সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ডিসেম্বর, ২০১৭ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মিথ্যা কথা থেকে মুক্তির উপায়

মিথ্যুক শব্দটি শুনতে কার-ই বা ভালো লাগে? মিথ্যাবাদী পরিচয়টি আমারা কেউই ধারণ করতে চাই না। সবাই চাই, লোকে আমাদের সৎ ও সত্যবাদী বলুক। কিন্তু তারপরেও প্রতিদিন কারো না কারো সাথে, কিছু না কিছু মিথ্যা কথা আমাদেরকে বলতেই হয়। সব সময় যে আমরা ইচ্ছা করেই মিথ্যা কথা বলি, ব্যাপারটা এমন না। কখনো আমরা ভুলে মিথ্যা বলি, কখনো অনিচ্ছা সত্ত্বে মিথ্যা বলি। কখনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে মিথ্যা বলতে হয়, আবার কখনো পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে মিথ্যা বলতে হয়। এক কথায়, আমাদের জীবনের যাবতীয় ঝামেলা থেকে তাৎক্ষনিক ও সহজে মুক্তি পাবার জন্যে আমরা মিথ্যা কথা বলি। মিথ্যা কথা বলাটা কেবল একটি পাপ নয়, এটি একটি আসক্তির মতো। পান, সিগারেট বা মদের মতই মিথ্যা কথা বলাটা একটি মারাত্মক বদ অভ্যাস। কেউ চাইলে খুব সহজেই মিথ্যা কথা বলা ছেড়ে দিতে পারে না। মিথ্যা কথা ছেড়ে দেয়ার জন্যে নিজের সাথে নিজের অনেক সংগ্রাম ও যুদ্ধ করতে হয়। অতীত জীবনে যিনি যতবেশি মিথ্যা কথার চর্চা করেন, তাঁর জন্যে মিথ্যা কথা ছেড়ে দেয়াটা ততবেশি কষ্টকর হয়ে থাকে। মিথ্যা কথা ছেড়ে দিতে আমরা অনেকেই চাই, কিন্তু পারি না। কারণ, কেউ যদি মিথ্যা কথা বলা ছেড়ে দিতে চায়, তাহলে তাঁকে তিনটি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ইসলামে জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয়

গুগলের মতো যিনি অনেক তথ্য জানেন, তিনি জ্ঞানী নন। কিংবা যিনি অনেক কোর’আন হাদিস মুখস্থ পারেন, তিনি আলিম নন। জ্ঞানী হলেন তিনি, যিনি বিভিন্ন তথ্যকে নিজের জীবনে কাজে লাগান। অথবা, আলিম হলেন তিনি, যিনি কোর’আন ও হাদিসকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেন। উদাহরণ স্বরূপ, একজন লোক জানে, সিগারেট খাওয়া অনেক ক্ষতি, কিন্তু তিনি সিগারেট ছাড়তে পারেন না। তাহলে এই জানার কারণেই তার শরীর সুস্থ হয়ে যাবে না। তেমনি কেউ কোনো তথ্য জানলেও তা যদি নিজের জীবনে কাজে লাগাতে না পারে, তাহলে তিনি জ্ঞানী হতে পারেন না।  তেমনি কেউ যতই কোর'আন হাদিস মুখস্থ করুক, নিজের জীবনে কাজে না লাগাতে পারলে তিনিও আলিম হতে পারেন না। অথবা ধরুন, একজন মানুষ জানে, নামাজ কিভাবে পড়তে হয়। কিন্তু তিনি যদি নামাজ না পড়েন, তাহলে এই জানাটা তার কোনো কাজে আসে না। অর্থাৎ, আমরা কত বড় জ্ঞানী, তা আল্লাহ আমাদেরকে জিজ্ঞাস করবেন না, আমরা কতটা ভালো কাজ করতে পেরেছি, তা আল্লাহ আমাদের জিজ্ঞেস করবেন। __________ ইসলাম একটি আন্দোলন ও কর্মমুখী ধর্ম। অলসভাবে বসে বা শুয়ে থাকার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। কোর’আনের প্রথম আদেশ হলো – “পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেন।

