সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০১৭ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

পশ্চিমা রাজনীতি ও পশ্চিমা শিক্ষা কি একই?

পশ্চিমা রাজনীতি ও পশ্চিমা শিক্ষা, এ দুটির মাঝে পার্থক্য জানা প্রয়োজন। অনেকেই পশ্চিমা রাজনীতিকে খুব ভালোবাসেন, কিন্তু পশ্চিমা শিক্ষাকে সারাক্ষণ গালাগালি করতে থাকেন। অথচ, বিষয়টি উল্টো হবার প্রয়োজন ছিল। যারা পশ্চিমা শিক্ষাকে দিনরাত গালাগালি করেন, তাঁরা আসলে পশ্চিমাদের শিখানো শব্দ দিয়েই পশ্চিমাদের গালাগালি করেন। আমরা নিজেদের ভাষায় পশ্চিমাদের বিরোধিতা করতে পারি না; এডওয়ার্ড সাঈদ বা নোয়াম চমস্কিদের থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হয়। পশ্চিমা রাজনীতি মুসলিমদের অনেক ক্ষতি করেছে, সুতরাং, পশ্চিমা রাজনীতির বিরোধিতা করা উচিত। কিন্তু পশ্চিমা জ্ঞান ও ভাষার বিরোধিতা করা মুশকিল। কেননা, পৃথিবীর সকল জ্ঞান ও ভাষা-ই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। পৃথিবীর যে প্রান্তে যে জ্ঞান-ই থাকুক না কেনো, তা মুসলিমদের হারানো সম্পদ। জ্ঞান কখনো পশ্চিমা বা পূর্বের হতে পারে না। জ্ঞান হলো ভিন্ন সভ্যতা বা অপরকে জানার একটি উপকরণ বা উপায়। ইবনে সিনা, ইবনে খালদুন, আল বিরুনী সহ মুসলিম বিশ্বের যেসব বুদ্ধিজীবীকে নিয়ে আমরা আজ গর্ব করি, তাঁদেরকে আমরা পশ্চিমা শিক্ষা ও ভাষার কারণেই চিনতে পেরেছি। সেলজুক বা উসমানী খেলাফতের সময়কার হাজার হাজার বিজ্ঞ

প্রথম আলোর গরু

সব যুগেই ইসলাম বিদ্বেষী পত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যম ছিল। মুসলিমদের খেলাফত পদ্ধতি ধ্বংসের পিছনে এই জাতীয় পত্রিকাগুলোর অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। সুলতান আবদুল হামিদ খানের সময়ে আমাদের ‘প্রথম আলো’র মত একটি পত্রিকা ছিল। নাম ‘মেশফেরেত’। তাদের কাজ ছিল, সুশীল ভাষায় ইসলাম ও ইসলামী খেলাফতের বিরোধিতা করা। বর্তমান সময়ের বিবিসি বা CNN -এর ভূমিকা পালন করতো তখন ‘Lewiston Evening Journal’ নামক একটি পত্রিকা প্রথম আলো এখন যা করে, তৎকালীন ‘মেশফেরেত’ পত্রিকাটি তাই করতো। তাদের কাজ ছিল, সুশীল ভাষায় ব্রিটিশ ও অ্যামেরিকানদের গোলামী ও দালালী করা। এ জন্যে তারা Lewiston Evening Journal পত্রিকার সংবাদগুলো উসমানী বা টার্কি ভাষায় অনুবাদ করে তাদের পত্রিকায় ছাপাতো। তো, একবার এই ‘মেশফেরেত’ পত্রিকা একটি সংবাদ ছেপেছে। সংবাদটি হলো – “ভারতবর্ষে ইংরেজদের অধীনে মুসলিমদের নামাজ পড়ার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।” সংবাদটির সাথে একটি ছবিও দেয়া হয়েছিল। তখন সুলতান আবদুল হামিদ খানের ছেলে এসে তাঁকে বললেন, “দেখুন, সুলতান, ইংরেজরা মুসলিমদেরকে কত স্বাধীনতা দিয়েছে”। সুলতান আবদুল হামিদ খান তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘এখানে যে ছবিটা আছে, তা ভালোভাবে দেখেছ?’

ক্ষমতার আগ্রহ কি দোষের কিছু?

ক্ষমতা বা রাজত্ব পাওয়ার আগ্রহ কিংবা নেতা হবার ইচ্ছা কি দোষের কিছু? দেখি, কোর’আন কি বলে। নবী-রাসূলগণ আমাদের আদর্শ। তাঁরা যা যা করেছেন, সবকিছুই আমাদের করণীয়। ______ সুলাইমান (আ) দোয়া করতেন – قَالَ رَبِّ ٱغْفِرْ لِى وَهَبْ لِى مُلْكًۭا لَّا يَنۢبَغِى لِأَحَدٍۢ مِّنۢ بَعْدِىٓ ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلْوَهَّابُ "হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন এক রাজ্য দান করুন, যার অধিকারী আমার পরে আর কেউ না হয়। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা।" [সূরা ৩৮/সাদ - ৩৫] সুলাইমান যে দোয়াটি করেছেন, সে দোয়াটি হুবহু কোর’আনে নিয়ে আসার কারণ হলো, আমরা যাতে এমন দোয়া করি। কোর’আনে যতগুলো দোয়া রয়েছে, তন্মধ্যে রাষ্ট্র বা রাজ্য ক্ষমতা লাভ করার দোয়াটি অন্যতম। ইব্রাহীম (আ) সন্তান লাভের জন্যে করেছিলেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ইসমাইল ও ইসহাক (আ)-এর মত দুই জন নবী সন্তান দান করেছিলেন। আমরাও ইব্রাহীম (আ) মত আল্লাহর কাছে সন্তান লাভের জন্যে দোয়া করি, যদিও আমাদের সন্তানরা নবীর মর্যাদা প্রাপ্ত হবে না। একইভাবে, সুলাইমান (আ) –এর মত রাষ্ট্র বা রাজ্য ক্ষমতা লাভ করার দোয়া আমরা করতে পারি, যদিও সুলাইমান (আ) –এর মত রাজ্য হয়তো আমরা পাব না।

