সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এরদোয়ানের ইসলামী রাজনীতির সূত্র

ইসলামী রাজনীতির ক্ষেত্রে এরদোয়ানের সূত্র হলো – "রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হবে, কিন্তু কোনো ব্যক্তি ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না"

তাঁর কথাটি একটু ব্যাখ্যা করছি –

১। ইংরেজি সেক্যুলার শব্দের বাংলা অর্থ করা হয় ধর্মনিরপেক্ষ। ব্যবহারিকভাবে এটি একটি ভুল অনুবাদ। সেক্যুলারিজমের প্রকৃত অর্থ হলো ধর্মহীন বা ধর্মবিদ্বেষ। কারণ, সকল 'সেক্যুলার'-ই ধর্মের বিরোধিতা করেন, কেউই ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারেন না।


২। সেক্যুলারিজম হলো একটি রাজনৈতিক পদ্ধতির নাম, কোনো ব্যক্তি সেক্যুলার হতে পারে না। তেমনি, ধর্ম হলো ব্যক্তি মানুষের দৈনন্দিন পালনীয় কার্যাবলীর নাম, রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। যেমন, একজন ব্যক্তিকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হয়, কিন্তু রাষ্ট্রকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হয় না।

৩। পরিবার ছাড়া যেমন কোনো মানুষ হতে পারে না, তেমনি ধর্ম ছাড়াও কোনো মানুষ হতে পারে না। পরিবারহীন মানুষ যেমন পথ-শিশু হয়ে যায়, ধর্মহীন মানুষও তেমনি সমাজ বিচ্যুত হয়ে যায়। নাস্তিকতা একটি ধর্মের নাম। কারণ, স্রষ্টার ধারণা ছাড়াই পৃথিবীতে অনেক ধর্ম রয়েছে, যেমন, বৌদ্ধ ধর্ম।

৪। 'ধর্মহীন রাষ্ট্র' ও 'ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র' এক নয়। 'ধর্মহীন রাষ্ট্র' মানে দেশের কোথাও ধার্মিক মানুষের স্থান না দেওয়া। অর্থাৎ, ধার্মিক মানুষগুলোকে ধরে ধরে কারাগারে নেয়া, এবং ধরে ধরে মেরে ফেলা। কিন্তু, 'ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র' মানে দেশের সকল স্থানে সকল ধর্মাবলম্বী মানুষকে সমানভাবে সুযোগ করে দেয়া।

৫। মুসলিমদের খিলাফতের ইতিহাসে রাষ্ট্র সবসময় ধর্মনিরপেক্ষ ছিলো, কিন্তু জনগণ ছিলো ধার্মিক। বর্তমানে আমরা রাষ্ট্রকে মুসলিম বানাতে চাই, কিন্তু মানুষেরা সব ইসলাম বিমুখ।

৬। তুরস্ক একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র হয়েও সারাবিশ্বের মুসলিমদের জন্যে যতটা ভূমিকা রাখতে পারছে, সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের মতো রাষ্ট্রগুলো একেকটি ইসলামী রাষ্ট্র হয়েও ততটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে না।

৭। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে মুসলিম বানানোর চেয়েও দেশের মানুষগুলোকে ব্রিটিশ উপনিবেশের মানসিকতা থেকে মুক্ত করে ধার্মিক বানানো বেশি প্রয়োজন। এবং ইসলামী আন্দোলনের কাজ এটাই হওয়া উচিত।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...