ইমাম রব্বানী আহমদ সিরহিন্দি-র গুরুত্ব

আমাদের ভারতবর্ষের ‘আহমদ সিরহিন্দি’কে তুরস্কে বলা হয় ‘ইমাম রব্বানী’। তুরস্কে ইমাম রাব্বানীকে এতোটাই গুরুত্ব দেয়া হয় যে, প্রায় সকল ইসলামী সভা-সেমিনার অথবা টিভি অনুষ্ঠানে তাঁর নাম গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়। টার্কি ভাষায় ইমাম রব্বনীকে নিয়ে অনেক ডকুমেন্টারি হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্কলারদের নিয়ে ৩/৪ দিন ব্যাপী বেশ কিছু সেমিনার হয়েছে, যা ইউটিউবে পাওয়া যায়। তাঁকে নিয়ে অসংখ্য টেলিভিশন টক-শো হয়েছে। এছাড়া, তুরস্কের বিভিন্ন স্কলারগণ তাঁর জীবন ও চিন্তা-ভাবনা নিয়ে নিয়মিত-ই আলোচনা করেন। কিন্তু  দুর্ভাগ্য, আমাদের ভারতবর্ষের এই স্কলারদেরকে আমরা মূল্যায়ন করতে জানি না। বাংলা ভাষার অনলাইনে খুঁজে দেখলাম, শেখ আহমদ সিরহিন্দির তেমন কোনো উল্লেখ-ই নেই। গুগলে সার্চ করে কিছু আর্টিকেল পেলাম, বিদআতি দরবারী মানুষদের লিখা। আবার কিছু আছে সেক্যুলারদের লিখা, সেখানে সিরহিন্দিকে একজন ঐতিহাসিক ‘ভিলেন’ হিসাবে পরিচয় দেয়া হয়েছে। অথচ, ভারতবর্ষের ইসলামী আন্দোলনের জন্যে তিনি একজন সফল নায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ভারতবর্ষের ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তার এক মহান আদর্শ। তাঁর সময়ে সম্রাট আকবর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলিম সবাইকে নিয়ে

ইলম ও আমলের সম্পর্ক

কোনো আলেম কি নাস্তিক হতে পারে? উত্তর – না। কেন? কারণ, আলেম বলা হয়, যিনি ইলমের অনুসারী তাঁকে।। প্রশ্ন হলো, ‘ইলম’ কি? ইলম [علم] শব্দের অর্থ করা হয় knowledge বা জ্ঞান। কিন্তু, নলেজ বা জ্ঞানের সাথে ‘ইলম’ শব্দটির অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। আমাদের উপমহাদেশে তথ্য মুখস্থ করাকে বলা হয় জ্ঞান। যিনি যত বেশি তথ্য মুখস্থ করতে পারেন, তিনি ততবড় জ্ঞানী উপাধিতে ভূষিত হন। এবং চাকরির ক্ষেত্রেও মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শী তোতাপাখীগন অন্যদের চেয়ে বেশি সফল হতে পারেন। “থ্রি ইডিয়টস” মুভিতে বিষয়টি ভালোভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। নলেজ বা জ্ঞানের সংজ্ঞা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের উপমহাদেশের চেয়ে একটু ভালো। কিন্তু তাঁদের সমস্যা হলো, তাঁরাও মনে করেন, জ্ঞান মানে তথ্য। এ কারণে, ইংরেজি কবি T.S. Eliot দুঃখ করে বলেন –Where is the knowledge we have lost in information? অর্থাৎ, পশ্চিমা বিশ্বেও সত্যিকার জ্ঞান হারিয়ে গিয়েছে। সেখানে তথ্যকেই জ্ঞান মনে করা হয়। এবার দেখি, ইসলামে জ্ঞান কি?

হতাশা থেকে মুক্তির উপায় - সূরা মা'আরিজ

হতাশা ও দুশ্চিন্তা নিয়ে কোর’আনের যে সূরায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, তার নাম সূরা মা’আরিজ। ৭০ নং সূরা। সূরাটির শুরুতেই হতাশা ও দুশ্চিন্তার কারণগুলো বর্ণিত হয়েছে। হতাশার মূল কারণ হলো অধৈর্য। অনন্ত সময়ের বিবেচনায় আমরা পৃথিবীতে কেবল দুই’এক সেকেন্ড অবস্থান করি। মাঝে মাঝে পৃথিবীর এই দুই’এক সেকেন্ড সময়কে অতিবাহিত করতে গিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। কিন্তু, আখিরাতের অনন্ত সুখের কাছে আমাদের পৃথিবীর এই কষ্ট ক্ষণিকের এবং খুবই সামান্য। যেমন ধরুন, শিশু বাচ্চা জন্ম নেয়ার পর তাদের হাতে-পায়ে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের টিকা দিতে হয়। ইনজেকশনের সাহায্যে এই টিকাগুলো দেয়ার সময়ে শিশুরা অনেক কষ্ট পায়। তাদের আব্বু-আম্মুরাও দুঃখ পায়। কিন্তু, শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে, শিশুটি যাতে সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে পারে সে কথা ভেবে, বাবা-মা তাদের আদরের শিশুটিকে কষ্ট দিয়ে থাকে। তেমনি পৃথিবীর কষ্ট হলো ক্ষণিকের। আখিরাতের অনন্ত সুখ পাবার জন্যে পৃথিবীতে সবাইকে কিছু না কিছু কষ্ট করতে হয়। আমাদের পার্থিব কষ্টগুলো হলো ভবিষ্যৎ বা অনন্ত জীবনে সুখী হবার টিকা। বিষয়টি সহজে বুঝানোর জন্যে সূরা মা’আরিজে আল্লাহ তায়ালা বলেন –

