সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঈসা আ কি মারা গিয়েছেন?

ঈসা (আ) কি মারা গিয়েছেন?

কোর'আনের অন্তত দুটি আয়াতে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।

১) আল্লাহ তায়ালা রাসূল (স)-কে বলেন -

وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِنْ قَبْلِكَ الْخُلْدَ أَفَإِنْ مِتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ

"আমি আপনার পূর্বে কোনো মানুষকেই অনন্ত জীবন দান করিনি। যদি আপনার মৃত্যু হয়, তাহলে কি তারা (বা অন্যরা) চিরজীবী হয়ে থাকবে?" [সূরা ২১/আম্বিয়া - ৩৪]

দেখুন, সূরা আম্বিয়া বা নবীদের সূরায় আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (স)-কে বলছেন, মুহাম্মদ (স)-এর পূর্বে সকল মানুষ মৃত্যু বরন করেছেন, কেউ চিরজীবী নন। এবং মুহাম্মদ (স)-এর পরেও সবাই মারা যাবেন, কেউ চিরজীবী থাকতে পারবেন না। ঈসা (আ) যেহেতু মুহাম্মদ (স) এর পূর্বের মানুষ, সুতরাং, এ আয়াত অনুযায়ী ঈসা (আ) মৃত্যু বরণ করেছেন।

২) মুহাম্মদ (স)-এর মত আল্লাহ তায়ালা ঈসা (আ)-কেও তাঁর মৃত্যুর সংবাদ দিয়ছেন।

يَا عِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا وَجَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ

"হে ঈসা! আমি তোমাকে মৃত্যু প্রদান করছি, এবং তোমাকে আমার নিকট তুলে নিচ্ছি। এবং যারা কুফরি করে, তাঁদের থেকে তোমাকে পবিত্র করে নিচ্ছি। আর তোমার অনুসারীদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের উপর প্রাধান্য দিচ্চি।" [সূরা ৩/আলে ইমরান - ৫৫]

দেখুন, এখানে আল্লাহ তায়ালা (مُتَوَفّ۪يكَ) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যার অর্থ ভবিষ্যতে নয়, বরং শীঘ্রই তোমাকে মৃত্যু প্রদান করবো।

এ আয়াতে আগে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, পরে আল্লাহর কাছে তুলে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, শারীরিক মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ঈসা (আ)-এর রূহ তাঁর কাছে তুলে নিয়ে গিয়েছেন।

উপরোক্ত দুটি আয়াত থেকে প্রমাণ হয় যে, ঈসা (আ) মৃত্যু বরণ করেছেন। আল্লাহু আলাম।
___________

মন্তব্যকারীদের প্রশ্ন -১

এখানে توفي শব্দটি منام অর্থ ব্যবহার হয়েছে। যেভাবে তা মানাম অর্থে ব্যবহার হয়েছে কোরানের অন্যান্য আয়াতে।যেমন আল্লাহ তা’লা বলেছেন,
هو الذي يتوفاكم بالليل
অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে,
الله يتوفي الأنفس حين موتها والتي لم تمت في منامها.

উত্তর -১

সূরা বাকারার ২৩৪, ২৪০, আলে ইমরান ১৯৩, নিসা ৯৭, আনয়াম ৬০, ৬১, আরাফ ৩৭, ১২৬, আনফাল ৫০, ইউনুস ৪৬, ১০৪, রাদ ৪০, নাহল ২৮, ৩২, ৭০, হজ ৫, সেজদা ১১, জুমার ৪২, মুমিন ৬৭, ৭৭ আয়াতগুলোতে ( و ف ي ) শব্দমূল থেকে আগত ওফাত শব্দের অর্থ মৃত্যু বুঝানো হয়েছে।

মন্তব্যকারীদের প্রশ্ন - ২

তাফসির বলছে, আরবিতে 'তুলে নেওয়া' অর্থে যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা শারীরিকভাবে তুলে নেওয়া বুঝায়। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?

উত্তর - ২

সূরা বাকারার ২৫৩ নং আয়াত দেখুন। এখানে رَفَعَ ক্রিয়াপদের কি অর্থ করা হয়েছে, দয়া করে দেখবেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...