সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সূরা তা-হা এর শিক্ষা

অপেক্ষা, প্রতীক্ষা, ধৈর্য ও সময়ের হিসাব মিলানোর একটি সূরা হলো ‘তা-হা’। সম্পূর্ণ সূরায় নানাভাবে ধৈর্যের আলোচনা ও অধৈর্যের সমালোচনা করা হয়েছে।

সূরাটি শুরু হল। মূসা (আ) তাঁর পরিবারকে বললেন, এখানে অপেক্ষা কর। ঐ যে দূরে আগুন দেখা যাচ্ছে, গিয়ে দেখি, তোমাদের জন্যে কিছু পাই কিনা সেখানে।

আগুনের কাছে যাবার পর আল্লাহ তায়ালা মূসা (আ)-কে বললেন, শেষ সময় বা কেয়ামতকে আমি মানুষের কাছে গোপন রাখি, যাতে মানুষ তাড়াহুড়া না করে।


তখন মূসা (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা স্মরণ করিয়ে দিলেন, তুমি জন্ম গ্রহণ করার পর তোমাকে নদীতে ছেড়ে দিয়ে তোমার মা অপেক্ষা করেছিল। এর ফল হিসাবে আমি তোমার মায়ের নিকট আবার তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি।
.
এরপর ফেরাউনের ঘটনাটি শুরু হলো।

ফেরাউনের ও মূসা (আ) উভয়ে মিলে একটি দিন নির্ধারণ করলেন, যেদিন সত্য ও মিথ্যা যাচাই করা হবে। মূসা (আ) ধৈর্য ধারণ করলেন। জাদুকরগণ আগে জাদু প্রদর্শন করলেন, এবং মূসা (আ) পরে প্রদর্শন করলেন। ফলে মূসা (আ) জয়ী হলেন।

জাদুকরগণ ফিরাউনের আদেশের অপেক্ষা না করেই মূসা (আ)-এর রবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে ফেললেন। ফলে ফেরাউন তাদেরকে শাস্তির হুমকি দিলেন।

এরপর ফেরাউনের সর্বশেষ আক্রমণ। ফেরাউন মূসা (আ)-এর বাহিনীকে প্রায় ধরেই ফেলবে। এমন সময় আল্লাহ তায়ালা বলেন, অধৈর্য হয়ো না। তারা তোমাদেরকে ধরতে পারবে না।

শুরু হলো বনী ইসরাইলের ঘটনা। মূসা (আ) আল্লাহর কাছে তাওরাত আনতে গেলেন। আল্লাহ বললেন, “তোমার সম্প্রদায়কে পিছনে ফেলে রেখে এত তাড়াহুড়া করে এখানে আসতে তোমাকে কে বাধ্য করেছে?” [আয়াত - ৮৩]

এদিকে, মূসা (আ)-এর অবর্তমানে অধৈর্য হয়ে বনী ইসরাইল সম্প্রদায় গরুর মূর্তি পূজা শুরু করলো।

হারূন (আ) বনী ইসরাইল কে বললেন, তোমারা মূর্তি পূজা করো না। তারা হারূন (আ)-কে বলল, তুমি অপেক্ষা কর, আমরা মূসা (আ) ফিরে আসা পর্যন্ত মূর্তি পূজা থেকে বিরত হব না।

মূসা (আ) ফিরে এসে তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এ অল্প সময়টি তোমাদের কাছে দীর্ঘ মনে হল? তোমরা ধৈর্য ধারণ করতে পারলে না? তোমরা কেন আমার সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে?

মূর্তি নির্মাতা সামেরি-কে মূসা (আ) বললেন, কিছু দিন অপেক্ষা কর। এরপর মূর্তি পূজার ফল তুমি বুঝতে পারবে।

মূসা (আ) ঘটনা শেষ।

আবার শুরু হলো শেষ সময় বা কেয়ামতের আলোচনা। লোকজন বলাবলি করছে, আমরা তো মাত্র ১০ দিন পৃথিবীতে ছিলাম। আবার, কেউ কেউ বলছে, আরে না, আমরা মাত্র ১ দিন পৃথিবীতে ছিলাম।

শেষ সময় যত নিকটবর্তী হচ্ছে পৃথিবীর পাহাড়গুলো তত সমতল হয়ে যাচ্ছে।

মুহাম্মদ (স)-কে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, “আমি যখন কোর’আন নাযিল করি, তখন সম্পূর্ণ নাযিল হওয়ার আগে, আপনি এগুলো পাঠ করার জন্যে তাড়াহুড়া করবেন না” [আয়াত - ১১০]

আল্লাহ তায়ালা রাসূল (স)-কে আদম (আ)-এর ঘটনা মনে করিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, “আমি আদমকে তার সংকল্পে দৃঢ় পাই নি”। [আয়াত - ১১১]

আদম (আ) অধৈর্য হবার কারণটাও বর্ণনা করা হচ্ছে এ সুরায়। শয়তান আদম (আ) বলল, তুমি এ গাছ থেকে যদি কিছু খাও, তাহলে চিরস্থায়ী শান্তি ও জীবিকা অর্জন করতে পারবে।

শয়তানের কুমন্ত্রণায় আদম (আ) অধৈর্য হবার ফলে তাঁর শান্তি ও জীবিকা কেড়ে নেওয়া হল।

সর্বশেষ আমাদের পালা।

সূরা ‘তাহা’র শেষে এসে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বলছেন, “ধৈর্য ধারণ কর”। সম্পদ ও জীবিকা অর্জনের জন্যে কখনো অধৈর্য হয়ো না।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্