সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুদের জন্যে আমরাও কিভাবে দায়ী?

সুদ দেয়া ও নেয়াকে কোর'আনে হারাম বলা হয়েছে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সূদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। প্রশ্ন হলো, সুদের বিরুদ্ধে আমরা কিভাবে যুদ্ধ করতে পারি?

সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রথম উপায় হলো নিজে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। কারণ, সুদের সাথে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে সমাজে মানুষ যতবেশি একে অপরকে অবিশ্বাস করে, সে সমাজে সুদের প্রচলন ততবেশি হয়।

ধরুন, কারো থেকে আমি ৫০০০ টাক ধার নিলাম। যদি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে টাকার মালিককে আমি টাকাটা দিয়ে দিতে পারি, তাহলে টাকার মালিকের মনে এই বিশ্বাস জন্মাবে যে, মানুষ টাকা ধার নিলে সময় মতো টাকা ফিরত দেয়। পরবর্তীতে, টাকার মালিক আরেকজনকে টাকা ধার দিতে কোনো আপত্তি করবেন না। এভাবে কোনো সমাজের মধ্যে যখন বিশ্বাস, ভালোবাসা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিয়ম থাকবে, তখন মানুষকে ব্যাংক থেকে সুদের বিনিময়ে টাকা ধার নিতে হবে না। কিন্তু, কেউ যখন কারো থেকে টাকা ধার নিয়ে সময় মতো ফিরত দেয় না, তখন টাকার মালিক একজন মুসলিম ব্যক্তির থেকেও বেশি বিশ্বাস করে ইহুদিদের তৈরি ব্যাংক ব্যবস্থাকে। তখনি শুরু হয় সুদের খেলা, সুদের মেলা।


কখনো আমরা যদি কারো থেকে টাকা ধার নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে টাকা ফিরিয়ে দিতে না পারি, তখন বুঝতে হবে আমরা সুদের প্রচলনকে সাহায্য করছি। একইভাবে কেউ যদি সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চায়, তাহলে প্রথমত নিজের প্রতিশ্রুতিকে সবসময় রক্ষা করতে হবে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...