সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষা সমস্যা

আমরা যখন আলীয়া মাদ্রাসায় পড়েছিলাম, তখন আমাদের সিলেবাসের সাথে স্কুলের সিলেবাসের যথেষ্ট পার্থক্য ছিলো। আমাদের পাঠ্যপুস্তকগুলো ছিলো ইসলামী ভাবধারার ও ইসলামী চেতনার; আর স্কুলের পাঠ্যপুস্তকগুলো ছিলো সেক্যুলার ভাবধারার ও সেক্যুলার চেতনার। কিন্তু বর্তমানে আলীয়া মাদ্রাসা ও স্কুলে একই পাঠ্যপুস্তক পড়ানো হয়। যেমন, স্কুলে যে শারীরিক শিক্ষার বই পড়ানো হয়, ঠিক সেটাই মাদ্রাসায় পড়ানো হয়। স্কুলের বাংলা বইয়ে যে গল্প-কবিতা পড়ানো হয়, ঠিক একই গল্প-কবিতা মাদ্রাসায় পড়ানো হয়। আগে মাদ্রাসার বাংলা বইয়ে হামদ-নাত-গজল ছিলো, আর এখন সেখানে সেক্যুলার কবিতা দিয়ে ভরপুর। আগে মাদ্রাসায় ইতিহাসের (বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়) বইয়ে ইসলামের ইতিহাস পড়ানো হতো, এখন সেখানে ইসলামের ইতিহাস বলে কোনো কিছুই নেই। এখন মাদ্রাসার বিজ্ঞান বইয়েও ইসলাম বিরোধী বিবর্তনবাদ পড়ানো হয়।


বর্তমানে স্কুল ও মাদ্রাসার ১০টি বই পুরোপুরি এক ও অভিন্ন, একটি অক্ষরও ব্যতিক্রম নেই। স্কুল আর মাদ্রাসার মধ্যে পার্থক্য কেবল একটি বইয়ে। স্কুলে ইসলাম/হিন্দু শিক্ষার পরিবর্তে মাদ্রাসার আকাইদ ও ফিকহ পড়ানো হয়। এ ছাড়া মাদ্রাসায় অতিরিক্ত আরো দুটি বই পড়ানো হয় ১) আরবি ২) কোর’আন। অর্থাৎ, স্কুল ও মাদ্রাসার সিলেবাস প্রায় ১০০% এক ও অভিন্ন; কিন্তু কেবল নামের কারণে মাদ্রাসায় অতিরিক্ত দুটি বই বেশি পড়ানো হয়।

আলীয়া মাদ্রাসার পাঠ্যবইগুলোতে নবীদের বিস্তারিত জীবনী ও শিক্ষা, ইসলামের ইতিহাস, সাহাবীদের ইতিহাস, তাফসীর, হাদিস, বাংলাদেশে ইসলাম আগমনের ও শাসনের ইতিহাস, ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতি, ইসলামী দর্শন, সুন্দর ভাবে কোর’আন পড়া বা কারীয়ানা, সুন্দরভাবে কোর’আন লিখা বা ক্যালিগ্রাফি, মসজিদ-মাদ্রাসা ও ইসলামী সভ্যতার চিত্রাঙ্কন, হামদ-নাত-গজল, ইসলামের সাথে অন্য ধর্মের তুলনামূলক পাঠ, মসজিদে বক্তব্য দেয়ার শিক্ষা, কিংবা নামাজ-রোজা নিয়ে বিস্তারিত কোনো শিক্ষাই নেই। অর্থাৎ, আলীয়া মাদ্রাসার সিলেবাসে এখন ইসলাম শিক্ষা বলে আর তেমন কিছুই নেই।

যে প্রতিষ্ঠানের ১০টি বই সেক্যুলার চেতনা ও সেক্যুলার মতাদর্শের ভিত্তিতে লিখা হয়েছে, আর কেবল দুইটা বই ধর্ম শেখার জন্যে রাখা হয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানকে এখন আর কোনো ভাবেই মাদ্রাসা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বলা যায় না। বাংলাদেশের আলীয়া মাদ্রাসাগুলো এখন হয়ে গেছে টুপি-পাঞ্জাবি ও নিকাব-বোরকা পরা একটি সেক্যুলার প্রতিষ্ঠান। কওমী মাদ্রাসাগুলোকেও সরকার সেক্যুলার প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...