সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এনলাইটেনমেন্ট বা বুদ্ধির বিকাশে 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান'

ইউরোপের এনলাইটেনমেন্ট বা বুদ্ধির বিকাশ ঘটানোর জন্যে মুসলিমদের প্রচুর অবদান রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ আমরা মুসলিম দার্শনিক ইবনে তোফায়েল ও তাঁর ছাত্র ইবনে রুশদের কথা বলতে পারি।

বুদ্ধির সাহায্যে কিভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, তা নিয়ে ইবনে তোফায়েল একটি উপন্যাস লিখেছিলেন, যার নাম হলো হাঈ ইবনে ইয়াকজান। এই উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন যে, কোনো মানুষ যদি বনে-জঙ্গলে বাস করে, এবং তার কাছে যদি কোর’আন-হাদিস বা কোনো ধর্মের বাণী না পৌঁছায়, তবুও সে তার যুক্তি-বুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহকে চিনতে পারবে।

ইবনে তোফায়েলের এ দার্শনিক উপন্যাসটি ইউরোপে এতো বেশী জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, এ গ্রন্থকে তাঁরা একটি তত্ত্ব আকারে হাজির করেছেন। তত্ত্বটির নাম হলো - ‘ফিলোসফাস অটোডিডাকটাস’।

ইউরোপের বিখ্যাত সব দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীদের চিন্তা ভাবনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে হাঈ ইবনে ইয়াকজান। যেমন, থমাস হবস (১৫৮৮-১৬৭৯), জন ওয়ালিস (১৬১৬-১৭০৩), জন লক (১৬৩২-১৭০৪), আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩-১৭২৭), গটফ্রিড লাইবনিজ (১৬৪৬-১৭১৬), জর্জ বার্কলি (১৬৮৫-১৭৫৩), ডেভিড হিউম (১৭১১-১৭৭৬), ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪), শোপেনহাওয়ার (১৭৮৮-১৮৬০) সহ আরো অনেকেই ইবনে তোফায়েলের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।

ইউরোপের সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এই বইটি অনেক প্রভাব বিস্তার করে। যেমন, বইটির দ্বারা অনুপ্রানিত হয়েই ডেনিয়েল ডেফো তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস রবিনসন ক্রুসো রচনা করেন।

‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’ বইটি কিভাবে ইউরোপের এনলাইটোমেন্টে প্রভাব বিস্তার করেছিলো, তার একটি সংক্ষিপ্ত মানচিত্র নিচে দেখুন।

১১০০ বা ১১১০ : ইবনে তোফায়েল স্পেনের গ্রানাডায় জন্মগ্রহণ করেন।

১১২৬ : ইবনে রুশদ স্পেনের কর্ডোভায় জন্মগ্রহণ করেন।

১১৬৩ – ১১৮৪ : ইবনে তোফায়েল মরোক্কো ও স্পেনের সুলতান আবু ইয়াকুব ইউসুফের একজন মন্ত্রী ও চিকিৎসক হিসাবে কাজ করেন। এ সময়ে তিনি কবিতা, দর্শন, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে প্রচুর অবদান রাখেন।

১১৬০ বা ১১৭০ : ইবনে তোফায়েল 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান' নামক বিখ্যাত উপন্যাসটি লিখেন।

১১৬৯ বা ১১৮২ : ইবনে তোফায়েল সুলতান আবু ইয়াকুব ইউছুফের দরবারে ইবনে রুশদকে আমন্ত্রণ করেন। এবং এরিস্টটলের বইগুলো ব্যাখ্যা করার জন্যে ইবনে রুশদকে অনুরোধ জানান। ইবনে রুশদ এর বইগুলো ১৭ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়।

