সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইস্তানবুল ও আংকারায় হেরে যাবার পর এরদোয়ানের বক্তব্য

এরদোয়ান মানুষ, তাঁর ভুল থাকতেই পারে। কিন্তু, এরদোয়ানের একটা ভুল থাকলে অন্য দশটা ভালো কাজ রয়েছে। যেমন ধরুন, তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনের দিন (৩১ মার্চ ১৯) এরদোয়ান যখন দেখলেন, তাঁর দল আনকরায় হেরে যাচ্ছে, তখন অনেক রাতে তিনি জনগণের সামনে একটি বক্তব্য দেন। সে বক্তব্য তিনি বলেননি যে, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, অথবা, অন্য কিছু। বরং তিনি তাঁর নেতাকর্মীদেরকে নিজেদের ভুল সংশোধন করার আহবান জানান। তাঁর বক্তব্যটা হুবহু তুলে দিচ্ছি, দেখুন –

“প্রিয় ভাইয়েরা, এই নির্বাচনে আমরা আমদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ না করার পিছনে একমাত্র কারণ হলো, দেশবাসীকে আমরা আমাদের কথা ভালোভাবে বুঝাতে পারিনি। দেশবাসীর হৃদয়ে আমরা ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারিনি বলে এমন ফলাফল হয়েছে বলে আমি মনে করি।

নির্বাচনী প্রচারণার জন্যে নির্ধারিত মাত্র ৫০ দিনে ৫৯ টি শহরে ও ৪৩ টি জেলায় জনসমাবেশ করে এবং ৯টি টেলিভিশনে সাক্ষাতকার দিয়ে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমে আমি দেশবাসীকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। তারপরেও যদি আমার কোনো ত্রুটি থাকে, তাহলে তা সংশোধন করার দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে।

আমারা জনগণ ও দেশবাসীর মাঝে কোনো ত্রুটি খোজার চেষ্টা করবো না। বরং, আমরা নিজেদের মধ্যে ত্রুটি খুঁজে বের করতে হবে। আগামীকাল সকাল থেকেই আমাদের ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করতে হবে, এবং তা সংশোধনের জন্যে কাজ শুরু করে দিতে হবে।

এখন নির্বাচন কমিশনার ফলাফল ঘোষণা করতেছেন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তা বলে ফেলুন। নির্বাচনের ফলাফল আমাদের পক্ষে আসুক বা বিপক্ষে আসুক, তা কোনো বিষয় নয়। কারণ, এটাই গণতান্ত্রিক সংগ্রাম। প্রিয় ভাইয়েরা, একটি বিষয় সবসময় মনে রাখবেন, প্রতিটি ঘটনার একটি ভালো দিক রয়েছে।

আমাদের নিজেদের হৃদয় থেকে জনগণের হৃদয়ে প্রবেশের পথে বাধাগুলো কি কি, সে হিসাব আমাদেরকেই করতে হবে, এবং এই বাধাগুলো দূর করার জন্যে যাবতীয় প্রচেষ্টা করার ব্যাপারে কেউ কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকতে পারবে না।

রাজনীতি মানে জনগণের সাথে একগুঁয়ে আচরণ করা নয়। জনগণকে ছোট করা বা অপমান করাও রাজনীতি নয়। বরং রাজনীতিকে আমরা শুধুমাত্র এবং একমাত্র দেশ ও জনগণের সেবা করার মাধ্যম মনে করি। এতদিন পর্যন্ত আমরা এই কাজটাই করেছি, এবং ভবিষ্যতেও আমরা তাই করবো।

কোনো ক্ষমতার সাথে যদি জনগণ না থাকে, তাহলে সে ক্ষমতা ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতন্ত্র এবং জুলুমে রূপ নেয়। এ কারণে আজ পর্যন্ত আমরা যত পদক্ষেপ নিয়েছি, সবসময় জনগণের সন্তুষ্টি ও সমর্থন চেয়ে এসেছি। ভবিষ্যতেও আমরা জনগণকে সাথে নিয়েই পথ চলবো।

আমি সবসময় বলি, আমি নিজে এবং আমাদের কেউই আমাদের অঙ্গীকারের চেয়ে বড় নয়। আমাদের কেউই তুরস্কের আগে নয়। এবং আমাদের কেউই পার্টির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা আমাদেরকে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা হলো পরিবর্তন। সামনের দিনগুলোতে দলের ভালোর জন্যে এবং দেশের ভালোর জন্যে অনেক কিছু পরিবর্তন করা হবে। নিজেদের পরিবর্তন করা ছাড়া দেশের পরিবর্তন সম্ভব নয়। প্রয়োজনে দলের ভিতরে এবং মন্ত্রদের মধ্যেও পরিবর্তন করতে হবে।

আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ, নির্বাচনী ফলাফল যাই হোক, কখনো দুঃখ পাবেন না, মন ছোট করবেন না। “আমরা এমন ফলাফল আশা করিনি” - এ ধরণের কথা বলবেন না। আমাদের দল শতকরা ৫২% ভোট পেয়েছে, এবং এই নির্বাচনের প্রথম দল হয়েছে একে পার্টি। অন্যরা এসব নিয়ে চিন্তা করুক, আমাদেরকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমাদের চিন্তা কেবল কিভাবে আরো ভালো করা যায়। এই নির্বাচনে আমাদের ত্রুটিগুলো কি ছিলো, তা অনুসন্ধান করে বের করা এবং তা সমাধান করে সামনে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের কাজ ইনশাল্লাহ।

এই ঠাণ্ডা রাতে যারা এখানে এসেছেন, সবাইকে পৃথক পৃথক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এবং আমি আবারো আল্লাহর প্রশংসা করছি, “হে আল্লাহ, তুমি আমাকে এমন সঙ্গীদের দান করার জন্যে তোমার যতই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না কেন, শেষ হবে না।"

_____

দেখুন নির্বাচনে হেরে যাওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু, হেরে যাবার পরে কিভাবে নিজেদের সমালোচনা করতে হয়, এবং কিভাবে জনগণকে সাহস দিতে হয়, সেটা জানাই নেতার কাজ। এ কারণেই এরদোয়ান সফল নেতা।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...