সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুসলিমদের পতনের কারণ - এরদোয়ান

মুসলিমরা কেন আজ সারা বিশ্বে নির্যাতিত, তা বুঝানোর জন্যে এরদোয়ান ইতিহাস থেকে একটি গল্প বলেন -

"মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের নাতি হালাকু খান ইরাকের বাগদাদ শহর দখল করার পর, শহরের শুরু থেকে শেষ আগুন লাগিয়ে দেয়। ঐতিহাসিকদের কারো কারো মতে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষকে হালাকু খান হত্যা করে। শত শত বছরের পরিশ্রমে নির্মিত বাগদাদের মসজিদ, লাইব্রেরী এবং বাসভবনগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় হালাকু খানের সেনাবাহিনী।

এরপর এই জালিম হালাকু খান বাগদাদের সবচেয়ে বড় আলেমের সাথে দেখা করতে চাইলো। কিন্তু, কোনো আলেম-ই হালুকু খানের সামনে যেতে রাজি হয়নি। অবশেষে কাদিখান নামের এক তরুণ মাদ্রাসা শিক্ষক, যার এখনো ঠিক মতো মুখে দাঁড়িও উঠেনি, তিনি হালাকু খানের সাথে দেখা করতে রাজি হন।

হালাকু খানের সাথে দেখা করতে যাবার সময়ে তরুণ আলেম তার সাথে একটা উট, একটা ছাগল এবং একটা রাতা মোরগ নিয়ে যান। এবং এগুলো হালাকু খানের রাজ প্রসাদের সামনে রাখেন।

হালাকু খান তরুণ আলেমকে দেখে বললেন, "আমার সাথে দেখা করার জন্যে তোমাকে ছাড়া আর কোনো বড় আলেমকে বুঝি তারা খুঁজে পায়নি?"

তরুণ আলেম হালাকু খানকে বললেন, "আপনি যদি উঁচু-লম্বা-বড়সড় কারো সাথে দেখা করতে চান, তাহলে বাইরে একটা উট আছে; আপনি যদি দাঁড়ি-ওয়ালা কারো সাথে দেখা করতে চান, তাহলে বাইরে একটা ছাগল আছে; আর আপনি যদি জ্বালাময়ী কণ্ঠের কারো সাথে দেখা করতে চান, তাহলে বাইরে একটা রাতা মোরগ আছে। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কাউকে ডাকতে পারেন।

তরুণ আলেমের কথা শুনা হালাকু খান বুঝলেন যে, ছেলেটির দাঁড়ি না থাকলেও, এবং বসয় বেশি না হলেও ভালোই জানে। এরপর, তরুণ আলেমকে হালাকু খান বললেন, "আচ্ছা, বলো তো, আমাকে বাগদাদে কেন আসতে হলো, এর কারণ কি?"

তরুণ আলেম জবাবে বললেন, "তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে আমাদের কর্মফল। আমরা আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের গুরুত্ব বুঝিনি। আমরা ভোগবাদিতা ও আনন্দে মেতে উঠেছি। আমরা ধন-সম্পদ, ঘর-বাড়ি, এবং বড় বড় পদের পিছনে ছুটে চলছিলাম। তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিয়ামতগুলো তুলে নেয়ার জন্যে, এবং আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্যে তোমাকে এখানে পাঠিয়েছেন।"

এরপর, হালাকু খান বলেন, "আচ্ছা, তাহলে বলো তো, আমাকে এখান থেকে আবার বের করে দিতে পারে, এমন কী আছে?"

তরুণ আলেম কাদিখান বলেন, "যদি আমরা মুসলিমরা আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের গুরুত্ব বুঝতে পারি, এবং আমরা মুসলিমরা যদি একে অপরের পিছনে লেগে না থাকি, তাহলে তুমি আর এখানে থাকতে পারবে না।"

এরদোয়ান বলেন - "প্রিয় ভাইয়েরা, আমি কি বলতে চেয়েছি, আপনারা বুঝেছেন? আমরা নিজেরা একে অপরের বিরুদ্ধাচরণ বাদ দিতে হবে। এবং সবাইকে কেবল আল্লাহর জন্যে ভালোবাসতে হবে। যদি আমরা একে অপরের বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকি, তাহলে আমাদের অবস্থাও বাগদাদের মুসলিমদের মতো হবে।"

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...