সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আল ফারাবির কল্যাণ রাষ্ট্র

নতুন দল একটি কল্যাণ রাষ্ট্র চায়, যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকেও উন্নত রাষ্ট্র।

একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মুসলিম দার্শনিক আল ফারাবী বলেন –

يكون كل واحد من أهلها مطلق خال بنفسه يعمل ما يشاء، أهلها يتساوون وسنتهم أن لا فضل لإنسان على إنسان في شيء أصلاً. ويكون أهلها أحرارًا يعملون ما يشاؤون ولا يكون لأحد على أحد منهم ولا من غيرهم سلطان إلا أن يعمل ما تزول به حريتهم.
[الفارابي : "السياسة المدنية"، تحقيق فوزي متري النجار ط 1 المطبعة الكاتوليكية بيروت في 1964 ص 99]

অর্থাৎ,

“একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের অধিবাসীরা প্রত্যেকে নিজেই নিজের অধীনে থাকবে, এবং সে যা ইচ্ছে, তা করতে পারবে। সে রাষ্ট্রের অধিবাসীরা সবাই সমান মর্যাদার অধিকারী হবে, কোনও একজন মানুষ অন্য মানুষের উপর বিশেষ মর্যাদা প্রাপ্ত হবে না। এর অধিবাসীরা সবাই স্বাধীন, কেউ কারো উপর কর্তৃত্ব করতে পারবে না। তবে, কেউ কারো স্বাধীনতা হরণ করলে তখন ভিন্ন কথা”।

এখানে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট।

১) আল ফারাবীর কল্যাণ রাষ্ট্রে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার পাবে।

২) ধর্মীয় কারণে কেউ অধিক সুযোগ-সুবিধা পাবে না, বরং রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমান সুবিধা পাবেন।

আল ফারাবীর “জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র”-এর ধারণা বর্তমান গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক রাষ্ট্রের চেয়েও অনেক বেশি উন্নত। বাংলাদেশের নতুন দলটি আল ফারাবির 'কল্যাণ রাষ্ট্র' গঠন করার চেষ্টা করবে বলে আমার বিশ্বাস।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...