ইসলামী সংগঠনের ব্রাহ্মণ-শূদ্র

কল্পনা করুন, কোনো দেশের একটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন ইসলামের জন্যে কাজ করে। এই সংগঠনের সকল সদস্যের মান সমান নয়। সংগঠন তার সদস্যদেরকে চারটি স্তরে ভাগ করেছে। মনে করুন, চারটি স্তরের নাম যথাক্রমে ক, খ, গ, ঘ। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র। ‘ক’ গ্রুপের সদস্যরা বা ব্রাহ্মণ স্তরের লোকজন সংগঠনের সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। এরপর ‘খ’ গ্রুপ, তারপর ‘গ গ্রুপ। এবং সবচেয়ে কম সম্মানিত হলো ‘ঘ’ গ্রুপ বা শূদ্র স্তরের লোকজন। ধরুন, ঐ সংগঠনের চারজন ছাত্র একটি রুমে থাকে। চারজন-ই ইসলামকে ভালোবাসে। কিন্তু সমস্যা হলো, ঐ রুমের তিনজন হলো ‘ক’ গ্রুপের সদস্য বা ব্রাহ্মণ এবং একজন হলো ‘ঘ’ গ্রুপের সদস্য বা শূদ্র। ‘ক’ গ্রুপের সদস্য বা ব্রাহ্মণেরা প্রতি মাসে একদিন একটি ইসলামী সভা করেন। কিন্তু সেখানে ‘ঘ’ গ্রুপের সদস্য বা শূদ্রদের থাকার কোনো অধিকার নেই। তাই, ঐ চারজনের কক্ষে যে একজন শূদ্র থাকে, তাকে বের করে দিয়ে বাকি ব্রাহ্মণেরা তাঁদের ইসলামী সভা পরিচালনা করেন। অর্থাৎ, সংগঠনের সকল সদস্যের মান সমান নয়। তাই, সবাইকে সব ইসলামী সভায় রাখা সম্ভব নয়।

ছদ্মনাম ব্যবহারের উপকারিতা

ছদ্মনাম ব্যবহার করার কিছু উপকারিতা। ১। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছদ্মনাম ব্যবহার করলে অনেক স্বাধীনতা অর্জন করা যায়। মনে যা চায়, তাই করা যায়। যেমন, কাউকে গালাগালি করা, হুমকি দেয়া, বা অশ্লীলতার চর্চা সহ সবকিছুই খুব সহজে ও স্বাধীনভাবে করা যায়। ২। ছদ্মনামে অনেক ‘ধর্মযুদ্ধ’ করা যায়। যেমন, হিন্দুরা মুসলিমদের ছদ্মনাম নিয়ে কিংবা মুসলিমরা হিন্দুদের ছদ্মনাম নিয়ে একে অপরকে শক্তিশালী গালাগালির অস্ত্র দিয়ে ধরাশায়ী করে ফেলতে পারে। ৩। ছদ্মনামের মানুষেরা অনেক বেশি ধার্মিক হতে পারে। কেউ ব্যক্তিজীবনে পরিচিত মানুষদের কাছে যত খারাপ-ই হোক না কেনো, তিনি ছদ্মনামে সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে অন্যদের তাকওয়া নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। অন্যদের ভুল ধরা, অন্যদেরকে উপদেশ দেয়া, এবং গালাগালি করার ক্ষেত্রে ছদ্মনাম খুবই উপকারী। ৪। ছদ্মনামে অনেক রাজনীতি করা যায়। নিয়মিত ও যথেষ্ট গালাগালি করার মাধ্যমে যে কোনো স্বৈরশাসককে খুব সহজে উৎখাত করে দেয়া সম্ভব। ৫। ছদ্মনামে প্রচুর ‘জিহাদ’ করা যায়। নিজের প্রকৃত নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার সাহস না থাকলেও কাফেরদেরকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার সাহস কিন্তু তাঁদের ঠিকই থাকে। এ ছাড়াও ছদ্মনামের আরো হাজার হাজার গোপনীয়

আল্লাহর গুণবাচক নামের মাঝে "এবং" নেই

"বিসমিল্লাহ হির-রাহমানির রাহিম" – এ বাক্যটির অর্থ করার সময়ে আমরা বলি – “পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি”। বাংলায় অনুবাদ করার সময়ে “পরম করুণাময় ‘ও’ পরম দয়ালু” দু’টি শব্দের মাঝে একটি [ও]–কে যুক্ত করি আমরা। কিন্তু কোর’আনে আল্লাহর একাধিক নাম একসাথে ব্যবহৃত হলে কখনোই [ও / এবং] যুক্ত হয় না। যেমন ধরুন, আল্লাহ বলছেন – إِنَّكَ أَنتَ ٱلْعَلِيمُ ٱلْحَكِيمُ “নিশ্চয় আপনি জ্ঞানময় ‘ও’ প্রজ্ঞাবান”। [২/৩২] এখানে, ٱلْعَلِيمُ ও ٱلْحَكِيمُ শব্দের মধ্যে আরবি ‘ওয়াও’ বা ‘এবং’ শব্দটি নেই। কিন্তু আমরা অনুবাদের সময়ে ‘ও’/ ‘এবং’ শব্দটিকে ব্যবহার করি। তাহলে এটি কি ভুল অনুবাদ? উত্তর – না। বাংলা ভাষায় আমরা একাধিক বিশেষণ বা গুণবাচক শব্দ ব্যবহার করার সময়ে মাঝখানে [ও] শব্দটি যুক্ত করি। যেমন, আমরা বলি – “ছেলেটি মেধাবী ও চরিত্রবান”। এখানে ‘মেধাবী’ [ও] ‘চরিত্রবান’ দুটি শব্দের মাঝে ‘ও’/’এবং’ শব্দটিকে আমরা স্বাভাবিক ভাবেই যুক্ত করি।

নারী কি পুরুষের পাঁজরের হাড়?

