সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারীরা কিভাবে কথা বলে?

নারী ও পুরুষের শারীরিক ও মানসিক ভিন্নতা যেমন রয়েছে, তেমনি তাদের উভয়ের কথা বলার ভিন্নতাও রয়েছে। একই কথা বা একটি বাক্য কোনো নারী বললে যে অর্থ হয়, কোনো পুরুষ বললে সে অর্থ হয় না। দু’জনে কথা বলার সময়ে একই শব্দ ব্যবহার করলেও অর্থ হয় ভিন্ন ভিন্ন।


উদাহরণ স্বরূপ, কোনো নারী যদি তাঁর জীবনসঙ্গীকে বলেন – “তুমি কখনোই আমার কোনো কথা শুনো না”, তখন এ কথাটিকে পুরুষেরা আক্ষরিক অর্থে বুঝে নেন। কিন্তু নারীটি আক্ষরিক অর্থে বুঝানোর জন্যে এ কথাটা বলেননি। তিনি আসলে বুঝাতে চেয়েছেন যে – “আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই, তোমার কি শুনার আগ্রহ আছে?”

নারীরা কোনো কথাকে আক্ষরিক অর্থে বলেন না, বরং সব কথাকে সাধারণ অর্থে বলে থাকেন। কিন্তু পুরুষরা নারীদের সব কথাকে আক্ষরিক অর্থে বুঝে থাকেন, এবং সেভাবেই উত্তর দেন।

নিচের কয়েকটি উদাহরণ দেখুন –

নারী – “আমরা তো কখনোই বাইরে ঘুরতে যাই না।”
পুরুষ – “কেন? গত শুক্রবারেও তো তোমাকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম।”

নারী – “সবাই আমাকে অবহেলা করে।”
পুরুষ – “নিশ্চয় আমি ছাড়া তোমার অন্য কারো সাথে কথা হয়।”

নারী – “আমি খুব ক্লান্ত, কিছুই করতে ভালো লাগছে না।”
পুরুষ – “তোমাকে না বললাম, চাকরিটা ছেড়ে দিতে।”

নারী – “বাসাটায় একটুও খোলা-মেলা জায়গা নেই।”
পুরুষ – “কেন? বারান্দা আছে না?”

নারী – “কেউ আমার কোনো কথা শুনতে চায় না।”
পুরুষ – “কেন? আমি তো এখন তোমার কথা শুনছি।”

নারী – “এ ঘরে কোনো কিছুই ভালো ভাবে হয় না।”
পুরুষ – “তুমি বলতে চাও এটা আমার দোষ?”

নারী – “তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।”
পুরুষ – “ভালো না বাসলে আমি এখন তোমার সাথে কেন?”

নারী – “তুমি সবসময় তাড়াহুড়া কর।”
পুরুষ – “তাড়াহুড়া করলে এতক্ষণ তোমার জন্যে অপেক্ষা করতাম?”

নারী – “তুমি কখনো সুন্দর করে আমার সাথে কথা বলো না।”
পুরুষ – “আমি এখন তোমার সাথে খারাপ আচরণ করেছি?”

উপরের উদাহরণগুলোর মতো, নারীরা কথা বলার সময়ে কিছু শব্দ এমনি এমনিতেই বলে থাকেন। যেমন – ‘ ‘সবসময়’ ‘সারাক্ষণ’, ‘সর্বদা’, ‘কখনোই না’, ‘মোটেও না’, ‘একটুও না’, ইত্যাদি। এ শব্দগুলোকে নারীরা আক্ষরিক অর্থে বলেন না। কিন্তু পুরুষরা এই শব্দগুলো আক্ষরিক অর্থে ধরে নিয়ে নারীদেরকে অকৃতজ্ঞ মনে করেন। এর ফলে, নারী ও পুরুষ দু’জনের সাথে তর্কের সূত্রপাত ঘটে, এবং তর্কের শেষ হয় ভুল বুঝাবুঝিতে গিয়ে।

নারীরা এ শব্দগুলো কম ব্যবহার করা উচিত, এবং পুরুষরা এ শব্দগুলোকে আক্ষরিক অর্থে না বুঝা উচিত। এ শব্দগুলো দিয়ে নারীরা যা বুঝাতে চান, পুরুষরা তা বুঝতে পারেন না। নারীরা বুঝাতে চান যে, “তুমি আমার আরেকটু যত্ন নাও”, কিন্তু পুরুষেরা বুঝে যে, “আমি বোধ হয় তাঁর যত্ন নিতে পারি না”।

পুরুষরা যেমন নারীদের কথাকে অনুবাদ করে বুঝা প্রয়োজন, তেমনি নারীরাও পুরুষদের কথাকে অনুবাদ করে বুঝা প্রয়োজন। একে অপরের কথা সঠিকভাবে বুঝার জন্যে ভালোবাসার অভিধান ব্যবহার করা প্রয়োজন।

অর্থাৎ, নারী ও পুরুষ উভয়ে একই শব্দে কথা বললেও অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই, যখনি কোনো একজনের কথায় ভুল বুঝাবুঝির সম্ভাবনা থাকে, তখন অন্যজন নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত, “আমি কি সঠিকভাবে তাঁর কথাটি অনুবাদ করে বুঝতে পেরেছি?”

ভালোবাসার অভিধান সম্পর্কে রাসূল (স) বলেন –

“আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। আমি দেখি, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী হলো এমন নারী, যারা কুফরি করে”। জিজ্ঞেস করা হলো, “তারা কি আল্লাহকে অস্বীকার করে?” রাসূল বললেন – “তারা তাদের স্বামীদের সাথে কুফরি করে, এবং স্বামীদের অনুগ্রহকে অস্বীকার করে। তুমি যদি দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীদের কারো প্রতি অনুগ্রহ করতে থাকো, এরপর একদিন যদি সে তোমার একটু অবহেলা দেখতে পায়, তখন বলবে, “আমি কখনোই তোমার কাছ থেকে ভালো কিছু পাইনি।”

[সহীহ বুখারী – ২৯, মাকতাবায়ে শামেলা]

_____________________________

[Source: Men are from Mars and Women are from Venus, Page: 41]

আরো দেখুন-

নারী ও পুরুষের আচরণের ভিন্নতা
https://jobayerbd.wordpress.com/2017/05/12/manwomen/


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...