সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ইসলাম লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ইসলামের একতা ও একটি গাছ

ইসলামকে একটি গাছের সাথে তুলনা করি। ধরুন, একটি আম গাছ। গাছটির শক্ত ও লম্বা একটি কাণ্ড আছে, অনেকগুলো শাখা প্রশাখা আছে, অনেকগুলো পাতা আছে এবং গাছে অনেকগুলো মিষ্টি আম আছে। এছাড়া, গাছটির বেশ কিছু শেকড় আছে। সম্পূর্ণ আম গাছটি হলো ইসলাম। গাছের যে একটি শক্ত কাণ্ড আছে, তা হলো ঈমান। গাছের যে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা আছে, তা হলো আমাদের শিয়া, সুন্নি, মাজহাব, সালাফী, তাবলীগ, জামায়াতে ইসলাম, আহলে হাদিস, এবং ইত্যাদি। গাছের যে অনেকগুলো পাতা আছে, সেগুলো হলো ব্যক্তি মুসলিম। গাছের ফলগুলো হলো আমাদের ভালো কাজ। এবং গাছের শেকড় হলো আমাদের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক। এবার হিসাবটা মিলিয়ে ফেলি। ১ প্রত্যেক গাছের একটি কাণ্ড থাকে। কোনো গাছের কাণ্ড যত শক্ত হয়, সে গাছের শাখা-প্রশাখাগুলো তত আত্ম-নির্ভরশীল হতে পারে। তেমনি, মুসলিমদের ঈমান যত শক্তিশালী হয়, মুসলিমরা তত আত্ম-নির্ভরশীল হতে পারে। ২ কোনো গাছের একটি শক্ত কাণ্ড থাকলে, তার শাখা-প্রশাখার দ্বারা সে গাছের কোনো সমস্যা হয় না, বরং তা সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটায়। কিন্তু গাছের কাণ্ড যদি দুর্বল হয়, তখন অতিরিক্ত শাখা-প্রশাখার কারণে গাছটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। তেমনি, মুসলিমদের ঈমান যদি অত...

ইসলামী শরিয়াহ ও রাজনীতি - শায়েখ হামজা ইউসুফ

"আধুনিক যুগের মুসলিমরা মনে করেন যে, ইসলাম হলো একটি রাজনৈতিক দর্শন। আসলে এটি জায়োনিস্টদের একটি দাবী। জায়োনিস্টরা ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন করার জন্যে ইহুদি ধর্মকে একটি রাজনৈতিক দর্শনে পরিবর্তন করে ফেলে। আধুনিক মুসলিমরা ইহুদি জায়োনিস্টদের অনুসরণ করছে। জায়োনিস্টরা যেমন ইহুদি রাষ্ট্র কায়েম করতে চেয়েছিলো, আধুনিক মুসলিমরাও তেমনি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। অথচ, রাসূল (স) কেয়ামতের একটি আলামত হিসাবে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে, "মুসলিমরা তখন বনি ইসরাইল অনুসরণ করবে।" অনেকের ধারণা এমন যে, ইসলামী রাষ্ট্রে মানুষকে জোর করে ভালো মুসলিম বানানো যায়। আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ইসলামে কখনো এমন কোনো ধারণার অস্তিত্ব ছিলো না, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। যদি কেউ মনে করে যে, রাষ্ট্র ও সরকারের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়াহকে বাস্তবায়ন করতে হবে, তাহলে তিনি ভুল চিন্তা করছেন। কারণ আল্লাহ তায়ালা কোর'আনে বলছেন – وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَن فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا ۚ أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ তোমার প্রভু ইচ্ছা করলে পৃথিবীর সকল মানুষ ঈমান গ্রহণ করতো। কিন্তু তুমি মানুষকে ...