“নারীদেরকে পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে” – এ কথাটি আমরা প্রায়ই শুনি। ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্যে অনেকেই এ কথাটি বলে থাকেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইসলাম ধর্মের কোথাও এ কথাটি নেই। এটি হলো খ্রিস্টান ধর্মের একটি কথা। বাইবেলে বলা হয়েছে – Then the LORD God made a woman from the rib he had taken out of the man, and he brought her to the man. [Bible, New International Version, Genesis,Chapter 2, Verse 22] “স্রষ্টা পুরুষের পাঁজর থেকে একটি হাড় নিয়ে তা দিয়ে একজন নারীকে সৃষ্টি করেছেন। এবং তিনি নারীটিকে পুরুষের সামনে উপস্থিত করলেন।“ বাইবেলের এই লাইনটির ব্যাখ্যায় খ্রিস্টানগণ বলেন, আল্লাহ তায়ালা প্রথম আদম (আ)-কে সৃষ্টি করেছেন। এরপর আদমের পাঁজর থেকে একটি হাড় সংগ্রহ করেন। তারপর তা থেকে হাওয়া (আ)-কে সৃষ্টি করেন। খ্রিস্টানদের এ কথাটি এখন মুসলিম সমাজে খুবই পরিচিত। কিন্তু এর কারণ কি? মূলত, রাসূল (স) –এর একটি হাদিসকে কোর’আনের সাহায্যে ব্যাখ্যা না করে, বাইবেলের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেই এ সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে।

জান্নাতের হুর গেলমান

অনেকে ওয়াজের মধ্যে জান্নাতের এমন বর্ণনা দেন, শুনে মনে হয়, তিনি এইমাত্র জান্নাত থেকে ঘুরে এসেছেন। অথচ, ইবনে আব্বাস (রা) বলেন - ليس في الدنيا من الجنة شيء إلا الأسماء "জান্নাতে যা আছে, কেবল নাম ছাড়া এমন কিছু পৃথিবীতে নেই।" [সূত্র: তাফসীরে তাবারী, খ – ১, পৃ - ৩৯২ ] ________ আমরা হুর-গেলমান এগুলোকে নিয়ে যেসব আলোচনা করি, অথবা, এগুলোকে যেভাবে পৃথিবীর সাথে মিলিয়ে ব্যাখ্যা করি, তা আসলে সঠিক নয়। কেননা, আমরা আসলে কেউই জানি না, জান্নাতের হুর বা গেলমান কেমন হবে? আমরা কেবল নামটা জানতে পারি।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষকদের কথা একটু কল্পনা করুন। আপনার চোখে কি ভেসে উঠবে? ভয়ঙ্কর সব চিত্র। ছোট বেলার আরবি শিক্ষক মানেই বেত্রাঘাত। পড়া না পারলেই ঠাস... ঠাস...। এরপর, প্রাইমারি স্কুলের অংক শিক্ষক। ভুল করলেই ডাস্টার নিক্ষেপ, এবং মাথা পেটে রক্ত। তারপর, হাই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক। প্রাইভেট না পড়লে নিশ্চিত ফেল। অতঃপর, মাদ্রাসার হুজুর। প্রশ্ন করলেই বলেন – “বেয়াদব কোথাকার”। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তো নিজদেরকে ‘প্রভু’ মনে করেন। সামান্য একটা প্রশ্নের কারণে ১৫/১৬ বছরের ছাত্রজীবনকে একেবারে ধ্বংস করে দেন। কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরের শিক্ষকদের কোচিং ও প্রাইভেট ব্যবসা জমজমাট। অর্থের বিনিময় ছাড়া শিক্ষা প্রদান করতে তাঁরা মোটেও আগ্রহী নন। এই হলো আমাদের শিক্ষক সম্প্রদায় এবং এই হলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষাব্যবস্থার কথা না হয় বাদ-ই দিলাম, এটা পরিবর্তন করা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু একজন শিক্ষক তো নিজেকে ভালো ব্যবহারের অধিকারী করতে পারেন। এতে তো কোনো বাধা নেই। তবু আমাদের শিক্ষক সমাজের আজ এই অবস্থা কেন? ইতিহাসে দেখি। আহ! কত সুন্দর ছিল আমাদের ইসলামী শিক

ইহুদিরা শ্রেষ্ঠ হবার কারণ কি?

