সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

তুরস্ক লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সেহরিতে ডাকার সংস্কৃতি

ফেইসবুকে এক সেক্যুলার বন্ধু লিখেছেন - "রোজা রাখার জন্যে কিন্তু আসলেই শেষ রাইতে মাইকে হাক ডাক দিয়া সবার ঘুম ভাঙানো জরুরি নয়। বাংলাদেশ ছাড়া দুনিয়ার আর কোন দেশের মুসলমানরা এমন বাজে কাজ করে কি? " ভদ্রলোক থাকেন নেদারল্যান্ডসে। বাংলাদেশের মাইকে ডাকাডাকি শুনে নেদারল্যান্ডস থেকে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়, তাই তিনি এ নিয়ে খুব চিন্তিত। যাই হোক, চিন্তা করার স্বাধীনতা সবার আছে, চিন্তা করুক। কিন্তু, উনি যে বাজে কথাটি বলেছেন, তা হলো, "বাংলাদেশ ছাড়া দুনিয়ার আর কোন দেশের মুসলমানরা এমন বাজে কাজ করে কি? " ভদ্রলোকের মতো অনেকেই না জেনে এ প্রশ্নটি করেন। প্রায় সব মুসলিম দেশেই রাতে সেহরির জন্যে ডাকা হয়। যেমন আমি তুরস্কের কথা বলতে পারি। রাতে সেহরির জন্যে ডাকাডাকি করাটা তুরস্কের অন্যতম একটি কালচার। মধ্যরাতে মানুষকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্যে তুরস্কের প্রতিটি মহল্লায় কিছু স্বেচ্ছাসেবক ঢোল নিয়ে রাস্তায় নামে যায়। প্রত্যেক বিল্ডিং, বাসা ও ঘরের সামনে গিয়ে গিয়ে তাঁরা ঢোল বাজাতে থাকে, এবং মানুষকে ঘুম থেকে জাগতে বলে। এখানে কয়েকটি ভিডিও দেখুন।

ইসলামী আইডোলজি প্রচারের জন্যে কি প্রয়োজন?

আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলেই যেমন দেশের সব মানুষ আওয়ামীলীগ হয়ে যায় না, তেমন ইসলামী দল ক্ষমতায় আসলেও দেশের সব মানুষ ভালো হয়ে যাবে না। ক্ষমতা মানুষকে সর্বোচ্চ মুনাফেক বানাতে পারে, মুমিন নয়। ইসলামী রাজনীতির সাথে অন্য রাজনীতির পার্থক্য হলো, ইসলামী রাজনীতিতে ভালোবাসা থাকে ক্ষমতার ঊর্ধ্বে, আর অন্য রাজনীতিতে ক্ষমতা থাকে ভালোবাসার ঊর্ধ্বে। উদাহরণ স্বরূপ আমাদের মা-বাবাকে লক্ষ্য করুন। তাঁরা আমাদের যতই শাসন করুক না কেনো, তাঁদের ভালোবাসা থাকে শাসনের ঊর্ধ্বে। তেমনি ইসলামী রাজনীতির কাজ হলো দে শের সব মানুষকে ভালোবাসা। ভালোবাসার জন্যেই মাঝে মাঝে হয়তো শাসন করতে হয়, কিন্তু, শাসন কখনোই ভালোবাসার ঊর্ধ্বে যেতে পারে না। যারা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চান, তাঁরা মূলত ভালোবাসাহীন ক্ষমতা দিয়ে দেশের সব মানুষকে ভালো বানিয়ে ফেলতে চান। কিন্তু এটা অসম্ভব। কেবল ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে পরিবর্তন করা যায় না। মানুষকে পরিবর্তন করতে হয় ভালোবাসা দিয়ে। আর, কাউকে ভালোবাসার জন্যে ক্ষমতার প্রয়োজন হয় না।

