সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটি সুন্দর সকালের সন্ধানে...

রাত ১২টা বা ১টা পর্যন্ত জেগে থাকাটা ছিল আমার অন্যতম একটি বদভ্যাস।

ছোটবেলায় আত্মীয় স্বজন বলতেন, “লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়ায় চড়ে সে”। সুতরাং, সে সময়ে লেখাপড়ার নাম করে রাত ১টা পর্যন্ত অথবা সারা রাত জেগে জেগে পড়লে কেউ বিষয়টিকে খারাপভাবে নিতেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ‘গণরুমে’ থাকতে হয়েছে। সেখানে ছোট্ট একটা রুমে আমাদের ৩০ জন ছাত্রকে একসাথে ঘুমাতে হতো। রাতে রুমের ভিতর সবাই হইচই করতো, বিভিন্নজন দল বেঁধে তাস খেলতো, কেউ কেউ উচ্চস্বরে গান শুনতো। ফলে, রাত ১টা বা ২টার আগে ঘুমানোর কোনো সুযোগ ছিল না। তাই, তখন রাতে না ঘুমিয়ে, সারা রাত জেগে রিডিং রুমে বসে পড়ার অথবা পলাশী গিয়ে একাডেমিক আড্ডা দেয়ার একটি ‘সুবর্ণ সুযোগ’ সৃষ্টি হয়েছিল।

রাতজেগে পড়াশুনা করার পিছনে আমার অনেক যুক্তি ছিল। সবাই রাতে ঘুমিয়ে যাবে, কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করবে না। সুতরাং, রাতজেগে পড়লে অনেক বেশি পড়াশুনা করা যাবে।

ফেইসবুকের যুগে প্রবেশ করার পর রাত জেগে পড়াশুনা করার পাশাপাশি কিছুটা ফেইসবুকও পড়া হত। এতে করে, রাতে দেরী করে ঘুমানোর বদভ্যাসটি স্বাভাবিক জীবনের উপর আরো প্রকটভাবে জেঁকে বসলো।

অনার্সের ৩য় ও ৪র্থ বর্ষে এসে স্যারদের মুখস্থ করা লেকচার শুনতে আর ভালো লাগত না। আমরা দু’তিন জন বন্ধু মিলে ক্লাসের পিছনের বেঞ্চে গিয়ে লম্বা হয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। ক্লাসে আসতাম কেবল হাজিরা দিয়ে পরীক্ষার নম্বর ঠিক রাখার জন্যে।

রাতে না ঘুমানোর কারণে অনেক সমস্যা হত। নিয়মিত মাথা ব্যথা করতো। সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা ছিল, রাত ৩টা বা ৪টার দিকে নিজের অজান্তেই টেবিলের উপর ঘুম চলে আসত, এবং মাঝে মাঝে ফজরের নামাজও কাজা হয়ে যেতো।

বুঝতে পেরেছিলাম, রাত জাগাটা একটি মারাত্মক বদভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এর থেকে উত্তরণের কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

ইতিমধ্যে একদিন বিবিসির একটি আর্টিকেল চোখে পড়ল – “The myth of the eight-hour sleep”।

গত দু’এক শত বছরের মধ্যে মানবজাতির ঘুমের রুটিনে কি কি পরিবর্তন এসেছে, এবং এর ফলে কি সমস্যা হচ্ছে, এসব নিয়ে দারুণ একটি গবেষণামূলক আর্টিকেল। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক, এবং ডাক্তারদের রেফারেন্স দিয়ে এখানে বলা হয়েছে যে, শিল্প বিপ্লবের পর মানবজাতির ঘুমের রুটিন ব্যাপকভাবে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। ফলে ইউরোপ সহ বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এখন অ-প্রাকৃতিক এবং অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।

রাতের প্রথম অংশে ঘুম যেতে না পারলে ঘুমের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। অর্থাৎ, রাতের প্রথম অংশে ৪/৫ ঘণ্টা ঘুম যাওয়া আর রাতের শেষ অংশ থেকে দুপর পর্যন্ত ৭/৮ ঘণ্টা ঘুম যাওয়া একই কথা। 'একটানা ৭/৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হয়' বলে যে কথাটি আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, তা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে এ আর্টিকেলটি। ঘুম নির্ভর করে কোয়ালিটির উপর, কোয়ান্টাটির উপর নয়।

অ্যামেরিকার ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর রজার ইকার্চ [Roger Ekirch] এ নিয়ে একটি চমৎকার বই লিখেন। নাম – At Day's Close: Night in Times Past