“ইহুদিরা ভালো খায়, তাই তারা ভালো চিন্তা করতে পারে, এবং এ কারণে তারা আজ সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে। সুতরাং, মুসলিমদেরকেও এখন তাদের অনুকরণ করা উচিত।” – এ কথাটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ বিতর্ক হচ্ছে দেখলাম। তাই, আমিও একটু অংশ নিলাম। মানুষের খাবার তার চিন্তা-ভাবনায় অনেক প্রভাব ফেলে, এ কথাটি খুবই সত্য। ইবনে খালদুন তাঁর মুকাদ্দিমায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আমরা সে আলোচনায় না গিয়ে কোর’আন ও হাদিস থেকে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছি। আল্লাহ তায়ালা তাঁর সকল নবী ও রাসূলদেরকে উত্তম ও ভালো খাবার খেতে বলেছেন। يَـٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُوا۟ مِنَ ٱلطَّيِّبَـٰتِ وَٱعْمَلُوا۟ صَـٰلِحًا ۖ إِنِّى بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌۭ “হে রসূলগণ, তোমরা উত্তম খাদ্য আহার কর এবং সৎকাজ কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত”। [সূরা ২৩/ মুমিনূন - ৫১] মুমিনদের-ই একটি বৈশিষ্ট্য হলো তারা পুষ্টিকর ও উত্তম খাবার খায়। এ কারণেই সূরা মু’মিনে ভালো খাবারের আলোচনাটি এসেছে। শুধু তাই নয়, পুষ্টিকর ও উত্তম খাদ্য খাবারের জন্যে আল্লাহ তায়ালা তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে নির্দেশও দিয়েছেন। يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُلُوا۟ مِن طَيِّبَ

হাফিজ, মাওলানা, মুফতি, মাদানী

আবু মানসুর আল মাতুরিদি অনেক বড় আলেম ছিলেন। আবু হানিফার মতই বড়। তারপরেও তিনি খুব স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতেন। একদিন আব্বাসীয় এক খলিফা জরুরী প্রয়োজনে তাঁর নিকট প্রতিনিধি পাঠালেন। খলিফার প্রতিনিধি এসে ইমাম মাতুরিদিকে দেখে একজন সাধারণ মানুষ মনে করেছিলেন। তাই তিনি ইমাম মাতুরিদিকে জিজ্ঞাস করলেন - মাওলানা সাহেব কোথায়? ইমাম মাতুরিদি বললেন - মাওলানা তো আল্লাহ। প্রতিনিধি বললেন - আচ্ছা, ঠিক আছে। উস্তাদ কোথায় তা বল। ইমাম মাতুরিদি বললেন - উস্তাদ তো রাসূল (স)। প্রতিনিধি বললেন - আরে বেকুব! আবু মানসুর আল মাতুরিদি কোথায়? ইমাম মাতুরিদি বললেন - এই তো আমি আল্লাহর বান্দা আবু মানসুর আল মাতুরিদি। [সূত্র: ইমাম মাতুরিদি গবেষক Prof. Dr. Sönmez Kutlu] ______ বর্তমানে অনেকেই খ্রিষ্টান পাদ্রিদের মত নিজেদেরকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেন। যেমন, মাওলানা, মুফতী, হাফেজ, শায়খ, উস্তাদ, মাদানী, আল আজহারি, ইত্যাদি। অন্যরা বললে সমস্যা নেই, কিন্তু কেউ যখন নিজেই নিজের নামের আগে এসব শব্দ যুক্ত করেন, তখন তাতে তাঁর অহংকার ও অজ্ঞতা ফুটে উঠে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ধর্মীয় অহংকার থেকে মুক্ত করুক।

আগে চেষ্টা, এরপর দোয়া

চেষ্টার সাথে সাথে দোয়াও করতে হয়। দোয়ার সাথে সাথে চেষ্টাও করতে হয়। -এ দুটি বাক্য কি একই অর্থ বহন করে? অনেকের কাছে দুটি বাক্যের অর্থ একই মনে হলেও আমার কাছে ভিন্ন মনে হয়। আমরা যখন বলি - "চেষ্টার সাথে সাথে দোয়াও করতে হয়"; এর মানে হলো, আগে চেষ্টা করতে হয়, এরপর দোয়া করতে হয়। কিন্তু, আমরা যখন বলি - "দোয়ার সাথে সাথে চেষ্টাও করতে হয়", এর মানে হলো, আগে দোয়া করতে হয়, তারপর চেষ্টা করতে হয়। _____ তো আসি, সবচেয়ে সেরা দোয়াটি থেকে এ বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করি। সবচেয়ে সেরা দোয়া হলো সূরা ফাতিহা। কারণ, প্রত্যেক নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হয়, তাই নামাজকে আরবিতে সালাত বা প্রার্থনা বলা হয়। এছাড়া, যে কোনো মুনাজাতের শেষে আমরা সূরা ফাতিহা পাঠ করি। সূরা ফাতিহায় লক্ষ্য করলে আমরা দেখি, ১ থেকে ৩ নং আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়েছে। ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, "আমরা কেবল তোমার ইবাদত করি, এবং কেবল তোমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। এবং, ৫ থেকে ৭ নং আয়াতে দোয়া বা প্রার্থনা করা হয়েছে। এবার দেখুন, ৪ নং আয়াতের প্রথম অংশে কাজের কথা বলা হয়েছে, এবং শেষ অংশে দোয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং, এখানে কাজ আগে, পরে দোয়