১১৮৫ : ইবনে তোফায়েল মরক্কোতে মৃত্যু বরণ করেন।

১১৯৮ : ইবনে রুশদ মরোক্কোতে মৃত্যু বরণ করেন।

১২৪১ : এরিস্টটলের উপরে লেখা ইবনে রুশদের বইগুলো তখন প্যারিসে পাওয়া যেতো। তাই, বিজ্ঞানী ও খ্রিষ্টান পাদ্রী আলবার্টাস ম্যাগনাস ইবনে রুশদের লেখা পড়ার জন্যে ডোমিনিকান থেকে প্যারিসে আগমন করেন। এর কয়েক বছর পর তাঁর ছাত্র টমাস আকুইনাসও একই কারণে ইটালি থেকে প্যারিসে আগমন করেন।

১২৪৫ : টমাস আকুইনাস মুসলিম দার্শনিকদেরকে হুবহু অনুসরণ করতে থাকেন। এবং তিনি ধর্ম ও দর্শনের সমন্বয় সৃষ্টি করার জন্যে আগ্রহী হয়ে উঠেন।

১২৫৬ : আলবার্টাস ম্যাগনাস ইবনে রুশদের বিরুদ্ধে লিখতে শুরু করেন।

১২৭১ : টমাস আকুইনাসও এবার ইবনে রুশদের বিরুদ্ধে লিখতে শুরু করেন।

১২৮১ - ১২৮৪ : দার্শনিক সাইগার (Siger of Brabant) ইবনে রুশদ এর দর্শন গ্রহণ করেন, এবং আলবার্টাস ম্যাগনাস ও টমাস আকুইনাস দুজনের বিরুদ্ধে লিখতে থাকেন।

১৩৪৯ : 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান' প্রথম হিব্রু ভাষায় অনুবাদ হয়। অনুবাদ করেন ফ্রান্সের নার্বন শহরের দার্শনিক মুসা। এর কয়েক বছর পর, পিকো ডেলা মিরান্ডোলা 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান'কে হিব্রু থেকে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেন। পিকো ডেলা মিরান্ডোলা ছিলেন ইউরোপীয় রেনেসাঁর অন্যতম দার্শনিক।

১৫১৬ : ব্রিটিশ দার্শনিক থমাস মুর একটি কাল্পনিক দ্বীপরাষ্ট্রের জন্যে আদর্শ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা কেমন হবে, তা নিয়ে একটি বই লিখেন। বইটির নাম "ইউটোপিয়া"। এ বইটি ‘হাঈ ইবনের ইয়াকজান’ বইটি দ্বারা অনেক বেশী প্রভাবিত ছিলো।

১৬৫১ : হাঈ ইবনে ইয়াকজানকে হুবহু অনুসরণ করে স্প্যানিশ ভাষায় El Criticón নামে একটি বই লিখা হয়। এখানে হাঈ এর চরিত্র নিয়েছে আন্দ্রেনিও নামক একজন। এই বইটি সম্পর্কে ঊনবিংশ শতাব্দীর জার্মান দার্শনিক শোপেনহাওয়ার বলেন যে, এখন পর্যন্ত যতো বই লিখা হয়েছে, এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলোর একটি।

১৬৫১ : টমাস হবস এর লেভিয়াথন বইটি প্রকাশিত হয়। যদিও হাঈ ইবনে ইয়াকজানের প্রকৃতির রাজ্যের ধারণাটি হবস তার তত্ত্বে কাজে লাগিয়েছেন, কিন্তু এ বইটি ছিলো খ্রিস্টানদের নাস্তিক হবার জন্যে প্রাথমিক বই।

১৬৬৭ : জন মিল্টন বাইবেল ভিত্তিক তাঁর বিখ্যাত কবিতার বই 'প্যারাডাইস লস্ট' প্রকাশ করেন।

১৬৭১ : ল্যাটিন ভাষায় হাঈ ইবনে ইয়াকজানের দ্বিতীয় অনুবাদ করা হয়। এবার সরাসরি আরবি ভাষা থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। অনুবাদ করেছেন বিখ্যাত ওরিয়েন্টালিস্ট এডওয়ার্ড পোকককে (Edward Pococke)