রাজনীতির সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক - শায়খ ড. জাসের আওদা

[‘ইসলাম ও রাজনীতি’ প্রসঙ্গে কেউ মনে করেন, প্রচলিত ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলে ‘আদর্শ ইসলামী ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করাই হলো একমাত্র করণীয়। আবার কেউ মনে করেন, রাজনীতির মধ্যে ইসলামকে টেনে আনা মোটেও ঠিক নয়। কিন্তু স্বয়ং ইসলাম ব্যাপারটিকে কীভাবে দেখে, তা নিয়ে সমাজে স্বচ্ছ ধারণার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। গত ২০ মে ২০১৬ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ADAMS সেন্টারের জুমার খুতবায় শায়খ ড. জাসের আওদা রাজনীতির সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। সিএসসিএস -এর পাঠকদের জন্য বক্তব্যটি অনুবাদ করেছেন জোবায়ের আল মাহমুদ।]   গণসম্পৃক্ততা ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে নেতৃবৃন্দ, ইমাম ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্যে আমরা একটি নির্দেশনা তৈরি করেছি। আজকের বক্তব্যটি সেই প্রশিক্ষণেরই অংশ। বিশেষত, আমাদের নেতৃবৃন্দ, ইমাম ও শিক্ষকদের মধ্যে যারা এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন এ বক্তব্য তাদের জন্যে। একটি অনুষ্ঠানে আজকের  এই বক্তব্যের ঘোষণাটি দেয়ার পর বেশ কয়েকজন ভাইবোনের কাছ থেকে আমি কিছু প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। একজন বলেছেন, ‘ইসলাম ও রাজনীতি’ প্রসঙ্গটি নিয়ে মসজিদে আলোচনা করা উচিত নয়। এই ভাইয়ের য...

রেনে গেনোন - মসলিম দার্শনিক ও গণিতবিদ

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম একজন মুসলিম গণিতবিদ, দার্শনিক ও সূফী হলেন রেনে গেনোন (René Guénon)। কেউ যদি আধুনিক বিজ্ঞান ও বস্তুবাদী নাস্তিক বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ করতে চায়, তাহলে রেনে গেনোন তাঁকে একটি ভালো পথ দেখিয়ে দিবে। রেনে গেনোন ১৮৮৬ সালে ফ্রান্সের একটি খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। সত্য অনুসন্ধানের ইচ্ছায় জীবনে বিভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করার পর সর্বশেষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এবং ১৯৫১ সালে একজন মুসলিম হিসাবে মিশরে মৃত্যু বরণ করেন। মুসলিম হবার পর তাঁর নাম হয়েছিলো শেখ আবদুল ওহিদ ইয়াহিয়া। তাঁর লিখা বই পড়ে ইউরোপের প্রচুর মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। যে বইটি লিখে তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন, তা হলো – “The Crisis of the Modern World” বা, “আধুনিক বিশ্বের বিপদসমূহ।” বইটির সারমর্ম _________

হাসান তুরাবির ভাবনায় ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা

[সুদানের ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ড. হাসান তুরাবির এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ব্রিটিশ স্কলার ও সাংবাদিক জিয়াউদ্দীন সরদার। ব্রিটিশ টেলিভিশন চ্যানেল ফোর-এর সিরিজ প্রোগ্রাম ‘ইসলামিক কনভারসেশনস’-এ ২০১২ সালে এটি প্রচারিত হয়। এই সাক্ষাৎকারে ‘সলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে ড. তুরাবি তাঁর আন্ডারস্ট্যান্ডিং খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন। ইসলামী রাষ্ট্র কী? কীভাবে এটি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? নাগরিক জীবনে এর প্রভাব কী? ইসলামী রাষ্ট্রে ভিন্ন মতাদর্শের অবস্থান কী হবে? – এ ধরনের সমকালীন যুগজিজ্ঞাসার জবাব এতে পাওয়া যাবে।] জিয়াউদ্দীন সরদার: ইসলামী রাষ্ট্র মানে কী? হাসান তুরাবি: মুসলিম রাষ্ট্র মানে মুসলিম আধিপত্যশীল রাষ্ট্র। তবে ইসলামী রাষ্ট্র মানে – যে রাষ্ট্রে ইসলামী নীতি-আদর্শকে কেবল ব্যক্তিজীবনে নয়, বরং প্রকাশ্য জনপরিমণ্ডলে চর্চা করা হয়। জিয়াউদ্দীন সরদার: এ কথার মানে কী? হাসান তুরাবি: এর মানে হচ্ছে – যেখানে রাজনীতি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ সবকিছুই হবে ইসলাম দ্বারা অনুপ্রাণিত। যেহেতু ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। জিয়াউদ্দীন সরদার: তারমানে আপনি কি মোল্লা শাসিত কোনো রাষ্ট্রের কথা বলতে চাচ্ছেন?

