সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলামে শাফায়াতের ধারণা - পক্ষে ও বিপক্ষের যুক্তি

আখিরাতে কেউ কারো জন্যে আল্লাহর কাছে সুপারিশ বা শাফায়াত করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।

মুতাজিলাদের মতে, আখিরাতে কেউ কারো জন্যে শাফায়াত বা সুপারিশ করতে পারবে না। তাঁদের যুক্তি হলো, আল্লাহ তায়ালা খুবই ন্যায় পরায়ণ। সুতরাং যে যেমন অপরাধ করেছে, সে তেমন শাস্তি পেতেই হবে। কেউ কারো জন্যে সুপারিশ করে কোনো লাভ নেই।

অন্যদিকে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতে মতে, নবী-রাসূল ও নেককার বান্দাগণ পাপী বান্দাদের জন্যে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারবেন। তাঁদের যুক্তি হলো, আল্লাহ তায়ালা খুবই দয়ালু। তাই তিনি যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। এবং আল্লাহর দয়া তাঁর কঠোরতার চেয়েও শক্তিশালী।

এখানে শাফায়াতের ধারণা দুই দলের কাছে দুই রকম।

মুতাযিলাদের যুক্তির পিছনে সামাজিক অনেক কারণ আছে। খ্রিস্টানরা মনে করেন, ঈসা (আ) সকল খ্রিস্টানের পাপের বোঝা বহন করবেন, এবং সবাইকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। আরবের মুশরিকরা মনে করতো, তারা যেসব মূর্তির পূজা করে, সেসব মূর্তি আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করে তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, যতই তাদের পাপ থাকুক না কেন। ভণ্ড পীরের মুরিদরা মনে করেন, তাদের পীর সাহেব তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। শাফায়াতের এমন ধারনার কারণে মানুষ পাপ কাজ করতে থাকে, এবং সুপারিশের আশায় বসে থাকে। এ কারণে, মুতাযিলা বা যুক্তিবাদী মানুষরা বলেন, আখিরাতে কেউ কারো জন্যে কোনো সুপারিশ করতে পারবেন না। সবাই নিজের পাপ-পুণ্যের ফল নিজেকেই ভোগ করতে হবে।

অন্যদিকে আহলে সুন্নাতের মতে, শাফায়েত মানে দোয়া বা প্রার্থনা। দুনিয়াতে যেমন একে অপরের জন্যে দোয়া করতে পারে, তেমনি আখিরাতেও নেককার লোকেরা নিজেদের জন্যে, নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের জন্যে এবং পাপী লোকদের জন্যে দোয়া করতে পারবে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন না।

শাফায়াতের পক্ষ ও বিপক্ষ উভয়ে দিকে কোর'আন ও হাদিস থেকে অনেক দলীল দেয়া যায়। যে শাফায়াতের মধ্যে শিরক-বিদায়াত ও পাপ কাজের সুযোগ থাকে, সে শাফায়াতের বিরুদ্ধে অনেক কোর'আনের আয়াত ও হাদিস রয়েছে। আবার, যে শাফায়াত আল্লাহর দয়া ও করুণার প্রকাশ পায়, সে শাফায়াতের পক্ষেও অনেক কোর'আনের আয়াত ও হাদিস রয়েছে। এখানে আসল ব্যাপার হলো, শাফায়াতকে কে কিভাবে বুঝেছে, তা। শাফায়াত অর্থ বুঝের ভিত্তিতেই দুটি দল পক্ষে বিপক্ষে দুই দিকে মত দিয়েছেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...