সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভুল করা, পাপ করা ও অন্যায় করার মাঝে পার্থক্য

ভুল করা, পাপ করা, এবং অন্যায় করা - এ তিনটি কাজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

ভুল করা মানে কোনো কাজের সঠিক নিয়ম না জেনে, সঠিক মনে করে বেঠিকভাবে কোনো কাজ করা। অর্থাৎ, যে কাজের উদ্দেশ্য সৎ, কিন্তু পদ্ধতিটা সঠিক নয়, তাকে আমরা ভুল কাজ বলি। মানুষের সকল ভুল মাপ করে দেয়ার কথা কোর'আনে বলা হয়েছে। কিন্তু কেউ ভুলকে ভুল জানার পরেও একই ভুল বারবার করতে থাকলে সেটা পাপে পরিণত হয়।

পাপ করা মানে কোনো কাজের সঠিক নিয়মটা মানুষ জানে, কিন্তু, ব্যক্তিস্বার্থে সঠিক নিয়মে কাজটা না করে ভিন্ন নিয়মে কাজটা করা। অর্থাৎ, কোনো কাজের পদ্ধতিটা সঠিক বা ভুল যেমনি হোক, যদি উদ্দেশ্য অসৎ থাকে, তখন তাকে পাপ কাজ বলে। পাপ কাজ সমাজের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা পাপী ব্যক্তিকে হয়তো ক্ষমা করবেন, অথবা, এই দুনিয়ায় বা আখিরাতে শাস্তি দিবেন; কিন্তু পাপী ব্যক্তির কোনো সামাজিক শাস্তি সম্ভব নয়। ইমাম আবু হানিফার মতে, নবীদের দ্বারা ছোট বা বড় কোনো পাপ সংগঠিত হয়নি, কিন্তু কিছু ভুল-ভ্রান্তি সংঘটিত হয়েছে।

অন্যায় কাজ সমাজের সাথে সম্পর্কিত। কোনো ব্যক্তির কাজে যদি সমাজ বা অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতি হয়, তাহলে তাকে অন্যায় কাজ বলে। আর এই অন্যায় কাজের শাস্তি সামাজিকভাবে প্রদান করতে হয়।

পৃথিবীর অল্প কিছু মানুষ অন্যায় করে, বেশ কিছু মানুষ পাপ করে, আর সকল মানুষ ভুল করে।

সূত্র

{وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا} [الأحزاب: 5]

{رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا } [البقرة: 286]

والأنبياء عَلَيْهِم الصَّلَاة وَالسَّلَام كلهم منزهون عَن الصَّغَائِر والكبائر وَالْكفْر والقبائح وَقد كَانَت مِنْهُم زلات وخطايا
[الفقه الأكبر ص: 37]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...