সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোর'আন মানুষকে যেভাবে ক্যাটাগরি করে



আমরা যেভাবে মানুষকে ক্যাটাগরি করি, কোর'আনে কিন্তু মানুষকে সেভাবে ক্যাটাগরি করা হয় না।

আমরা মুসলিমদেরকে হাজারো ভাগে ভাগ করি। যেমন, শিয়া, সুন্নি, জামাতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, কওমী, আলীয়া, আহলে হাদীস, সালাফী, হানাফী, জেহাদী, দেওবন্দী, তাবলীগী, মডারেট, সূফী, পীরপন্থী, চরমনাই, হিজবুত তাওহীদ, আওয়ামী লীগ, ওলামা লীগ, বিএনপি, ইত্যাদি।

কিন্তু,


কোর'আন মানুষকে এভাবে ক্যাটাগরি করে না।

কোর'আনের হিসাব হলো, যিনি যতবেশি কোর'আন অধ্যয়ন করেন এবং তা অনুযায়ী জীবন যাপন করেন, তিনি ততবেশি হেদায়েত প্রাপ্ত হবেন। অর্থাৎ, আপনি যে দলেই থাকুন না কেনো, যতবেশি কোর'আনের নিকটবর্তী হবেন, ততবেশি হেদায়েত প্রাপ্ত হবেন। এবং যতবেশি কোর'আন থেকে দূরে সরে যাবেন, ততবেশি পথভ্রষ্ট হবেন।

বিষয়টি বোঝার জন্যে আমরা নিচের চিত্রটি দেখতে পারি।

19748402_1553729771366956_4684232604255803333_n

১ নং বৃত্তের মধ্যে যারা আছে, তাঁরা কোর'আনের বেশি নিকটবর্তী; সুতরাং তাঁরা বেশি হেদায়েত প্রাপ্ত হবে। আর, যারা কোর'আন থেকে যত দূরবর্তী বৃত্তে অবস্থান করে, তারা ততবেশি ভ্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।

ইবনে তাইমিয়া তাঁর মাজমু-আল-ফাতওয়া গ্রন্থে বলেন -

"হতে পারে কোন ব্যক্তি ভুল দলে থাকার পরও ভাল কাজ এবং ইখলাসের কারণে জান্নাতে অধিকতর উচ্চ আসনে দাখিল হতে পারে। আবার, কেউ সঠিক দলে থেকেও গুনাহ এর কাজে লিপ্ত থাকলে বা অন্তরে অহংকার বোধ থাকলে সে জাহান্নামে চলে যেতে পারে।"

অর্থাৎ, কেউ জামায়াতি বা সালাফী হলেই যেমন তিনি জান্নাতে চলে যাবেন না, তেমনি কেউ বিএনপি বা আওয়ামী লীগ হলেই তিনি জাহান্নামে চলে যাবেন না। আল্লাহ তায়ালা দেখবেন, আমাদের মাঝে কে কতবেশি কোর'আন অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালনা করেছে।

সুতরাং, কে কোন দলে আছে সেটা বিষয় না, বিষয় হলো কে কতটা কোর'আনের সাথে আছে। সব দল থেকে বাচাই করে সৎ মানুষদেরকেই নিয়েই আল্লাহ তায়ালা আখিরাতে একটি জান্নাতি দল গঠন করবেন। কেউ দুনিয়াতে বসেই নিজেকে জান্নাতি দলের সদস্য ভাববার কোনো উপাই নেই।

আল্লাহ তায়ালা বলেন -

إِنَّ هَٰذَا الْقُرْآنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا

নিশ্চয়ই এই কোর'আন এমন একটি পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক দৃঢ়। এবং এটি সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে। [সূরা ১৭/বনী ইসরাঈল - ৯]

এ আয়াত অনুযায়ী আমরা বলতে পারি, কোর'আন দ্বারা যিনি নিজেকে পরিচালনা করতে পারেন, তিনি যে দলেই থাকুন না কেনো, সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নিয়মিত কোর'আন অধ্যয়ন করার এবং তা অনুযায়ী চরিত্র গঠন করার তৌফিক দান করুক।



 

 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্