আল্লাহকে অনুভব করার উপায়

আমরা কখন বুঝব যে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সরাসরি দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন? ১। যখন খুবই ব্যস্ততার মাঝেও আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ হয়। ২। যখন পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন বা অধীনস্থদেরকে সাহায্য করতে মন চায়। ৩। যখন কোনো ফকির বা ভিক্ষুককে টাকা বা খাবার দিতে ইচ্ছা হয়। ৪। যখন গাছ-পালা, সাগর-নদী, পশু-পাখী অর্থাৎ প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা জাগে। ৫। যখন আল্লাহর দেয়া প্রাকৃতিক সম্পদকে অপচয় ও দূষণ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়। ৬। যখন কারো জন্যে ভালো কোনো খাবার বা সুন্দর কোনো কিছু তৈরি করতে মন চায়। ৭। যখন প্রতিটি খাদ্য ও পানীয়কে আল্লাহর নিয়ামত মনে হয়। ৮। যখন কোর’আন বা কোনো বই পড়ার সময়ে গভীর ও নতুন কোনো চিন্তা-ভাবনা নিজের মাঝে জাগ্রত হয়। ৯। যখন নিজের গভীর চিন্তা থেকে কোনো কিছু আঁকতে বা লিখতে ইচ্ছা হয়। ১০। যখন নিজে নিজে নতুন কিছু আবিষ্কার করে ফেলি। ১১। যখন শিশু বা দুর্বলদের প্রতি হৃদয় থেকে ভালোবাসা জাগে। ১২। যখন কেউ নিজের সন্তানদেরকে নৈতিকভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। ১৩। যখন নিজের ব্যক্তিগত সবকিছু বন্ধুদের আগে পিতা-মাতার সাথে শেয়ার করতে মন চায়। ১৪। যখন সমাজের বিভিন্ন বাধা ও দাসত্ব প্রথাগুলো বোঝার যোগ্যতা

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্

ন্যায় কি অন্যায়?

রূমি ছিলেন প্রেমের কবি। তাঁকে বলা হলো - ন্যায় কি? বললেন - গাছে পানি দেওয়া। বলা হলো - অন্যায় কি? বললেন - গাছের কাঁটায় পানি দেওয়া। _____ হে 'বন্ধু' দেশ! শোকের মাসে আমাদের কন্নায় চোখের পানি ভেসে যায় বন্যায় এ তোমার ন্যায় কি অন্যায়?

কাঁদো

শোকের মাস, আগস্টে কাঁদো বাঙালি, কাঁদো বাংলাদেশের জন্যে কাঁদো, সারা বিশ্বের জন্যে কাঁদো। গণতন্ত্রের জন্যে কাঁদো। হাজারো তরুণ তরুণীর প্রাণের জন্যে কাঁদো, মিশরের জন্যে কাঁদো। কাঁদো, রাবেয়ার জন্যে কাঁদো। [১৪ আগস্ট ২০১৩, মিশরের রাবেয়া স্কয়ারে খুন করা হয় হাজারের অধিক গণতন্ত্র কর্মীকে]

সুখ

রহিমা চাচীকে বলি, সুখ কি? বলে, হাঁস আছে, মুরগি আছে, গরু আছে দুটি, আমার বাবা সুখের অভাব কি। শহরের মিথিলাকে বলি, সুখ কি? বলে, আত্মহত্যা ছাড়া সুখ আবার কি। ওরা সুখের সন্ধানে পড়ি দেয় কত সাগর, কত নদী দেশ, বিদেশ কত কি। গ্রামের রহিমা চাচী, হাঁসটা ঘরে ফিরলেই সুখী।

ভিন্ন গ্রহে প্রাণী

"বিজ্ঞান কোনো কিছু আবিষ্কার করলেই তোমরা বল, 'এটি তো কোর'আনে আছে'। কিন্তু তার আগে তো তোমরা কিছু বলতে পার না।" - এ অভিযোগটি অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু, এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল অভিযোগ। যেমন, দেখুন। ভিন্ন গ্রহে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কার করতে পারে নি। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, পৃথিবী ছাড়া ভিন্ন গ্রহেও হাঁটতে পারে এমন প্রাণী রয়েছে। আল্লাহ বলছেন - وَمِنْ ءَايَـٰتِهِۦ خَلْقُ ٱلسَّمَـٰوَ‌ٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا بَثَّ فِيهِمَا مِن دَآبَّةٍۢ ۚ وَهُوَ عَلَىٰ جَمْعِهِمْ إِذَا يَشَآءُ قَدِيرٌۭ "তাঁর অন্যতম একটি নিদর্শন তিনি আসমানসমূহ ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন। এবং উভয়ের মধ্যে তিনি জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি যখন ইচ্ছা এ সবগুলোকে একত্রিত করতে সক্ষম।" [সূরা ৪২/শূরা - ২৯] এ আয়াতে স্পষ্ট যে, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর বাইরে ভিন্ন গ্রহে জীব-জন্তু সৃষ্টি করেছেন। বিজ্ঞান এখনো তা আবিষ্কার করতে না পারলেও আমরা তা বিশ্বাস করি। ভবিষ্যতে যে দিন বিজ্ঞান তা আবিষ্কার করতে পারবে, সে দিন কেউ যদি বলে, এটা কোর'আনে অনেক আগেই ছিল, তাহলে তাতে সমস্যা কি? এমন অনেক কিছুই আছে, যা বিজ

বড় জিহাদ কি? কিভাবে লড়তে হয়?

আমাদের উপর জিহাদ ফরজ করা হয়েছে, তাই আমাদেরকে জিহাদ করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন জিহাদ সবচেয়ে বড়? আল্লাহ তায়ালা বলছেন – فَلَا تُطِعِ ٱلْكَـٰفِرِينَ وَجَـٰهِدْهُم بِهِۦ جِهَادًۭا كَبِيرًۭا “তুমি কাফেরদের আনুগত্য করবে না এবং তাদের সাথে কোর’আনের সাহায্যে বড় জিহাদ কর”। [সূরা ২৫/ ফুরকান - ৫২] এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট যে, তরবারির সাহায্যে নয়, বরং কোর’আনের সাহায্যে যে জিহাদ করা হয়, তা হল সবচেয়ে বড় জিহাদ। অর্থাৎ, কোর’আনের মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ-ই হল সবচেয়ে বড় জিহাদ। ... এছাড়া, উত্তম জিহাদ সম্পর্কে রাসূল (স)-কে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন - عن أبي ذر قال: قلت يا رسول الله أي الجهاد أفضل قال: أن يجاهد الرجل نفسه وهواه "হযরত আবু জর রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, "কোন জিহাদ সর্বোত্তম?" তিনি বললেন, "নফস ও কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদই উত্তম জিহাদ"। [সুয়ুতী, জামিউল আহাদীস, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং - ৪১৬৮৩। কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআল, হাদিস নং- ১১৭৮০] নফস ও কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করার সবচেয়ে ব