নারীবাদীদের ইসলাম বিরোধিতার কারণ

নারীবাদীদের ইসলাম বিরোধিতার কারণ হলো পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা ____ এক ____ সরোজিনী নাইডু। তিনি একজন বাঙালী হিন্দু নারী। একজন কবি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আমাদের দেশের বর্তমান সেক্যুলার বাঙালী নারীদের মত তিনি এতোটা উগ্রবাদী ও অকর্মণ্য ছিলেন না। একজন নারী হয়েও তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তার খুবই উচ্চ ধারণা ছিলো। আমাদের দেশের নারীবাদীদের মতো তিনি কখনোই ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলতেন না। বরং তিনি বলতেন, ইসলাম ভারতবর্ষের জন্যে একটি আশীর্বাদ স্বরূপ। তিনি বলেন – “The loveliest thing that Islam brought to India is the saying of Prophet that "Paradise lies under the feet of the mother". “ইসলাম ধর্ম সবচেয়ে প্রিয় যে জিনিসটি ভারতবর্ষে নিয়ে এসেছে, তা হলো রাসূল (স) এর এই কথাটি – “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”। সরোজিনী নাইডু এর মতো আমাদের দেশের নারীবাদীরা যদি ইসলামকে বোঝার চেষ্টা করতেন, তাহলে নারীদের অধিকার আন্দোলনে তারা আরো অনেক বেশি প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারতেন।

ইসলামে জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয়

গুগলের মতো যিনি অনেক তথ্য জানেন, তিনি জ্ঞানী নন। কিংবা যিনি অনেক কোর’আন হাদিস মুখস্থ পারেন, তিনি আলিম নন। জ্ঞানী হলেন তিনি, যিনি বিভিন্ন তথ্যকে নিজের জীবনে কাজে লাগান। অথবা, আলিম হলেন তিনি, যিনি কোর’আন ও হাদিসকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেন। উদাহরণ স্বরূপ, একজন লোক জানে, সিগারেট খাওয়া অনেক ক্ষতি, কিন্তু তিনি সিগারেট ছাড়তে পারেন না। তাহলে এই জানার কারণেই তার শরীর সুস্থ হয়ে যাবে না। তেমনি কেউ কোনো তথ্য জানলেও তা যদি নিজের জীবনে কাজে লাগাতে না পারে, তাহলে তিনি জ্ঞানী হতে পারেন না।  তেমনি কেউ যতই কোর'আন হাদিস মুখস্থ করুক, নিজের জীবনে কাজে না লাগাতে পারলে তিনিও আলিম হতে পারেন না। অথবা ধরুন, একজন মানুষ জানে, নামাজ কিভাবে পড়তে হয়। কিন্তু তিনি যদি নামাজ না পড়েন, তাহলে এই জানাটা তার কোনো কাজে আসে না। অর্থাৎ, আমরা কত বড় জ্ঞানী, তা আল্লাহ আমাদেরকে জিজ্ঞাস করবেন না, আমরা কতটা ভালো কাজ করতে পেরেছি, তা আল্লাহ আমাদের জিজ্ঞেস করবেন। __________ ইসলাম একটি আন্দোলন ও কর্মমুখী ধর্ম। অলসভাবে বসে বা শুয়ে থাকার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। কোর’আনের প্রথম আদেশ হলো – “পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেন।...