রজার ইকার্চ ১৬ বছর গবেষণা করে এ বইটি লিখেন। তাঁর মতে, অতীতের মানুষেরা সন্ধ্যার পর অর্থাৎ সূর্যাস্তের দু’তিন ঘণ্টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তো। এরপর, ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ঘুমাতো। তারপর, ঘুম থেকে উঠে ১ থেকে ২ ঘণ্টা ইবাদত বা ব্যক্তিগত কাজ করতো। তারপর, আবার কিছুক্ষণের জন্যে ঘুমাতো। এবং সকালে তাড়াতাড়ি উঠে যেতো।

এ কথাটি প্রমাণ করার জন্যে রজার ইকার্চ তাঁর বইতে ৫০০টি ঐতিহাসিক রেফারেন্স প্রদান করেন। ক্লাসিক্যাল বিভিন্ন সাহিত্যের বই, মেডিক্যাল বই, আদালতের নথিপত্র, নৃতাত্ত্বিক তথ্য ও ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ থেকে তিনি প্রমাণ করেন যে, আগেকার মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকতো না; এবং একটানা ৭ বা ৮ ঘণ্টা ঘুমাতো না। আগেকার মানুষ প্রকৃতির সাথে ঘুমিয়ে যেত, প্রকৃতির সাথেই জেগে উঠতো। মাঝখানে দুই’এক ঘণ্টার জন্যে জেগে স্রষ্টার ইবাদত করতো অথবা ব্যক্তিগত কোনো কাজ সেরে নিতো। এটাই ছিল মানুষের স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘুমের অভ্যাস।

কিন্তু, সুস্থ-স্বাভাবিক এই ঘুমের অভ্যাসটি ধ্বংস হতে শুরু হয় ১৭ শতাব্দীর শেষের দিকে। যখন শিল্প বিপ্লব শুরু হয়। প্রথম ১৬৬৭ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের রাস্তায় রাস্তায় মোমবাতি লাগানো শুরু হয়। ২ বছর পর তেলের বাতি আবিষ্কার হয়। এরপর, লন্ডন সহ ইউরোপের প্রায় ৫০ টি শহরের রাস্তায় রাস্তায় তেলের বাতি লাগানো শুরু হয়। উদাহরণ স্বরূপ, Leipzig নামক জার্মানের ছোট্ট একটি শহরের কথা উল্লেখ করা যাক। এই শহরে মাত্র ১০০ জন মানুষ কাজ করতো। কিন্তু শহরটির বিভিন্ন রাস্তায় ৭০০টি বাতি বসানো হয়েছিলো।

এসব কৃত্রিম আলো সৃষ্টি করার কারণে মানুষের সুস্থ-স্বাভাবিক-প্রাকৃতিক ঘুমের রুটিনটি পরিবর্তন হয়ে যায়। মানুষ আস্তে আস্তে ভাবতে শুরু করলো যে, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া মানে হলো সময় অপচয় করা। দিনের কাজ দিনের আলোর মধ্যে শেষ করে ফেলার যে তাড়না অতীতের মানুষের মধ্যে ছিল, তা আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায়। মানুষের মধ্যে অলসতা ও বিলাসিতা চলে আসে। দিনের কাজ দিনের আলোর মধ্যে শেষ না করে মানুষ তা রাতের জন্যে রেখে দিতো। ফলে অনিবার্য কারণেই রাতের ঘুমটি দিনের আলোর মধ্যে প্রবেশ করলো, এবং মানুষ তাদের সুস্থ-স্বাভাবিক-প্রাকৃতিক ঘুমের রুটিনটি হারিয়ে ফেলে।

১৯২০ সালের দিকে এসে শহরের মানুষ তাদের সুস্থ-স্বাভাবিক-প্রাকৃতিক ঘুমের নিয়মটি একেবারেই ভুলে গেল। সূর্যাস্তের ২/৩ ঘণ্টা পর ঘুমিয়ে যাওয়া, ৪/৫ ঘণ্টা ঘুমানোর পর দু’এক ঘণ্টার জন্যে রাত জেগে ইবাদত বা ব্যক্তিগত কাজ করা, এরপর আবার কিছুক্ষণের জন্যে দ্বিতীয় ঘুম দেওয়া, তারপর দিনের আলো আসার সাথে সাথে আবার জেগে উঠা – এ নিয়মগুলো তখন মানুষের কাছে কাল্পনিক মনে হতে লাগলো।
রাতের ঘুম চলে আসলো দিনের আলোতে, এবং দুই বা ততোধিক ঘুমের পরিবর্তে মানুষ একটি ঘুমের অভ্যাস করে ফেললো। মানুষ তাদের প্রাকৃতিক অভ্যাস ত্যাগ করলো, ফলে প্রকৃতিও মানুষের সাথে বিদ্রূপ আচরণ শুরু করলো। দিনের বেলা ঝিমুনি, মাথা ব্যথা, হতাশা, কাজে অমনোযোগ, অলসতা, দুর্বলতা, অযথা রাগান্বিত হওয়া সহ নানা কিছু মানুষের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হলো।

