সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নাস্তিকতা একটি অ-প্রাকৃতিক আচরণের নাম

নাস্তিকতা কি স্বাভাবিক কোনো কিছু?

মানব শিশু জন্ম গ্রহণ করার আগেই আল্লাহ তায়ালা তার মধ্যে কয়েকটি বিষয় ডিফল্ট সেটিং করে দেন; শিশুকে তা অন্য কারো কাছ থেকে শিখতে হয় না। যেমন, কান্না। শিশু জন্ম গ্রহণ করর পরেই কাঁদতে পারে, এটা শিশুকে অন্য কারো কাজ থেকে শিখতে হয় না।

তেমনি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করাটাও প্রত্যেক শিশুর ডিফল্ট সেটিং করা থাকে। পরিবার ও পরিবেশ থেকে শিশুকে চাপ না দিলে সে মনের অজান্তেই এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতে শুরু করে।

শিশুদের সাইকোলজি ও বিশ্বাস নিয়ে জাস্টিন ব্যারেট [Justin Barrett] একটি গবেষণামূলক বই লিখেছেন। নাম – Born Believers: The Science of Children's Religious Belief

এখানে তিনি অনেকগুলো জরিপ উপস্থাপন করেছেন। যেমন,

কোনো শিশুদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয়, “এই পাহাড়টি কি নিজে নিজে তৈরি হয়েছে, না এটাকে কেউ বানিয়েছে?” তখন শিশুরা উত্তর দেয়, “পাহাড়টা কেউ একজন বানিয়েছে”।

কেউ বলে, এটা আল্লাহ বানিয়েছে। কেউ বলে, এটা আমার আব্বু বানিয়েছে। অথবা, কেউ বলে, এটা অনেক মানুষ মিলে বানিয়েছে। কিন্তু কেউ বলে না যে, এটা এমনি এমনিই তৈরি হয়েছে।

এভাবে অনেকগুলো জরিপ করে জাস্টিন ব্যারেট দেখিয়েছেন যে, প্রত্যেক শিশুর মনে ও মস্তিষ্কে স্বভাবগতভাবেই আল্লাহর অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস মানুষের স্বভাবগত একটি বিষয়।

তিনি তাঁর বইয়ের শেষের দিকে এসে বলেন –

“Scientific research on children’s developing minds and supernatural beliefs suggests that children normally and rapidly acquire minds that facilitate belief in supernatural agents. Particularly in the first year after birth, children distinguish between agents and non-agents, understanding agents as able to move themselves in purposeful ways to pursue goals. They are keen to find agency around them, even given scant evidence. Not long after their first birthday, babies appear to understand that agents, but not natural forces or ordinary objects, can create order out of disorder…This tendency to see function and purpose, plus an understanding that purpose and order come from minded beings, makes children likely to see natural phenomena as intentionally created. Who is the Creator? Children know people are not good candidates. It must have been a god…children are born believers of what I call natural religion.”

Source: Justin Barrett, Born Believers, Google, p – 135

অর্থাৎ, প্রত্যেক শিশু-ই আল্লাহর ধারণা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। এবং যার নাম হলো স্বভাব ধর্ম।
________

এ বিষয়টি খুবই সহজভাবে আমরা কোর’আন ও হাদিস থেকে বুঝতে পারি। যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًۭا ۚ فِطْرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِى فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيْهَا ۚ لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ ٱللَّهِ ۚ ذَ‌ٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلْقَيِّمُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

“তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহ তাঁর প্রকৃতির উপর ভিত্তি করেই মানুষের প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” [সূরা ৩০/রূম - ৩০]

অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যে স্বভাবজাত ধর্ম দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, মানুষের উচিত সেই স্বভাবজাত ধর্মের উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখা। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ নিজের জন্মগত ধর্মের উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারে না। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে মানুষ তার স্বভাবগত ধর্মকে ভুলে গিয়ে কৃত্রিম বা নকল একটি ধর্ম তৈরি করে নেয়।

রাসূল (স) বলেন –

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ، أَوْ يُنَصِّرَانِهِ، أَوْ يُمَجِّسَانِهِ، كَمَثَلِ البَهِيمَةِ تُنْتَجُ البَهِيمَةَ هَلْ تَرَى فِيهَا جَدْعَاءَ»

“প্রত্যেক নবজাতক শিশু ফিতরাত বা স্বভাব ধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহূদী বা খ্রিষ্টান অথবা অগ্নি উপাসক বানায়। যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে জন্মগত ভাবে কানকাটা দেখতে পাও?” [বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ১৩৮৫]

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে কিছু না কিছু বিষয় বিশ্বাস করতে হয়। কেউ স্বভাবগতভাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, আবার কেউ সমাজের তৈরি কৃত্রিম স্রষ্টায় বিশ্বাস করে। কোনো নাস্তিক যদি বলেন, আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি না, তার মানে তিনি ভ্রান্ত ও অস্বাভাবিক কোনো কিছুকে বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস ছাড়া কেউ থাকতে পারে না।

যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন –

وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱلْبَـٰطِلِ وَكَفَرُوا۟ بِٱللَّهِ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْخَـٰسِرُونَ

“যারা ভুয়া বা মিথ্যা জিনিসে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত”। [সূরা ২৯ /আনকাবুত - ৫২]

অর্থাৎ, যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারা মিথ্যা, অস্বাভাবিক ও ভুয়া কোনো কিছুকে বিশ্বাস করতে হয়।
___________

অনুসিদ্ধান্ত – ১

পৃথিবীর প্রতিটি শিশুর অন্তরে ও মস্তিষ্কে আল্লাহকে বিশ্বাস করার জন্যে একটি নির্দিষ্ট স্থান থাকে। কেউ যদি তার পরিবার, পরিবেশ ও শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে অন্তরের নির্দিষ্ট স্থানে আল্লাহকে না বসাতে পারে, তাহলে বিভিন্ন ভ্রান্ত স্রষ্টা দ্বারা তার ঐ স্থানটি পূরণ হয়ে যায়।

অনুসিদ্ধান্ত – ২

আল্লাহকে বিশ্বাস করা প্রতিটি মানুষের প্রাকৃতিক ও স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। কেউ তার প্রাকৃতিক-স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যকে অবদমিত করলে বা ঢেকে রাখলে তাকে কুফর বলা হয়।

অনুসিদ্ধান্ত – ৩

নাস্তিকতা স্বাভাবিক কোনো কিছু নয়। এটি একটি অস্বাভাবিক, ভ্রান্ত ও কৃত্রিম ধর্মের নাম।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্