আহলে কোর'আন, আহলে হাদিস ও আহলে সুন্নাহ

আহলে হাদিসের স্কলারদের মধ্যে মতপার্থক্য: নাসিরুদ্দীন আলবানী, মুহাম্মদ ইবনে সালেহ আল উসাইমিন, এবং আব্দুল্লাহ বিন বায - এই তিনজনই হলেন আহলে হাদিসের সবচেয়ে বড় আলিম। কিন্তু আকিদা ও ফিকহ বিষয়ে তিনজনের মত ছিলো তিন ধরণের। এই তিনজন আলিমের প্রায় ৪০০টি মতপার্থক্য নিয়ে ড সায়াদ আল বুরাইক একটি বই লিখেন। নাম - الإيجاز في بعض ما اختلف فيه الألباني وابن عثيمين وابن باز এই বইতে সায়াদ আর বুরাইক দেখান যে, আকিদা এবং ফিকহ বিষয়ে আহলে হাদিসের বড় বড় ইমামদের নিজেদের মধ্যেই অনেক মতপার্থক্য ছিলো। একজন আহলে হাদিসের আলিম বলেছেন, "এটি সুন্নত",  ঠিক একই কাজকে আহলে হাদিসের অন্য একজন আলিম বলেছেন, "এটি বিদায়াত" । যেমন, আবদুল্লাহ বিন বায বলেছেন - "রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর হাত বাঁধা সুন্নত"। কিন্তু, নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেছেন - "রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর হাত বাঁধা একটি বিদায়াত ও গুনাহের কাজ"। এখানে উভয়েই আহলে হাদিসের বড় ইমাম। কিন্তু একজন আহলে হাদিস যেটিকে সুন্নত বলছেন, অন্য একজন আহলে হাদিস ঠিক একই কাজকে বিদায়াত বলছেন। [সূত্র: উস্তাদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মারামারি

কিছুদিন আগে বিশ্ববিখ্যাত স্কলার (John Esposito) জন এসপোজিডোর সাথে দেখা হলো। এসপোজিডো একজন খ্রিষ্টান, কিন্তু ইসলামের পক্ষে তিনি প্রচুর কাজ করেছেন। এ কারণে, অনেক অনেক মুসলিম স্কলারও তাঁকে উস্তাদ হিসাবে গণ্য করেন। তো যাই হোক, তাঁর সাথে দেখা হবার পর, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'জন তাঁকে বললাম যে, "আমরা বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছি"। তিনি বললেন, "ও...। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো আমি চিনি। সেখানে গেস্ট শিক্ষক হিসাবে ছিলাম কিছুদিন।" তারপর তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনালেন আমাদের। একদিন তিনি ক্লাস নিচ্ছেন। হঠাৎ দেখলেন ছাত্ররা সব বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তিনি ভাবলেন, সম্ভবত তাঁর ক্লাস ছাত্রদের পছন্দ হয় নি, তাই ছাত্ররা দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু তিনি পরে বুঝতে পারলেন, বাইরে মারামারি হচ্ছে। ছাত্ররা মারামারিতে অংশ নেয়ার জন্যে ক্লাস ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তিনি বললেন, "এ ঘটনা দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। কেন ছাত্ররা ক্লাস ছেড়ে মারামারি করতে গেলো?" তাঁর এ প্রশ্ন শুনে আমরা খুবই লজ্জিত হয়ে গেলাম। তাঁকে কোনো উত্তর দিতে পারি নি। তবে এখন মনে হচ্ছে, এসপোজিডোর ভাগ্য ভালো ছিলো...

ইহুদী ও খ্রিস্টান শরিয়তের মধ্যবর্তী শরীয়ত ইসলাম

ইহুদি শরিয়তের নিয়ম হলো - কেউ আপনাকে একটি ঘুষি দিলে, আপনিও তাঁকে আরেকটি ঘুষি দিতে হবে। এখানে ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই। আর, খ্রিষ্টান শরিয়তের নিয়ম হলো - কেউ আপনাকে একটি ঘুষি দিলে, আপনি তাকে আরেকটি ঘুষি দিতে পারবেন না, তাকে ক্ষমা করে দিতে হবে। ইসলাম হলো এ দুটি শরিয়তের মধ্যপন্থী একটি শরিয়ত। যে কোনো অন্যায়ের শাস্তি প্রদান করার ক্ষেত্রে ইসলাম মানুষকে একটি স্বাধীনতা দেয়। কেউ আপনাকে একটি ঘুষি দিলে, হয় আপনি তাকে হুবহু আরেকটি ঘুষি দিতে পারেন, অথবা, অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন - وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ ۖ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرِينَ "যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়েছে। আর, যদি সবর কর, তাহলে তা সবরকারীদের জন্যে উত্তম।" [সূরা ১৬/ নাহাল - ১২৬] ইসলামি শরিয়াহ পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো আইন হবার পিছনে কারণ হলো, ইসলাম মানুষকে দুটি অপসন দেয়। হয় প্রতিশোধ, না হয় ক্ষমা। এ ক্ষেত্রে ক্ষমা করে দেয়ার জন্যে ইসলাম সুপারিশ করে।

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্...

