সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তুরস্ক সম্পর্কে আবুল হাসান আলী নদভী

তুরস্ক কেন মুসলিম জাতিসমূহের জন্যে অনুসরণযোগ্য আদর্শ এবং শ্রদ্ধা ও সম্মান পাবার যোগ্য, তা ব্যাখ্যা করেছেন আবুল হাসান আলী নদভী।

তাঁর মতে, "তুরস্ক-ই প্রথম মুসলিম দেশ যারা পশ্চিমা সভ্যতা, সংস্কৃতি ও আধুনিক জীবনদর্শনকে প্রকাশ্যে মোকাবেলা করতে হয়েছে।"

আলী নদভী বলেন, "যদি কোন অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি না হয়, তবে এখনও সম্ভাবনা আছে যে, তুর্কী জাতি ইসলামের পুনর্জাগণের জন্য উপকারী খেদমত করতে পারে, এবং সেখানে ইসলামের আবারো ফুলে ফলে সজ্জিত হবার সুযোগ হতে পারে।"

আলী নদভী আফসোস করেছেন যে, পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে মোস্তফা কামাল পাশা জনগণের সাথে সরকারের একটি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু, ঈমানের স্ফুলিঙ্গ এখনো জনগণের অন্তরে লুকায়িত আছে। যদি সামান্য একটি সুযোগ আসে, তাহলে মানুষের অন্তরে সেই ঈমানের স্ফুলিঙ্গ আবারো প্রজ্বলিত হবার জন্যে প্রস্তুত হয়ে আছে।

এ কথা ১৯৮০ সাথে আলী নদভী লিখেছেন, এবং ১৯৯৯ সালে তিনি মারা যান। তিনি তুরস্কের ভালো মানুষদের ক্ষমতা দেখে যেতে পারেননি। যদি দেখে যেতে পারতেন, তাহলে তিনি এখন আবার সবাইকে বলতেন, তুরস্ক তোমাদের জন্যে অনুকরণীয়।

সূত্র: ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব, আলী নদভী, পৃ - ৬৫, ৮০।



"১৯১৮ সালে জার্মানি ও তুরস্কের পরাজয়ের সঙ্গে এই মহাযুদ্ধ সমাপ্ত হলো। তুরস্কের ভূতপূর্ব মন্ত্রী ও নেতাগণ দেশ ছেড়ে চলে যতে বাধ্য হলেন, এবং মোস্তফা কামালের জন্যে রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেল।

ব্রিটিশ ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো ইস্তাম্বুল দখল করে নিল। আনাতোনিয়াতে ভীষণ অশান্তি সৃষ্টি হয়ে গেল। তখন শান্তি স্থাপনের জন্য মোস্তফা কামাল নির্বাচিত হলেন। তিনি গ্রীসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। যারা ইজমিরের উপর অধিকার স্থাপন করেছিল, ১৯১৯ সালে সাকারিয়ার যুদ্ধে তাদেরকে মোস্তফা কামাল ভীষণভাবে পরাজিত করলেন এবং গাযী উপাধি লাভ করেন।

অতঃপর আংগোরাতে এক স্বাধীন রাষ্ট্র স্থাপন করলেন। খিলাফত ও উসমানী রাজত্বের অবসানের ঘোষণা করলেন, এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করলেন। ১৯২৪ সালে তিনি প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন, এবং ঐ অবস্থায় ১৯৩৮ সালে ইন্তেকাল করেন।"

- সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব, পৃ - ৬৯



"যদি কোন অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি না হয়, তবে এখনও সম্ভাবনা আছে যে, তুর্কী জাতি ইসলামের পুনর্জাগণের জন্য উপকারী খেদমত করতে পারে, এবং সেখানে ইসলামের আবারো ফুলে ফলে সজ্জিত হবার সুযোগ হতে পারে।"

- আবুল হাসান আলী নদভী, ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব, পৃ - ৮০

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...