সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

‘যুক্তি’ ও ‘বুদ্ধি’ কাকে বলে?

‘যুক্তি’ শব্দটি ‘যুক্ত’ শব্দ থেকে এসেছে। কোনো একটি ঘটনাকে অন্য একটি ঘটনার সাথে যুক্ত করাকে বলে ‘যুক্তি’।


যেমন,

(ছেলেটি সারাদিন টিভি দেখতো,) ‘তাই’ (সে এখন চোখে কম দেখে।)

এ বাক্যে, ‘টিভি দেখা’ ঘটনাটির সাথে ‘চোখে কম দেখা’ ঘটনাটিকে যুক্ত করে নতুন যে একটি বাক্য তৈরি করা হলো, এটাকেই যুক্তি বলে।

একজন মানুষ পৃথিবীর যতবেশী ঘটনাকে পরস্পর যুক্ত করতে পারেন, তিনি ততবড় যুক্তিবাদী।

ধর্ম মানুষকে সবচেয়ে বেশী যুক্তিবাদী হতে সাহায্য করে। কারণ, ধর্ম বলে, পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের সকল দৃশ্য ও অদৃশ্য বস্তু এক আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন। এবং পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের সকল ঘটনা এক আল্লাহ তায়ালার হুকুমেই ঘটে থাকে।।

অর্থাৎ, পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের সকল বস্তু ও ঘটনাকে এক আল্লাহর সাথে যুক্ত করার নামই ধর্ম। যিনি সবকিছুকে এক আল্লাহর সাথে যুক্ত করতে পারেন, তিনি সবচেয়ে বড় যুক্তিবাদী বা ধার্মিক হতে পারেন।

নাস্তিকগণ বিজ্ঞানের সাথে ধর্মকে যুক্ত করতে পারেন না, পৃথিবী সৃষ্টির আগের সময়ের সাথে পৃথিবী ধ্বংসের পরের সময়কে যুক্ত করতে পারেন না, ধনী ব্যক্তির সাথে গরিব ব্যক্তিকে যুক্ত করতে পারেন না। পৃথিবীর এমন অনেক কিছুর পিছনেই তারা কোনো যুক্তি খুঁজে পান না। ফলে তারা ধার্মিকদের চেয়ে বড় কোনো যুক্তিবাদী হতে পারেন না।

এবার আসি ‘বুদ্ধি’ শব্দে।

‘বুদ্ধি’ শব্দটি ‘বুদ্ধ’ শব্দ থেকে এসেছে, এবং বুদ্ধ শব্দটি বোধ শব্দ থেকে এসেছে।

যুক্তি ও বুদ্ধি শব্দ দুটির মাঝে পার্থক্য রয়েছে। যুক্তি হলো একটি ঘটনার সাথে অন্য একটি ঘটনাকে যুক্ত করা। আর বুদ্ধি হলো কোনো একটি ঘটনাকে বোধগম্য করার মাধ্যমে প্রভাবিত করা। অর্থাৎ, বুদ্ধি হলো যুক্তির এক ধাপ উপরে। যেখানে এসে যুক্তি থেমে যায়, সেখান থেকে বুদ্ধি শুরু হয়।

‘যুক্তি’ সৃষ্টি হয় পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনার অভিজ্ঞতার লাভ করার মাধ্যমে, কিন্তু ‘বুদ্ধি’ সৃষ্টি হবার জন্যে কোনো ধরণের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয় না। মানুষের বুদ্ধি আসে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। এ কারণেই গোতম বুদ্ধ গাছের নিচে বসে থেকেই বুদ্ধি অর্জন করতে পারেন, এবং নিজে বুদ্ধ হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন।

বুদ্ধির কাজ হলো পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনাকে প্রভাবিত করা। যিনি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে যতবেশি বুদ্ধি অর্জন করতে পারেন, তিনি পৃথিবীকে ততবেশী প্রভাবিত করতে পারেন। এ কারণে, নবী-রাসূল ও ধার্মিক পুরুষদেরকেই মানুষ বেশী অনুসরণ করে।

সারমর্ম কথা হলো,

যুক্তি ও বুদ্ধি ধার্মিক মানুষদের-ই সম্পদ। যুক্তি-বুদ্ধি যেমন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, এবং তেমনি ধর্মও যুক্তি-বুদ্ধির বিরুদ্ধে নয়। বরং এগুলো সব একে অন্যের পরিপূরক।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...