বিভিন্ন ধর্মের দশ আদেশ

ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো আল্লাহর ‘দশ আদেশ’ বা ‘Ten Commandments’। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এই দশটি আদেশ খুব বেশি পরিচিত না হলেও ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষেরা এ নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেন। তারা আল্লাহর এই দশটি আদেশকে কেবল ধর্মীয় আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ‘Ten Commandments’ নামে প্রচুর শিল্প, সাহিত্য ও ধর্মীয় সিনেমা তৈরি করেছেন। আল্লাহর এই দশটি আদেশ তাদের ধর্মীয় গ্রন্থসমূহের যেমন মূল শিক্ষা, কোরআনেরও তেমনি মূল শিক্ষা। কোরআনে সূরা আন’আমের ১৫১ থেকে ১৫৩ আয়াতে এই দশটি আদেশের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত বা পুরাতন বাইবেলের এক্সোডাস ২০ অধ্যায়ের ১-১৭ অনুচ্ছেদ ও ডিউটরনমি ৫ অধ্যায়ের ৬-২১ অনুচ্ছেদে; এবং খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ ইঞ্জিলে বা নতুন বাইবেলের মথি ১৯ অধ্যায়ের ১৬-১৯ অনুচ্ছেদ ও ২২ অধ্যায়ের ৩৪-৪০ অনুচ্ছেদে এই দশটি আদেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল ধর্মগ্রন্থ নয়, বিজ্ঞানীরাও এই দশটি আদেশকে তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। যেমন বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন তার লেখায় উল্লেখ করেন যে, ‘মানুষকে সত্য বুঝতে হলে আল্লাহর এই...

'আকিদা'র হাকিকত

‘আকীদা’ শব্দটি এমন একটি শব্দ, যা দিয়ে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি ঘটানো হয়। ফলে এ শব্দটি এখন খুবই বিপদজনক হয়ে গেছে। কথিত এক ' এমাম ' তাঁর জনসভায় বলেছেন, “ধর্মের প্রথম হলো আকীদা, তারপর হলো ঈমান, তারপর ইসলাম। যার আকীদা ঠিক নেই, তার ঈমান ও ইসলাম কিছুই ঠিক নেই।” আমার জানার খুব ইচ্ছা, তিনি ‘আকীদা’ শব্দটি কোথায় পেলেন? কোর’আন ও হাদিসের কোথাও যে শব্দটি নেই, তা না থাকলে নাকি ঈমান ও ইসলাম কিছুই থাকে না!!! আকীদাপন্থীদের এ এক সমস্যা। ধর্মে যা নেই, তাই তারা ধর্মের মৌলিক ভিত্তি হিসাবে চালিয়ে দেয়। সাহাবীগণ ও সালফে সালেহীন কেউ যে শব্দটি ব্যবহার করেননি, সে শব্দটি দিয়েই এখন সাধারণ মুসলিমদেরকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। অথচ, ‘আকীদা’ ধর্মের মৌলিক কোনো বিষয় নয়। আল্লাহ তায়ালা ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো সাহাবীদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্যে স্বয়ং জিবরাঈল (আ)-কে মানুষের আকৃতিতে সাহাবীদের সামনে উপস্থিত করলেন। এ ঘটনাটিকে আমরা হাদিসে জিবরাঈল হিসাবে জানি।