মাদ্রাসা ও আমাদের ঐতিহ্য

‘মাদ্রাসা’ শব্দটি শুনলেই অনেকের মনে হয়, যেখানে দরিদ্র ছেলে-মেয়েরা প্রাইমারী স্কুলের মত কেবল ‘আলিফ-বা-তা’ শিখে, সেটাই মাদ্রাসা। কিন্তু, আমাদের ‘মাদ্রাসা’র ইতিহাস কখনোই এমন ছিল না। [caption id="attachment_1163" align="alignnone" width="3648"] SAMSUNG CAMERA PICTURES[/caption] উদাহরণ স্বরূপ ছবির মাদ্রাসাটি দেখুন। আজকের ‘সভ্য’ অ্যামেরিকা আবিষ্কার হবার ৭৫ বছর আগে এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অর্থাৎ, ১৪১৭ খ্রিস্টাব্দে, বর্তমানের উজবেকিস্তানে সমরকন্দে।

একটি সুন্দর সকালের সন্ধানে...

রাত ১২টা বা ১টা পর্যন্ত জেগে থাকাটা ছিল আমার অন্যতম একটি বদভ্যাস। ছোটবেলায় আত্মীয় স্বজন বলতেন, “লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়ায় চড়ে সে”। সুতরাং, সে সময়ে লেখাপড়ার নাম করে রাত ১টা পর্যন্ত অথবা সারা রাত জেগে জেগে পড়লে কেউ বিষয়টিকে খারাপভাবে নিতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ‘গণরুমে’ থাকতে হয়েছে। সেখানে ছোট্ট একটা রুমে আমাদের ৩০ জন ছাত্রকে একসাথে ঘুমাতে হতো। রাতে রুমের ভিতর সবাই হইচই করতো, বিভিন্নজন দল বেঁধে তাস খেলতো, কেউ কেউ উচ্চস্বরে গান শুনতো। ফলে, রাত ১টা বা ২টার আগে ঘুমানোর কোনো সুযোগ ছিল না। তাই, তখন রাতে না ঘুমিয়ে, সারা রাত জেগে রিডিং রুমে বসে পড়ার অথবা পলাশী গিয়ে একাডেমিক আড্ডা দেয়ার একটি ‘সুবর্ণ সুযোগ’ সৃষ্টি হয়েছিল। রাতজেগে পড়াশুনা করার পিছনে আমার অনেক যুক্তি ছিল। সবাই রাতে ঘুমিয়ে যাবে, কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করবে না। সুতরাং, রাতজেগে পড়লে অনেক বেশি পড়াশুনা করা যাবে। ফেইসবুকের যুগে প্রবেশ করার পর রাত জেগে পড়াশুনা করার পাশাপাশি কিছুটা ফেইসবুকও পড়া হত। এতে করে, রাতে দেরী করে ঘুমানোর বদভ্যাসটি স্বাভাবিক জীবনের উপর আরো প্রকটভাবে জেঁকে বসলো।

আহলে কোর'আন, আহলে হাদিস ও আহলে সুন্নাহ

আহলে হাদিসের স্কলারদের মধ্যে মতপার্থক্য: নাসিরুদ্দীন আলবানী, মুহাম্মদ ইবনে সালেহ আল উসাইমিন, এবং আব্দুল্লাহ বিন বায - এই তিনজনই হলেন আহলে হাদিসের সবচেয়ে বড় আলিম। কিন্তু আকিদা ও ফিকহ বিষয়ে তিনজনের মত ছিলো তিন ধরণের। এই তিনজন আলিমের প্রায় ৪০০টি মতপার্থক্য নিয়ে ড সায়াদ আল বুরাইক একটি বই লিখেন। নাম - الإيجاز في بعض ما اختلف فيه الألباني وابن عثيمين وابن باز এই বইতে সায়াদ আর বুরাইক দেখান যে, আকিদা এবং ফিকহ বিষয়ে আহলে হাদিসের বড় বড় ইমামদের নিজেদের মধ্যেই অনেক মতপার্থক্য ছিলো। একজন আহলে হাদিসের আলিম বলেছেন, "এটি সুন্নত",  ঠিক একই কাজকে আহলে হাদিসের অন্য একজন আলিম বলেছেন, "এটি বিদায়াত" । যেমন, আবদুল্লাহ বিন বায বলেছেন - "রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর হাত বাঁধা সুন্নত"। কিন্তু, নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেছেন - "রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর হাত বাঁধা একটি বিদায়াত ও গুনাহের কাজ"। এখানে উভয়েই আহলে হাদিসের বড় ইমাম। কিন্তু একজন আহলে হাদিস যেটিকে সুন্নত বলছেন, অন্য একজন আহলে হাদিস ঠিক একই কাজকে বিদায়াত বলছেন। [সূত্র: উস্তাদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর]