অসভ্য ইউরোপ ও ১১ জুলাই

কল্পনা করতে পারেন? যে ইউরোপকে আমরা বিশ্ব মানবতার বন্ধু বলি, সে ইউরোপ মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে আজকের এই দিনে ৮,৩৭৩ জন বসনিয়ার নিরপরাধ মুসলিমকে গণহত্যা করেছিল। খুব বেশি দিন আগের কথা না। মাত্র ২২ বছর আগের ঘটনা। নব্বইয়ের দশকে কমিউনিস্ট যুগোস্লাভিয়া পতনের পর নতুন নতুন কিছু রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে। সে সময়ে বসনিয়ার মুসলিমদের উপর সার্বিয়া আগ্রাসন ও হামলা চালায়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে প্রায় এক লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়। যুদ্ধে মানুষ মারা যাবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে ইউরোপ তখন মুসলিমদের উপর যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছিল, সে ইতিহাস আমারা কিছুতেই এবং কখনোই ভুলতে পারব না। ১৯৯৫ সালের জুলাই মাস। বসনিয়া ও সার্বিয়া যুদ্ধের এক পর্যায়ে জাতিসঙ্ঘ মুসলিমদের নিকট প্রস্তাব দিল যে, তোমরা যদি তোমাদের সকল অস্ত্র আমাদের কাছে জমা দিয়ে দাও, তাহলে আমরা তোমাদের নিরাপত্তা দিব। তখন বসনিয়ার মুসলিমরা জাতিসঙ্ঘের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হল। বসনিয়ার পূর্বাঞ্চল সেব্রেনিকা নামক স্থানে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-শিশু সহ প্রায় ১০ হাজার মুসলিমকে একত্রিত করা হল। সবার কাছ থেকে অস্ত্র জমা নিয়ে নেয়া হ

বিভিন্ন ধর্মের দশ আদেশ

ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো আল্লাহর ‘দশ আদেশ’ বা ‘Ten Commandments’। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এই দশটি আদেশ খুব বেশি পরিচিত না হলেও ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষেরা এ নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেন। তারা আল্লাহর এই দশটি আদেশকে কেবল ধর্মীয় আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ‘Ten Commandments’ নামে প্রচুর শিল্প, সাহিত্য ও ধর্মীয় সিনেমা তৈরি করেছেন। আল্লাহর এই দশটি আদেশ তাদের ধর্মীয় গ্রন্থসমূহের যেমন মূল শিক্ষা, কোরআনেরও তেমনি মূল শিক্ষা। কোরআনে সূরা আন’আমের ১৫১ থেকে ১৫৩ আয়াতে এই দশটি আদেশের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত বা পুরাতন বাইবেলের এক্সোডাস ২০ অধ্যায়ের ১-১৭ অনুচ্ছেদ ও ডিউটরনমি ৫ অধ্যায়ের ৬-২১ অনুচ্ছেদে; এবং খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ ইঞ্জিলে বা নতুন বাইবেলের মথি ১৯ অধ্যায়ের ১৬-১৯ অনুচ্ছেদ ও ২২ অধ্যায়ের ৩৪-৪০ অনুচ্ছেদে এই দশটি আদেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল ধর্মগ্রন্থ নয়, বিজ্ঞানীরাও এই দশটি আদেশকে তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। যেমন বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন তার লেখায় উল্লেখ করেন যে, ‘মানুষকে সত্য বুঝতে হলে আল্লাহর এই

সুলতান সেলিম ও জেনবিলি আলি এফেন্দি-র রাজনীতি

একজন মুসলিমকে সকল কাজ 'বিসমিল্লাহ' বলে শুরু করতে হয়। একজন মুসলিম দার্শনিককে 'বিসমিল্লাহ' বলেই তাঁর চিন্তা শুরু করতে হয়। একজন মুসলিম বিজ্ঞানীকে 'বিসমিল্লাহ' বলেই তাঁর গবেষণা শুরু করতে হয়। একজন মুসলিম ডাক্তারকে 'বিসমিল্লাহ' বলেই তাঁর ডাক্তারি শুরু করতে হয়। তেমনি, একজন মুসলিম রাজনৈতিক ব্যক্তিকে 'বিসমিল্লাহ' বলেই রাজনীতির মাঠে নামতে হয়। অর্থাৎ, একজন মানুষ যে কোনো কিছুই করুক না কেন, 'বিসমিল্লাহ' বলেই কাজটি শুরু করতে হয়। সুতরাং, বিজ্ঞান, দর্শন ও রাজনীতি সহ জীবনের সব কাজেই ধর্মের ভূমিকা রয়েছে। _____ এ প্রসঙ্গে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলি। _____

