সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাষ্ট্রভাষা যদি থাকতে পারে, তাহলে রাষ্ট্রধর্ম থাকলে সমস্যা কি?

রাষ্ট্রভাষা যদি থাকতে পারে, তাহলে রাষ্ট্রধর্ম থাকলে সমস্যা কি?

ভাষা সৃষ্টি হয় ভৌগোলিক স্থানের ভিত্তিতে, ধর্ম সৃষ্টি হয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে। একটি অঞ্চলের সবার ভাষা একই হয়, কিন্তু একই অঞ্চলের সবার ধর্ম একই হয় না। যেমন, বাংলাদেশের নাগরিকরা সবাই বাংলা জানে, কিন্তু বাংলাদেশের সবাই মুসলিম নয়। তাই রাষ্ট্রের ভাষা হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের ধর্ম হতে পারে না।

একই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা একাধিক হতে পারে। কিন্তু, একই রাষ্ট্রের একাধিক ধর্ম হতে পারে না। যদি একই রাষ্ট্রের একাধিক রাষ্ট্রধর্ম থাকে, তাহলে সে রাষ্ট্রটি সঠিক অর্থে সেক্যুলার রাষ্ট্র হয়ে যায়।


একই ধর্মের ভেতর অনেকগুলো দল থাকে, যারা একে অপরকে নিজেদের ধর্ম থেকে বের করে দেয়। যেমন ধরুন, বাংলাদের কাদিয়ানীদেরকে অনেকেই মুসলিম মনে করেন না। অনেকে বাংলাদেশের শিয়াদেরকেও মুসলিম মনে করেন না। যদি 'ইসলামী রাষ্ট্র' প্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে কোন মাজহাব অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হবে? সুন্নী না শিয়া? হানাফি না সালাফি? তাবলিগি না জামায়াতি? কাদিয়ানী না দায়েশ? কাদের নিয়মানুযায়ী দেশ চলবে?

ধরুন, সুন্নীরা দেশের ক্ষমতায় আসলো, তাহলে কাদিয়ানীদের বা শিয়াদের অবস্থান কি হবে? তাঁদেরকে কি বাংলাদেশে থাকতে দেয়া হবে?

যদি তাঁদেরকে বাংলাদেশে থাকতে দেয়া হয়, তাহলে যে রাষ্ট্রে হিন্দু, খ্রিস্টান, শিয়া, কাদিয়ানী সবাই থাকবে, সে রাষ্ট্র 'ইসলামী রাষ্ট্র' হবে কিভাবে?

যদি সকল হিন্দুকে বাংলাদেশ থেকে বের করে দিয়ে একটি 'ইসলামী রাষ্ট্র' প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাহলে ভারতও কি তাদের সকল মুসলিমদের বের করে দিয়ে একটি 'হিন্দু রাষ্ট্র' গড়তে চাইবে না?

এমন অনেক প্রশ্নের সঠিক কোনো জবাব মিলবে না যদি আমরা 'ধর্মীয় রাষ্ট্র' প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে, আমরা যদি ইসলাম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে একটা কল্যাণ রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারি, তাহলে সেখানে সকল ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষ তাদের চিন্তা চর্চা করতে পারবে, কিন্তু অন্য ধর্ম বা বিশ্বাসের মানুষকে আঘাত করতে পারবে না।

আমাদের দেশটি একটি 'কল্যাণ রাষ্ট্র' না, এবং এখানে সঠিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ চর্চা হয় না। ফলে বাংলাদেশে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় নামের এক হিন্দু মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করার সুযোগ পাচ্ছে।

যাই হোক, রাষ্ট্রধর্ম থাকার সমস্যা এটাই। মুসলিমরা চাইবে তাদের ধর্মটি রাষ্ট্রধর্ম হোক, হিন্দুরা চাইবে তাদের ধর্মটা রাষ্ট্রধর্ম হোক। একসাথে দুটি ভাষা রাষ্ট্রভাষা হতে পারে, কিন্তু দুটি ধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হতে পারে না। যেমন, একই ব্যক্তি অনেক ভাষা শিখতে পারেন, কিন্তু অনেক ধর্মের অনুসরণ করতে পারেন না।

সুতরাং এ থেকে মুক্তি পাবার জন্যে এমন একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, যেখানে সকল ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা পাবেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...