১৯৯০ সালে সাইকোলজিস্ট Thomas Wehr একদল মানুষের উপর গবেষণা পরিচালনা করেন। ঐ মানুষদেরকে প্রতিদিন ১৪ ঘণ্টা অন্ধকারে রাখা হত। এভাবে এক মাস রাখা হলো। ফলে, তাদের ঘুমের অভ্যাসটি পরিবর্তন হয়ে গেল। তারা সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর পরেই ঘুমিয়ে পড়তো, ৪/৫ ঘণ্টা ঘুমিয়ে ১/২ ঘণ্টার জন্যে জেগে থাকতো। এরপর আবার দ্বিতীয় ঘুম যেতো, এবং সূর্যোদয়ের আগেই জেগে উঠতো। এই গবেষণাটির পর ঘুম বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, সুস্থ, স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘুমের রুটিন হলো এটাই।

অ্যামেরিকার অন্যতম একজন ‘ঘুম বিশেষজ্ঞ’ হলেন Dr Charles Czeisler। তাঁর মতে, ঘুম হচ্ছে সবচেয়ে ভালো এবং উপকারী ঔষধের নাম। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঘুমানো উচিত। অবশ্যই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো উচিত। এবং দুপরের পর কিছুক্ষণ ঘুমানো উচিত। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত দুইবার ঘুমানো উচিত।

চার্লস সিজিলার এর মতে, সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরপরেই মানুষের ঘুমের হরমোনগুলো কাজ করতে শুরু করে। মানুষ যদি রাতের প্রথম অংশ না ঘুমায়, তাহলে ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও বিষণ্ণতা সহ অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। রাতের প্রথমাংশে ঘুমালে খুব সহজে এসব অসুখগুলো শরীরে দানা বাঁধতে পারে না।

অ্যামেরিকার Sleep Foundation এর তথ্য অনুযায়ী, মানুষ রাতের প্রথমাংশে ঘুম না যাবার প্রধান কারণ হলো ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন, ই-রিডার, ট্যাব, ল্যাপটপ, কম্পিউটার এবং টেলিভিশন জাতীয় টেকনোলোজিক্যাল পণ্য সমূহের ব্যবহার। ভালো ঘুম যাবার লক্ষে সূর্যাস্তের সাথে সাথে এসব টেকনোলোজিক্যাল পণ্য সামগ্রীর ব্যবহার থেকে নিজেকে দূরে রাখা উচিত।

স্মার্ট ফোনের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আসক্তি নিয়ে মনোবিজ্ঞানী Jean M. Twenge একটি চমৎকার গবেষণামূলক বই লিখেন। বইটির নাম – iGen অর্থাৎ “ইন্টারনেট প্রজন্ম”। তাঁর মতে, স্মার্ট ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে তরুণ প্রজন্ম অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন, ইন্টারনেট প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যে বয়সে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাওয়ার কথা ছিল, সে বয়সে তারা গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাচ্ছে না। এবং ইন্টারনেট প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সুস্থ-স্বাভাবিক সামাজিক আচরণেও অভ্যস্ত হতে পারছে না। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন যে, ই-প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা রাত জেগে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছে, ফলে তারা নিয়মিত ও যথেষ্ট ঘুমাতে পারছে না।

জিন টুইঙ্গের মতে, ইন্টারনেট প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যতবেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে, ততবেশি তারা অসুখী, একাকীত্ব ও বিষণ্ণতা অনুভব করছে, এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।

লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে। নিজের গল্পে ফিরে আসি।

যখন ঘুম নিয়ে কিছু পড়াশুনা করলাম, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, এখন থেকে আর রাত জাগব না। এশার পর পরেই ঘুমিয়ে যাব।

