সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মদের লাইসেন্স কেন দিলেন? - উস্তাদ রশিদ ঘানুশি

উস্তাদ রশিদ ঘানুশীর একটি সাক্ষাতকার

প্রশ্নকারী – উস্তাদ, আমি আপনাদের জাতীয় সংসদের একটি অধিবেশন দেখেছিলাম। সেখানে আমদানিকৃত মদের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। আমদানিকৃত মদের উপর অতিরিক্ত করারোপ করায় তিউনিসিয়ার জনগণ তা কিনতে সমস্যা হচ্ছে। জনগণ যাতে উপযুক্ত দামে মদ কিনতে পারে, সে উদ্দেশ্যে সংসদের সবাই সর্বসম্মতিক্রমে মদের উপর ভ্যাট কমানোর জন্যে ভোট দিয়েছে। আপনাদের আন-নাহদা পার্টিও ভ্যাট কমানোর জন্যে ভোট দিয়েছে। আপনি এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

রশিদ ঘানুশী – মদ যে হারাম, তা নিয়ে আমাদের দেশে কোনো বিতর্ক নেই। এ দেশের কোনো মুসলিম বলে না যে, মদ হালাল। কিন্তু, আমাদের দেশের প্রায় ৫০% মানুষ মদ খায়।

ঐতিহাসিকভাবে আমরা দেখি, ইসলাম যখন মদকে নিষেধ করতে চাইলো, তখন একটা ক্রমধারা অবলম্বন করেছিলো। যখন মানুষেরা মদ খাওয়া ছেড়ে দিতে প্রস্তুত হলো, তখনি কেবল ইসলাম মদকে নিষিদ্ধ করেছিলো। যখন তিউনিসিয়ার অধিকাংশ জনগণ বা কমপক্ষে ৫০% জনগণ মদ খাচ্ছে, তখন মদকে নিষিদ্ধ করতে চাইলে মদ খাওয়া আরো বাড়বে। কারণ, যা নিষিদ্ধ করা হয়, তার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়ে যায়। ইসলাম এ বিষয়টি ভালোভাবে বিবেচনায় নিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত শহরের পরিবেশ ঠিক হয়নি এবং দেশের মানুষ মদ খাওয়া ছাড়তে পারেনি, ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলাম মদকে নিষিদ্ধ করেনি।

দেখুন, মদ হালাল নাকি হারাম, তা নিয়ে এখানে বিতর্ক হচ্ছে না। মদ হারাম সেটা সবাই জানে। কিন্তু, এখানে বিতর্কটা হচ্ছে মদের দাম কমানো নিয়ে। এটা আমাদের দেশের একটি অর্থনৈতিক বিষয়।

মদ আমাদের দেশে খুবই প্রচলিত, যদিও আমি আশা করি সবাই মদ খাওয়া ছেড়ে দিবেন। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক পর্যটন কেন্দ্র আছে, এবং এগুলো মদের সাথে সম্পর্কিত। তাই এখানে অনেক বাস্তবতা আছে, যেসব কারণে আমাদেরকে এই আইনটি করতে হয়েছে।

এছাড়া, মদের দাম যদি বৃদ্ধি হয়, তাহলে মদের চোরাচালান, কালোবাজারি এবং অবৈধ ব্যবসা বেড়ে যাবে। কারণ, যখন কোনো পণ্যের আসল দামের সাথে অনেকবেশি ভ্যাট যুক্ত করা হয়, এবং যখন পণ্যটির স্বাভাবিক দামের চেয়ে অনেক বেশি দাম বেড়ে যায়, তখন ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে ঐ পণ্যটি দেশে আমদানি করে। ফলে চোরাচালান বন্ধের জন্যে যে কোনো পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে হয়।

সুতরাং, মদের উপর অতিরিক্ত করারোপ না করাটা একটি অর্থনৈতিক বাস্তবতা।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্