এরদোয়ানের রাষ্ট্র দর্শন

আদালতের সংজ্ঞা বিচারপতিদের এক বৈঠকে এরদোয়ান বলেন – "আদালত হলো রাষ্ট্রের ছাদ। আদালতের কাজ সম্পর্কে পৃথিবীতে অনেকে দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ কথা বলেছেন। তবে সবচেয়ে মূল্যবান কথা বলেছেন মাওলানা জালাল উদ্দিন রূমি"। মাওলানা জালাল উদ্দিন রূমি বলেছেন – “জুতাকে পায়ের নিচে রাখা, আর টুপিকে মাথার উপর রাখা-ই আদালতের কাজ। যখন টুপিকে পায়ের নিচে রাখা হয়, এবং জুতাকে মাথার উপর রাখা হয়, তখন আদালত ভেঙ্গে পড়ে। তিনি আরো বলেন, নায় বিচার হলো গাছে পানি দেয়া, আর, জুলুম হলো আগাছায় পানি দেয়া।” এরদোয়ান বলেন – "আদালতের কাজ হলো, যে যা প্রাপ্য, তাকে সেটা বুঝিয়ে দেয়া। আর, জুলুম হলো, যে যা প্রাপ্য, তাকে সেটা না দেওয়া। দেশে যখন আদালত প্রতিষ্ঠা থাকে, তখন দেশে শান্তি থাকে। কিন্তু যখন আদালত ভেঙ্গে পড়ে, তখন দেশে অশান্তি শুরু হয়"। ২০১৮ এর নির্বাচনে এরদোয়ান দুটি অর্থনৈতিক ইশতিহার ১) সুদকে শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসা। এরদোয়ানের মতে, সূদের পরিমাণ যতো বাড়ে, দ্রব্যমূল্যের দামও তত বাড়ে; এবং সূদের পরিমাণ যতো কমে দ্রব্যমূল্যের দামও তত কমে। এরদোয়ান যখন ক্ষমতায় আসেন তখন শতকরা সুদ ছিলো ৬৩ টাকা। কিন্তু ২০১৩ সালে সুদের পরিম...

তুরস্কের শিশু দিবস

বাংলাদেশের শিশু দিবসের সাথে তুরস্কের দিবসের অনেক পার্থক্য রয়েছে। ১) বিশ্বের প্রথম শিশু দিবস উদযাপন হয় তুরস্কে। তুরস্কের জাতির পিতা মোস্তফা কামাল ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল প্রথম এ দিবসটি শুরু করেন। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশু দিবস পালন করা শুরু হয়। তার ধারাবাহিকতায়, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম শিশু দিবস চালু করা হয়। ২) তুরস্কে যেদিন সংসদ ভবন প্রথম চালু করা হয়েছিলো, এবং যেদিন জনগণ প্রথম নিজেদের সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেছিলো, সেদিনকে তারা শিশু দিবস হিসাবে উদযাপন করে। কিন্তু বাংলাদেশে যেদিন জাতীর জনক জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সে দিনকে শিশু দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ৩) তুরস্কের জাতীর জনক এ উদ্দেশে শিশু দিবস ঘোষণা করেছিলেন যে, আগামীদিনের শিশুরা যাতে তুর্কি জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারে। তিনি সত্যিকারভাবে শিশুদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এই দিনটিকে শিশু দিবস ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে শিশু দিবস পালন করা হয় রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক কারণে। অর্থাৎ, শিশুরা যাতে জাতীর জনককে ভুলে না যায়, তাই তাঁর জন্মদিনে শিশু দিবস পালন করা হয়। ৪) তুরস্কে শিশু দিবস পালন করার জন্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, সেনা বাহিনীর প্র...