কোন ধরণের নারী ও পুরুষকে বিয়ে না করা উচিত?

আরবি একটা প্রবাদ আছে, ছয় প্রকার নারীকে বিয়ে করো না। সেই ছয় প্রকার হোলো- আন্নানা, মান্নানা, হান্নানা, হাদ্দাকা, বাররাকা ও শাদ্দাকা। "আন্নানা" হোলো সেই নারী যে সবসময়য় 'হায় আফসোস' করতে থাকে। এবং অলস, 'রোগিণী' ভান করে বসে থাকে। এমন নারীকে বিয়ে করলে সংসারে বরকত হয় না। "মান্নানা" হোলো সেই নারী যে স্বামীকে প্রায়ই বলে - 'আমি তোমার জন্যে এই করেছি, সেই করেছি।' "হান্নানা" হোলো সেই নারী যে তার পূর্ব স্বামী বা প্রেমিকের প্রতি আসক্ত থাকে। "হাদ্দাকা" হোলো সেই নারী যে কোনো কিছুর উপর থেকেই লোভ সামলাতে পারে না। সব কিছুই পেতে চায়, এবং স্বামীকে তা ক্রয়ের জন্যে নিয়মিত চাপে রাখে। "বাররাকা" হোলো সেই নারী যে সারাদিন কেবল সাজসজ্জা ও প্রসাধনে মেতে থাকে। এই শব্দের অন্য একটি অর্থ হোলো যে নারী খেতে বসে রাগ করে চলে যায়। এবং পরে একা একা খায়। "শাদ্দাকা" হোলো সেই নারী যে সবসময় বকবক করে _________________ অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, "কোন ধরণের পুরুষদের বিয়ে করা যাবে না?"

আত্মা সম্পর্কে আরজ আলি মাতুব্বরের ভ্রান্তি

যারা ইসলামের বিরোধিতা করে, তাদের প্রধান সমস্যা হলো তাঁরা হয়তো জীবনে একবারও কোর’আন পড়েনি, অথবা, পড়লেও কিছুই বুঝতে পারেনি। বাঙালি সেক্যুলারদের গুরু আরজ আলী মাতুব্বরেরও একই সমস্যা হয়েছে। তিনি হয়তো জীবনে কখনো কোর’আন পড়েননি, অথবা, বাংলা অনুবাদ পড়ে মোটেও বোঝেননি। ফলে, তার মনে ইসলাম সম্পর্কে বেশ কিছু অবান্তর প্রশ্ন জেগেছে, যার উত্তর কোর’আন পড়া যে কোনো মানুষ-ই সহজভাবে বলে দিতে পারে। যেমন ধরুন, মাতুব্বর আত্মা বিষয়ক বেশ কিছু প্রশ্ন করেছেন। যার উত্তর কোর’আনে সুন্দরভাবে দেয়া আছে। মাতুব্বর সাহেব বাংলা ভাষায় দক্ষ না হবার কারণে, “আত্মা বিষয়ক” লেখার ভিতরে কখনো ‘আত্মা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, আবার কখনো ব্যবহার করেছেন ‘প্রাণ’ শব্দটি। অর্থাৎ, একটি জগাখিচুড়ী অবস্থা করে ফেলেছেন। অথচ, ভাষাজ্ঞানে দক্ষ যে কেউই জানেন, দুটি শব্দ সমর্থক হলেও প্রত্যেক শব্দের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে। বাংলা ভাষায় আত্মা ও প্রাণ শব্দ দুটি সমর্থক বাচক শব্দ হলেও কোর’আনের ভাষায় আত্মা ও প্রাণ শব্দ দুটির মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। আত্মা শব্দের জন্যে কোর’আনে ‘নফস’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আর, প্রাণ শব্দটির জন্যে কোর’আনে ‘হাই’ শ