উত্তম জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী লাভের উপায়

উত্তম জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী লাভের দোয়া: وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَ‌ٰجِنَا وَذُرِّيَّـٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍۢ وَٱجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا "হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে এমন জীবনসঙ্গী এবং সন্তান দান করুন, যারা হবে আমাদের চোখের মণি। এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে নেতা বা ইমাম করুন"। [সূরা ২৫/ফুরকারন - ৭৪] ______ উত্তম জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী নির্বাচনের উপায়: জিজ্ঞাস করুন, "আপনি জীবনে কয়বার অর্থসহ সম্পূর্ণ কোর'আন পড়েছেন?" যিনি জীবনে যতবেশি কোর'আন অধ্যয়ন করেছেন, তিনি ততবেশি উত্তম জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী হতে পারবেন। কেননা, রাসূল (স) বলেছেন - إِنَّ أَفْضَلَكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ القُرْآنَ وَعَلَّمَهُ "নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে উত্তম হলো সে, যে নিজে কোর'আন অধ্যয়ন করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়"। [সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদীস নং - ৫০২৮] [এটি একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা]

সব দলেই ভালো-খারাপ লোক থাকে

আওয়ামী লীগ খারাপ, বিএনপি ভালো। বিএনপি খারাপ, হেফাজতে ইসলাম ভালো। হেফাজতে ইসলাম খারাপ, আহলে হাদিস ভালো। আহলে হাদিস খারাপ, জামায়াতে ইসলামী ভালো। জামায়াতে ইসলামী খারাপ, আওয়ামী লীগ ভালো। ...এভাবে আমাদের বিতর্ক চলতে থাকে...। কোনো দলের সবাইকে সম্মিলিতভাবে ভালো বলা যায় না, অথবা, কোনো দলের সবাইকে সম্মিলিতভাবে খারাপ বলা যায় না। কেউ কোনো একটি দলের অন্ধভক্ত হয়ে গেলে অনেকগুলো সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং অপ্রয়োজনীয় কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়। যেমন, আহলে হাদিসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে কেন দরবেশ বাবা সালমান এফ রহমান থাকেন? আওয়ামী লীগের বাস ভবনে কেন হেফাজতের আমীর দাওয়াত খেতে যান? জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের চেয়ে কেন মাহমুদুর রহমান বেশি ইসলামিস্ট? হেফাজতে ইসলামীর জন্যে কেন ফরহাদ মজহার প্রয়োজন? তাবলীগের ইজতিমায় কেন খালেদা ও হাসিনা মোনাজাত করতে যায়? আলেমদের মাহফিলে কেন শামীম ওসমান ওয়াজ করেন? -এ ধরণের হাজারো প্রশ্ন তৈরি হয়, যখন আমরা সম্মিলিতভাবে কোনো দলকে ভালো বলি, অথবা, সম্মিলিতভাবে কোনো দলকে খারাপ বলি। আগের একটি পোষ্টে (চিত্রসহ) আমি বোঝার চেষ্টা করেছি যে, আমরা মানুষকে যেভাবে ক্যাটাগরি করি, কোর’আন মানুষকে সেভাবে

আরব পুরুষদের মাথায় ওড়না কেন?

সৌদি আরবের পুরুষরা মাথায় ওড়না দেয়। কেন দেয়? এটা কি ইসলামী পোশাক? না। এটা তাদের কালচারাল পোশাক। বাঙালিরা সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে মনে করে, সৌদি পুরুষদের মত মাথায় ওড়না দেয়াটা ভালো। তাই বাংলাদেশে আসার সময় তাঁরা এমন কিছু ওড়না নিয়ে আসেন। এরপর পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে এবং সৌদি ওড়না মাথায় দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটেন। এতে দোষের কিছু নেই। যার যা ইচ্ছা, তিনি তা পরতে পারেন। সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা তখন, যখন পুরুষদের মাথায় ওড়না দেয়াটাকে কেউ ইসলামী পোশাক মনে করে। তদ্রূপ নারীদের ক্ষেত্রেও ঘটে। সৌদি নারীরা তাদের কালচার অনুযায়ী পোশাক পরবে, এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হয় তখন, যখন সৌদি নারীদের কালচারাল পোশাককে কেউ ইসলামী পোশাক বলে অন্যদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়।

'আল্লাহ ১' - এর গাণিতিক অর্থ

কেউ এসে পিথাগোরাসকে কোনো কিছু জিজ্ঞাস করলে, তিনি তা সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করতেন। যেমন, তিনি বলতেন, আল্লাহ হলো ‘এক’, অথবা, ‘এক’ হলো আল্লাহ। পিথাগোরাস যদি রাসূল (স)-এর পরে জন্ম গ্রহণ করতেন, তাহলে সম্ভবত তিনি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”কেও সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করে যেতেন। কিন্তু তবুও, আমরা চাইলে এখন পিথাগোরাসের স্টাইলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”কে বোঝার চেষ্টা করেতে পারি। _______ “লা ইলাহা, ইল্লাল্লাহ”-এ বাক্যে দুটি অংশ রয়েছে। “লা ইলাহা” অর্থ হলো “কোনো ইলাহ নেই”। এবং “ইল্লাল্লাহ” অর্থ হলো আল্লাহ ছাড়া। সুতরাং পিথাগোরাসের কথা অনুযায়ী “লা ইলাহা” এর মান হলো [০] শূন্য। এবং ‘ইল্লাল্লাহ’ এর মান [১] এক। এখানে দেখুন, বাক্যটির প্রথম অংশের মান [০] শূন্য, এবং পরের অংশের মান [১] এক। সুতরাং সম্পূর্ণ বাক্যটির মান [০১] বা এক। কিন্তু বাক্যটির প্রথম অংশের মান যদি [১] হত, এবং পরবর্তী অংশের মান যদি [০] শূন্য হত, তাহলে সম্পূর্ণ বাক্যটির মান [১০] হয়ে যেত। আল্লাহ যেহেতু এক, তাই এ বাক্যের মান ১০ হয়ে গেলে বাক্যটি সংখ্যাগতভাবে শুদ্ধ ও সঠিক হত না। কিন্তু এখন আমরা দেখতে পারছি, বাক্যটি সংখ্যাগতভাবে সম্পূর্ণ সঠিক। সহজ কথায়, “লা ইল