ইসলামী শরিয়াহ ও রাজনীতি - শায়েখ হামজা ইউসুফ

"আধুনিক যুগের মুসলিমরা মনে করেন যে, ইসলাম হলো একটি রাজনৈতিক দর্শন। আসলে এটি জায়োনিস্টদের একটি দাবী। জায়োনিস্টরা ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন করার জন্যে ইহুদি ধর্মকে একটি রাজনৈতিক দর্শনে পরিবর্তন করে ফেলে। আধুনিক মুসলিমরা ইহুদি জায়োনিস্টদের অনুসরণ করছে। জায়োনিস্টরা যেমন ইহুদি রাষ্ট্র কায়েম করতে চেয়েছিলো, আধুনিক মুসলিমরাও তেমনি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। অথচ, রাসূল (স) কেয়ামতের একটি আলামত হিসাবে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে, "মুসলিমরা তখন বনি ইসরাইল অনুসরণ করবে।" অনেকের ধারণা এমন যে, ইসলামী রাষ্ট্রে মানুষকে জোর করে ভালো মুসলিম বানানো যায়। আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ইসলামে কখনো এমন কোনো ধারণার অস্তিত্ব ছিলো না, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। যদি কেউ মনে করে যে, রাষ্ট্র ও সরকারের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়াহকে বাস্তবায়ন করতে হবে, তাহলে তিনি ভুল চিন্তা করছেন। কারণ আল্লাহ তায়ালা কোর'আনে বলছেন – وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَن فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا ۚ أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ তোমার প্রভু ইচ্ছা করলে পৃথিবীর সকল মানুষ ঈমান গ্রহণ করতো। কিন্তু তুমি মানুষকে ...

ইমাম রব্বানী আহমদ সিরহিন্দি-র গুরুত্ব

আমাদের ভারতবর্ষের ‘আহমদ সিরহিন্দি’কে তুরস্কে বলা হয় ‘ইমাম রব্বানী’। তুরস্কে ইমাম রাব্বানীকে এতোটাই গুরুত্ব দেয়া হয় যে, প্রায় সকল ইসলামী সভা-সেমিনার অথবা টিভি অনুষ্ঠানে তাঁর নাম গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়। টার্কি ভাষায় ইমাম রব্বনীকে নিয়ে অনেক ডকুমেন্টারি হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্কলারদের নিয়ে ৩/৪ দিন ব্যাপী বেশ কিছু সেমিনার হয়েছে, যা ইউটিউবে পাওয়া যায়। তাঁকে নিয়ে অসংখ্য টেলিভিশন টক-শো হয়েছে। এছাড়া, তুরস্কের বিভিন্ন স্কলারগণ তাঁর জীবন ও চিন্তা-ভাবনা নিয়ে নিয়মিত-ই আলোচনা করেন। কিন্তু  দুর্ভাগ্য, আমাদের ভারতবর্ষের এই স্কলারদেরকে আমরা মূল্যায়ন করতে জানি না। বাংলা ভাষার অনলাইনে খুঁজে দেখলাম, শেখ আহমদ সিরহিন্দির তেমন কোনো উল্লেখ-ই নেই। গুগলে সার্চ করে কিছু আর্টিকেল পেলাম, বিদআতি দরবারী মানুষদের লিখা। আবার কিছু আছে সেক্যুলারদের লিখা, সেখানে সিরহিন্দিকে একজন ঐতিহাসিক ‘ভিলেন’ হিসাবে পরিচয় দেয়া হয়েছে। অথচ, ভারতবর্ষের ইসলামী আন্দোলনের জন্যে তিনি একজন সফল নায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ভারতবর্ষের ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তার এক মহান আদর্শ। তাঁর সময়ে সম্রাট আকবর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলিম সবাইকে নিয়ে ...

আমাদের দৃষ্টি সৌরজগতে যায় না, কিন্তু যায় কোথায়?

