সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ব্ল্যাক হোলের ধারণা রয়েছে আল কোর'আনে

গতকাল প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক হোলের ছবি দেখতে পেলো বিশ্বের মানুষ। ব্ল্যাকহোল হলো এমন একটি স্থান যেখানে তারকারা গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনকি যে আলোর সাহায্যে আমরা সব কিছু দেখি, সে আলোও ব্ল্যাক হোলের কাছে এসে অদৃশ্য হয়ে যায়। এ কারণেই এর নাম দেয়া হয়েছে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর

যদিও গতকাল প্রথম আমরা ব্ল্যাক হোলের ছবি দেখতে পেয়েছি, কিন্তু, এই ব্ল্যাক হোলের আইডিয়াটা অনেক আগেই আমরা কোর'আন থেকে জেনেছি।

কোর'আনে বলা হয়েছে -

وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى

"তারকা বা নক্ষত্রের শপথ, যখন তা অদৃশ্য বা হাওয়া হয়ে যায়।" [সূরা ৫৩/নাজম - ১]

অর্থাৎ, ব্ল্যাক হোলে যেসব তারকা পতিত হয়, সেসব তারকার শপথ করা হচ্ছে এখানে।

এরপর সূরা ওয়াকিয়াহতে নক্ষত্র পতিত হবার স্থানের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

لَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ * وَإِنَّهُ لَقَسَمٌ لَوْ تَعْلَمُونَ عَظِيمٌ

"অতএব, আমি তারকারাজির পতিত হবার স্থানের (ব্ল্যাক হোলের) শপথ করছি। নিশ্চয় এটা একটা মহা শপথ, যদি তোমরা জানতে।" [সূরা ৫৬/ওয়াকিয়াহ - ৭৫-৭৬]

উপরোক্ত আয়াতে যে মাওয়াকিআ (مَوَاقِعِ) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, তার অর্থ হলো পতিত হবার স্থান। কোর'আনে অন্য একটি স্থানেও এ শব্দটি রয়েছে।

وَرَأَى الْمُجْرِمُونَ النَّارَ فَظَنُّوا أَنَّهُمْ مُوَاقِعُوهَا وَلَمْ يَجِدُوا عَنْهَا مَصْرِفًا

"অপরাধীরা আগুন দেখে ধারণা করবে যে, তারা সেখানে পতিত হবে। এবং এখান থেকে তারা রাস্তা পরিবর্তন করতে পারবে না।" [সূরা ১৮/কাহফ - ৫৩]

সূরা ওয়াকিআর ৭৫ নং আয়াতে "মাওয়াকিআ" শব্দের দ্বারা তারকাদের পতিত হবার স্থানের কথা বলা হয়েছে, আর সূরা কাহাফের ৫৩ নং আয়াতে অপরাধীদের পতিত হবার স্থানের কথা বলা হয়েছে। অপরাধীরা যেমন জাহান্নামের আগুন থেকে পালিয়ে যেতে পারে না, তেমনি ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি আসলে কোনো নক্ষত্র ও তারকাও পালিয়ে যেতে পারে না।

এছাড়া, সূরা তাকভীর সম্পূর্ণটাই ব্ল্যাক হোলের ধারণা দিয়েছে।

فَلَا أُقْسِمُ بِالْخُنَّسِ * الْجَوَارِ الْكُنَّسِ

"আমি শপথ করছি সেসব নক্ষত্রের, যারা পশ্চাতে সরে যায়, চলমান হয়, এবং অদৃশ্য হয়ে যায়।" [সূরা ৮১/তাকভীর - ১৫-১৬]

এভাবে কোর'আনের অসংখ্য আয়াত থেকে আমরা ব্ল্যাক হোলের ধরনা পেয়েছি, যদিও এই ব্ল্যাক হোলকে আমরা প্রথম গতকাল দেখতে পেয়েছি।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...