একনজরে রূহ, প্রজ্ঞা, জ্ঞান, হৃদয়, মন, দেহ, কামনা, নফস, শয়তান

মানব শরীর অনেক জটিল প্রক্রিয়ায় কাজ করে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষের জন্যে একজন ফেরেশতা ও একজন শয়তান নিয়োগ করেন। ফেরেশতা মানুষের রুহের সাথে সম্পর্কযুক্ত, এবং শয়তান মানুষের নফসের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আল্লাহ ও ফেরেশতাদের বার্তাগুলো 'রূহ' নামক ডাকপিয়ন বিবেকের সাহায্যে মানুষের হৃদয়ের কাছে পাঠায়। এবং শয়তানের বার্তাগুলো 'হাওয়া' নামক ডাকপিয়ন নফসের সাহায্যে মানুষের হৃদয়ের কাছে পাঠায়। হৃদয় হলো মানুষের রাজা। সে কখনো নফসের বার্তা অনুযায়ী কাজ করে, আবার, কখনো রূহ ও বিবেকের বার্তা অনুযায়ী  কাজ করে। হৃদয় যখন নফসের কথা শুনে, তখন সে অন্ধকার ও অজ্ঞতার দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু হৃদয় যখন রূহের বার্তা শুনে, তখন সে আলো ও জ্ঞানের দিকে ধাবিত হয়। বিবেক হলো জ্ঞানকে কাজে লাগানোর যন্ত্র। অনেক মানুষের জ্ঞান আছে, কিন্তু বিবেক না থাকায়, সে রূহের নির্দেশনা বুঝতে পারে না। দেহ ও প্রাণ আলাদা জিনিস। মানুষ ছাড়াও অন্য প্রাণীদের দেহ ও প্রাণ রয়েছে। কিন্তু, রূহ ও শয়তান কেবল মানুষের জন্যেই নিযুক্ত করা হয়েছে।

'বাঙালী' কি কারো মৌলিক পরিচয় হতে পারে?

"আমি কে? তুমি কে? - বাঙালী, বাঙালী।" এটি একটি শ্লোগান। বাঙালী সেক্যুলারগণ নিয়মিত এই শ্লোগান দিয়ে থাকেন। তাদের কথা হলো, "আমরা মুসলিম বা হিন্দু নই, আমাদের মৌলিক পরিচয় হলো আমরা বাঙালী"। সেক্যুলারগণ একটি নির্দিষ্ট ভাষার ভিত্তিতে নিজেদের পরিচয় প্রদান করেন। তারা মনে করেন, একটি নির্দিষ্ট ভাষাই হলো মানুষের মৌলিক পরিচয়। কিন্তু, আসলে একটি নির্দিষ্ট ভাষা কখনো কোনো একজন মানুষের মৌলিক পরিচয় হতে পারে না। কারণ, একজন মানুষ অনেক ভাষায় সমানভাবে দক্ষ হতে পারে। ধরুন, একজন মানুষ বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানে না, তখন আমরা তাঁকে বলি, "লোকটা মূর্খ বাঙালি"। কিন্তু, বাংলার সাথে সাথে কেউ যদি ইংরেজি ভাষায়ও কথা বলতে পারে, আমরা বলি, "লোকটা শিক্ষিত"। অথবা, কেউ যদি বাংলা ও ইংরেজির সাথে সাথে আরবি ভাষাটাও জানে, আমরা তাঁকে বলি, "লোকটা জ্ঞানী ও আলেম"। এভাবে একজন মানুষ যত বেশি ভাষা জানে, আমরা তাঁকে তত বড় 'জ্ঞানী' মনে করি। এ কারণেই, কেউ যদি 'বাঙালি' পরিচয় দিয়ে নিজেকে কেবল একটি ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেন, তাহলে সেটি তার মূর্খতার পরিচয় বহন করে। পৃথিবীর ইত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মারামারি

কিছুদিন আগে বিশ্ববিখ্যাত স্কলার (John Esposito) জন এসপোজিডোর সাথে দেখা হলো। এসপোজিডো একজন খ্রিষ্টান, কিন্তু ইসলামের পক্ষে তিনি প্রচুর কাজ করেছেন। এ কারণে, অনেক অনেক মুসলিম স্কলারও তাঁকে উস্তাদ হিসাবে গণ্য করেন। তো যাই হোক, তাঁর সাথে দেখা হবার পর, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'জন তাঁকে বললাম যে, "আমরা বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছি"। তিনি বললেন, "ও...। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো আমি চিনি। সেখানে গেস্ট শিক্ষক হিসাবে ছিলাম কিছুদিন।" তারপর তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনালেন আমাদের। একদিন তিনি ক্লাস নিচ্ছেন। হঠাৎ দেখলেন ছাত্ররা সব বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তিনি ভাবলেন, সম্ভবত তাঁর ক্লাস ছাত্রদের পছন্দ হয় নি, তাই ছাত্ররা দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু তিনি পরে বুঝতে পারলেন, বাইরে মারামারি হচ্ছে। ছাত্ররা মারামারিতে অংশ নেয়ার জন্যে ক্লাস ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তিনি বললেন, "এ ঘটনা দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। কেন ছাত্ররা ক্লাস ছেড়ে মারামারি করতে গেলো?" তাঁর এ প্রশ্ন শুনে আমরা খুবই লজ্জিত হয়ে গেলাম। তাঁকে কোনো উত্তর দিতে পারি নি। তবে এখন মনে হচ্ছে, এসপোজিডোর ভাগ্য ভালো ছিলো

বউয়ের সাথে মিথ্যা কথা?

