক বড় জ্ঞানী, মুফতি ও বিচারপতি ছিলেন। একদিন একব্যক্তি ইমাম শাফেয়ীর কাছ থেকে একটি সমস্যার সমাধান চায়। ইমাম শাফেয়ী তাকে কোনো জবাব না দিয়ে চুপ থাকলেন।
লোকটি বললেন - আপনি জবাব দিচ্ছেন না কেন?
ইমাম শাফেয়ী বললেন - চুপ করে থাকার মধ্যে আমার কল্যাণ, নাকি জবাব দেয়ার মাঝে আমার কল্যাণ, এ কথা জানার আগে আমি জবাব দিবো না।

ইমাম গাজালি মনে করতেন, "ফতোয়া দেয়া রাষ্ট্রীয় কাজ। এটা একক ব্যক্তির কাজ নয়।"

এসব কারণে সবার কমেন্টের উত্তর দেয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করি।

_____
লেখার সূত্রসমূহ।

ولا نصب نفسه للفتيا منهم أحد إلا بضعة عشر رجلاً
[إحياء علوم الدين 1/ 23]

ولقد كان ابن عمر رضي الله عنهما منهم وكان إذا سئل عن الفتيا يقول للسائل اذهب إلى فلان الأمير الذي تقلد أمور الناس وضعها في عنقه
[إحياء علوم الدين 1/ 23]

قول الشافعي رحمه الله إني شهدت مالكاً وقد سئل عن ثمان وأربعين مسئلة فقال في اثنتين وثلاثين منها لا أدري
[إحياء علوم الدين 1/ 27]

سئل الشافعي رضي الله عنه عن مسئلة فسكت فقيل له ألا تجيب رحمك الله فقال حتى أدري الفضل في سكوتي أو في جوابي
[إحياء علوم الدين 1/ 25]

أن الفتيا في القضايا والأحكام من توابع الولاية والسلطنة
[إحياء علوم الدين 1/ 23]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্