সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারী, ইসলাম ও খ্রিস্টান

খ্রিস্টান ধর্মে, স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক হলো পিতা ও পুত্রের সম্পর্ক। স্রষ্টা হলেন পিতা, আর সৃষ্টির প্রতিনিধি যীশু হলেন পুত্র।

কোর’আনে অনেকবার বলা হয়েছে যে, ঈসা (আ) হলেন মরিয়ম নামের একজন নারীর পুত্র, কিন্তু খ্রিস্টানরা বরাবর-ই বলতে থাকেন যে, ঈসা হলেন আকাশে থাকা একজন পুরুষের পুত্র। এখানেই ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্মের পার্থক্য।

খ্রিস্টান ধর্মে নারীদের কোনো স্থান নেই। নারীরা হলো পাপের উৎস। এ কারণে, খ্রিষ্টান ধর্মের বর্তমান ভার্সন বা আধুনিক ধর্মেও নারীরা হলো পাপী বা শয়তান।


আধুনিক ধর্মের ভাষা ইংরেজি। তাই, ইংরেজি ভাষায় –

প্রথম নারীর নাম – ইভ [Eve], আর এ কারণে, শয়তানের নাম – ইভিল [Evil]

অর্থাৎ, নারী মানে শয়তান, আর শয়তান মানে নারী।

ইউরোপ-অ্যামেরিকা বলুন, আর মধ্যপ্রাচ্য বলুন, বিশ্বের যেখানেই আধুনিক ধর্ম প্রবেশ করে, সেখানেই নারীদেরকে ‘শয়তান’ বা মন্দ নামে অভিহিত করা হয়। ফলে সেখানে নারীবাদ নামে নতুন এক শক্তির উদ্ভব হয়।

আধুনিক ধর্ম ও নারীবাদ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যেখানেই আধুনিক ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে, সেখানেই নারীবাদের জন্ম হয়েছে।

আপনি আধুনিক ধর্ম গ্রহণ করে নারীদেরকে শয়তান বলবেন, আর নারীরা আপনার বিরুদ্ধে তাদের শক্তি প্রদর্শন করবে না, এমন হয় না। দুটি বিপরীত শক্তি সবসময় পাশাপাশি থাকে।

বাংলাদেশে এখন আধুনিক ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে; তাই এর বিপরীতে নারীবাদীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আধুনিক বাঙালি ধর্মের অনুসারীদের এবং বাঙালি নারীবাদীদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁরা পরস্পরকে বন্ধু মনে করেন।

অথচ, পশ্চিমা আধুনিক নারীবাদীদের মধ্যে যারা জ্ঞানী, তাঁরা প্রকৃত সত্যটি বুঝতে পেরেছেন। এবং একইসাথে, তাঁরা তাঁদের প্রকৃত শত্রুকেও চিহ্নিত করতে পেরেছেন।




অন্যদিকে ইসলামে,

আল্লাহর গুণাবলির মাঝে সবচেয়ে বড় গুন হলো রহমত বা দয়া।

আর, মানুষের মাঝে সবচেয়ে দয়ালু হলেন – মা। অর্থাৎ, নারী।

আল্লাহর গুনে গুণান্বিত হবার সবচেয়ে বেশি কোয়ালিটি রয়েছে নারীদের মাঝে।


এ কারণে,

রাসুল (স) আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক বোঝানোর জন্যে বলেছিলেন –

“মা তাঁর সন্তানের প্রতি যতটা দয়ালু, আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি তাঁর চেয়েও বেশি দয়ালু।” [বুখারি ও মুসলিম]

দয়া বা রহমত হলো আমাদের মায়েদের বা নারীদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। এ কারণে একজন সন্তানের কাছে পুরুষ বাবার চেয়ে নারী মা-ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...