অন্য সভ্যতার সাথে ইসলামের পার্থক্য

পৃথিবীতে চারটি বড় সভ্যতা রয়েছে। ইসলামী সভ্যতা, পশ্চিমা সভ্যতা, ভারতীয় সভ্যতা এবং চিনা সভ্যতা। ইসলামের সাথে বাকি তিনটি সভ্যতার পার্থক্য হলো, ইসলাম একটি বৈশ্বিক সভ্যতা, কিন্তু বাকি তিনটি হলো ভৌগোলিক সভ্যতা। ভারতীয় সভ্যতা তার ভৌগোলিক কারণেই চিনা সভ্যতার অংশ হতে পারে না। এবং চিনা সভ্যতা তার ভৌগোলিক কারণেই পশ্চিমা সভ্যতার অংশ হতে পারে না। কিন্তু ইসলামী সভ্যতা ভৌগোলিক কোনো সভ্যতা না হবার কারণে ভারতীয়, চিনা ও পশ্চিমা সভ্যতা সহ বিশ্বের সকল সভ্যতার অংশ হতে পারে। [Dr. Bruce Lawrence থেকে অনূদিত]  

নাস্তিক একটি প্রতিক্রিয়াশীল শব্দ

নাস্তিক শব্দটির মাঝেই প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তার বীজ রয়েছে। কারণ, পৃথিবীতে সবকিছু শুরু হয় একটি প্রস্তাবনা বা thesis এর মাধ্যমে। এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে পরবর্তীতে 'প্রতি-প্রস্তাবনা' বা antithesis এর জন্ম হয়। ‘আস্তিক’ বা theist শব্দটি একটি স্বভাবগত প্রস্তাবনা। এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে তৈরি হয় ‘না-আস্তিক’ বা atheist শব্দটি। 'না-আস্তিক' শব্দটি সম্পূর্ণভাবে 'আস্তিক' শব্দটির উপর নির্ভরশীল, কিন্তু 'আস্তিক' শব্দটি 'নাস্তিক' শব্দটির উপর নির্ভরশীল নয়। নাস্তিকের অবর্তমানে আস্তিক তার নিজের অস্তিত্ব হাজির করতে পারে, কিন্তু আস্তিকের অবর্তমানে নাস্তিক তার নিজের অস্তিত্ব হাজির করতে পারে না। অর্থাৎ, স্বভাবগত আস্তিক প্রস্তাবনার বিপরীতে তৈরি হওয়া একটি প্রতিক্রিয়াশীল প্রস্তাবনার নাম হলো নাস্তিক। ____ ইসলামের মূল বাণী “লা ইলাহা, ইল্লাল্লাহ” হলো আস্তিক ও নাস্তিক উভয়ের মাঝে একটি মেলবন্ধন বা সিন-থিসিস।

ইসলামে নারী ও পুরুষ

অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সূরা বাকারার ২৮২ নং আয়াত এবং সূরা নিসার ১১, ৩৪, ১৭৬ নং আয়াতে নারী ও পুরুষের মাঝে বৈষম্য করা হয়েছে। দেখুন, কোর’আনের যতগুলো আয়াতে নারী ও পুরুষের মাঝে বৈষম্য রয়েছে বলে দাবী করা হয়, সবগুলো আয়াত-ই সম্পদ সম্পর্কিত। সুতরাং, ইসলামে সম্পদের ধারণা কি তা ভালোভাবে না বুঝলে এই আয়াতগুলোর অর্থ বোঝা মুশকিল। পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা পৃথিবীতে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছে। পৃথিবীকে যে যতটুকু দখল করতে পারে, সে ততবড় ধনী। আর যে পৃথিবীকে দখল করতে পারে না, সে গরিব। মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীরা পৃথিবীকে কখনো স্থায়ীভাবে ভাগাভাগি করে না। ফলে তাদের মাঝে কেউ ধনী বা কেউ গরিব নেই। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বলেছেন পাখীদের থেকে শিক্ষা নিতে। রাসূল (স) পাখিদের মত রিজিকের সন্ধান করতে বলেছেন। কারণ, পাখিরা পৃথিবীকে দখল করে রাখে না, এবং পৃথিবীতে মালিকানা প্রতিষ্ঠা করে না। পাখীরা সকালে খালি পেটে বের হয়, এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে। মানুষ যদি পৃথিবীতে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা না করে, পাখিদের মত কেবল আল্লাহর উপর-ই তাওয়াককুল করতে পারে, তাহলে মানুষেরাও পাখিদের মত স্বাধীন ও সুখী হতে পারে। সুখী হ...