একবার এক প্রেমিক বন্ধুকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, "প্রেম করতে কি যোগ্যতা লাগে রে?" সে বললোঃ "কিচ্ছু না, অনর্গল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে পারলেই হলো।" আবদুল্লাহ আবু সাইদ একবার আমাদেরকে বলেছিলেন, "প্রেম হচ্ছে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বসে বসে বাদাম খাওয়া, আর অনর্গল মিথ্যা বলে যাওয়া। দু'জনেই জানে যে, দু'জনেই মিথ্যা বলছে। তারপরেও একে অপরকে বলে- আরো বলো, আরো বলো"। বিয়ে ছাড়া যে প্রেম, সে প্রেমকে টিকিয়ে রাখতে হলে মিথ্যার উপরেই ভর করতে হয়। সত্য বললে সে প্রেম টিকে না। কিন্তু, বিয়ের ক্ষেত্রে? অনেকে বিয়ে করতে গেলেও অজস্র মিথ্যা বলে। কিন্তু, পৃথিবীর কোনো সম্পর্কই মিথ্যার উপর বেশিদিন টিকে থাকে না। বিয়ে পড়ানোর সময়ে ইমাম সাহেব যে কয়টি আয়াত পড়েন, তার একটি হলো - يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَقُولُوا۟ قَوْلًۭا سَدِيدًۭا "হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।" [সূরা ৩৩/ আহযাব - ৭০] আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে - "স্বামী বা স্ত্রীর সাথে মিথ্যা বলা জায়েজ"। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ কোর'আন বিরোধী একটি কথা। একজন মানুষ তাঁর জীবনসঙ্

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্যে তিনটি জিনিস থাকা চাই

বিয়ে-শাদি নিয়ে কোর'আনে অনেক আয়াত আছে। তম্মধ্যে আমার ভালো লাগা একটি আয়াত হলো - وَمِنْ ءَايَـٰتِهِۦٓ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَ‌ٰجًۭا لِّتَسْكُنُوٓا۟ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةًۭ وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِى ذَ‌ٰلِكَ لَءَايَـٰتٍۢ لِّقَوْمٍۢ يَتَفَكَّرُونَ "আর তাঁর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও, এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্ চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।" [সূরা ৩০/ রূম - ২১] এ আয়াতে বলা হচ্ছে, চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। কিন্তু সেগুলো কি? বিবাহিত জীবনে এক জোড়া দাম্পত্যকে সাধারণত তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। অথবা, অন্যভাবে বললে, একটু সুখী দাম্পত্য জীবনে তিনটি জিনিস থাকতে হয়। ১। পারস্পরিক কাছে থাকার ইচ্ছা। ২। পারস্পরিক ভালোবাসা। ৩। পারস্পরিক দয়া। ধরুন, বিয়ের প্রথম ১০ বছর উভয়ে উভয়ের কাছে থাকতে চাইলো। তারপর, যদি কখনো কাছে থাকার বিষয়টি ধীরে ধীরে হ্রাস হয়ে আসে, তাহলে পরবর্তী ১০ বছর সম্পর্কটি

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা

মনের মত মানুষ পাওয়া সম্ভব?

