সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একদিন তো মরেই যাবো

গল্প
_____
সুমন সাহেবের সব ইচ্ছাই পূরণ হলো। ছাত্র জীবনে নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন। অনার্স ও মাস্টার্সে সর্বোচ্চ রেজাল্ট করেছেন। পড়াশুনা শেষ হতে না হতেই, সোনার হরিণ নামক একটি সরকারী চাকরি পেয়েছেন। এরপর বিয়ে করেছেন সম্ভ্রান্ত এক পরিবারের সুন্দরী আদরের মেয়ে তামান্নাকে। কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের দাম্পত্য জীবনে নতুন ফুটফুটে এক ছেলে সন্তানের আগমন ঘটলো। সুমন সাহেবের নামের সাথে মিলিয়ে সন্তানের নাম রাখা হলো সাফাত। সাফাত এখন আব্বু ডাকতে পারে।

এতো বেশি সৌভাগ্যবান হবার কারণে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ সুমন সাহেবকে একটু হিংসাও করে। সুমন সাহেবও এটা বুঝেন। নিজের অজান্তেই তার ভিতর একটা অহংকার বোধ কাজ করে। মনের ভিতর যখন অহংকার দানা বাঁধতে শুরু করে, মানুষ তখন তার আশেপাশের লোকদের ছোট মনে করতে থাকে। সুমন সাহেবেরও তাই হলো। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীকে তিনি কিছুটা বিদ্রূপ করেই কথা বলেন। কি নেই তার? ভাবটা এমন যে, তার সবই আছে। শিক্ষা, সম্মান, চাকুরী, টাকা-পয়সা কোনো কিছুর অভাব নেই।

বিয়ের দু’বছর পর তামান্নার বাবা মারা যায়। তামান্নার বড় ভাই একটা দোকানে চাকরি করে কোনোভাবে সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছেন। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের চেয়ে সুমন সাহেবের বর্তমান অবস্থা এখন অনেক ভালো। মাঝে মাঝে তার মনে হয়, তিনি ইচ্ছে করলেই তো আরো অনেক ভালো যায়গায় বিয়ে করতে পারতেন। মনের ভিতর অহংকার বোধ থাকার কারণে শ্বশুর বাড়ির লোকদের যথেষ্ট সম্মান করেন না।

বিয়ের আগে ও পরে তামান্নার জন্যে সুমন সাহেবের যে ভালোবাসা ছিল, পাঁচ বছরের মাথায় এসে এখন তা একেবারেই শূন্য। প্রায় প্রতিদিন-ই ছোটখাটো কোনো বিষয় নিয়ে সুমন সাহেব তার স্ত্রীর সাথে রাগারাগি করেন। ছেলে সাফাতের সামনেই তার আম্মুকে বকাবকি করেন। কারণে-অকারণে শাশুড়ির কাছে ফোন দিয়ে বলেন, “তামান্নাকে আপনারা নিয়ে যান, ওকে নিয়ে আমার সংসার করা সম্ভব না”।

তামান্নার বৃদ্ধ মা সুমনের বাবা-মাকে অনেক বার ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। কিন্তু, সুমনের বাবা-মায়ের এমন সাহস নেই যে নিজের ছেলেকে কিছু বলবে। তাঁরা জানেন, সুমন একটু একগুঁয়ে ও জেদি, তাকে বুঝিয়ে লাভ নেই। ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের আশকারা পেয়ে বড় হওয়া সুমনকে কিছু বললেই যে তিনি তা শুনবেন, তা এতো সহজ না। নিজে যা বুঝেন, তাকেই শতভাগ সঠিক মনে করেন।

সুমনের বাবা-মা উভয়কে অনেক বার বলার পরেও তাঁরা কোনো ধরণের ভ্রুক্ষেপ করলেন না। দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক এখন একেরেই নষ্ট হয়ে গেছে। তামান্নার পরিবারের কেউ সুমন সাহেবের বাবা-মাকে ফোন দিয়ে এখন আর পায় না। অবশ্য ফোনে পেলেও কোনো লাভ নেই, সুমন সাহেবকে কিছু বলার ইচ্ছা বা সাহস তার বাবা-মায়ের নেই। মাঝে মাঝে তামান্নার বৃদ্ধ মা তাঁর মেয়েকে ফোন দিয়ে বলেন, “মা, একটু ধৈর্য ধরো। আল্লাহর কাছে দোয়া করো। ইনশাল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।”

প্রত্যেক নামাজের পরেই তামান্না আল্লাহর দরবারে তাঁর স্বামী ও সন্তানের জন্যে দোয়া করেন। কখনো কখনো তামান্না ভাবতে থাকে, আল্লাহ বোধ হয় তাঁর কথা শুনছেন না। যত দিন যাচ্ছে, স্বামীর আচরণ ততই খারাপ হচ্ছে। সবকিছুই অসহ্য মনে হতে লাগলো তামান্নার কাছে। একদিকে সাফাতের যত্ন নিতে হয়, অন্যদিকে সংসারের যাবতীয় কাজ সামলে নিতে হয়। তার উপর স্বামীর অসহ্য খারাপ আচরণ। কখনো কখনো তামান্না ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। স্বামীর মুখেমুখে তর্ক করতে থাকেন।