নারী, ইসলাম ও খ্রিস্টান

খ্রিস্টান ধর্মে, স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক হলো পিতা ও পুত্রের সম্পর্ক। স্রষ্টা হলেন পিতা, আর সৃষ্টির প্রতিনিধি যীশু হলেন পুত্র। কোর’আনে অনেকবার বলা হয়েছে যে, ঈসা (আ) হলেন মরিয়ম নামের একজন নারীর পুত্র, কিন্তু খ্রিস্টানরা বরাবর-ই বলতে থাকেন যে, ঈসা হলেন আকাশে থাকা একজন পুরুষের পুত্র। এখানেই ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্মের পার্থক্য। খ্রিস্টান ধর্মে নারীদের কোনো স্থান নেই। নারীরা হলো পাপের উৎস। এ কারণে, খ্রিষ্টান ধর্মের বর্তমান ভার্সন বা আধুনিক ধর্মেও নারীরা হলো পাপী বা শয়তান। আধুনিক ধর্মের ভাষা ইংরেজি। তাই, ইংরেজি ভাষায় – প্রথম নারীর নাম – ইভ [Eve], আর এ কারণে, শয়তানের নাম – ইভিল [Evil] অর্থাৎ, নারী মানে শয়তান, আর শয়তান মানে নারী। ইউরোপ-অ্যামেরিকা বলুন, আর মধ্যপ্রাচ্য বলুন, বিশ্বের যেখানেই আধুনিক ধর্ম প্রবেশ করে, সেখানেই নারীদেরকে ‘শয়তান’ বা মন্দ নামে অভিহিত করা হয়। ফলে সেখানে নারীবাদ নামে নতুন এক শক্তির উদ্ভব হয়। আধুনিক ধর্ম ও নারীবাদ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যেখানেই আধুনিক ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে, সেখানেই নারীবাদের জন্ম হয়েছে। আপনি আধুনিক ধর্ম গ্রহণ করে নারীদেরকে শয়তান বলবেন, আর নারীরা ...

পড়, তোমার মনের কিতাব!

লোকে বলে, মানুষের মন বুঝা সবচেয়ে কঠিন। আসলেই কঠিন। অন্যের মন বুঝা তো দূরে থাক, নিজের মন বুঝাই কষ্টকর। যে নিজের মনকে নিজে বুঝতে পারে, পৃথিবীতে সেই সবচেয়ে সুখী। নিজের মন নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসার নাম-ই শান্তি। এর অপর নাম সালাম, বা ইসলাম। যে নিজের মনকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারে, কিংবা, যে নিজের মনকে নিজেই বন্ধী করতে পারে, অথবা, যে নিজের কাছে নিজের মনকে সমর্পণ করতে পারে, সে জান্নাতি সুখ অনুভব করে। নিজের মনকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসার সর্বোত্তম ও সহজ দিকনির্দেশনা প্রদান করে যে গ্রন্থটি, তার নাম আল কোর’আন। আল কোর’আনের প্রথম শব্দ পড়। অর্থাৎ, রবের নামে তোমার মনকে পড়। সুখ, দুঃখ, বা রাগের সময় মনকে শান্ত বা নিয়ন্ত্রণ রাখার সবচেয়ে কার্যকারী কৌশল শেখায় আল কোর’আন। শান্ত মন-ই কেবল জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। অশান্ত মনের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণা। নিজেই নিজের মনকে জানা, বোঝা ও নিয়ন্ত্রণ করা পৃথিবীতে অনেক কষ্টকর হলেও আখিরাতে বিনাকষ্টে সবাই নিজের মনকে নিজেই দেখতে পাবে। কারণ, মৃত্যুর পরে সবার চোখের সীমাবদ্ধতা দূর হয়ে যায়। তাই সবাই তাদের নিজেদেরকে খুব ভালোভাবে দেখতে পারে। পৃথিবীর অশান্ত মনগুলো আখিরাতে নিজেদের বিশ্র...