"আমি আমার মনের মত একজন মানুষ চাই" - এ বাক্যটি প্রায়ই আমরা বলে থাকি, কিংবা শুনে থাকি। সাধারণত বিয়ে করার সময়ে, অথবা, জীবনসঙ্গীকে পছন্দ করার সময়ে মানুষ এ কথাটি বলে থাকে। কিন্তু, এ বাক্যটির মাঝে একটি বড় ধরণের ভ্রান্তি রয়েছে। ভ্রান্তিটি হলো, কেউ যদি তাঁর মনের মত মানুষ চায়, তাহলে সারাজীবনেও তিনি তাঁর 'মনের মত মানুষ' খুঁজে পাবেন না। কেননা, আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষকেই ইউনিক করে তৈরি করেছেন। অর্থাৎ, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে তিনি একটি স্বতন্ত্র মন এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ ব দান করেছেন। ফলে, পৃথিবীর যে কোনো দু'জন মানুষের দুটি মন কখনোই শতভাগ মিল হওয়া সম্ভব না। ধরুন, একই পরিবারের যমজ দুই বোন বা যমজ দুই ভাই। তাঁরা উভয়ে একই বাবা-মায়ের সন্তান; একই সময়ে এবং একই পরিবেশে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও দু'জনের মন কখনো হুবহু এক হয় না। তাহলে, দুইটি পরিবারে এবং দুইটি পরিবেশে বড় হওয়া একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মন কিভাবে এক হওয়া সম্ভব? যেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের মনকে ঠিকভাবে বুঝতে পারি না, সেখানে নিজের মনের মত অন্য একজন মানুষকে খুঁজে পাওয়া কি আদৌ সম্ভব?

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

'ইসলামী চিন্তার মানচিত্র' পরিচিতি

১৬ নভেম্বর ২০১৭। ইসলামী জ্ঞানের জগতে একটি বিশাল বিপ্লব প্রকাশিত হয়েছে। বিপ্লবটি পরিচালনা করেছেন তুরস্কের প্রায় ২০০ জন বুদ্ধিজীবী। আর, বিপ্লবটির নাম – “মুসলিম চিন্তাবিদদের মানচিত্র”। রাসূল (স)-এর পর থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিমদের যত দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ছিলেন, সবাইকে এক কাতারে এবং এক নজরে নিয়ে এসেছে এই মানচিত্রটি। তিন খণ্ডের বই ও একটি চমৎকার ওয়েব সাইটের মাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়েছে। https://www.islamdusunceatlasi.org/timemaps/1 উপরের লিংকটিতে সকল মুসলিম দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদদের সিরিয়াল করা হয়েছে সময় অনুযায়ী। এখানে আপনি দেখতে পাবেন, কোন যুগে কোন দার্শনিক-বিজ্ঞানী-চিন্তাবিদ কি কি অবদান রেখেছেন। এ ছাড়া, তাঁরা কোথায় জন্ম গ্রহণ করেছেন, কোথায় মৃত্যু বরণ করেছে, এবং কোথায় কোথায় ভ্রমণ করেছেন, সব কিছু মানচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।

ইহুদী ও খ্রিস্টান শরিয়তের মধ্যবর্তী শরীয়ত ইসলাম

ইহুদি শরিয়তের নিয়ম হলো - কেউ আপনাকে একটি ঘুষি দিলে, আপনিও তাঁকে আরেকটি ঘুষি দিতে হবে। এখানে ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই। আর, খ্রিষ্টান শরিয়তের নিয়ম হলো - কেউ আপনাকে একটি ঘুষি দিলে, আপনি তাকে আরেকটি ঘুষি দিতে পারবেন না, তাকে ক্ষমা করে দিতে হবে। ইসলাম হলো এ দুটি শরিয়তের মধ্যপন্থী একটি শরিয়ত। যে কোনো অন্যায়ের শাস্তি প্রদান করার ক্ষেত্রে ইসলাম মানুষকে একটি স্বাধীনতা দেয়। কেউ আপনাকে একটি ঘুষি দিলে, হয় আপনি তাকে হুবহু আরেকটি ঘুষি দিতে পারেন, অথবা, অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন - وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ ۖ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرِينَ "যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়েছে। আর, যদি সবর কর, তাহলে তা সবরকারীদের জন্যে উত্তম।" [সূরা ১৬/ নাহাল - ১২৬] ইসলামি শরিয়াহ পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো আইন হবার পিছনে কারণ হলো, ইসলাম মানুষকে দুটি অপসন দেয়। হয় প্রতিশোধ, না হয় ক্ষমা। এ ক্ষেত্রে ক্ষমা করে দেয়ার জন্যে ইসলাম সুপারিশ করে।

বিয়ের আগে মেয়ের সাথে পরিচিত হতে হবে?