এবার নতুন একটি ইস্যু পেলেন সুমন সাহেব। শাশুড়িকে ফোন করে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলো, “তামান্না আমার মুখে মুখে তর্ক করে। আমি তাকে আর রাখবো না”।

সন্তান সাফাতের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করেই সুমন সাহেব মনে মনে তামান্নাকে তালাক দিয়ে দেয়ার উপায় খুঁজছিলেন। একদিন রাতে বাসায় রাগারাগির হবার পর তিনি এডভোকেট হাবিবুর রহমানের কাছে চলে যান। এডভোকেট হাবিব এলাকার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ উকিল, বিয়ে-শাদী-ডিভোর্স এসব মামলা নিয়ে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন। সুমন সাহেব এডভোকেট হাবিবকে বিস্তারিত জানিয়ে বললেন – “আমি আমার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চাই। এখন কি কি আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, তা বলুন”।

হাবিব সাহেব এডভোকেট হলেও অন্যান্য উকিলদের মতো তিনি টাকার পিছনে দৌড়ান না। ছোট বেলায় তিনি পবিত্র কোর’আন মুখস্থ করেছিলেন। এরপর ১২ বৎসর একটি সরকারী মাদ্রাসায় পড়েছিলেন। মাদ্রাসা থেকে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। এখন তিনি হাইকোর্টের একজন নামকরা এডভোকেট। এডভোকেট পরিচয়টি ছাড়াও তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে। এলাকার মানুষ তাঁকে একজন সূফী ও দরবেশ হিসাবেই বেশি জানে।

সুমন সাহেবের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনার পর, এডভোকেট হাবিবের মনে হলো যে, ডিভোর্স দেয়ার মতো কোনো দোষ তার স্ত্রীর নেই। হাবিব সাহেব অন্য এডভোকেটের মতো সুমন সাহেবকে একটি ডিভোর্স পেপার রেডি করে দেননি। তিনি সুমন সাহেবকে বললেন, “আপনার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে আর কি লাভ? আপনি তো মরেই যাবেন কিছুদিন পর”।

মারা যাবার কথা শুনেই হঠাৎ সুমন সাহেবের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। এডভোকেট হাবিবের কথা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না, কিন্তু নিজের অজান্তেই মনটা ভারী হয়ে গেলো। এলাকার মানুষ এডভোকেট হাবিবকে একজন সুফি-দরবেশ হিসাবে জানে, তাই হয়তো তাঁর কথাও সত্যও হতে পারে। সুমন সাহেব ভিতরে ভিতরে খুব ভয় পেলেও অবিশ্বাসের ভঙ্গীতে হেসে হেসে বললেন –
: হাসালেন এডভোকেট সাহেব! আচ্ছা, বলেন তো, আমি কবে মারা যাব?
: এই তো মাস খানেক পর।

এডভোকেট হাবিবের কথাটা একটুও বিশ্বাস হয়নি এমন একটা ভাব নিয়ে সুমন সাহেব আরো কিছুক্ষণ কথা চালিয়ে গেলেন। কিন্তু বিদায় নিয়ে রাস্তায় আসার পরপর-ই সুমন সাহেব ভাবতে লাগলেন, আসলেই কি এক মাস পর মারা তিনি যাবেন? এই তো কিছু দিন আগে সুমন সাহেবের বয়সী একজন তার চোখের সামনেই রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছেন। ঐ দৃশ্যটি এখন আবার নতুন করে সুমন সাহেবের চোখে ভাসতে শুরু করেছে। খুব ধীরে ধীরে হেঁটে তিনি বাসায় আসলেন।

সুমন সাহেব রাগ করে বাসার বাইরে চলে যাবার কারণে তামান্নার খুব মন খারাপ ছিলো। রাতের খাবার সে এখনো খায়নি। সাফাত ঘুমিয়ে গেছে, কিন্তু সুমন সাহেবের জন্যে সে অপেক্ষা করছিলো। কলিং বেল বাজতে না বাজতেই তামান্না দরজা খুলে দিলো। অন্যদিনের মতো রাগী দেখাচ্ছে না সুমন সাহেবকে, কিন্তু খুবই বিষণ্ণ মনে হলো। তামান্না জিজ্ঞেস করলেন, “কি হলো?” কোনো উত্তর না দিলেই ঘরে প্রবেশ করলেন সুমন সাহেব।

মনে মনে সুমন সাহেব ভাবলেন, আজকে এশার নামাজটা পড়বেন। কিন্তু দীর্ঘদিন নামাজ না পড়ার কারণে স্ত্রীর সামনে হঠাৎ আজকে নামাজ পড়তে কিছুটা দ্বিধা কাজ করছে তার। তবুও নামাজের অজু করে আসলেন তিনি। নামাজ না পড়েই তামান্নার মুখোমুখি একটা চেয়ার নিয়ে খেতে বসে গেলেন। খুবই চিন্তিত মনে হচ্ছিলো সুমন সাহেবকে। তামান্নার কাছে বিষয়টি একটু অদ্ভুত মনে হচ্ছিলো। সে বারবার সুমন সাহেবকে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘কি হয়েছে আজকে?’

