সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সব দলকে কি এক হবার দরকার?

অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, "আহা! সব ইসলামী দল যদি এক হয়ে যেতো। কত ভালো হতো।"

এই আক্ষেপকে যদি অন্যভাবে বলি তাহলে তা এমন, "আহা! গাছের সব পাতা যদি একটা বড় পাতা হয়ে যেতো।" অথবা, "আহা! পৃথিবীর সব মসজিদ যদি একটা বড় মসজিদ হয়ে যেতো।" কিংবা, "আহা! সব ইসলামী স্কুল বা মাদ্রাসা মিলে যদি একটা বড় মাদ্রাসা হয়ে যেতো।"

এই আক্ষেপটা তেমন কাজের নয়। কারণ, একজন মানুষের চেহারার সাথে যেমন অন্য মানুষের চেহারার ১০০% মিল নেই, তেমনি একজন মানুষের চিন্তার সাথেও অন্য মানুষের চিন্তার ১০০% মিল নেই। সুতরাং, প্রতিটি মানুষের চিন্তার পার্থক্য থাকবেই। একইভাবে, প্রতিটি মানুষের যেমন দুটি হাত আছে, তেমনি প্রতিটি মানুষের কিছু চিন্তা একই ধরণের।


মুসলিম উম্মাহকে একটি গাছের সাথে তুলনা করি। একটি গাছের অনেক ডাল-পালা এবং অসংখ্য পাতা থাকলেও গাছের মূল কাণ্ড কিন্তু একটাই। তেমনি, মুসলিম উম্মাহর অনেক দল-উপদল কিংবা অনেক ধরণের মতাদর্শ থাকলেও সবার বিশ্বাস কিন্তু একই। সবাই এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেন। সুতরাং, ভিন্ন চিন্তার কারণে কোনো দল-উপদল তৈরি হওয়াটা সমস্যা নয়। সমস্যা হলো, যখন আমরা একটি গাছে কেবল একটি ডাল থাকা উচিত মনে করে অন্য ডালগুলোকে গাছের মূল কাণ্ড থেকে কেটে ফেলতে চাই। অর্থাৎ, যখন নিজের দলকে একমাত্র 'সহীহ ইসলামী দল' মনে করে অন্য দলগুলোকে ইসলাম থেকে বাদ দিতে চাই, তখনি সমস্যার শুরু হয়।

একটি দেশে যেমন অনেক মসজিদ ও অনেক মাদ্রাসা হওয়া স্বাভাবিক, তেমনি একটি দেশে অনেক ইসলামী দল হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...