সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইমাম আবু হানিফার নামে একটি বানোয়াট গল্প

ইমাম আবু হানিফার নামে অনেক কিছু বলা হয়, যার সাথে ইমাম আবু হানিফার কোনো সম্পর্ক নেই।

যেমন, ইমাম আবু হানিফার নাম কেন নোমান বিন সাবিত থেকে 'আবু হানিফা' হলো, তা নিয়ে একটা গল্প আছে। অথচ গল্পটা সম্পূর্ণ বানোয়াট গল্প।

প্রথমে গল্পটা পড়ে দেখুন।

//একবার ইরাকের কয়েকজন মহিলা ইমাম আযম আবু হানিফা (রহঃ) এর কাছে এসে প্রশ্ন করলেন, একজন পুরুষ যদি একত্রে চারজন স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে তাহলে একজন মহিলা একত্রে দুজন স্বামী গ্রহণ করতে পারেনা কেন? আবু হানিফা তখন এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ হলেন। তিনি তখন বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে উক্ত ঘটনাটি নিজ কন্যা হানিফার নিকট বললেন। সে বলল, "আব্বা! আমি যদি এর সমাধান দিতে পারি তাহলে আমার নামটি আপনার নামের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। প্রস্তাবে রাজি হয়ে আবু হানিফা মহিলাদেরকে স্বীয় কন্যার নিকট পাঠালেন। মেয়ে হানিফা আগত সকল মহিলার হাতে এক গ্লাস করে দুধ দিয়ে সকলের দুধ একত্রে একটি পাত্র রাখার জন্য বললেন। কিছুক্ষণ পর বললেন আপনাদের যার যার দুধ আলাদা করে নিয়ে নেন। মহিলারা বললো - "এটা কি করে সম্ভব?" হানিফা তখন বললেন, "তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে একজন মহিলার একাধিক স্বামী থাকার ফলে যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে, তখন উক্ত সন্তান কোন স্বামীর, এটা কিভাবে চিনা যাবে আপনারাই বলুন।" একথা শুনে মহিলারা আবু হানিফার কন্যা হানিফার বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করে প্রস্থান হলেন।
অতঃপর ওয়াদানুযায়ী ইমাম নোমান ইবনে সাবিত নিজ নামের সাথে উনার কন্যার নাম সংযুক্ত করলেন। তাঁর নতুন নাম হল "আবু হানিফা"। অর্থাৎ হানিফার পিতা। সেই থেকে ইতিহাসের পাতায় পাতায় পিতা ও কন্যার নাম মুদ্রিত হয়ে গেল।//

গল্পে সুন্দর করে ইমাম আবু হানিফার নামকরণের পিছনে তাঁর কন্যার কথা উল্লেখ করা হলো। অথচ, ইমাম আবু হানিফার কোনো মেয়েই ছিলো না।

আবু হানিফা শব্দের অর্থ হানিফার বাবা। এর মানে এই নয় যে, সত্যি সত্যি তিনি হানিফা নামের এক কন্যার বাবা ছিলেন। আবু হানিফা নামটা হলো ইমাম নোমান বিন সাবিতের একটি উপনাম। যেমন, হজরত আয়েশা (রা)-এর উপনাম উম্মে আব্দুল্লাহ বা আব্দুল্লাহর মা; অথচ আয়েশা (রা)-এর কোনো সন্তান ছিলো না।

মূলত আবু হানিফা উপনামটা এসেছে হানিফ শব্দ থেকে। ইব্রাহীম (আ)-এর ধর্মের নাম ছিলো হানিফ ধর্ম। যারা একনিষ্ঠভাবে এবং শিরক মুক্তভাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তাদেরকে হানিফ বা হানিফা বলা হতো। ইমান আবু হানিফা যেহেতু তাওহীদ ও আকীদা বিষয়ে অনেক সমস্যার সমাধান দিয়েছেন, এবং অনেক হানিফ তাঁর অনুসরণ করেছিলেন, তাই তাঁকে আবু হানিফা নামে ডাকা হতো।

এ তো গেল নাম, ইমাম আবু হানিফার নামে অনেক ফতোয়া দেয়া হয়, যার সাথে ইমাম আবু হানিফার কোনো মিল নেই।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...