সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"আল্লাহ কি এমন একটি পাথর বানাতে পারবেন, যা তিনি নিজেই তুলতে পারবেন না?"

নাস্তিকরা প্রায়ই এই প্রশ্নটি করেন -

"আল্লাহ তায়ালা কি এমন একটি পাথর বানাতে পারবেন, যা তিনি নিজেই তুলতে পারবেন না?"

এ প্রশ্নের উত্তরে আপনি যদি "হাঁ" বলেন, তাহলেও বিপদ; আপনি যদি "না" বলেন, তাহলেও বিপদ।


তো, একবার এক বাঙালি আস্তিককে এ প্রশ্নটি করার পর, তিনি উত্তরে বললেন: "জ্বি... না..."। তিনি "হাঁ" বা "না" কোনো একটি না বলে বরং দুটাই একসাথে বলে দিলেন। এবং প্রশ্নকারী নাস্তিককে বললেন যে, তোমার প্রশ্নের একটি অংশের উত্তর "হাঁ" এবং অন্য একটি অংশের উত্তর "না"। তাই আমি "জ্বি... না..." বলেছি। তখন আস্তিকটির "যেমন কুকুর, তেমন মুগুর" দেখে নাস্তিকটি আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন।

আসলে এখানে উত্তরে সমস্যা না, সমস্যা হলো প্রশ্নে।

যেমন, কেউ যদি আপনাকে বলে:

"তুমি কি আগের মতো তোমার স্ত্রীকে এখনো মারো?"

এখানে এ প্রশ্নের উত্তরে আপনি যদি "হাঁ" বলেন, তার মানে আপনি আপনার স্ত্রীকে মারেন। আর, প্রশ্নটির উত্তরে আপনি যদি "না" বলেন, তার মানে, আপনি বর্তমানে আপনার স্ত্রীকে মারেন না, কিন্তু আগে আপনি আপনার স্ত্রীকে মারতেন। অথচ, আপনার কোনো স্ত্রী-ই নেই।

এ ধরণের প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটা বড় ধরণের ভুল থাকে। সেটি হলো, কর্তা সম্পর্কে আগে থেকেই ভুল অনুমান করে নেয়া। যেমন এখানে প্রশ্নকারী আগে থেকেই অনুমান করে নিয়েছেন যে, আপনার একজন স্ত্রী আছে, এবং আপনি আপনার সেই স্ত্রীকে মারেন।

নাস্তিকরা যখন আল্লাহর বিষয়ে উপরোক্ত প্রশ্নটি করেন, তখন তারা আগে থেকেই ধারণা করে নেন যে, আল্লাহ তায়ালা মানুষের মতো পাথর তৈরি করেন এবং মানুষের মতো পাথর উপরে উত্তোলন। অথচ, আল্লাহর কর্মপদ্ধতির সাথে মানুষের কর্মপদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন, যা আমরা চিন্তাও করতে পারি না।

সুতরাং, কেউ যদি আপনাকে উপরের প্রশ্নটি করে, আপনি আগে তাকে নিচের প্রশ্নটি করুন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...