১৬৭২ : ডাচ ভাষায় ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’ অনুবাদ করা হয়। এটি সরাসরি আরবি থেকে নয়, বরং এডওয়ার্ড পোক এর ল্যাটিন ভার্সন থেকে অনুবাদ করা হয়।

১৬৭৪ : ইংরেজি ভাষায় ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’ অনুবাদ করা হয়। অনুবাদ করেন জর্জ কিথ (George Keith)

১৬৭৬ : ইউলিয়াম এডমন্ডসন প্রথম ব্রিটিশ অ্যামেরিকার দাশ প্রথার বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করেন।

১৬৭৮ : খ্রিস্টান ধর্মের কোয়াকার্স মতাবলম্বী স্কলার রবার্ট বার্কলে (Robert Barclay) তাঁর Apology বইয়ে 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান'কে ইতিবাচকভাবে উল্লেখ করেন।

১৬৮১ : হাঈ ইবনে ইয়াকজানের হুবহু অনুকরণ করে স্প্যানিশ ভাষায় লিখা El Criticon বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ করা হয়। নাম - The Critick, one of the Best Wits of Spain

১৬৮৬ : দ্বিতীয়বার ইংরেজি ভাষায় হাঈ ইবনে ইয়াকজানকে অনুবাদ করা হয়। অনুবাদ করেন বিখ্যাত দার্শনিক ও খ্রিষ্টান পাদ্রী জর্জ জর্জ অ্যাশওয়েল (George Ashwell)

১৬৮৭ : নিউটনের 'ফিলোসোফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা' বইটি প্রকাশিত হয়।

১৬৮৯ : জন লকের A Letter Concerning Toleration প্রকাশিত হয়।

১৬৯৬ : হাঈ ইবনে ইয়াকজান অবলম্বনে স্প্যানিশ ভাষায় লিখিত El Criticón বইটি প্যারিস ও ফ্রান্স ভাষায় অনুবাদ হয়।

১৬৯৭ : বিজ্ঞানী গটফ্রিড উইলহেম লিবনিজ তাঁর একটি চিঠিতে Abbe Nicaise -কে বলেন যে, 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান' অসাধারণ একটি বই।

১৭০০ : ল্যাটিন ভাষায় হাঈ ইবনে ইয়াকজান পুনর্মুদ্রণ করা হয়।

১৭০১ : 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান'কে দ্বিতীয়বার ডাচ ভাষায় অনুবাদ করা হয়। অনুবাদক Adrian Reland ডাচ ভাষার প্রথম অনুবাদটি রিভিউ করে দ্বিতীয় অনুবাদে বিভিন্ন পরিভাষা যুক্ত করেন।

১৭০৮ : ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি প্রফেসর সাইমন ওকলে 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান' বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেন। তাঁর অনুবাদটির নাম - 'The Improvement of Human Reason: Exhibited in the Life of Hai Ebn Yokdhan'। এটি ছিলো হাঈ ইবনে ইয়াকজানের তৃতীয় ইংরেজি অনুবাদ।

১৭১১ : সাইমন ওকলের ইংরেজি অনুবাদটি লন্ডনে পুনর্মুদ্রণ করা হয়।

১৭১৯ : বিখ্যাত উপন্যাস রবিনসন ক্রুসো রচিত হয় হুবহু 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান' অবলম্বনে। পার্থক্য হলো, ইবনে তোফায়েল দর্শনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, কিন্তু ড্যানিয়েল ডিফো রবিনসন ক্রুসো লিখার সময়ে রাজনীতি ও অর্থনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

১৭২১ : ডাচ ভাষায় হাঈ ইবনে ইয়াকজানের দ্বিতীয় অনুবাদটি পুনর্মুদ্রণ করা হয়।

১৭২৬ : জার্মান ভাষায় হাঈ ইবনে ইয়াকজান অনুদিত হয়। অনুবাদ করেন গেয়র্গ প্রিতিয়াস (Georg Pritius)