শহরের সবচেয়ে প্রাচীন Bursa Ulucami মসজিদে আসরের সালাত পড়তে গেলাম। এ মসজিদটি দেখলেই আমার প্রাণ জুড়িয়ে যায়। ১৩৯৯ সালে উসমানী খিলাফতের প্রথম শতাব্দীতে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় হলো, যখন নাসার দেশ আমেরিকার কোনো অস্তিত্ব নেই। যখন ইউরোপ বিশ্বাস করতো, পৃথিবী সমতল। তখন মুসলিমদের মসজিদের মিম্বারের দু’পাশে সৌরজগতের গ্রহ নক্ষত্রে ভরা। মিম্বারের একপাশে সৌরজগতের গ্রহগুলোর আকৃতি ও পারস্পরিক দূরত্ব নিখুঁত ভাবে খচিত রয়েছে। আর অন্য পাশে খচিত রয়েছে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের আকৃতি, সম্পর্ক ও দূরত্ব।  ছবিগুলো দেখুন এখানে। আমাদের মুসলিম উম্মাহর মসজিদগুলো ছিল এমনি। ইমামের পায়ের নিচে থাকতো সৌরজগতের সমস্ত গ্রহ নক্ষত্রগুলো। আর এখন? ______ ইসলামের সোনালী যুগে মানুষ মসজিদে প্রবেশ করলে দেখতে পেত, সৌরজগতের কোথায় কোন গ্রহ থাকে। আর, এখন মানুষ মসজিদে প্রবেশ করলে দেখতে পায়, হাত কি বুকের উপর থাকে না নাভির নিচে থাকে। . আমাদের দৃষ্টির সীমানা সৌরজগত পর্যন্ত না যেতে পেরে এখন মুসল্লিদের পেটের উপর গিয়ে পড়ে।  

ভালোবাসা

এই দুনিয়ায় আসি মোরা, ভালোবাসার জন্য ভালোবাসা ছাড়া মোদের, নেই কোনো কাজ ভিন্ন। শরীরের কোষগুলো সব, ডেকে বলে আল্লাহ তোমায় ছাড়া দেখি না কিছু, সোবহান আল্লাহ। আসমান জমিন প্রতি ক্ষণে, ডেকে বলে আল্লাহ অহংকার নাই হয়ে যায়, তোমায় দেখে আল্লাহ ভালোবাসা যে পায়, সে দুনিয়ার আর কি চায়? দমে দমে তাই সে বলে আল্লাহ ও আল্লাহ। [তুরস্কের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্যে তাঁদের বিখ্যাত একটি গানের বাংলা অনুবাদ করে দিলাম।] https://youtu.be/XFPeblMoqTw

সভ্যতা সম্পর্কে আল-ফারাবির চিন্তা

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের অন্যতম আবু নাসের মুহাম্মাদ ইবন মুহাম্মাদ আল-ফারাবি। অধিবিদ্যা (Metaphysics), জ্ঞানতত্ত্ব ও রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা কখনো হারিয়ে যায় না। ইবনে ফারাবির ‘নৈতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত নগর’ (আল-মাদীনাহ আল ফাদিলাহ) ধারণাটি ইসলামী এবং গ্রীক নীতিশাস্ত্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি নগর জীবন, সভ্যতা এবং অধিবিদ্যার মাঝে একটি সংযোগ সৃষ্টি করেছেন। যদিও এই ধারণাগুলোর সঠিক অর্থ আজ আমাদের পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছে, কিন্তু মানুষের উপযুক্ত আবাস হাজির থাকার জন্য এই ধারণাগুলোর পারস্পরিক সংযোগ একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তাই আল-ফারাবির এই সংযোগ প্রচেষ্টাকে আবার পুনরুদ্ধার করার প্রয়োজন রয়েছে। সর্বপ্রথম ১৭৫৭ সালে, ‘ভিক্টর রিকেতি মিরাবু’ তার ‘মানুষের বন্ধু বা জনগণের চুক্তিনামা’ শীর্ষক গ্রন্থে ‘সভ্যতা’ শব্দটি ব্যবহার করেন। প্রায় দুই শতাব্দী পর একবিংশ শতাব্দীতে ‘স্যামুয়েল হান্টিংটন’ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর তাঁর বিখ্যাত একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন, সেখানে সভ্যতার পরিবর্তে সরাসরি ‘সংঘাত’কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাঁর সংঘাত তত্ত্বটি বাজারীকরণের ফলে যে প্রভাব সৃষ্টি ...