সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোন ধরণের কালাম চর্চা করা যাবে, কোনটা যাবে না - ইমাম গাজালী

ইমাম গাজালির মতে, কালাম বা বিতর্ক শাস্ত্র প্রধানত দুই প্রকার।

১) অমুসলিমদের বিরুদ্ধে ইসলামের সত্যায়নের জন্যে কালাম।
২) আল্লাহর আকার আকৃতি কেমন, তা প্রমাণ করার জন্যে কালাম।

প্রথম প্রকারের কালামকে ইমাম গাজালি বলেছেন, এটা হলো সকল জ্ঞানের প্রধান। কারণ, আল্লাহ ও রাসূল (স)-কে সত্যায়ন করতে না পারলে তাফসীর, হাদিস, ফিকহ, তাসাউফ কোনো কিছুর-ই আর মূল্য থাকে না। কারণ, যে আল্লাহকে বিশ্বাস করেন না, তার কাছে হাদিসের কোনো মূল্য নেই। প্রথম প্রকারের কালাম বা তর্ক শাস্ত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে ইমাম গাজালি তাঁর মুস্তাসফা গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

দ্বিতীয় প্রকারের কালামকে ইমাম গাজালি নিন্দনীয় বলেছেন। যেমন, আল্লাহর হাত আছে কি নেই, তিনি কি সাকার না নিরাকার, এসব বিতর্ক হচ্ছে এই প্রকারের বিতর্ক। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা গায়েব বা অদৃশ্য, সুতরাং, আল্লাহ তায়ালা নিজের সম্পর্কে যতটুকু বলেছেন, এর বাইরে প্রতিটি শব্দই ভুল হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং, এ ধরণের যুক্তি-তর্ক নিয়ে পড়ে থাকাকে ইমাম গাজালি নিন্দনীয় বলেছেন। এ ধরণের কালামকে নিন্দা করে ইমাম গাজালি তাঁর এহইয়াউ উলুমুদ্দিন গ্রন্থে বিস্তারিত লিখেছেন।

আমাদের বর্তমান সময়ে নাস্তিক ও সেক্যুলারদের বিরুদ্ধে তর্ক করাটা হলো প্রথম প্রকারের কালাম। আর, আল্লাহর জাত-সিফাত ইত্যাদি নিয়ে তর্ক করাটা হলো দ্বিতীয় প্রকারের কালাম। প্রথমটি প্রশংসনীয়, এবং দ্বিতীয়টি নিন্দনীয়।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...