কোর'আন মানুষকে যেভাবে ক্যাটাগরি করে

আমরা যেভাবে মানুষকে ক্যাটাগরি করি, কোর'আনে কিন্তু মানুষকে সেভাবে ক্যাটাগরি করা হয় না। আমরা মুসলিমদেরকে হাজারো ভাগে ভাগ করি। যেমন, শিয়া, সুন্নি, জামাতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, কওমী, আলীয়া, আহলে হাদীস, সালাফী, হানাফী, জেহাদী, দেওবন্দী, তাবলীগী, মডারেট, সূফী, পীরপন্থী, চরমনাই, হিজবুত তাওহীদ, আওয়ামী লীগ, ওলামা লীগ, বিএনপি, ইত্যাদি। কিন্তু, কোর'আন মানুষকে এভাবে ক্যাটাগরি করে না। কোর'আনের হিসাব হলো, যিনি যতবেশি কোর'আন অধ্যয়ন করেন এবং তা অনুযায়ী জীবন যাপন করেন, তিনি ততবেশি হেদায়েত প্রাপ্ত হবেন। অর্থাৎ, আপনি যে দলেই থাকুন না কেনো, যতবেশি কোর'আনের নিকটবর্তী হবেন, ততবেশি হেদায়েত প্রাপ্ত হবেন। এবং যতবেশি কোর'আন থেকে দূরে সরে যাবেন, ততবেশি পথভ্রষ্ট হবেন। বিষয়টি বোঝার জন্যে আমরা নিচের চিত্রটি দেখতে পারি।

ধর্মের অহংকার

সব ধরণের আলেম-ওলামা, পীর-বুজুর্গ বা শায়েখ-স্কলারদের কথা শুনতে আমার ভালো লাগে। কিন্তু, কিছু কিছু পীর বা হুজুর এমনভাবে কথা বলেন, শুনে মনে হয়, সম্পূর্ণ জান্নাত তাঁর হাতের তালুর উপর। তিনি ইচ্ছা করলেই জান্নাতকে উল্টা-পাল্টা করে দিতে পারেন। . কিছু কিছু মাদানি শায়েখ বা স্কলার এমনভাবে কথা বলেন, শুনে মনে হয়, তিনি জান্নাতের দারগা। তাঁর কথা না শুনলে তিনি আপনাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দিবেন না। . কিছু কিছু ইসলামী রাজনীতিবিদ এমনভাবে কথা বলেন, শুনে মনে হয়, তিনি পৃথিবীতে না থাকলে এ পৃথিবী থেকে ইসলাম চিরতরে মুছে যেত। এবং, কিছু কিছু আলেম এমনভাবে কথা বলেন, শুনে মনে হয়, তিনি সাধারণ মানুষের কাছে জ্ঞান বিক্রি করার জন্যে জ্ঞান অর্জন করেছেন। সাধারণ মানুষ যদি তাঁর থেকে জ্ঞান ক্রয় না করে, তাহলে তিনি রাগে ও ক্ষোভে খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে যান। অবশ্য, সবাই এমন না। কারণ, অনেকেই আল্লাহর এ আয়াতটি মেনে চলেন – فَلَا تُزَكُّوٓا۟ أَنفُسَكُمْ ۖ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ ٱتَّقَىٰٓ “তোমরা নিজে নিজের আত্মপ্রশংসা করো না, (বা নিজেকে নিজে নির্দোষ দাবী করো না) । তিনি ভাল জানেন, কে তাঁকে ভয় করে। [সূরা ৫৩/নাজম - ৩২] ______ আল্লাহ তায়ালা আমাদ

বিজ্ঞানের মিথ

বিজ্ঞানের মোড়কে যেসব বস্তুবাদী চিন্তা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাকে বলা হয় বস্তুবাদী বিজ্ঞান। গত শতাব্দীতে বস্তুবাদী বিজ্ঞান যেসব অন্ধ বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে ছিল, তা এখন একে একে সব ভেঙ্গে পড়ছে। উদাহরণ স্বরূপ বস্তুবাদী বিজ্ঞানের কিছু মিথ উল্লেখ করছি এখানে। ________ মিথ – ১ । “মহাবিশ্বের সবকিছু বস্তু দ্বারা সৃষ্টি। যা কিছু বস্তু দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব, তা হলো বিজ্ঞান; আর যা কিছু বস্তু দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, তা বিজ্ঞান নয়।” … বস্তুবাদী বিজ্ঞানের উপরোক্ত তত্ত্বটি এখন ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক মেটার আবিষ্কার হওয়ার পর বস্তুবাদী বিজ্ঞানের এই অন্ধ বিশ্বাসকে অস্বীকার করা ছাড়া কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের আর কোনো ভিন্ন উপায় নেই। ________ মিথ – ২ । “আবেগ, অনুভূতি, দয়া ও ভালোবাসা এগুলো মানুষের মস্তিষ্কে উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ, মানুষ হলো একটি বায়োলজিক্যাল রোবট।” ... কিন্তু সম্প্রতি চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘out of body experience’ বা ‘near death experience’ আবিষ্কার হওয়ার পর বিজ্ঞানকে আজ বিশ্বাস করতে হচ্ছে যে, মানুষের মস্তিষ্ক-ই সব না। মানুষ আসলে তার শরীর ও মস্তিষ্কের বাইরেও অবস্থান করতে পারে।