১৭২৬ : বিখ্যাত উপন্যাস 'গ্যালিভার্স ট্রাভেলস' রচনা করেন জোনাথন সুইফট। এটিও অনেকটা হাঈ ইবনে ইয়াকজানের মতোই।

১৭২৬ - ১৭২৯ : ভলতেয়ার ইংল্যান্ডে নির্বাসিত জীবন যাপন করেন কিছুদিন। এ সময়ে তিনি জোনাথন সুইফট ও বিভিন্ন খ্রিষ্টান ধর্মযাজকের বন্ধুত্ব গ্রহণ করেন। তখন খ্রিষ্টান ধর্মের কোয়াকার্স মতাবলম্বীরা তাঁকে ‘হাঈ ইবনে ইয়াকজান’ বইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর, ভলতেয়ারের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো প্রকাশিত হয়।

১৭৩১ : হাঈ ইবনে ইয়াকজানের যে ইংরেজি অনুবাদটি সাইমন ওকলে করেছিলেন, সেটি পুনর্মুদ্রণ করা হয়।
১৭৫৪ : ইবনে তোফায়েলের সময়ে একজন বিখ্যাত আরব ইহুদি দার্শনিক ছিলেন, যার নাম ইবনে মাইমুন। তাঁর দর্শন সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করেন জার্মান ইহুদি দার্শনিক মোজেস মেন্ডেলসন। ১৭৫৪ সাথে মোজেস মেন্ডেলসন অন্য একজন জার্মান দার্শনিক লেসিং (Lessing)-এর সাথে দেখা করেন। তাঁরা উভয়ে ইউরোপের এনলাইটেনমেন্টের জন্যে অনেক অবদান রেখেছেন।

১৭৬২ : জ্যাক রুশো তাঁর বিখ্যাত ‘On Education’ বইটি প্রকাশ করেন। এই বইয়ের মূল কথা হলো, শিশুরা প্রাকৃতিকভাবে ভালো হয়েই জন্ম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে সমাজ তাকে খারাপ বানিয়ে ফেলে। তাই শিশুকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে দিলে সে ভালোই হবে। জ্যাক রুশোর এই ধারণার উপরে রাসূল (স)-এর একটি স্পষ্ট হাদিস রয়েছে। এবং হাঈ ইবনে ইয়াকজান তাঁর উপন্যাসেও তা দেখিয়েছেন।

১৭৬৩ : কান্ট স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে বই প্রকাশ করেন।

১৭৮১ - ১৭৯০ : কান্ট তাঁর বিখ্যাত তিনটি বই প্রকাশ করেন। ‘দি ক্রিটিক অব পিওর রিজন’ ১৭৮১ সালে, ‘দি ক্রিটিক অব প্র্যাকটিক্যাল রিজন’ ১৭৮৮ সালে, এবং ‘দি ক্রিটিক অব দি পাওয়ার অব জাজমেন্ট’ ১৭৯০ সালে।

১৭৮৪ : কান্ট তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ “এনলাইটেনমেন্ট কি”, তা প্রকাশ করেন।

[Source: 'The Vital Roots of European Enlightenment: Ibn Tufayl's Influence on Modern Western Thought' by Samar Attar]
______________

বাঙালি সেক্যুলারগণ তাঁদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটানোর জন্যে ইউরোপের দার্শনিকদের কাছে গিয়ে পড়ে থাকেন। অথচ তাঁরা যদি প্রকৃত অর্থেই তাঁদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে চাইতেন, তাহলে তাঁরা আগে মুসলিম দার্শনিকদের থেকে জ্ঞান অর্জন করতেন, যেমনটা ইউরোপের বিজ্ঞানী ও দার্শনিকগণ করেছিলেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্