বিয়ে করতে গেলে তিনটি পর্ব বা তিনটি সময় অতিক্রম করতে হয়। এক – খিতবাহ বা মেয়ের সাথে পরিচিতি পর্ব। দুই – আকদ বা বিয়ের চুক্তি পর্ব। তিন – নিকাহ বা দাম্পত্য জীবন পর্ব। আমাদের দেশে বিয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বটি সম্পর্কে অনেকের স্বচ্ছ ধারণা থাকলেও প্রথম পর্বটি নিয়ে কেউ কেউ বেশ দ্বিধায় থাকেন। অর্থাৎ, খিতবাহ পর্ব বা মেয়ের সাথে পরিচয় পর্বটা আসলে কেমন হবে? –এটা অনেকের কাছে স্বচ্ছ নয়। খিতবাহ হলো বিয়ের উদ্দেশ্যে ছেলে-মেয়ে পরস্পরকে দেখা ও জানা-বুঝার পর্ব। মেয়ে যদি বিধবা হয়, তাহলে মেয়ের পরিবারের অজ্ঞাতেই ছেলে মেয়েটিকে জানা-বুঝার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু, মেয়ে যদি কুমারী হয়, তাহলে মেয়ের পরিবারের সম্মতিতে মেয়েকে দেখা ও জানা-বুঝা চেষ্টা করাটাকে খিতবাহ পর্ব বলা হয়। খিতবাহ পর্বটি ভালোভাবে না বুঝার কারণে সাধারণ দুটি ভুল হয়।

ছেলে কি করে? বউ খাওয়াতে পারব তো?

ছেলে কি করে? টাকা পয়সা কেমন আছে? বউ খাওয়াতে পারব তো? – এসব প্রশ্ন দিয়ে মেয়েপক্ষ নিয়মিতই বিবাহ প্রার্থী ছেলেদেরকে পীড়িত ও বিব্রত করে। এ কারণে ছেলেরাও সবসময় ভাবে, একটা ভালো চাকরি না পেলে যেহেতু ভালো কোনো মেয়ে বিয়ে করা যাবে না, সুতরাং, জীবনে সকল পড়াশুনার উদ্দেশ্য হলো একটি ভালো চাকরি পাওয়া। ফলে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্য কাঠামোকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে গ্রাজুয়েশন শেষ করে সবাই ভালো একটি চাকরি পেতে পারে। শিক্ষার্থীকে একজন জ্ঞানী মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার পরিবর্তে একজন যোগ্য  শ্রমিক হিসাবে গড়ে তোলাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধান উদ্দেশ্য। জ্ঞান অর্জন বা জ্ঞান বিতরণ করা তাদের কাজ নয়, বরং সম্পদ অর্জন করার কৌশল শেখানোই তাদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যাটির মূল কারণ কি? কারণ একটাই। আমরা জ্ঞানের চেয়ে সম্পদকে বেশি গুরুত্ব দেই। ফলে বিয়ের বাজারে গেলে দেখা যায়, মেয়েপক্ষ একজন জ্ঞানী ছেলের চেয়েও একটি ধনী পরিবারে তাঁদের মেয়েকে বিয়ে দিতেই বেশি আগ্রহী হয়। অথচ, আল্লাহ তায়ালা দারিদ্রের ভয়কে বলেছেন শয়তানের কাজ। আর, জ্ঞানকে বলছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম নিয়ামত। আল্লাহ তায়ালা বলেন – الشَّيْطَانُ يَعِ

'সভ্যতার সংঘাত' বলে কিছু আছে?

মুসলিম বিশ্বের উপর পশ্চিমা বিশ্বের যে আক্রমণ, তার পিছনে একটি তত্ত্ব রয়েছে। তত্ত্বটির নাম - সভ্যতার সংঘাত বা ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশনস। এই তত্ত্বটি দিয়েছিলেন স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন। তাঁর ধারণা মতে, ইসলামী সভ্যতা ও পশ্চিমা সভ্যতার মাঝে একটি দ্বন্দ্ব রয়েছে। সুতরাং পশ্চিমা সভ্যতাকে বাঁচাতে হলে ইসলামী সভ্যতাকে যেভাবেই হোক আক্রমণ করা উচিত। হান্টিংটন আসলে সভ্যতার ধারনাটাই বোঝেননি। তিনি যদি সভ্যতা কি জিনিস তা বুঝতেন, তাহলে "সভ্যতার দ্বন্দ্ব" নামে কখনো বই লিখতেন না। আমরা জানি, সভ্য মানুষ মাত্রই ভালো মানুষ। দুই জন সভ্য মানুষ কখনো ঝগড়া করতে পারে না। তেমনি দুটি সভ্যতা কখনো একে অপরের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে পারে না। যদি কখনো দুটি মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে, হয় দু'জনেই অসভ্য, অথবা, একজন সভ্য, অন্যজন অসভ্য। তেমনি, দুটি জাতী যখন সভ্য হয়, তখন কেউ কারো সাথে দ্বন্দ্ব করার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু, দুটি জাতীর মধ্যে যে কোনো একটি জাতী যদি অসভ্য হয়, তাহলেই কেবল সে অন্য জাতীর সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। এ সহজ বিষয়টি হান্টিংটন বুঝতে পারেননি। তাই তিনি "সভ্যতার দ্বন্দ্ব"

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০