সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলামী আইডোলজি প্রচারের জন্যে কি প্রয়োজন?

আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলেই যেমন দেশের সব মানুষ আওয়ামীলীগ হয়ে যায় না, তেমন ইসলামী দল ক্ষমতায় আসলেও দেশের সব মানুষ ভালো হয়ে যাবে না। ক্ষমতা মানুষকে সর্বোচ্চ মুনাফেক বানাতে পারে, মুমিন নয়।

ইসলামী রাজনীতির সাথে অন্য রাজনীতির পার্থক্য হলো, ইসলামী রাজনীতিতে ভালোবাসা থাকে ক্ষমতার ঊর্ধ্বে, আর অন্য রাজনীতিতে ক্ষমতা থাকে ভালোবাসার ঊর্ধ্বে।

উদাহরণ স্বরূপ আমাদের মা-বাবাকে লক্ষ্য করুন। তাঁরা আমাদের যতই শাসন করুক না কেনো, তাঁদের ভালোবাসা থাকে শাসনের ঊর্ধ্বে। তেমনি ইসলামী রাজনীতির কাজ হলো দেশের সব মানুষকে ভালোবাসা। ভালোবাসার জন্যেই মাঝে মাঝে হয়তো শাসন করতে হয়, কিন্তু, শাসন কখনোই ভালোবাসার ঊর্ধ্বে যেতে পারে না।


যারা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চান, তাঁরা মূলত ভালোবাসাহীন ক্ষমতা দিয়ে দেশের সব মানুষকে ভালো বানিয়ে ফেলতে চান। কিন্তু এটা অসম্ভব। কেবল ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে পরিবর্তন করা যায় না। মানুষকে পরিবর্তন করতে হয় ভালোবাসা দিয়ে। আর, কাউকে ভালোবাসার জন্যে ক্ষমতার প্রয়োজন হয় না।

[২]

যারা তুরস্ক থেকে ইসলামী রাজনীতি শিখতে চায়, তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, এরবাকান বা এরদোয়ানের কারণেই সম্ভবত তুরস্কে ইসলামী রাজনীতির চর্চা হচ্ছে। আসলে এ চিন্তাটা সঠিক নয়। কামাল আতাতুর্কের সময় থেকে তুরস্কের মানুষকে ইসলামপ্রেমী করার জন্যে অসংখ্য লেখক, কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও সূফী-সাধকের অবদান রয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ একটা ওয়েব সাইটের কথা বলছি – (http://www.idp.org.tr)। ১৯০৮ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তুরস্কের ইসলাম নিয়ে যত একাডেমিক লেখা বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছে, তার অধিকাংশ লেখা এ ওয়েব সাইটে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ১০৩টি পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের ৭৭৪৪টি সংখ্যা এখানে রয়েছে। এবং ১২৪৩৯ জন লেখকের ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৭৫টি লেখা এই ওয়েব সাইটে রয়েছে।

তাহলে আমরা কি বুঝলাম? তুরস্কে এরবাকান বা এরদোয়ানকে ক্ষমতায় আনার জন্যে লক্ষাধিক একাডেমিক লেখা দিয়ে মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন করা হয়েছে। তারপর, আজকের এই ক্ষমতা আমরা দেখতে পাচ্ছি।

বাংলাদেশের যারা তুরস্ক থেকে ইসলামী রাজনীতি শিখতে চায়, তাদের কাজ কেবল ফেইসবুকে এরবাকান বা এরদোয়ানকে নিয়ে তর্ক করা নয়। বরং, এ সময়ের কাজ হলো, বাংলাদেশে ইসলামী কোনো দলকে ক্ষমতায় আনার জন্যে একটি একাডেমিক ক্ষেত্র তৈরি করা, এবং ধীরে ধীরে মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করা।

অর্থাৎ, ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে ভালো বানানো যায় না, সর্বোচ্চ মুনাফিক বানানো যায়। মানুষকে ভালো বানানোর জন্যে মানুষের চিন্তার পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

গড হেলমেট দিয়ে কি নাস্তিক কে আস্তিক বানানো যায়?

একবার, বিশ্বকুখ্যাত নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্স-কে বিজ্ঞানী মাইকেল পের্সিঙের তার অফিসে ডেকে আনলেন। তাকে বললেন, আপনি তো বিজ্ঞানে বিশ্বাস করেন; তাই না? ডকিন্স : হুম। পের্সিঙের : তাহলে আমরা দেখব, বিজ্ঞানের সাহায্যে আপনার মস্তিষ্ককে পরিবর্তন করে আপনাকে নাস্তিক থেকে আস্তিক বানাতে পারি কিনা? ডকিন্স : ওকে। উল্লেখ্য, মাইকেল পের্সিঙের একজন নিউরো বিজ্ঞানী। তিনি এবং বিজ্ঞানী স্ট্যানলি করেন, উভয়ে একটি হেলমেট আবিষ্কার করেন। যার নাম – ‘গড হেলমেট’। এই ‘হেলমেট’টি দিয়ে তারা পরীক্ষা করেন যে - মানুষের মস্তিষ্কের কোন জায়গায় তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের অনুভূতি জাগ্রত হয়। তারা মানুষের মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় অনুভূতির সিগন্যাল পাঠিয়ে স্রষ্টায় বিশ্বাস তৈরির চেষ্টা করেন। তো, তারা ডকিন্স-কে একটি বদ্ধ ঘরে প্রবেশ করিয়ে তার মাথায় ‘গড হেলমেট’টি লাগিয়ে দিলেন। ডকিন্সের চোখ বন্ধ করে দিলেন। এবং ডকিন্সের রুম থেকে সবাই বের হয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।