সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অসভ্য ইউরোপ ও ১১ জুলাই

কল্পনা করতে পারেন?

যে ইউরোপকে আমরা বিশ্ব মানবতার বন্ধু বলি, সে ইউরোপ মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে আজকের এই দিনে ৮,৩৭৩ জন বসনিয়ার নিরপরাধ মুসলিমকে গণহত্যা করেছিল।

খুব বেশি দিন আগের কথা না। মাত্র ২২ বছর আগের ঘটনা।


নব্বইয়ের দশকে কমিউনিস্ট যুগোস্লাভিয়া পতনের পর নতুন নতুন কিছু রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে। সে সময়ে বসনিয়ার মুসলিমদের উপর সার্বিয়া আগ্রাসন ও হামলা চালায়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে প্রায় এক লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়।

যুদ্ধে মানুষ মারা যাবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে ইউরোপ তখন মুসলিমদের উপর যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছিল, সে ইতিহাস আমারা কিছুতেই এবং কখনোই ভুলতে পারব না।

১৯৯৫ সালের জুলাই মাস। বসনিয়া ও সার্বিয়া যুদ্ধের এক পর্যায়ে জাতিসঙ্ঘ মুসলিমদের নিকট প্রস্তাব দিল যে, তোমরা যদি তোমাদের সকল অস্ত্র আমাদের কাছে জমা দিয়ে দাও, তাহলে আমরা তোমাদের নিরাপত্তা দিব। তখন বসনিয়ার মুসলিমরা জাতিসঙ্ঘের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হল। বসনিয়ার পূর্বাঞ্চল সেব্রেনিকা নামক স্থানে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-শিশু সহ প্রায় ১০ হাজার মুসলিমকে একত্রিত করা হল। সবার কাছ থেকে অস্ত্র জমা নিয়ে নেয়া হল। মুসলিমের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হল ডাচ আর্মিদেরকে।

নিরাপত্তা চুক্তি হবার দু’দিন পরেই, অর্থাৎ, ১১ জুলাই ডাচ আর্মিরা মুসলিমদেরকে নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে তাঁদেরকে সার্বিয়ান আর্মিদের কাছে তুলে দেয়। এরপর সার্বিয়ান আর্মিরা আমাদের নিরস্ত্র ও নিরপরাধ মুসলিমদেরকে হত্যা করতে শুরু করে।

জাতিসঙ্ঘের 'নিরাপত্তায়' মাত্র ৫ দিনে ৮,৩৭৩ (আট হাজার তিন’শ তিয়াত্তর) জন বসনিয়ান মুসলিমকে হত্যা করা হয়। এবং হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণহত্যা। ঠাণ্ডা মাথায় অসভ্য কায়দায় এই গণহত্যা ও ধর্ষণ করেছিল ইউরোপের 'সভ্য' মানুষেরা।

এ কারণে এরদোয়ান প্রায়ই বলেন, “ইউরোপ থেকে আমাদের সভ্যতা শিখতে হবে না।”

আমরা বসনিয়ার সে সকল শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।

সূত্র:

Srebrenica massacre - Explained in under 2 min - BBC News

Srebrenica Genocide Remembered: Largest post-WWII massacre

 


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...