সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলামী রাষ্ট্রের রূপরেখা

কোর'আন বা হাদিসে সুনির্দিষ্ট কোনো রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেই। 'ইসলামী রাষ্ট্র' হলো একটি কল্পনা, যা সবাই সবার মতো ধারণা করে নেয়। যেমন, আইএস এর 'ইসলামি রাষ্ট্রের' সাথে মিশরের ইখওয়ানের 'ইসলামি রাষ্ট্রের' ধারণার মিল নেই। ইখওয়ানের রাষ্ট্র চিন্তার সাথে তুরস্কের মুসলিমদের রাষ্ট্র চিন্তার মিল নেই। সৌদি আরবের 'ইসলামি রাষ্ট্রের' সাথে ইরানের 'ইসলামি রাষ্ট্রের' ধারণার মিল নেই। সবাই নিজের মাজহাব ও চিন্তা অনুযায়ী 'ইসলামী রাষ্ট্রের' ধারণা কল্পনা করে।

কেবল 'ইসলামী রাষ্ট্র' নয়, সেক্যুলারিজম, গণতন্ত্র, ক্যাপিটালিজম এসবের ধারনাও একেক দেশে একেক রকম। কোর'আনে রাজতন্ত্রের ধারণা যেমন আছে, তেমনি গণতন্ত্রের ধারনাও আছে। পুরাতন রাজনীতিকে সংস্কারের পদ্ধতি যেমন আছে, তেমনি সম্পূর্ণ নতুন রাজনীতির উদাহরণও আছে। কোনো দেশে কিভাবে রাজনীতি হবে, কিংবা কিভাবে রাষ্ট্র গঠন হবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো রাষ্ট্রে ইনসাফ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত আছে কিনা। যে দেশে যতবেশি ন্যায় বিচার রয়েছে, সে দেশটা ততবেশি ইসলামিক।


ইসলামে রাজতন্ত্রের উদাহরণ হলেন দাউদ (আ)-এর পরে তাঁর পুত্র সোলাইমান (আ)-এর ক্ষমতা গ্রহণ। ইসলামে গণতন্ত্রের উদাহরণ হলেন মুহাম্মদ (স)-এর পরে আবু বকর (রা)-এর ক্ষমতা গ্রহণ। অমুসলিমদের রাজনীতিকে সংস্কার করনের উদাহরণ হলেন ইউসুফ (আ)। নতুন রাজনীতির উদাহরণ হলেন মূসা (আ)। অর্থাৎ, একেক নবী একেক পদ্ধতিতে রাজনীতি করেছেন। রাজনীতি করার ও ক্ষমতা গ্রহণ করার পদ্ধতি একেক নবীর একেক রকম ছিলো। এমনকি খিলাফতে রাশেদার চারজন খলিফার ক্ষমতা গ্রহণ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ধরণও ভিন্ন ভিন্ন ছিলো। কিন্তু, সবার ক্ষেত্রে একটা জিনিস অবশ্যই ছিলো, তা হলো ইনসাফ ও ন্যায়বিচার।

বর্তমান পৃথিবীতে কোনো রাষ্ট্র রাজতন্ত্র নাকি গণতন্ত্র, ইসলামী রাষ্ট্র নাকি কল্যাণ রাষ্ট্র, এটা দেখার বিষয় নয়। দেখার বিষয় হলো কোথায় কত বেশি ব্যক্তি স্বাধীনতা, ইনসাফ ও ন্যায় বিচার রয়েছে। দায়েশের মতো কেবল আইএস বা 'ইসলামী রাষ্ট্র' নাম দিয়ে যদি সেখানে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা না হয়, ভিন্ন চিন্তার মানুষের স্বাধীনতা না থাকে, তাহলে সে রাষ্ট্র কোনোভাবেই 'ইসলামী রাষ্ট্র' হবে না।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...