সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জিকির ও তাসবীহ এর মাঝে পার্থক্য

চিন্তা-ভাবনাহীন ‘আল্লাহ, আল্লাহ এবং সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ ’ বলাকে জিকির বলা হয় না, বরং তাসবীহ বলা হয়।


আসমান ও জমিনের সকল সৃষ্টিকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পড়তে হয়। যেমন, মানুষের শরীরের সব রক্তকে হৃদপিণ্ড একবার তার নিজের কাছে নিয়ে আসে, আবার ছেড়ে দেয়, এটাই হলো তার তাসবীহ। নদী সাগরের পানে বয়ে চলে, এটাই নদীর তাসবীহ। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, প্রত্যেকে প্রত্যেকের কক্ষ পথে চলতে থাকে, এটাই তাদের তাসবীহ। অর্থাৎ, চিন্তা-ভাবনাহীনভাবে পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের সবকিছু নিজেদের দায়িত্ব পালন করাকেই তাসবীহ বলা হয়।

যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেন –

سَبَّحَ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর তাসবীহ করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা ৫৯/ হাসর – ১]

অর্থাৎ, আসমান ও জমিনের সবাই আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পাঠ করলেও সবাই আল্লাহর জিকির করতে পারে না। আল্লাহ জিকির করার জন্যে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন। যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা চিন্তা-ভাবনা করার শক্তি দিয়েছেন, তারাই কেবল আল্লাহর জিকির করতে পারে।

যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
“যারা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর জিকির করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচাও।” [সূরা ৩/ আলে ইমরান – ১৯১]

এখানে আল্লাহ তায়ালার জিকির করার অর্থ হলো –

১) পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের জগত সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা।
২) আল্লাহ তাঁর কোন সৃষ্টিকে কেন সৃষ্টি করেছেন, এটা বুঝতে পারা।

সুতরাং, আমরা মসজিদে বসে বসে চিন্তা-ভাবনা ছাড়া কেবল যদি ‘আল্লাহ আল্লাহ’ করি, তাহলে সেটি হবে তাসবীহ। আর আমরা যদি আল্লাহর পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের জগত নিয়ে গবেষণা করি, তাহলে সেটি হবে আল্লাহ জিকির।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

গড হেলমেট দিয়ে কি নাস্তিক কে আস্তিক বানানো যায়?

একবার, বিশ্বকুখ্যাত নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্স-কে বিজ্ঞানী মাইকেল পের্সিঙের তার অফিসে ডেকে আনলেন। তাকে বললেন, আপনি তো বিজ্ঞানে বিশ্বাস করেন; তাই না? ডকিন্স : হুম। পের্সিঙের : তাহলে আমরা দেখব, বিজ্ঞানের সাহায্যে আপনার মস্তিষ্ককে পরিবর্তন করে আপনাকে নাস্তিক থেকে আস্তিক বানাতে পারি কিনা? ডকিন্স : ওকে। উল্লেখ্য, মাইকেল পের্সিঙের একজন নিউরো বিজ্ঞানী। তিনি এবং বিজ্ঞানী স্ট্যানলি করেন, উভয়ে একটি হেলমেট আবিষ্কার করেন। যার নাম – ‘গড হেলমেট’। এই ‘হেলমেট’টি দিয়ে তারা পরীক্ষা করেন যে - মানুষের মস্তিষ্কের কোন জায়গায় তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের অনুভূতি জাগ্রত হয়। তারা মানুষের মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় অনুভূতির সিগন্যাল পাঠিয়ে স্রষ্টায় বিশ্বাস তৈরির চেষ্টা করেন। তো, তারা ডকিন্স-কে একটি বদ্ধ ঘরে প্রবেশ করিয়ে তার মাথায় ‘গড হেলমেট’টি লাগিয়ে দিলেন। ডকিন্সের চোখ বন্ধ করে দিলেন। এবং ডকিন্সের রুম থেকে সবাই বের হয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।