খাবার প্রায় অর্ধেক শেষ হবার পর সুমন সাহেব মৃদু স্বরে স্ত্রীকে বললেন, “তামান্না, আমি সম্ভবত গত কয়েক বছর ধরে তোমার সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছি। আমি যদি মারা যাই, তুমি কি আমাকে ক্ষমা করে দিবে?” প্রশ্নটি শুনে তামান্না কি উত্তর দিবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পালটা সুমন সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, “আজকে তোমার কি হয়েছে? এভাবে কথা বলছো কেনো?” সুমন সাহেব কোনো উত্তর না দিয়েই খাবার শেষে ঘুমাতে চলে গেলেন।

পরেরদিন খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে গেলেন সুমন সাহেব। ফজরের নামাজ পড়লেন। বেশ কিছুক্ষণ জায়নামাজে বসে বসে কি যেন চিন্তা করলেন। অফিস থেকে ফিরে এসেও বাসায় তেমন কোনো কথা নেই। কারো সাথে কোনো বকাবকি কিংবা রাগারাগি নেই। সুমন সাহেবের হঠাৎ এমন পরিবর্তনের কারণে তামান্না রীতিমত আশ্চর্য হচ্ছেন। সুমন সাহেবের আসলে কি হলো, তামান্না কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।

এডভোকেট হাবিবের সাথে কথা বলার পর আজকে প্রায় এক মাস হতে চললো। সূফী হাবিবের কথা যদি সত্যিই হয়, তাহলে দু’একদিন পরেই সুমন সাহেব মারা যাবেন।

গত একমাসে সুমন সাহেবের জীবনে বিশাল পরিবর্তন হয়ে গেলো। তার শিক্ষাদীক্ষা, টাকাপয়সা, মানসম্মানেরর এতো অহংকার কোথায় চলে গেলো, তা তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না। নিয়মিত নামাজ পড়েন এবং মাঝে মাঝে মসজিদেও যাবার চেষ্টা করেন। তামান্নার সাথে এখন খুবই ভালো ব্যবহার করছেন। শাশুড়িকে নিয়মিত ফোন দিয়ে তার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

হঠাৎ সুমন সাহেব কেনো এতো পরিবর্তন হয়ে গেলেন, এটা সুমন সাহেবের স্ত্রীও বুঝতে পারছেন না। সুমন সাহেব কাউকেই কিছু বলছেন না। প্রায় একমাস পর্যন্ত সুমন সাহেব খুব ভয়ে ভয়েই চলাফিরা করছিলেন। একমাস পর এখন কিছুটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে তাকে। ইতোমধ্যে একদিন মসজিদ থেকে বের হতে না হতেই এডভোকেট হাবিবের সাথে তার দেখা। হাবিব সাহেবকে সালাম দিয়ে বললেন, “কী, এডভোকেট সাহেব, আপনি বললেন, একমাস পর আমি মারা যাব, কিন্তু এখনো তো বেঁচে আছি।”

এডভোকেট হাবিব একটু হেসে দিয়ে বললেন, “আমি কি গায়েব জানি নাকি? আপনি কখন মারা যাবেনা তা আমি কিভাবে বলি? কিন্তু একদিন তো ঠিকই মারা যাবেন। হয় একমাস পর মারা যাবেন, না হয়, এক বছর পর মারা যাবেন। অমর হয়ে এ পৃথিবীতে চিরদিন থাকতে পারবেন নাকি?”

হাবিব সাহেবের সাথে কথা না বাড়িয়ে সুমন সাহেব বাসায় চলে এলেন। তামান্না অপেক্ষা করছে। আজকে তাঁদের বিবাহ বার্ষিকী ছিলো। তামান্না সুমন সাহেবের পছন্দের চিংড়ির মালাইকারি রান্না করেছেন। বিবাহ বার্ষিকীর কথা সুমন সাহেবের মনে ছিলো না, তামান্নাই তাকে মনে করিয়ে দিলেন। সুমন সাহেবকে বেশ স্বাভাবিক ও কিছুটা খুশী খুশী মনে হবার পর তামান্না আজ আবার জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কি হলো সত্যি করে বলো তো…। হঠাৎ তুমি এমন কেনো হয়ে গেলে?”

সুমন সাহেব আজ আর কোনো কথা না লুকিয়ে তামান্নাকে সব বলে দিলেন। সবকিছু শুনে তামান্না খুশিতে তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। খাবার রেখে দিয়ে সুমন সাহেব তামান্নার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। তামান্নাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “মানুষ যদি বুঝতো যে, সে একদিন তো মারেই যাবে, তাহলে কখনোই সে তার স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করতে পারতো না। যে মৃত্যুর ভয়ে থাকে, সে অফিসের কোনো সুন্দরিকে দেখে এসে নিজ স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়ার কথা চিন্তাও করতে পারে না। আমাকে ক্ষমা করে দিও, তামান্না। আমি তোমায় ভালোবাসি।”

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...