সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির জন্যে যা যা করা উচিত

জন আকাঙ্ক্ষা - ১

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় অভাব গণতন্ত্রের। আওয়ামী লীগ, বিএনপির মতো বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর মাঝেও গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা নেই। বেশ কিছু ইসলামী দলে গণতন্ত্রের নামে কৌশল অবলম্বন করা হয়। নতুন দলের কাছে আমাদের আকাঙ্ক্ষা, আপনাদের নিজদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন।

জন আকাঙ্ক্ষা - ২

সামষ্টিক চিন্তার গুরুত্ব দিন। যারা দেশ নিয়ে ভাবে, দেশের কল্যাণ চায়, তাঁরা যে দলের-ই হোক না কেন, তাঁদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করুন, এবং তাঁদের পরামর্শ পর্যালোচনা করে তা নিজেদের কর্মসূচির মধ্যে যুক্ত করুন।

জন আকাঙ্ক্ষা - ৩

ব্যক্তি বা কর্মী নির্ভর দল গঠন না করে, কর্ম নির্ভর দল গঠন করুন। অতীতের বা বর্তমানের কোনো নেতাকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে, দেশের সমস্যাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিন।

জন আকাঙ্ক্ষা - ৪

প্রতিপক্ষকে আঘাত করার জন্যে ধর্মকে ব্যবহার করবেন না। বরং, প্রতিপক্ষকে ভালোবাসার জন্যে ধর্মকে ব্যবহার করুন। সমাজে বিরোধ তৈরির জন্যে নয়, বরং ঐক্য তৈরির জন্যে ধর্মের প্রয়োজন। ধর্মহীন বা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি নয়, বরং সকল ধর্মের অধিকারের প্রশ্নে সমান আচরণ করুন।

জন আকাঙ্ক্ষা - ৫

একটি রাজনৈতিক দল যতই ছোট হোক, সে দলটিকে দেশের সরকারের মতো সাজানো উচিত। অর্থাৎ, একটি দেশে যেমন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ইত্যাদি থাকে, তেমনি একটি রাজনৈতিক দলেও এসব বিভাগ থাকা চাই।

জন আকাঙ্ক্ষা - ৬

গরীব, অসহায়, পথশিশু, অনাথ, বিধবা, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থ, বয়স্ক, বেকার ও নারীদের জন্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।

জন আকাঙ্ক্ষা - ৭

শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করণের প্রকল্প হাজির করুন।

জন আকাঙ্ক্ষা - ৮

জনগণকে প্রতিমাসে আপনাদের কাজের আপডেট দিন।

.......

নতুন দলের জন্যে একটি পরামর্শ।

আপনাদের দলের সভাপতি-সেক্রেটারি সহ সকল পদ সিলেকশনের মাধ্যমে নয়, বরং নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করুন। দলের সভাপতি নির্বাচনের ফলাফল আমাদেরকে জানান। যদি দলের ভিতর গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা না হয়, তাহলে পরবর্তীতেও আমরা আপনাদের বিশ্বাস করতে পারবো না।

এ ক্ষেত্রে আপনারা তুরস্কের একে পার্টি গঠনের প্রক্রিয়াটা দেখতে পারেন।

১২৪ জন মানুষকে নিয়ে তুরস্কের একে পার্টি গঠিত হয়। তাদের মধ্যে ১২১ জন দলের সভাপতি নির্বাচনের জন্যে ভোট প্রদান করেন। ৩ জন ভোটার দেশের বাইরে থাকায় ভোট দিতে পারেননি। ১২১ জনের মধ্যে অধিকাংশ ভোট পেয়ে এরদোয়ান একে পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হয়। সভাপতি নির্বাচনের ফলাফল সাংবাদিকদের সামনে প্রকাশ করা হয়। এবং সে অনুষ্ঠানের ভিডিও করা হয়, যা এখনো ইউটিউবে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের নতুন দলের সকল ক্ষেত্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন।

.......

বাংলাদেশে যারা নতুন রাজনীতি করবেন, তাঁদের কাছে আমার প্রাথমিক পাঁচটি চাওয়া।

১) বিনয়ী হবেন, বিরোধী চিন্তাকে সম্মান করবেন।

২) বিরোধী চিন্তার মানুষের বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করুন।

৩) সত্যবাদী হবেন। কথা ও কাজের শতভাগ মিল রাখুন।

৪) দেশের যাবতীয় দুর্নীতি ও সমস্যাগুলোর তথ্য হাজির করুন।

৫) দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে আপনাদের প্রজেক্টগুলো ভিডিও করে আমাদের কাছে প্রচার করুন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...