সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হুকুম ও হিকমাহ-এর সম্পর্ক

তিউনিসিয়ার রশিদ ঘানুশী, তুরস্কের এরদোয়ান, এবং মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদকে দেখতে পারেন না আমাদের অনেক 'জিহাদি' ভাইয়েরা। এসব 'জিহাদি' ভাইদের যুক্তি হলো, ঘানুশী, এরদোয়া ও মাহাথিররা হলেন হিকমতপন্থী, শরিয়াহর হুকুমপন্থী নয়।

কোর’আনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা রয়েছে; ১) হুকুম (حكم), ২) হিকমাহ (حكمة)। 'হুকুম' ও 'হিকমাহ' পরিভাষা দুটি একই শব্দমূল থেকে এসেছে, তাই হুকুম ও হিকমাহ একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

হুকুম মানে আল্লাহর আদেশ, যা বাস্তবায়ন করা মুসলিমদের জন্যে ফরজ; আর, হিকমাহ মানে হুকুম বাস্তবায়ন করার কৌশল। ‘জিহাদি’ ভাইয়েরা শরিয়াহর হুকুম বাস্তবায়ন করতে চান, কিন্তু হিকমাহ বা কৌশল অবলম্বন করতে চান না। অর্থাৎ, তাঁরা কোর’আনের একটি হুকুমকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আরেকটি হুকুমকে অর্থাৎ হিকমাহকে অবজ্ঞা করেন।


‘জিহাদি’ ভাইয়েরা বলেন, “সৃষ্টি যার আইন তাঁর; সুতরাং আল্লাহ যা বলবেন, তাই হবে; এখানে আবার হিকমাহ অবলম্বন করতে হবে কেন?”

দেখুন, আল্লাহ তায়ালার চেয়ে আমরা বেশি ক্ষমতাধর হয়ে যাইনি। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করলেই তাঁর বান্দাদের জন্যে প্রথম আদেশেই মদকে হারাম করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সে হুকুম করেননি, বরং হিকমাহ অবলম্বন করেছেন। দীর্ঘ সময় নিয়ে এবং সাহাবীদের মনস্তত্ত্ব বুঝে আস্তে আস্তে তিনি মদকে হারাম করেছেন। সাহাবীদের মতো উচ্চ তাকওয়ার অধিকারী মানুষদের ক্ষেত্রে যদি সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর আল্লাহ তায়ালা এতো বেশি হিকমাহ অবলম্বন করতে পারেন, তাহলে এতো বছর পর আমাদের মতো অধার্মিকদের জন্যে কতবেশি হিকমাহ অবলম্বন করা উচিত?

এটা আমাদের 'জিহাদি' ভাইয়েরা চিন্তা করেন না।

অধৈর্য ‘জিহাদি’ ভাইদের কথা হলো, ‘ধর-মার-কাট’; ক্ষমতা হাতে পেলেই মদ নিষেধ করে দিতে হবে। এটা কোর’আনের সম্পূর্ণ বিপরীত পদ্ধতি। ‘জিহাদি’ ভাইয়েরা কখনোই কোর’আনের পদ্ধতি মেনে চলেন না। তাই তাঁরা ঘানুশী, এরদোয়ান ও মাহাথিরের পদ্ধতিকে সমর্থন করেন না।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্