কিন্তু, বলা যত সহজ, কাজে পরিণত করা তত সহজ নয়।

তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে ইচ্ছা করতাম ঠিকই, কিন্তু ১২টা বা ১ টা বাজার আগে কাজ শেষ হত না। সিদ্ধান্ত নিলাম, কাজ শেষ হোক বা না হোক, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবই যাব।

এরপরের সমস্যা হলো, তাড়াতাড়ি ঘুমালেও রাত ১২টা বা ১ টা বাজার আগে ঘুম আসতো না। ঘুম না আসা সত্ত্বেও শুয়ে থাকা ছিল খুবই অস্বস্তিকর।

তারপর, তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্যে বেশ কিছু কৌশল আবিষ্কার করতে হলো। মাগরিবের আগেই রাতের খাওয়া খেয়ে ফেলা। সন্ধ্যার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মোবাইল ও ল্যাপটপ বন্ধ করে অর্থসহ কোর’আন পড়তে শুরু করা। দেখতাম, এতে কিছু কাজ হয়, চোখে ঘুম-ঘুম ভাব আসে।

একদিন একটি হাদিস পড়ে আরেকটি কৌশল আবিষ্কার করলাম। এশার পর ঘুমানোর জন্যে শুয়ে দরুদ শরীফ ও বিভিন্ন দোয়া পড়ার পর, ৩৩ বার সোবহান আল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবর পড়তে শুরু করা। তাড়াতাড়ি ঘুমের জন্যে এটা খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি। প্রতিদিন এগুলো পড়ে শেষ করার আগেই ঘুম চলে আসে, আলহামদুলিল্লাহ।

সমস্যা এখানেই শেষ না। নতুন একটি অভ্যাস গঠন করতে হলে অনেক কষ্ট করতে হয়। প্রথম প্রথম তাড়াতাড়ি ঘুমানোর পরেও ৪/৫ ঘণ্টা পর জাগা সম্ভব হত না। তাড়াতাড়ি জাগলে মাথা ব্যথা করতো। ১/২ সপ্তাহ চেষ্টা করার পর এখন আর তেমন সমস্যা হয় না।

এখন সমস্যা হলো, বন্ধুবান্ধব। তারা বলে, “তুই এত তাড়াতাড়ি হাস-মুরগির সাথে ঘুমিয়ে যাস কেন?” বন্ধুবান্ধবদের বুঝাতে অনেক কষ্ট করতে হয়, তাই এ লিখাটি লিখতে হলো।

তুরস্কে যখন রাত ১০টা, বাংলাদেশের তখন রাত ১টা। কারো সাথে কথা বলছি, এমন সময় আমি যদি বলি, “আমাদের এখন রাত ১০টা, আমাকে এখন ঘুমিয়ে যেতে হবে”। তারা আমাকে উপহাস করে বলেন, “আরে...। আমাদের রাত শুরুই তো হয় ১২টা বাজে। ঘুমাতে ঘুমাতে রাত ৩টা/৪টা বাজে। এত তাড়াতাড়ি কিসের ঘুম?”

আমি তাঁদের সাথে তর্ক না করে বলি, “আপনাদের মত আমি এত আধুনিক নই। আমি হাস-মুরগীর সাথে ঘুমিয়ে পড়ি।”

কোর’আনের দুটি সূরার দুটি অংশ দিয়ে শেষ করছি, আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

يَٰٓأَيُّهَا ٱلْمُزَّمِّلُ ﴿١﴾ قُمِ ٱلَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًۭا ﴿٢﴾ نِّصْفَهُۥٓ أَوِ ٱنقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا ﴿٣﴾ أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ ٱلْقُرْءَانَ تَرْتِيلًا

“হে বস্ত্রাবৃত! রাতের কিছু অংশ পর জেগে উঠ। অর্ধ রাত অথবা তার একটু কম বা বেশি সুস্পষ্টভাবে কোর’আন আবৃতি কর।” [সূরা ৭৩ / মুযযাম্মিল – ১ থেকে ৪]

وَمِنَ ٱلَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِۦ نَافِلَةًۭ لَّكَ عَسَىٰٓ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًۭا مَّحْمُودًۭا

রাত্রির কিছু অংশ কোর'আন পাঠ সহ জাগ্রত থাক। এটা তোমার জন্যে নফল কাজ। সম্ভবত তোমার পালনকর্তা তোমাকে প্রশংসিত স্থানে পৌঁছিয়ে দিবেন। [সূরা ১৭/বনী ইসরাঈল - ৭৯]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্