সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মনের মত মানুষ পাওয়া সম্ভব?

"আমি আমার মনের মত একজন মানুষ চাই" - এ বাক্যটি প্রায়ই আমরা বলে থাকি, কিংবা শুনে থাকি। সাধারণত বিয়ে করার সময়ে, অথবা, জীবনসঙ্গীকে পছন্দ করার সময়ে মানুষ এ কথাটি বলে থাকে। কিন্তু, এ বাক্যটির মাঝে একটি বড় ধরণের ভ্রান্তি রয়েছে।

ভ্রান্তিটি হলো,

কেউ যদি তাঁর মনের মত মানুষ চায়, তাহলে সারাজীবনেও তিনি তাঁর 'মনের মত মানুষ' খুঁজে পাবেন না। কেননা, আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষকেই ইউনিক করে তৈরি করেছেন। অর্থাৎ, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে তিনি একটি স্বতন্ত্র মন এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব দান করেছেন। ফলে, পৃথিবীর যে কোনো দু'জন মানুষের দুটি মন কখনোই শতভাগ মিল হওয়া সম্ভব না।


ধরুন, একই পরিবারের যমজ দুই বোন বা যমজ দুই ভাই। তাঁরা উভয়ে একই বাবা-মায়ের সন্তান; একই সময়ে এবং একই পরিবেশে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও দু'জনের মন কখনো হুবহু এক হয় না। তাহলে, দুইটি পরিবারে এবং দুইটি পরিবেশে বড় হওয়া একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মন কিভাবে এক হওয়া সম্ভব? যেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের মনকে ঠিকভাবে বুঝতে পারি না, সেখানে নিজের মনের মত অন্য একজন মানুষকে খুঁজে পাওয়া কি আদৌ সম্ভব?

এখানে 'মনের মত মানুষ'-এর সংজ্ঞা হলো - নিজের মন যদি দক্ষিণে যায়, অন্যের মনও দক্ষিণে যেতে হবে। নিজের মন যদি উত্তরে যায়, অন্যের মনও উত্তরে যেতে হব। নিজে যা পছন্দ করে, অন্যকেও তা পছন্দ করতে হবে। নিজে যা করতে চায়, অন্যকেও তা করতে হবে। নিজের যে যোগ্যতা, অন্যেরও তা থাকতে হবে। নিজে যা ভালোবাসে, অন্যকেও তা বাসতে হবে। যদি কেউ এমন হতে পারে, তাহলেই নাকি সে 'মনের মানুষ' হতে পারে।

বিয়ে করতে গিয়ে আমরা অনেকেই 'মনের মানুষ' খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। পাচ্ছি না। আমার পরিচিত অনেক ভাই-বোনকে দেখেছি, তারা 'মনের মানুষ' খুঁজতে গিয়ে নিজেদের বুড়ো-বুড়ি বানিয়ে ফেলেছেন। এখনো তাঁরা তাঁদের 'মনের মানুষ' খুঁজে পাচ্ছেন না। কারণ কি?

কোর'আনে আল্লাহ তায়ালা বলছেন -

وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْأُنثَىٰ

"নারীর মতো নয় কোনো পুরুষ।" [সূরা ৩/আলে ইমরান - ৩৭]

অর্থাৎ, একজন নারী ও একজন পুরুষ কখনোই একই রকম হয় না। তাই, নারীর মন ও পুরুষের মন কখনোই এক রকম হওয়া সম্ভব না। যদি নারীর মন ও পুরুষের মন একই রকম নাইবা হয়, তাহলে একজন পুরুষ কিভাবে তাঁর মনের মতো একজন নারী পাবে? অথবা, একজন নারী কিভাবে তাঁর মনের মত একজন পুরুষ পাবে?

সংসার জীবনে এ ভুলটি অনেকেই করেন। পুরুষ চায় নারী তাঁর মনের মতো হোক, নারী চায় পুরুষ তাঁর মনের মতো হোক। কিন্তু, কেউ আসলে কারো মনের মতো হতে পারে না। এটা সম্ভব না। নারী ও পুরুষ উভয়ের মনের ও কাজের পার্থক্য মেনে নিয়েই সংসার জীবনকে চালিয়ে নিতে হয়।

আমরা সবাই চাই, আমাদের জীবনসঙ্গীটি একেবারে শতভাগ পারফেক্ট হোক। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কোনো মানুষকেই শতভাগ পারফেক্ট করে তৈরি করেননি। প্রত্যেক মানুষের-ই ভালো ভালো গুণের সাথে কিছু কিছু খারাপও থাকে। যেমন, একটি মসজিদ বা মন্দিরেও একটি টয়লেট থাকে।

নবী-রসূলগণ ছাড়া একেবারেই ভালো মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানুষের ভুল-ত্রুটি নিয়েই তাঁকে ভালোবাসতে হয়। তাই, বিয়ের সময়ে একেবারেই মনের মত পারফেক্ট একটি মানুষ খোঁজা আসলেই একটি বৃথা প্রচেষ্টা।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...