সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আলাক সূরার ব্যাখ্যা

কোর'আনের প্রথম সূরার নাম 'আলাক'। আলাকের অনেক অর্থ রয়েছে, তন্মধ্যে একটি অর্থ হলো 'সংযুক্ত করা', 'সম্পর্ক সৃষ্টি করা', 'একটা কিছুর সাথে অন্য কিচ্ছুকে বাধা', অথবা, 'কোনো কিছুর মধ্যে অন্য কিছুকে ঝুলিয়ে রাখা'।

আলাক সূরার মাধ্যমে মানুষের সাথে সর্বপ্রথম আল্লাহর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তাই এই সূরাকে আলাক সূরা বলা হয়।

১ম আয়াত।

মক্কার খারাপ মানুষদের দেখে রাসূল (স)-এর খুবই মন খারাপ। মনের দুঃখে পাহাড়ে চলে গেলেন, হেরা গুহায়। দিনের পর দিন পাহাড়েই থাকেন। উপর থেকে মানুষকে দেখেন। মানুষকে বুঝার চেষ্টা করেন। কিন্তু মানুষ বোঝা বড় দায়। নবী ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। কেন মানুষ এমন? কেন একে অপরের ক্ষতি করে? কেন কেউ বড় কেউ ছোট?

এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে আল্লাহ নাযিল করলেন -

اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذ۪ي خَلَقَۚ

"পড়ুন আপনার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।"

অর্থাৎ, মানুষকে আপনার প্রভুর দৃষ্টিতে দেখুন। মানুষকে যখন প্রভুর দৃষ্টিতে দেখা হয়, তখন মানুষকে বুঝা অনেক সহজ হয়।

২য় আয়াতে এসে মানুষকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষা দিচ্ছেন আল্লাহ।

خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍۚ

"তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলাক বা রক্ত থেকে।"

অর্থাৎ, সকল মানুষের সৃষ্টি হয়েছে রক্ত থেকে। সকল মানুষ যেমন তার মায়ের সাথে সম্পর্কিত, তেমনি সকল মানুষ তাঁর রবের সাথেও সম্পর্কিত।

কোর'আনের প্রথম দুই আয়াতের উদ্দেশ্য আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক সৃষ্টি করা এবং আল্লাহর দৃষ্টিতে মানুষকে বোঝার চেষ্টা করা।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...