সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আদম (আ)-কে কিভাবে জান্নাত থেকে নামিয়ে দেয়া হলো?

জান্নাত থেকে নেমে যাওয়ার জন্যে আল্লাহ তায়ালা আদম (আ)-কে বললেন,

قَالَ اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ

“তোমরা নেমে যাও। তোমরা এক অপরের শত্রু। পৃথিবীতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের বসবাসের ও জীবিকার ব্যবস্থা রয়েছে”। [সূরা ৭/আ’রাফ – ২৪]

এখানে আদম (আ)-কে জান্নাত থেকে নামিয়ে দেয়ার জন্যে ‘ইহবিতু’ (اهْبِطُوا) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আরবি ভাষায়, কোনো কিছু উপর থেকে নিচের দিকে নেমে যাওয়া বুঝাতে ‘হাবত’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। হাবত শব্দটি দিয়ে কাউকে আদেশ করলে বলা হয় ‘ইহবিত’।
__________
উদাহরণ - এক
__________

একটি পাথর যদি কোনো পাহাড়ের উপর থেকে নিচের দিকে পড়ে যায়, তখন বলা হয়, ‘পাথরটি ‘হাবত’ করলো। মানে, পাথরটি গড়িয়ে গড়িয়ে উপর থেকে নিচে নেমে গেল। যেমন, কোর’আনে বলা হয়েছে –

ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ فَهِيَ كَالْحِجَارَةِ أَوْ أَشَدُّ قَسْوَةً وَإِنَّ مِنَ الْحِجَارَةِ لَمَا يَتَفَجَّرُ مِنْهُ الْأَنْهَارُ وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَشَّقَّقُ فَيَخْرُجُ مِنْهُ الْمَاءُ وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ

“তোমাদের হৃদয় পাথরের মত অথবা তার চেয়েও কঠিন হয়ে গেছে। কিছু পাথর এমন আছে, যা থেকে ঝরনা প্রবাহিত হয়। কিছু পাথর এমন আছে, যা বিদীর্ণ হওয়ার পর তা থেকে পানি নির্গত হয়। এবং কিছু পাথর এমন আছে, যা আল্লাহর ভয়ে খসে পড়তে থাকে! আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন”। [সূরা ২/বাকারা – ৭৪]

উপরোক্ত আয়াতে, কিছু পাথর উপর থেকে নিচে নেমে যাওয়ার অর্থে আল্লাহ তায়ালা ‘হাবত’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সুতরাং, আদম (আ)-এর জন্যে আল্লাহ তায়ালা যখন ‘ইহবিতু’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তার মানে হলো, উপর থেকে নিচে নেমে যাও।
__________
উদাহরণ - দুই
__________

নূহ (আ)-এর নৌকা যখন জুদী পাহাড়ের উপর এসে লাগলো, তখন আল্লাহ তায়ালা নূহ (আ)-কে বললেন –

قِيلَ يَا نُوحُ اهْبِطْ بِسَلَامٍ مِّنَّا وَبَرَكَاتٍ عَلَيْكَ وَعَلَىٰ أُمَمٍ مِّمَّن مَّعَكَ وَأُمَمٌ سَنُمَتِّعُهُمْ ثُمَّ يَمَسُّهُم مِّنَّا عَذَابٌ أَلِيمٌ

“হে নূহ! আমার নিরাপত্তা সহকারে তুমি নিচে নেমে যাও। তুমি এবং তোমার সাথে যেসব সম্প্রদায় রয়েছে, তাদের জন্যে বরকত রয়েছে। আর অন্যান্য যেসব সম্প্রদায় রয়েছে আমি তাদেরকে রিজিক দান করব। অতঃপর তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। [সূরা ১১/হূদ – ৪৮]

উপরোক্ত আয়াতে, আল্লাহ তায়ালা নূহ (আ)-কে জুদী পাহাড় থেকে নিচে নেমে যাওয়ার জন্যে ‘ইহবিতু’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আদম (আ)-এর জন্যেও আল্লাহ তায়ালা ‘ইহবিতু’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সুতরাং, তার মানে হলো, আদম (আ) পৃথিবীর উঁচু কোনো জান্নাত থেকে সমতল ভূমিতে নেমে গিয়েছিলেন।
__________
উদাহরণ - তিন
__________

ফেরাউন থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে মূসা (আ) ও তাঁর সম্প্রদায় এমন একটি পাহাড়ি স্থানে বসবাস করতে শুরু করলেন, যেখানে পানির খুবই অভাব ছিল। মূসা (আ) তাঁর সম্প্রদায়ের জন্যে আল্লাহর কাছে পানি প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ তায়ালা মূসা (আ)-কে পাথরে আঘাত করতে বললেন। এবং এর ফলে পাথর থেকে পানি বের হয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করলো।

এর কিছুদিন পর, মূসা (আ)-এর সম্প্রদায় একটি ভিন্ন দাবী তুললো। সবসময় এক ধরণের পাহাড়ি খাবার বা জান্নাতি মান্না-সালওয়া খেতে খেতে তারা সবাই অধৈর্য হয়ে গিয়েছিল। তাই তারা মূসা (আ)-কে বললো, আমরা পৃথিবীর সমতল ভূমিতে যে খাবারগুলো উৎপাদন হয়, তা খেতে চাই।

তারপর মূসা (আ) তাদেরকে বললেন –

اهْبِطُوا مِصْرًا فَإِنَّ لَكُم مَّا سَأَلْتُمْ

“তোমরা মিশরে চলে যাও; যা খেতে চাও, সেখানে তা রয়েছে”। [সূরা ২/বাকারা – ৬১]

এ আয়াতে মূসা (আ) তাঁর সম্প্রদায়কে মিশরে বা মরুভূমির মত সমতল কোনো নগরীতে চলে যাওয়ার জন্যে ‘ইহবিতু’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আদম (আ)-এর জন্যেও আল্লাহ তায়ালা একই শব্দ ব্যবহার করেছেন।
__________

সুতরাং, উপরোক্ত সবগুলো আয়াত একসাথে মিলিয়ে পড়লে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, আদম (আ) পৃথিবীর উঁচু কোনো জান্নাতে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে পৃথিবীর সমতল কোনো ভূমিতে নেমে যাওয়ার জন্যে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে আদেশ করেছিলেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্