সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

কোর’আনের সৌন্দর্য লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সূরা শু'আরা ও কোর'আনের চমৎকার স্টাইল

কোর’আনের কিছু কিছু সূরায় একসাথে অনেক নবী-রাসূলের ঘটনা বর্ণনা করা হয়। সাধারণত, একই সূরার মধ্যে অবস্থিত সকল নবী-রাসূলের ঘটনা বর্ণনা করার সময় একটি কমন প্যাটার্ন অনুসরণ করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ আমরা সূরা শু’আরা দেখতে পারি। এ সূরার রুকু সংখ্যা ১১ টি। এবং এখানে ৭ জন নবীর নাম ও তাদের সম্প্রদায়ের আলোচনা করা হয়েছে। ১ম রুকুতে একটি ভূমিকা দেয়া হয়েছে। ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ রুকুতে মূসা (আ)-এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। ৫ম রুকুতে ইব্রাহীম (আ), ৬ষ্ঠ রুকুতে নূহ (আ), ৭ম রুকুতে হূদ (আ), ৮ম রুকুতে সালিহ (আ), ৯ম রুকুতে লূত (আ), এবং ১০ম রুকুতে শুয়াইব (আ) এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। সর্বশেষ ১১ তম রুকুতে একটি উপসংহার দেয়া হয়েছে। মূলত, ভূমিকা ও উপসংহার হলো মুহাম্মদ (স)-এর উদ্দেশ্য, যদিও তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়নি। মুহাম্মদ (স) সহ ৮ জন নবীর উল্লেখ করা হয়েছে এই সূরায়। সবার ক্ষেত্রেই কিছু কমন প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়েছে। নূহ, হূদ, সালিহ, লূত এবং শু'আইব (আ) এই ৫ জন নবীর সম্প্রদায়কে আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, তাই তাদের সবার আলোচনা হুবহু একই প্যাটার্নে করা হয়েছে। অর্থাৎ, ৬ থেকে ১০ নং রুকু পর্যন্ত প্রতিটি রুকুর প্যাটার্ন...

ছোট্ট একটি সূরা দিয়ে আরবি ভাষা শিখে ফেলুন

ছোট বেলায় কোর'আনের শেষ দশটি সূরা মুখস্থ করার সময় সবচেয়ে বেশি প্যাঁচ লাগতো সূরা কাফিরূনে, তাই নামাজে এ সূরাটা খুব কম পড়তে চাইতাম। কিন্তু পরে বুঝলাম, আরবি ভাষা শেখার জন্যে সূরা ‘কাফিরূন’ চমৎকার একটা উদাহরণ। খুবই ছোট্ট একটি সূরা, মাত্র ৬ আয়াত। قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ - 1 لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ - 2 وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ - 3 وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَا عَبَدْتُمْ - 4 وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ - 5 لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ - 6 অনুবাদ ১. বল, হে কাফেরগণ! ২. আমি তার ইবাদাত করি না, যার ইবাদাত তোমরা কর। ৩. এবং তোমরা তার ইবাদাতকারী নও, যার ইবাদাত আমি করি। ৪. এবং আমি তার ইবাদাতকারী নই, যার ইবাদাত তোমরা করছিলে। ৫. এবং তোমরা তার ইবাদাতকারী নও, যার ইবাদাত আমি করি। ৬. তোমাদের ধর্ম তোমাদের, আমার ধর্ম আমার। এই সূরাটা পড়ার সময় আপনি হয়তোবা ভেবেছেন, কি ব্যাপার? এখানে ‘ইবাদাত’ শব্দটা বারবার ঘুরেফিরে এতবার বলা হচ্ছে কেন? আসলে এখানে কাফিরদের উদ্দেশ্য করে [عبد] বা ‘ইবাদাত’ শব্দমূলটিকে আরবি ভাষার বিভিন্ন ভঙ্গীতে প্রকাশ করা হয়েছে। উদাহরণ – এক আরবি ব্যাকরণে বাক্য দুই...

মানুষের তিনটি স্তরবিন্যাস

আল কোর’আনে বর্ণিত মানুষের চরিত্র নিয়ে গত সপ্তাহ একটা স্ট্যাটাস দেয়ার পর একজন ভাই আমার এক প্রিয় স্যারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বললেন – “ইসলামে কি মানুষের ব্যাপারে শুধু নেতিবাচক বক্তব্যই আছে? সুন্দর সুন্দর অনেক উদাহরণ বা রহমতের কোথাও তো আছে। এগুলোর উল্লেখ করলে বরং মানুষ তা ভালোভাবে নিত, আমল করতে পারত।” আসলে, ভাইয়ার কথাটা ঠিক। তিনি দারুণ প্রশ্ন তুলেছেন। দেখুন, আল কোর’আন কিভাবে এ বিষয়টির চমৎকার ব্যাখ্যা করছে। মানুষকে বুঝানোর জন্যে আল কোর’আনে অনেকগুলো শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন – বাশার [الْبَشَر ] নাস [النَّاس ], এবং ইনসান [ الْإِنْسَان ] এ তিনটি শব্দের অর্থই মানুষ। কিন্তু তিনটি শব্দ দ্বারা একই চরিত্রের মনুষকে বোঝানো হয় না। অর্থৎ, প্রত্যেকটি শব্দ-ই আলাদা আলাদা চরিত্রের মানুষকে নির্দেশ করে। আল কোর’আনের মুজেযা এটাই। কোর’আনে একই জিনিসের অনেকগুলো সমর্থক শব্দ থাকলেও প্রত্যেকটি শব্দের আলাদা আলাদা সংজ্ঞা থাকে। প্রতিটি শব্দ-ই ইউনিক। ফলে, কোর’আনের একটি শব্দের স্থানে অন্য কোনো সমর্থক শব্দ বসানো যায় না। বাশার, নাস এবং ইনসান – এ তিনটি শব্দ মানুষের তিনটি স্তরবিন্যাসকে নির্দেশ করে। মানুষের এই তিনটি স...

