সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মানুষ ও আল্লাহ, কে কার থেকে গুণ নিয়েছে?

মানুষ তাদের গুণাবলি দিয়ে একজন স্রষ্টা বানিয়ে নিয়েছে? নাকি, স্রষ্টা মানুষকে তাঁর গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেছেন? - এ প্রশ্নটি অনেক পুরাতন।

নাস্তিকদের যুক্তি হলো – মানুষ তাদের গুণাবলি দিয়ে একজন স্রষ্টা বানিয়ে নিয়েছে। যেমন, একটি ছাগল মনে করে, তাদের প্রভু হবে ছাগলদের গুণে গুণান্বিত; একটি গরু মনে করে, তাদের প্রভু হবে গরুদের গুণে গুণান্বিত। তেমনি, মানুষ মনে করে, তাদের প্রভু মানুষের গুণে গুণান্বিত। অর্থাৎ, আল্লাহ বলে আসলে কিছু নেই। মানুষ নিজেই মানুষের গুণাবলি দিয়ে একটা আল্লাহ বানিয়ে নিয়েছে।


নাস্তিকদের এ কথার জবাব দেন ইবনে আরাবী। তাঁর মতে, কোনো গরু-ছাগলকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসাবে পৃথিবীতে পাঠাননি। বরং, মানুষকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যেহেতু মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি, তাই আল্লাহ তাঁর গুণাবলি দিয়েই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। মানুষের উচিত আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়া; এবং আল্লাহ রঙে রঙিন হওয়া।[আল কোর’আন - ]

মানুষ তাদের গুণাবলি দিয়ে একজন স্রষ্টা বানিয়ে নেয়নি, বরং, স্রষ্টা নিজেই তাঁর গুণাবলি দিয়ে মানুষকে তৈরি করেছেন।

[ইবনুল আরাবী, ফুসুলুল হিকাম]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...