সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ছোট্ট একটি সূরা দিয়ে আরবি ভাষা শিখে ফেলুন

ছোট বেলায় কোর'আনের শেষ দশটি সূরা মুখস্থ করার সময় সবচেয়ে বেশি প্যাঁচ লাগতো সূরা কাফিরূনে, তাই নামাজে এ সূরাটা খুব কম পড়তে চাইতাম। কিন্তু পরে বুঝলাম, আরবি ভাষা শেখার জন্যে সূরা ‘কাফিরূন’ চমৎকার একটা উদাহরণ। খুবই ছোট্ট একটি সূরা, মাত্র ৬ আয়াত।

قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ - 1
لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ - 2
وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ - 3
وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَا عَبَدْتُمْ - 4
وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ - 5
لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ - 6

অনুবাদ

১. বল, হে কাফেরগণ!
২. আমি তার ইবাদাত করি না, যার ইবাদাত তোমরা কর।
৩. এবং তোমরা তার ইবাদাতকারী নও, যার ইবাদাত আমি করি।
৪. এবং আমি তার ইবাদাতকারী নই, যার ইবাদাত তোমরা করছিলে।
৫. এবং তোমরা তার ইবাদাতকারী নও, যার ইবাদাত আমি করি।
৬. তোমাদের ধর্ম তোমাদের, আমার ধর্ম আমার।

এই সূরাটা পড়ার সময় আপনি হয়তোবা ভেবেছেন, কি ব্যাপার? এখানে ‘ইবাদাত’ শব্দটা বারবার ঘুরেফিরে এতবার বলা হচ্ছে কেন?

আসলে এখানে কাফিরদের উদ্দেশ্য করে [عبد] বা ‘ইবাদাত’ শব্দমূলটিকে আরবি ভাষার বিভিন্ন ভঙ্গীতে প্রকাশ করা হয়েছে।

উদাহরণ – এক

আরবি ব্যাকরণে বাক্য দুই প্রকার।

১) বিশেষ্য বাচক শব্দ দ্বারা শুরু হওয়া বাক্য, বা [জুমলা এসমিয়্যা - الجملة الإسمية]
২) ক্রিয়া বাচক শব্দ দ্বারা শুরু হওয়া বাক্য, বা [জুমলা ফেলিয়্যা – الجملة الفعلية]

এখন, সূরা কাফিরূনের দ্বিতীয় ও চতুর্থ আয়াত দুটি দেখুন।

ঠিক একই অর্থবোধক দুটি আয়াত। কিন্তু দ্বিতীয় আয়াতটি শুরু হয়েছে ক্রিয়া বাচক শব্দ দ্বারা, অর্থাৎ এটি একটি ফেলিয়্যা বাক্য। এবং চতুর্থ আয়াতটি শুরু হয়েছে একটি বিশেষ্য বাচক শব্দ দ্বারা, অর্থাৎ এটি একটি এসমিয়্যা বাক্য।

উদাহরণ – দুই

আরবি ব্যাকরণে ইতিবাচক ও নেতিবাচক, দু ধরণের বাক্য আছে। সূরাটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াত দু’টি লক্ষ্য করুন।

দ্বিতীয় আয়াতে বলা হচ্ছে [لَا أَعْبُدُ] অর্থাৎ, আমি ইবাদাত করি না।
এবং তৃতীয় আয়াতে বলা হচ্ছে [أَعْبُدُ] অর্থাৎ, আমি ইবাদাত করি।

মনে আছে? ইংরেজি গ্রামার পড়ার সময় আমরা মুখস্থ করেছিলাম –

I do the work – আমি কাজটি করি।
I don’t do the work – আমি কাজটি করি না।

সূরা কাফিরূনের এই উদাহরণটাও হুবহু একই। আরবি ব্যাকরণ পড়ার সময় আমাদের খুবই কাজে আসবে।

উদাহরণ – তিন

আরবি ভাষায় কাল [Tense] প্রথমত দুই প্রকার।

১) অতীত কাল বা [ মাদি - ماضي]
২) বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কাল একসাথে বা [ মুদারে - مضارع]

এখন, সূরাটির দ্বিতীয় এবং চতুর্থ আয়াত দু’টি দেখুন।

দ্বিতীয় আয়াতে বলা হচ্ছে [تَعْبُدُونَ] বা ‘তোমরা ইবাদাত কর বা করবে।
চতুর্থ আয়াতে বলা হচ্ছে [عَبَدْتُمْ] বা ‘তোমরা ইবাদাত করেছিলে।

দেখুন, বাক্য দুটিতে সবকিছুই একই রকম, কেবল কালের পার্থক্য। অর্থাৎ একটি বাক্য মুদারে [مضارع], অন্য বাক্যটি মাদি [ماضي]।

উদাহরণ – চার

আরবি ভাষায় [ মুদারে - مضارع] বা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কাল একসাথে থাকায় কেউ কেউ এটাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করেন।

১) বর্তমান কাল, বা [ হাল - حال]
২) ভবিষ্যৎ কাল, বা [মুস্তাকবিল - مستقبل ]

সূরাটির তৃতীয় আয়াতে আছে বর্তমান কালের উদাহরণ, এবং দ্বিতীয় আয়াতে আছে ভবিষ্যৎ কালের উদাহরণ। ঠিক আগের [عبد] বা ‘ইবাদাত’ শব্দটি দিয়েই এই উদাহরণ দু’টি দেয়া হয়েছে।

উদাহরণ – পাঁচ

বাংলা ভাষার মত আরবি ভাষায়ও একবচন ও বহুবচনের ব্যবহার রয়েছে।

সূরাটির চতুর্থ ও পঞ্চম আয়াত দুটি দেখুন।

চতুর্থ আয়াতে বলা হচ্ছে [عَابِدٌ] বা একজন ইবাদাতকারী
পঞ্চম আয়াতে বলা হচ্ছে [عَابِدُونَ] বা অনেক ইবাদাতকারী বা ইবাদাতকারীগণ
---------------------------------------
উদাহরণ আর দিচ্ছি না। এমনিতেই স্ট্যাটাসটা কিছুটা বড় হয়ে গেল। কেউ বিস্তারিত দেখতে চাইলে এখানে  মূল লেখাটির লিঙ্ক দিলাম, দেখতে পারেন। উস্তাদ ফাদেল আস সামাররায়ী এখানে অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরেছেন। আরবি ব্যাকরণের অসংখ্য বিষয় আছে এই সূরাটিতে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...