আল কোর'আনের আলোকে মানুষের বৈশিষ্ট্য

আল কোর’আনে মানুষের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ রয়েছে। এগুলোকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। এক – শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং দুই – চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। মানুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো হলো – ১. সুন্দর আকৃতি বিশিষ্ট। لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ “আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে।” [সূরা ৯৫/তীন – ৪] ২. দুর্বল প্রকৃতির। [সূত্র: সূরা ৪/নিসা - ২৮] ৩. শ্রম নির্ভর। [সূত্র: সূরা ৯০/বালাদ -৪] আর, মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো হলো –

কোর'আনের একটি সূরার সাথে পরবর্তী সূরার সম্পর্ক

আল কোর’আন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা চেইনের মত; এর একটি আয়াত অন্য একটি আয়াতের সাথে সংযুক্ত, এবং একটি সূরা অন্য একটি সূরার সাথে সম্পর্কিত। আল কোর’আনের অন্যতম দুটি বৈশিষ্ট্য হলো – - প্রত্যেকটি সূরার প্রথম আয়াতগুলোর সাথে শেষের আয়াতগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এবং - কোর’আনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটি সূরা একটির সাথে অন্যটি সম্পর্কিত। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। সূরা ফাতিহার প্রথম ও শেষ আয়াতের সম্পর্ক।  الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ [সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।] صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ [যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করেছ, সে সমস্ত লোকের পথ আমাদের দেখাও। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার ক্রোধ নিপতিত হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।] দেখুন, সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত হলো আল্লাহর উপর মানুষের সন্তুষ্টির বর্ণনা, এবং শেষ আয়াতটি হলো মানুষের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টির বর্ণনা। সূরা ফাতিহার সাথে সূরা বাকারার সম্পর্ক।  اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ “আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর।” [সূরা ফাতিহা – ৫] ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ...

একজন নোমান আলী খান হয়ে ওঠার গল্প

মানুষকে কেবল কোরআন শিক্ষা দিয়েই যিনি বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিতে চান, তিনি নোমান আলী খান। কোরআনের চমৎকার শৈল্পিক সৌন্দর্য উপস্থাপনার জন্যে তিনি বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের মুসলিম তরুণ প্রজন্মের কাছে এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। সারা বিশ্বের মুসলিম তরুণরা আজ তাঁকে নিজেদের মডেল হিসাবে কল্পনা করেন, তাঁর মতো হতে চান। কোরআনের শব্দচয়ন কতটা সৃজনশীল, ভাষা কতটা মনোমুগ্ধকর, অর্থ কতটা যৌক্তিক – এগুলোই নোমান আলী খানের চিন্তাভাবনা ও আলোচনার বিষয়। তাঁর বক্তব্যে কোরআনের অন্তর্গত সৌন্দর্য ও মুজিযা মানুষের চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওঠে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনার ও অনলাইনে তাঁর বক্তব্য শুনে অসংখ্য মানুষ ইসলামের দিকে ফিরে আসছে এবং ইসলাম গ্রহণ করছে। তিনি প্রায় ২০টিরও অধিক তাফসীর গ্রন্থ পাঠ করেছেন। ফলে কোরআন নাযিলের ইতিহাস, শব্দচয়নের কারণ, ভাষার অলঙ্কার, অর্থের গভীরতা, যুক্তির প্রখরতা এবং ব্যাকরণগত শুদ্ধতার বিষয়গুলো তাঁর আলোচনায় ফুটে উঠে। তাই অনেক ইসলামী স্কলার নোমান আলী খানকে আল কোরআনের ভাষাবিজ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এছাড়াও বিশ্বের ৫০০ প্রভাবশালী ইসলামী স্কলারের মাঝে তাঁর স্থান অন্যতম। এ মানুষটি জন্মগ্র...

‘মুত্তাকীন’ [مُتَّقِينَ] ও ‘মুহসিনীন’ [مُحْسِنِينَ] শব্দের মাঝে পার্থক্য কি?

সূরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন – ذَ‌ٰلِكَ ٱلْكِتَـٰبُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًۭى لِّلْمُتَّقِينَ এ সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকীন বা পরহেজগারদের জন্য এটি হেদায়েত। [সূরা ২/বাকারা – ২] কিন্তু, সূরা লোকমানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন – تِلْكَ ءَايَـٰتُ ٱلْكِتَـٰبِ ٱلْحَكِيمِ هُدًۭى وَرَحْمَةًۭ لِّلْمُحْسِنِينَ এগুলো প্রজ্ঞাময় কিতাবের আয়াত। সৎকর্মপরায়ণদের জন্য এটি হেদায়েত ও রহমত। [সূরা ৩১/লোকমান – ২,৩] প্রশ্ন – ১, সূরা বাকারার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা কেবল ‘হুদা’[هُدًى] শব্দটি ব্যবহার করেছেন, কিন্তু সূরা লোকমানের শুরুতে ‘হুদা’ শব্দের সাথে অতিরিক্ত ‘রাহমাহ’ [رَحْمَةً] শব্দটিও ব্যবহার করেছেন। কেন? প্রশ্ন – ২, ‘মুত্তাকীন’ [مُتَّقِينَ] ও ‘মুহসিনিন’ [مُحْسِنِينَ] শব্দের মাঝে পার্থক্য কি?