সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলামের একতা ও একটি গাছ

ইসলামকে একটি গাছের সাথে তুলনা করি।

ধরুন, একটি আম গাছ। গাছটির শক্ত ও লম্বা একটি কাণ্ড আছে, অনেকগুলো শাখা প্রশাখা আছে, অনেকগুলো পাতা আছে এবং গাছে অনেকগুলো মিষ্টি আম আছে। এছাড়া, গাছটির বেশ কিছু শেকড় আছে।

সম্পূর্ণ আম গাছটি হলো ইসলাম। গাছের যে একটি শক্ত কাণ্ড আছে, তা হলো ঈমান। গাছের যে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা আছে, তা হলো আমাদের শিয়া, সুন্নি, মাজহাব, সালাফী, তাবলীগ, জামায়াতে ইসলাম, আহলে হাদিস, এবং ইত্যাদি। গাছের যে অনেকগুলো পাতা আছে, সেগুলো হলো ব্যক্তি মুসলিম। গাছের ফলগুলো হলো আমাদের ভালো কাজ। এবং গাছের শেকড় হলো আমাদের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক।

এবার হিসাবটা মিলিয়ে ফেলি।



প্রত্যেক গাছের একটি কাণ্ড থাকে। কোনো গাছের কাণ্ড যত শক্ত হয়, সে গাছের শাখা-প্রশাখাগুলো তত আত্ম-নির্ভরশীল হতে পারে।

তেমনি,

মুসলিমদের ঈমান যত শক্তিশালী হয়, মুসলিমরা তত আত্ম-নির্ভরশীল হতে পারে।



কোনো গাছের একটি শক্ত কাণ্ড থাকলে, তার শাখা-প্রশাখার দ্বারা সে গাছের কোনো সমস্যা হয় না, বরং তা সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটায়। কিন্তু গাছের কাণ্ড যদি দুর্বল হয়, তখন অতিরিক্ত শাখা-প্রশাখার কারণে গাছটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়।

তেমনি,

মুসলিমদের ঈমান যদি অতীতের মত শক্তিশালী হতো, তাহলে শিয়া-সুন্নি, মাজহাবী বা লা-মাজহাবী এসব কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু বর্তমানে মুসলিমদের ঈমান দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার দ্বারা ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রত্যেকে নিজ নিজ ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য বজায় রেখে সবাই যদি আবার আল্লাহর রজ্জু কোর’আনকে আঁকড়িয়ে ধরতে পারি, এবং আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করতে পারি, তাহলে বিভিন্ন দল-উপদলের কারণে ইসলামের কোনো সমস্যা হবে না।



একটি গাছের অনেকগুলো ডাল ও অসংখ্য পাতা থাকে। সবগুলো ডাল যেমন দেখতে একরকম নয়, তেমনি সবগুলো পাতার আকৃতিও হুবহু এক নয়। কিন্তু, গাছের একটি ডাল কখনো অন্য ডালকে বলে না যে – “তুমি আমার মত নয় কেন? আজ থেকে তোমাকে খারিজ করে দিলাম, তুমি এই গাছে থাকতে পারবে না।”

অর্থাৎ, ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যের কারণে গাছের একটি ডাল অন্য ডালকে কিংবা একটি পাতা অন্য পাতাকে গাছ থেকে খারিজ করে দিতে পারে না।

তেমনি,

ভৌগোলিক ও জাতিগত বৈচিত্র্যের কারণে ইসলাম ধর্মের অনেকগুলো শাখা-প্রশাখা বা দল থাকা স্বাভাবিক। একই বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেয়া দুই ভাইয়ের চেহারা ও চিন্তা-ভাবনায় যেমন পার্থক্য থাকে, তেমনি একই ইসলামের অনুসারী বিভিন্ন মুসলিমের চিন্তা-ভাবনায় পার্থক্য থাকাটাও খুবই স্বাভাবিক।

কিন্তু তাই বলে, এক মুসলিম অন্য মুসলিমকে খারিজ করে দেয়ার, বা এক দল অন্যদলকে খারিজ করে দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালা কাউকে দেননি।

আমাদের কাজ হলো, কোর’আনের সাহায্যে কেবল নিজেদের ঈমানকে শক্তিশালী করা। তখন দেখা যাবে, শক্ত কাণ্ডবিশিষ্ট গাছের মতো একদল অন্য দলকে খারিজ করে দেয়ার কোনো প্রয়োজন-ই হবে না।



বাগানের সৌন্দর্যের জন্যে গাছের কোনো ডালটি কেটে ফেলতে হবে এবং কোন ডালটি রাখতে হবে, তা কেবল বাগান পরিচর্যাকারী মালীর এখতিয়ারভুক্ত।

তেমনি,

আল্লাহ তায়ালা কাকে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখবেন, এবং কাকে গোমরাহ করে দিবেন, তা কেবল স্বয়ং আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত। এখানে এক মুসলিম অন্য মুসলিমকে গোমরাহ বলা বা খারিজ করে দেয়ার মানে আল্লাহর এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ করা।



বাতাসের কারণে কোনো গাছের ডাল যদি ভেঙ্গে যায়, কিংবা কোনো পাতা যদি ঝরে যায়, তার কারণে গাছের কোনো ক্ষতি হয় না। এবং গাছটি মরেও যায় না।

তেমনি,

শয়তানের কারণে কেউ যদি নাস্তিক হয়ে যায়, বা কেউ যদি ভ্রান্ত হয়ে যায়, তাহলে ইসলামের কোনো ক্ষতি নেই। ইসলামকে বাঁচানোর জন্যে আমরা যেমন অন্যকে খারিজ করে দেই, এ কাজের কোনো প্রয়োজন নেই।



কোনো গাছের একটি ডাল অন্য ডালকে ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা না। বরং সদা সর্বদা নিজেকে গাছের মূল কাণ্ডের সাথে যুক্ত রাখার জন্যে ব্যস্ত থাকে।

তেমনি,

মুসলিমদের একটি দল অন্য দলকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়া উচিত নয়। বরং সদা সর্বদা নিজের ঈমানকে ঠিক রাখার জন্যে ব্যস্ত থাকা উচিত।



গাছের বিভিন্ন শেকড় বিভিন্নভাবে মাটির সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে একটিমাত্র গাছকে শক্তিশালী করে। কিন্তু মাটির সাথে শেকড়ের সম্পর্কগুলো গোপন থাকে।

তেমনি,

প্রত্যেক মানুষ ভিন্ন ভিন্নভাবে আল্লাহর সাথে গোপন সম্পর্ক সৃষ্টি করার মাধ্যমেই ইসলামকে শক্তিশালী করে। কিন্তু আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কগুলো গোপন থাকে। তাই, আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করার কারণে কেউ কাউকে ভ্রান্ত বলা উচিত নয়।

অর্থাৎ, আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক সৃষ্টি করার অসংখ্য পদ্ধতি রয়েছে।



উপরোক্ত নিয়মগুলো বিভিন্ন গাছেরা অনুসরণ করে বলেই তাদের ফুল ও ফল বিশ্ববাসী দেখতে পারে।

তেমনি,

উপরোক্ত নিয়মগুলো যদি মুসলিমরা অনুসরণ করে তাহলে বিশ্ববাসী অতীতের মত মুসলিমদের অবদান ও প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবে। ইনশাল্লাহ।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...